<p>মজিবর রহমান মজনু বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। শেরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও তিনি। জেলায় সরকারি দলের শীর্ষ নেতা, সঙ্গে জনপ্রতিনিধি। বলা চলে ক্ষমতার চূড়ায় থাকা এক ক্ষমতাবান। তাঁর সঙ্গে টক্কর দেয়, কারই বা আছে এমন দুঃসাহস। নেতার এবার খায়েশ ব্যবসায়ীপুত্র সারোয়ার রহমান মিন্টুকেও বানাবেন জনপ্রতিনিধি। আসন্ন শেরপুরের পৌর নির্বাচনে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে তাঁকে দলীয় মনোনয়ন দিতে চূড়ান্ত করেছেন সব আয়োজন। এর আগে স্ত্রী শিল্পী রহমানকেও গোসসা করতে দেননি তিনি। তাঁকেও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন একরকম ক্ষমতার জোরেই। তবে শিল্পী কলস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তাঁকে জেতানোর কৌশল হিসেবে শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কোনো প্রার্থীই দেয়নি। আজই অনুষ্ঠিত হচ্ছে মজনুর স্ত্রীর ভোটের পরীক্ষা।</p> <p>এদিকে জেলা সভাপতির এই পরিবারকরণের বিরুদ্ধে শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সই করা একটি অভিযোগপত্র স্থানীয় সরকার নির্বাচন বোর্ড কেন্দ্রীয় কমিটি এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সভাপতি মজনুর ছেলে সারোয়ার রহমান মিন্টু শেরপুর উপজেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেও তিনি দলে সক্রিয় নন। কখনো তাঁকে মিছিল কিংবা সভায় দেখা যায় না। বাবার ক্ষমতার জোরে তিনি দলে পদ পেয়েছেন। মূলত ‘ব্যবসায়ী মিন্টু’ হিসেবেই শেরপুর শহরে সবাই তাঁকে চেনে। স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমেই তাঁকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।</p> <p>আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় শেরপুর পৌর নির্বাচন ঘিরে গত শুক্রবার বিকেলে শহরের স্থানীয় টাউন ক্লাব পাবলিক লাইব্রেরি মহিলা অনার্স কলেজের সভাকক্ষে বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হয়, কিন্তু সভায় দলের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে একপেশে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগ তুলে শেরপুর পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী পাঁচজনের মধ্যে চারজনই ওই সভা বর্জন করেন। এ রকম প্রেক্ষাপটে নেতাকর্মীরা হয়ে পড়েন বিভক্ত।</p> <p>শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুল ইসলাম পোদ্দার ববি জানান, শেরপুর পৌর নির্বাচনে তিনিসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র আব্দুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব আম্বিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার রহমান মিন্টু এবং উপজেলা যুবলীগের সভাপতি তারিকুল ইসলাম তারেক দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মজনু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে স্বেচ্ছাচারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মতামত উড়িয়ে দিয়ে পৌর আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রভাবিত করে রেজল্যুশনের মাধ্যমে তাঁর ছেলে সারোয়ার রহমান মিন্টুকে মনোনয়ন তালিকায় এক নম্বর রেখে মনগড়া একটি প্যানেল তৈরি করেন, যা গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী।</p> <p>শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান পৌর মেয়র আব্দুস সাত্তার জানান, ওই বর্ধিত সভায় কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা তাঁর জানা নেই। কারণ তাঁদের বাদ রেখেই এটি একতরফাভাবে করা হয়েছে। সেখানে সব মনোনয়নপ্রত্যাশীর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তাই সভা ডেকে পাল্টা প্যানেল তৈরি করে জেলা ও কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।</p> <p>তবে শেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মকবুল হোসেন মজনু জানান, বর্ধিত সভায় দলের গঠনতন্ত্র ও যথাযথ নিয়ম মেনেই পৌরসভার সব ওয়ার্ড কমিটি সভাপতি ও সম্পাদকসহ তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত নেওয়া হয়। আর সেই মতামতের ভিত্তিতেই একটি প্যানেল তৈরি করা হয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়ায় সারোয়ার রহমান মিন্টুকে এক নম্বর করে বাকি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নামসহ গঠিত প্যানেলটি জেলায় পাঠানো হয়েছে। এর পরও তাঁরা কী উদ্দেশ্যে কেন্দ্রে অভিযোগ করেছেন এটি তাঁর জানা নেই।</p> <p>এদিকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলে শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র আব্দুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব আম্বিয়া এবং উপজেলা যুবলীগের সভাপতি তারিকুল ইসলাম তারেক গত মঙ্গলবার ঢাকায় সভানেত্রীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম তোলেন। এরপর তাঁরা সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করলে সেটি ভাইরাল হয়।</p> <p>উপজেলা নির্বাচনের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনে স্ত্রীর ভোটে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু বলেন, ‘আমার স্ত্রী স্বেচ্ছায় নির্বাচনে গেছেন। পারিবারিকভাবে আমি এই সিদ্ধান্তে একমত ছিলাম না।’</p>