করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, খ্যাতিমান সাংবাদিক খন্দকার মুনীরুজ্জামান মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টা ২০ মিনিটে ৭৩ বছর বয়সে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সততা, নিষ্ঠা ও যুক্তিনির্ভর বক্তব্যের জন্য সর্বমহলে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করা এই সাংবাদিকের মৃত্যুতে দেশের সাংবাদিকতা জগতে শোকের ছায়া নেমে আসে। গতকাল বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে ভক্ত-অনুরাগীদের শ্রদ্ধা নিবেদন ও জানাজা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুনীরুজ্জামান চলে গেলেন
নিজস্ব প্রতিবেদক

দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, সম্পাদক পরিষদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নেতারা পৃথক বিবৃতিতে মুনীরুজ্জামানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মুনীরুজ্জামান ছিলেন নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভীক সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। তাঁর মৃত্যু গণমাধ্যমের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে মুনীরুজ্জামানের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, পিআইবি, প্রেস কাউন্সিল, ভারতীয় হাইকমিশন, সংবাদ পরিবার, উদীচী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
জানাজা শেষে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁকে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
গত ৩১ অক্টোবর রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর দুই সপ্তাহ আইসিইউতে রাখতে হয়েছিল মুনীরুজ্জামানকে।
১৯৭০ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র সাপ্তাহিক একতায় মুনীরুজ্জামানের সাংবাদিকতা শুরু। ওই সময় তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি ছিলেন একাত্তরের স্বাধীনতাসংগ্রামের রণাঙ্গনের যোদ্ধা।
সম্পাদক পরিষদের শোক : দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে সম্পাদক পরিষদ। খন্দকার মুনীরুজ্জামান সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।
গতকাল মঙ্গলবার সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম এবং সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম স্বাক্ষরিত শোকবার্তায় বলা হয়, খন্দকার মুনীরুজ্জামানের দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা ও দক্ষ নেতৃত্বগুণ পরিষদকে স্বাধীন সাংবাদিকতার অবস্থান ধরে রাখতে সাহায্য করেছে। প্রগতিশীল আদর্শের সঙ্গে তাঁর আজীবন সম্পৃক্ততা এবং মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে সমর্থন করে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতি তাঁর নিরলস প্রতিশ্রুতির কারণে তিনি নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন।
সম্পর্কিত খবর

ভালো কিছুর আশা বাংলাদেশের
১ আগস্ট মার্কিন উচ্চ শুল্ক কার্যকর
বাণিজ্য ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত উচ্চ শুল্ক কার্যকরের সময় যখন চলেই এলো তখন বিশ্বকে যেন আরেকটি দম নেওয়ার সুযোগ দিলেন। জানিয়ে দিলেন ৯ জুলাই কার্যকর হচ্ছে না; বরং আগামী ১ আগস্ট থেকে উচ্চ শুল্ক কার্যকর হচ্ছে। গত রবিবার ট্রাম্প এসব তথ্য জানান। তবে কতটি দেশের ওপর উচ্চ শুল্ক কার্যকর হবে তা স্পষ্ট করেননি।
ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী বিশ্বের দেশগুলো ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় পাচ্ছে। এদিন নিউজার্সিতে গলফ খেলে ওয়াশিংটন ফেরার পথে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্তের পথে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, যেসব দেশ চুক্তি করতে ব্যর্থ হবে, তাদের ওপর উচ্চহারে শুল্ক বসবে।
ট্রাম্পের বক্তব্যকে আরো স্পষ্ট করে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, ‘উচ্চ শুল্ক আগামী ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। প্রেসিডেন্ট এখন শুল্কহার নির্ধারণ করছেন এবং যেসব দেশের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে না, তাদের চিঠি পাঠানো হবে।’
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে একধরনের শুল্কযুদ্ধের আবহ ছড়িয়ে দেন। এরপর নজিরবিহীনভাবে গত এপ্রিলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেন।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে। গত ৩ এপ্রিল ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের তালিকায় বাংলাদেশের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এতে মোট শুল্ক দাঁড়ায় ৫২ শতাংশ।
এরপর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এক আনুষ্ঠানিক পত্রে আরোপিত শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র শুল্কমুক্তভাবে পণ্য আমদানি করা ও তা বাড়ানো এবং বিভিন্ন অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা অপসারণে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে ইউএসটিআরকে (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) দেওয়া আরেক চিঠিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে রপ্তানি করে এমন বিভিন্ন পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক দ্রুত তুলে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এর পর পরই যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা নতুন শুল্কহারের ঘোষণাও তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখে।
আলোচনা এগিয়েছে বাংলাদেশের : বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন পাল্টা শুল্কের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের আলোচনা হয়েছে। পরবর্তী বৈঠক হতে পারে ৯ জুলাই।
বাণিজ্য উপদেষ্টা একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ইউএসটিআরের সঙ্গে গত ৩ জুলাই একটা বৈঠক করেছি। আমরা এখনো আশা করছি, ভালো একটা শুল্কছাড় পাব। আমাদের দিক থেকে কাঠামোগত ও শুল্কগতভাবে যত কিছু ছাড় দেওয়া সম্ভব, অর্থনীতির সক্ষমতা বিবেচনায় তার সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা করেছি।’
সেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘৯ জুলাই আরেকটি বৈঠক আছে। ভালো ফল পাব আশা করছি। ৩ জুলাইয়ের বৈঠকে ইউএসটিআর আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, ছাড় পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা প্রতিযোগীদের চেয়ে পিছিয়ে থাকব না।’
অন্যান্য দেশের সঙ্গে চুক্তি : যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে পাল্টা শুল্ক ঠেকাতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। কোনো কোনো দেশের সঙ্গে চুক্তির কাছাকাছি চলে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। কোনো কোনো দেশের সঙ্গে চুক্তির আলোচনায় নতুন জটিলতাও তৈরি হয়েছে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বৃদ্ধির এই কৌশলের কারণ দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি করা কঠিন হওয়া। সাধারণত এ ধরনের চুক্তি সম্পন্ন করতে বছরের পর বছর লেগে যায়। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র দুটি দেশের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করেছে। যুক্তরাজ্যের ১০ শতাংশ শুল্ক রাখা হয়েছে এবং কিছু খাতে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। যেমন গাড়ি ও বিমান যন্ত্রাংশ। তা ছাড়া ভিয়েতনামের সঙ্গে শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা হয়েছে, যেখানে আগে ৪৬ শতাংশের হুমকি ছিল। চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে ভিয়েতনামে। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে প্রত্যাশিত চুক্তি হয়নি এবং ইইউয়ের কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করতে পারেননি এবং বর্তমান অবস্থা বজায় রাখার চেষ্টা করছেন, যাতে শুল্ক বৃদ্ধির ঝুঁকি এড়ানো যায়।

আনিসুল-রুহুল ও চুন্নুকে জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি
- নতুন মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী
নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং মহাসচিব মজিবুর রহমান চুন্নুকে দলের সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
জাপার নতুন মহাসচিব পদে সাবেক এমপি শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে নিয়োগ দিয়েছেন জি এম কাদের।
গতকাল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। দলটির প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালীও এ তথ্য জানিয়েছেন।
জানা গেছে, জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতাদের একাংশের ‘বিদ্রোহের’ মধ্যে দলের চেয়ারম্যান এমন ব্যবস্থা নিলেন। তবে তিন নেতাই এ সিদ্ধান্ত মানছেন না; তাঁরা বলছেন, এটি ‘অবৈধ ও গঠনতন্ত্র’ বিরোধী। শামীম হায়দার পাটোয়ারী জি এম কাদেরের খুবই আস্থাভাজন। তিনি দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং অতিরিক্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর গাইবান্ধা-১ আসনের এমপি গোলাম মোস্তফা আহমেদের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে শামীম পাটোয়ারী এমপি হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি এমপি হয়েছিলেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ২৫ জুন দলের মতবিনিময়সভায় সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মজিবুর রহমান চুন্নুর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয় এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারা অনুযায়ী, দলের চেয়ারম্যান কোনো ধরনের কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই যে কাউকে পদ বা দল থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে তৎকালীন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে বহিষ্কার করে মুজিবুল হক চুন্নুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর মুজিবুল হক চুন্নু তাঁর প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। জাতীয় কাউন্সিল ডাকার পরে পদ থেকে বহিষ্কার করার কোনো এখতিয়ার নেই চেয়ারম্যানের। এটা অগঠনতান্ত্রিক, বেআইনি। উনার সিদ্ধান্ত মানি না, উনার এখতিয়ার নেই। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’
একই রকম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, ‘কাউকেই কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়া অব্যাহতি দেওয়া যাবে না। এগুলো সবই অবৈধ। আমরা মুজিবুল হক চুন্নুকে মহাসচিব মানি এবং আমরা আমাদের স্বপদে বহাল আছি।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯ জুলাই জাতীয় সমাবেশ জামায়াতের
নিজামুল হক

প্রায় দুই যুগ পর ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড়’ জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামী ১৯ জুলাই রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে দলটির ঘোষিত এ সমাবেশ। এতে ১২ থেকে ১৩ লাখ মানুষের সমাগম ঘটানোর লক্ষ্য নিয়েছে জামায়াত। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সমাবেশ সফল করতে জোর প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন।
দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের নিশ্চয়তা, জুলাই মাসজুড়ে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, রাজনৈতিক সংস্কার, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, সংবিধানে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতির অন্তর্ভুক্তি এবং প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণসহ সাত দফা দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
এ উপলক্ষে ঢাকাসহ আশপাশের জেলা ও মহানগরগুলোর নেতাদের সঙ্গে একাধিক সমন্বয় সভা করা হচ্ছে। দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন করেন। তিনি মঞ্চ নির্মাণ, নিরাপত্তা, পানি সরবরাহ, স্যানিটেশনসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার খোঁজখবর নেন এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।
জানা গেছে, সমাবেশস্থলে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩৬ ফুট প্রস্থের একটি বিশাল মঞ্চ নির্মাণ করা হবে। সামনে ও পেছনে বসানো হবে এলইডি স্ক্রিন। থাকবে অস্থায়ী শৌচাগার, খাবার পানির ব্যবস্থা, অজু ও নামাজের জায়গা, পর্যাপ্ত ছাউনি, চিকিৎসক দল ও নিরাপত্তাব্যবস্থা।
জামায়াতের নেতারা বলছেন, এটি হবে দলটির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ।
দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও মিডিয়া প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘আমরা ১২ থেকে ১৩ লাখ মানুষের অংশগ্রহণ আশা করছি। সমাবেশে বিএনপিসহ সব ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিকে দাওয়াত দেওয়া হবে।’
ঢাকার পাশের জেলা—গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও দুই মহানগর থেকে অন্তত ১০ লাখ লোক অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন নেতারা।
ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সড়কে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচারণা জোরদার করা হয়েছে। তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে।
গত ২৮ জুন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ডাকে সোহরাওয়ার্দীতে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে জামায়াতের পাঁচ শীর্ষ নেতা অংশ নিয়েছিলেন। তবে সেখানে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। জামায়াতের নেতারা মনে করছেন, ওই সমাবেশে বিএনপিকে না ডাকা ভুল হয়েছে। এ ভুল জামায়াত করতে চায় না।
সমাবেশস্থল পরিদর্শনকালে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের সময় পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে নই। আমরা চাই সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ। সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক সংস্কার, বিচারব্যবস্থার অগ্রগতি এবং পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবি তোলা।’
অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, সমাবেশ থেকে দলীয় নেতারা ‘সাত দফা’ উপস্থাপন করবেন, যা নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হবে বলে তাঁরা মনে করছেন।
দেশে এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই
এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন শেষে জামায়াতের সেক্রেটারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘সরকারের ভূমিকায় এখনো জনগণ সংশয়ের মধ্যে আছে। এ জন্যই বলছি, দেশে এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন আমরা মেনে নিতে পারি না।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন পেছানো নিয়ে জামায়াতের নেতারা কখনো কোনো বক্তব্য দেননি। তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচন পেছানো, না করা, এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য কখনো রাখিনি। জামায়াত আমির বলেছেন, ‘নির্বাচন আমরা চাই। কিন্তু সেই নির্বাচন যেন যেনতেন নির্বাচন না হয়।’ এই যেনতেনর অর্থ হলো কোনো দিকে প্রশাসন ঝুঁকে পড়বে, নিরপেক্ষ হবে না, আবার ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হবে, আবার প্রশাসন জবরদস্তি করবে, কেন্দ্র দখল হবে এসব।”

ফিলিস্তিনের পক্ষের গ্রুপকে নিষিদ্ধে পার্লামেন্টে ভোট দিয়েছেন টিউলিপ
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি ও বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকসহ অন্য এমপিরা। গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করার কারণে তাঁরা সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দেন।
গত বুধবারের (২ জুলাই) এই ভোটাভুটিতে ৩৮৫ জন এমপি নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ভোট দেন, বিপক্ষে পড়ে মাত্র ২৬টি ভোট। এর আগে গত মাসে ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর কর্মীরা ব্রিটেনের একটি সামরিক ঘাঁটিতে প্রবেশ করে দুটি বিমানে লাল রং ছিটিয়ে প্রতিবাদ জানান।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাজ্য ও এর আওতাভুক্ত অঞ্চলে ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ এখন এমন আইনি ঝুঁকি বা পদক্ষেপের সম্মুখীন, যা সাধারণত আল-কায়েদা বা আইএসের মতো সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। অর্থাৎ, সন্ত্রাসী সংগঠনে যুক্ত হওয়ার প্রতি যে ধরনের আইনি বাধা আছে, এখন থেকে আন্দোলনকারী গোষ্ঠী প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া বা সমর্থন করাও একই রকমভাবে বেআইনি হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বতন্ত্র আইনপ্রণেতা জারা সুলতানা এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘একটি স্প্রে ক্যান আর আত্মঘাতী বোমার মধ্যে তুলনা টানা শুধু হাস্যকর নয়, এটি নৈতিকভাবে বিকৃত।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাজ্যের প্রধান নির্বাহী সাশা দেশমুখ এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘অতিরিক্ত আইনি ক্ষমতার নজিরবিহীন উদাহরণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত সরকারের হাতে এমন ক্ষমতা দিচ্ছে, যার মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন, নজরদারি বৃদ্ধি এবং মানুষকে আটক করা সহজ হবে।
উল্লেখ্য, গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ চলছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এমন সিদ্ধান্ত ব্রিটেনের রাজনৈতিক পরিসরে মতভেদ আরো বাড়াবে এবং গাজা সংকট নিয়ে সরকারের অবস্থানকে আরো বিতর্কিত করে তুলবে। সূত্র : এএফপি