বিদেশের অর্থনীতি বিষয়ে পাঠদানরত আমার এক বন্ধুর সেদিনকার এক লেখায় দেখলাম ভীষণ ধুয়েছেন তিনি তোপখানায় কার্যরত আমাদের ভাই-বন্ধুদের। তাঁদের কারণেই নাকি মতিঝিলে কর্মরত আমাদের অন্য ভাই-বন্ধুরা তাঁদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে পারছেন না। লেখার একটু ভেতরে গিয়ে বুঝতে পারলাম, তোপখানা বোঝাতে তিনি বুঝিয়েছেন আমাদের আমলাতন্ত্রের হেডকোয়ার্টার বা পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের কার্যালয়, আর মতিঝিল বলতে তিনি বুঝিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদর দপ্তরকে। তাঁর যুক্তির স্বপক্ষে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডের প্রধান এবং ভারতের আরবিআইয়ের সাবেক গভর্নরের স্বাধীনচেতা মনোভাবের কথা বলেছেন।
বিশেষজ্ঞ মত
কেমন হলো সরকারের রপ্তানি সহায়তা প্যাকেজ?
- মামুন রশীদ
অন্যান্য

আমি অবশ্য অপেক্ষা করছিলাম সরকারে (আমলাতন্ত্রে নয়) পোশাক ব্যবসায়ীদের আধিক্য ও আধিপত্য বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত কেমন জানি হয় আপৎকালীন সরকারের রপ্তানি সহায়তা? এই সুযোগে সরকার আবার রবীন্দ্রনাথের (দুই বিঘা জমি) ‘সেই বেশি চায় আছে যার ভূরিভূরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি’র মতো কিছুসংখ্যক লোকের জন্য ‘সব কটা জানালা খুলে দাওনা’র মতো করবেন না তো?
না, তা হয়নি। আমার বন্ধুটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা বিপন্নে যতই আমলাতন্ত্রকে দায়ী করুন না কেন, এ ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সঙ্গে নিয়ে বেশ ভালো কাজ করেছে। পাঁচ হাজার কোটি টাকা যাবে সরকারের বাজেট বরাদ্দ থেকে, ঋণ হিসেবে।
আমার কাছে এই নির্দেশনামা বেশ ভালোই মনে হয়েছে। মনে হয়েছে বেশ উর্বর চিন্তাপ্রসূত। অনেকটা উন্নত দেশের আপৎকালীন প্রাধিকার খাতে তারল্য-সহায়তার মতো।
আমরা অবশ্যই কান পেতে আছি, অভ্যন্তরীণ খাতসহ বিভিন্ন শিল্প, ব্যবসা ও সেবা খাতে সরকারের ‘মৃতসঞ্জীবনী’ সুধার মতো অন্যান্য সহায়তা বা প্রণোদনা প্যাকেজের অপেক্ষায়। যদিও বিজিএমইএ সভাপতি আগামী রবিবারও তাঁর সম্মানিত সহকর্মীদের আরো অনেক সুখবর দিতে পারবেন বলে অনেকে আশাবাদী। আমার মনে হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারের অন্যদের সঙ্গে মনোযোগ দেবেন—অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরুদ্ধারে। অবশ্যই দুই কোটি দিনমজুর, সাময়িক বেকার বা পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কথা তিনি বা তাঁর সহকর্মীরা ভুলবেন না। তবে বৃহৎ আকারের অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ সৃষ্টি করাই হবে তাঁর সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই কর্মযজ্ঞের কেন্দ্রবিন্দু হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত। তার পাশে অতি দরিদ্র ও বঞ্চিতদের জন্য বাড়াতে হবে সরকারের সামাজিক রক্ষা বন্ধনী। এ ক্ষেত্রে কার্যরত এনজিওগুলোকেও কিছু ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দেওয়া যায়। ন্যূনতম ও কার্যকর স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা অন্যরা ভুললেও কর্তাব্যক্তিরা আর ভুলবেন না নিশ্চয়ই। অন্যান্য ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হয়ে মূল মূল জায়গায় টাকার সংস্থান করতে হবে। সময়ে ধারণ করতে হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুদ্রমূর্তি। মাঝপথে রণেভঙ্গ দেওয়ার এবার আর সুযোগ নেই। তাহলে অর্থনীতি হবে বিপর্যস্ত আর আমাদের নিক্ষিপ্ত হতে হবে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে।
লেখক : অর্থনীতি বিশ্লেষক।
সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’