দেশে ২৪ ঘণ্টায় আরো পাঁচজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত কারো মৃত্যু হয়নি এবং কেউ সুস্থও হয়নি। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬১, মৃতের সংখ্যা ছয়। এ ক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চসংখ্যক ৫২৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
হাসপাতালে সেবা না দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
করোনাভাইরাসে দেশে আরো পাঁচজন আক্রান্ত
- ► মোট পরীক্ষা ২১১৩ শনাক্ত ৬১, মৃত ৬ সুস্থ ২৬
► ঢাকায় ১০টি এবং ঢাকার বাইরে পাঁচ কেন্দ্রে চলছে পরীক্ষা
► ১৬ হাজার ৩৭৯ জন হোম কোয়ারেন্টিনে, ৭৪ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে
নিজস্ব প্রতিবেদক

গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিং ও পরে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বক্তব্য দেন। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, আইইডিসিআরের (রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান) পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা উপস্থিত ছিলেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা না দিলে ব্যবস্থা
ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সবাইকে ঘরে থেকে সতর্ক ও সচেতন থাকার অনুরোধ জানান।
মন্ত্রী বলেন, এখন আর কিট ও পিপিইর কোনো সংকট নেই। পরীক্ষাকেন্দ্রও ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বাড়ানো হয়েছে। ফলে সবাই পরীক্ষা করাতে পারবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘দেশে এমনিতেই দিনে আড়াই হাজারের বেশি মানুষের বিভিন্ন রোগে মৃত্যু ঘটে। ফলে কারো মৃত্যু হলেই সেটা করোনাভাইরাসে হয়েছে বলে ভাবা ঠিক না। আমরা সন্দেহজনক সব মৃত ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করে থাকি।’ মহাপরিচালক জানান, ৬১ জন আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ছয়জন মারা গেছে, ২৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। বাকি ২৯ জনের মধ্যে হাসপাতালে আছে ২২ জন; সাতজন আছে যার যার বাড়িতে আইসোলেশনে।
পিপিই ও কিট
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ১৬ হাজার ৩৭৯ জন হোম কোয়ারেন্টিনে ও ৭৪ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছে। এ ছাড়া মোট চার লাখ ২৮ হাজার ৬০টি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উপকরণ-পিপিই সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন লাখ ৬৬ হাজার ৬৫০টি বিতরণ করা হয়েছে এবং বাকি ৬৪ হাজার ৪১০টি সংরক্ষণে আছে। এ ছাড়া ৯২ হাজার কিটের মধ্যে ২১ হাজার বিতরণ করা হয়েছে, মজুদ আছে ৭১ হাজার। প্রয়োজনমতো এসব বিতরণ করা হবে।
ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের এক সাংবাদিক আক্রান্ত
নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের একজন সাংবাদিক। তারপর ৪৭ জন কর্মীকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলেছে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ। এই টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম শামসুর রহমান গতকাল শুক্রবার ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের একজন সহকর্মী কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত।’
সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’