সরকার, রাষ্ট্রযন্ত্র, নির্বাচন কমিশন (ইসি) আর আওয়ামী লীগ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরে আসতে হবে। নির্বাচন এখন নির্যাতনে পরিণত হয়েছে। যাকেই ভোট দিই না কেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতবেন—এমন ভাবনা থেকে ভোটাররা কেন্দ্রে যান না।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন
রাষ্ট্র ইসি আওয়ামী লীগ একাকার
- ডা. শাহাদাত, বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী
মুস্তফা নঈম, চট্টগ্রাম

আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন গতকাল মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম নগর বিএনপির এই সভাপতি কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে নিজের প্রার্থী হওয়া, দেশের বর্তমান নির্বাচনী সংস্কৃতি, চট্টগ্রাম নগর নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। অর্ধশতাধিক মামলা মাথায় নিয়ে তিনি চসিক নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
ডা. শাহাদাত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বর্তমান সরকার গত ১০ বছরে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। একসময় নির্বাচন ছিল এ দেশের সাধারণ মানুষের কাছে উৎসবের মতো। আর বর্তমানে নির্বাচন নির্যাতনে পরিণত হয়েছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যান না।
বিএনপির এই মেয়র পদপ্রার্থী বলেন, সরকার-রাষ্ট্রযন্ত্র-নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। সাধারণ ভোটারদের বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেছে যে ভোট দিলেই কী আর না দিলেই কী, নৌকার প্রার্থী জয়ী হবেন। এ জন্য ভোটাররা কেন্দ্রবিমুখ হয়ে পড়েছেন। ভোটকে উৎসবে পরিণত করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরে আসতে হবে।
ধানের শীষের এই প্রার্থী বলেন, নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এজেন্টদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। একই সঙ্গে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটারদের সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রে সেনা সদস্য মোতায়েন করতে হবে, যাতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা ভোট ছিনতাই করতে না পারেন। আর ভোটাররা ভোট দিতে পারলে এই নির্বাচনে বিএনপির জয় সুনিশ্চিত।
এত সংশয় নিয়ে কেন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শাহাদাত বলেন, ‘আমাদের নেত্রী প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আজ কারাগারে। তাঁর মুক্তি, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম ও জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন নিয়ে সরকারের এত ষড়যন্ত্রের মধ্যেও আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।’ তিনি বলেন, বিএনপির প্রায় সব প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকের মাথার ওপর শত শত মামলা ঝুলছে। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির নেতাকর্মীদের পুলিশি হয়রানি বন্ধ রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম নগর ঘিরে পরিকল্পনা কী—এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. শাহাদাত বলেন, ‘চট্টগ্রাম একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক শহর। দেশের প্রধানতম সমুদ্রবন্দর ও বাণিজ্যনগরী। পাহাড়, নদী আর সাগর—প্রকৃতির অফুরান সৌন্দর্য নিয়ে গড়ে উঠা চট্টগ্রাম ঘিরে পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটতে পারে। আমার জন্ম শহর চট্টগ্রামকে একটি আধুনিক, সুন্দর, পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যকর এবং একই সঙ্গে নিরাপদ পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
প্রসঙ্গত, মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত এর আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ৩৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি বাকলিয়া থানা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে অধ্যয়নকালে ১৯৮৬ সালে ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত হন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে কারাগারে থেকেই তিনি চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে বিএনপি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’