বগুড়ার মহাস্থানগড়ের মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা আড়াই হাজার বছরের পুরনো প্রত্নসম্পদ থেকে প্রকাশ্যে ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। সেই ইট আবার প্রকাশ্যেই বিক্রি হয়। দাম প্রতি ভ্যান ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। আকারে বড়, কারুকাজ করা এসব ইট দিয়েই মহাস্থানগড়ের ভেতরেই তৈরি হচ্ছে ঘরবাড়ি।
মহাস্থানগড়ের ভেতরেই প্রাচীন ইটের বাড়ি!
- প্রত্নসম্পদের ইট কেনাবেচা প্রকাশ্যেই আদালতের নির্দেশনা মানছে না কেউ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ অসহায়
লিমন বাসার, বগুড়া

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করে এ নগরীতে নির্মাণ করা হয়েছে ঘরবাড়িসহ কমপক্ষে ৯৮৭টি নানা ধরনের অবকাঠামো। এর মধ্যে ৭৬টি বাড়ি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে পাল ও সেন আমলের তৈরি ইটসহ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
এই অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জরিপ অনুসারে ৩৯৪ একরের এ দুর্গনগরীতে পাকা, সেমিপাকা ও মাটির
বাড়িসহ পাঁচ ধরনের ঘরবাড়ির মধ্যে দ্বিতল ভবন রয়েছে বেশ কয়েকটি, যার সবই অবৈধ। অথচ স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশকে দফায় দফায় এসব ব্যাপারে অভিযোগ করে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক (রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ) ড. নাহিদ সুলতানা জানান, প্রাচীন এই নগরীকে রক্ষায় ভূমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা এ কাজে ব্যয় হবে।
মহাস্থানগড়ের শাহ সুলতান বলখি (রা.) মাজার শরিফের আশপাশে ঘুরে দেখা গেছে, অনেক ঘরবাড়িই তৈরি করা হয়েছে প্রাচীন ঐতিহাসিক প্রত্নের ইট দিয়ে। যে যার মতো মাটি খুঁড়ে বের করেছে ঐতিহাসিক এসব নিদর্শন।
মহাস্থান দুর্গনগরীর ভেতরে যাঁরা স্থায়ী বাড়ি বানিয়েছেন তাঁদের একজন গড় মহাস্থান দক্ষিণপাড়া গ্রামের নাসির উদ্দিন। তাঁর ছেলে শহীদুল ইসলাম বলেন, জমি হুকুম দখল করলে সরকারকে জমি দেওয়া হবে। কিন্তু তার আগেই তাঁদের পূর্বপুরুষদের জমিতে ঘরবাড়ি করলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বাধা দিচ্ছেন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নোটিশ পেয়েছে দুর্গনগরীর চান্দিপাড়া গ্রামের মোশারফ হোসেন। এ নোটিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গেছেন তিনি। তিনি বলেন, ২০১০ সালে হাইকোট দুর্গনগরী রক্ষায় যে নির্দেশনা দিয়েছে তাতে দ্রুত জমি অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অধিদপ্তর জমি অধিগ্রহণ করছে না। এ কারণে বাড়ি করতে বাধ্য হয়েছি।
স্থানীয় দোকানদার নুরুল ইসলাম জানান, এলাকায় রফিকুল নামের এক যুবক পুরনো এসব ইট বিক্রি করে। প্রতি ভ্যান ইটের দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এক ভ্যানে সর্বোচ্চ ২০০ ইট বহন করা যায়। এ ছাড়া এই ইট বিক্রির সঙ্গে আরো রয়েছে সফিকুল, মিরাজুল ও আকবর।
গফুর নামের আরেকজন মুদি দোকানদার জানান, মাটি খুঁড়ে শুধু ইট নয়, সেখানে আরো পাওয়া যায় দুর্লভ মূর্তি, সোনার পাত্রের ভাঙা অংশ। এগুলো কখনো পাওয়া গেলে তার ভাগ্য ফিরে যায়। কখনোই এসব ব্যাপার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের জানানো হয় না। রাতের আঁধারে চলে এসব খোঁড়াখুঁড়ির কাজ।
এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাজারসংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা কাসেম উদ্দিন, রনজু মিয়া, আবদুল মান্নান, কাসেম আলী, মিরালম ও সবুর মিয়ার বাড়ি প্রাচীন এই ইট দিয়ে তৈরি। তবে কোনো বাড়িতেই বাড়ির মালিককে পাওয়া যায়নি। এসব বাড়ি ভাড়া দিয়ে মালিক অন্য স্থানে থাকেন। ভাড়াটিয়ারা বাড়ির মালিক সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্যই জানেন না। মালিকের নিয়োজিত ব্যক্তি প্রতি মাসে এসে ভাড়ার টাকা নিয়ে যায়।
মহাস্থান প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের কাস্টুডিয়ান রাজিয়া সুলতানা বলেন, স্থানীয় জনগণকে হাইকোর্টের নির্দেশ সম্পর্কে অনেকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু তাঁরা বাড়িসহ নানা ধরনের অবকাঠামো তৈরি করছেন।
বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বলেন, যারা হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হান্নান মিয়া বলেন, মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছে। শিগগিরই হয়তো নির্দেশনা পাওয়া যাবে।
সম্পর্কিত খবর

রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা


কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
- চার জেলায় ৪ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এ ছাড়া বাগেরহাটে যুবদল নেতাকে হত্যার অভিযোগসহ পাঁচ জেলায় পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার এসব ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ভূন্দুর চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজন হলেন আনোয়ার হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন (৪০), গোলাম শহিদের ছেলে বলু মিয়া (৫৫) ও ফুলবাবু (৫০)। তাঁরা সবাই জমি নিয়ে বিরোধে থাকা শাহাজাহান মিয়ার পক্ষের লোক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহুদিন ধরে ওই এলাকার শাহাজাহান মিয়া ও রাজু মিয়ার মধ্যে ৫০ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল।
রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্য কয়েকটি জেলায়ও পৃথক ঘটনায় আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
বাগেরহাটে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে সোহাগ সরদার (২৭) নামের যুবদলের এক নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় বিয়ের মাত্র ছয় দিনের মাথায় এক নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রূপা (১৮) তাঁর স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্বামী দাবি করেছেন, রূপা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানকিদাহ এলাকায় নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে টাঙ্গন নদী থেকে। মৃত ব্যক্তি হলেন দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম।

বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ২৮৭ যাত্রী নিয়ে নিরাপদে চট্টগ্রামে
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় উড্ডয়নের পরপরই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট বিজি ১৪৮ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৮৭ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণ করেছিল। এটি ৮টা ৩৭ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে ফ্লাইটটি পুনরায় ফিরে এসে ৮টা ৫৮ মিনিটে শাহ আমানত বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, বিমানটি বিমানবন্দরের বে নম্বর-৮-এ অবস্থান করছে। ফ্লাইটের সব যাত্রীর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্য একটি ফ্লাইট বিজি ১২২-এ অনবোর্ড সম্পন্ন হয়। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বিমান কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুবাই থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, বিমানের ত্রুটি সারানোর কাজ চলছে। যাত্রীরা নিরাপদে আছেন।

রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ৫০ আরোহীর সবাই নিহত
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাশিয়ায় ৫০ আরোহী নিয়ে একটি অ্যান-২৪ যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রাথমিক খবরে জানানো হয়েছে, কেউই বেঁচে নেই। সিভিল ডিফেন্স, জরুরি ও দুর্যোগবিষয়ক মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছে, অ্যান-২৪ বিমানটি পরিচালনা করছিল সাইবেরিয়াভিত্তিক বিমান সংস্থা আঙ্গারা। প্রথমে বিমানটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি বলেছে, চীনের কাছাকাছি আমুর অঞ্চলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা তাসের খবর অনুযায়ী, আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মতো দৃষ্টিসীমা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে। এ কারণে বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করে থাকতে পারেন ক্রু।
স্থানীয় জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিমানটি গন্তব্যের কাছাকাছি থাকাকালে হঠাৎ করে রাডারের বাইরে চলে যায়। গভর্নর অরলোভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে বিমানে ৪৩ জন যাত্রী ছিলেন।
উড়োজাহাজটিতে পাঁচ শিশুসহ ৪৩ যাত্রী ও ছয় ক্রু ছিলেন বলে আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ আগেই জানিয়েছিলেন। যেখানে উড়োজাহাজটি ‘রাডার থেকে হারিয়ে যায়’, সেটি রাশিয়ার তাইগা বনভূমি অঞ্চলে পড়েছে।
১৯৫০-এর দশকে নির্মিত আন্তোনভ আন-২৪ উড়োজাহাজ সাধারণত যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত এই মডেলের হাজারের বেশি উড়োজাহাজ তৈরি হয়েছে। রাশিয়ায় এখন সীমিত পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছে আরটি।
সরকারি বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অবতরণের সময় পাইলটের ভুল এবং খারাপ দৃশ্যমানতা এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সূত্র : রয়টার্স