চীনে করোনাভাইরাসের প্রভাবে কাঁকড়াশিল্পে ধস নেমেছে। দীর্ঘদিন ধরে ঘেরে থাকার কারণে কাঁকড়া মারা যাচ্ছে। ডিমওয়ালা কাঁকড়া বেশি মরছে। ব্যবসায়ী ও চাষিরা বলছেন, এরই মধ্যে বাগেরহাটে বিভিন্ন ঘেরে কয়েক শ মেট্রিক টন কাঁকড়া মারা গেছে, যার মূল্য ১৫০ কোটি টাকার বেশি।
কাঁকড়াশিল্পে ধস
- এক মাস ধরে চীনে রপ্তানি বন্ধ
বাগেরহাটে ঘেরে মারা যাচ্ছে কাঁকড়া। এরই মধ্যে ১৫০ কোটি টাকার ক্ষতি
বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী, বাগেরহাট

বাগেরহাট সদর উপজেলার মাঝিডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘেরের পারে স্তূপ করে রাখা হয়েছে মরা কাঁকড়া। ঘেরে প্রায় দেড় হাত পানির মধ্যে পা ফেলতেই মরা কাঁকড়া পাওয়া যাচ্ছে। আর তাঁরা তা তুলে পারে ফেলছেন।
বাগেরহাটের কাঁকড়া ব্যবসায়ী সাধন কুমার সাহা জানান, দেশে উৎপাদিত কাঁকড়ার ৮৫ শতাংশ চীনে আর কিছুটা তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর রপ্তানি করা হয়। বাগেরহাট থেকে প্রতি মাসে গড়ে ২০০ টন কাঁকড়া (দাম ১৫-২০ কোটি টাকা) রপ্তানি হয়ে আসছিল। বাগেরহাট থেকে সর্বশেষ গত ২২ জানুয়ারি সাধন কুমারের কাঁকড়া চীনে রপ্তানি করা হয়।
বাগেরহাট সদর উপজেলার মাঝিডাঙ্গা গ্রামের শেখ সেলিম ও বেল্লাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কাঁকড়াচাষি জানালেন, ২৫ দিন আগে থেকে ঘেরে কাঁকড়া মরা শুরু হয়েছে। চীনে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ থাকায় তাঁরা ঘের থেকে কাঁকড়া ধরছেন না। প্রতিদিন হাজার হাজার কাঁকড়া ঘেরে মরছে। বাজারে এক মাস আগে এক কেজি কাঁকড়া এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন তা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের চাষি পলাশ মাহমুদ জানান, আড়াই থেকে তিন মাসে কাঁকড়া পূর্ণাঙ্গ রূপ নেয়। এর মধ্যে বিক্রি না হলে এমনিতেই মরে যায়। কারণ মা কাঁকড়ার পেট ডিমে পরিপূর্ণ থাকে। এ ছাড়া পুরুষ কাঁকড়ার খোলস পরিবর্তনের সময় এসে যায়। ডিম ছাড়া এবং খোলস পরিবর্তনের সময় সব কাঁকড়া সাগর, নদ-নদীতে চলে যায়। বদ্ধ জায়গায় থাকলে তারা মারা পড়ে। রপ্তানি বন্ধ থাকায় ঘেরের কাঁকড়া কেউ কিনছে না।
একই উপজেলার ধানসাগর এলাকার আলিম হাওলাদার জানান, তাঁর ঘেরে দুই হাজার ২০০ কেজি কাঁকড়া ছিল। কয়েক দিনে প্রায় এক হাজার কেজি মরে গেছে। গত বছর তাঁর প্রায় আট লাখ টাকা লাভ হয়। এবার আসলই থাকবে না।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. খালেদ কনক জানান, ঘেরে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত কাঁকড়া মজুদ করা, লবণাক্ততা এবং ভিন্ন ভিন্ন জলাশয়ে বড় হলেও একসঙ্গে একই জলাশয়ে থাকার কারণে কাঁকড়া মারা যাচ্ছে। এ জন্য বিভিন্ন উপজেলায় সচেতনতামূলক সভা করা হয়েছে। ঘের থেকে অতিরিক্ত কাঁকড়া সরিয়ে অন্য জলাশয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, জেলায় তিন হাজার ৭৪৮ জন কাঁকড়া চাষি এবং এক হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে তিন হাজার ৭৭৮টি কাঁকড়া ঘের রয়েছে। জেলায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুই হাজার ৬২৯ মেট্রিক টন কাঁকড়া উৎপাদন হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে ১১ হাজার ৮৭৮ মেট্রিক টন কাঁকড়া উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ১১ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন রপ্তানি করে ২১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা আয় হয়েছে।
লাভজনক হওয়ায় কাঁকড়া চাষে ঝুঁকেছে বাগেরহাটের মানুষ। মৎস্য বিভাগও চাষে উৎসাহিত করছে। ফলে ঘের ও চাষির সংখ্যা বাড়ছে।
সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’