ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

বিআরটিএ নিয়ন্ত্রণ করে ধুন্ধুমার চাঁদাবাজি

লায়েকুজ্জামান
লায়েকুজ্জামান
শেয়ার
বিআরটিএ নিয়ন্ত্রণ করে ধুন্ধুমার চাঁদাবাজি
নাসির উদ্দিন নাসিম

বেকারত্ব ঘোচাতে বিদেশে পাড়ি জমিয়েও লাভ হয়নি। ভাগ্যবিড়ম্বিত হয়ে কয়েক মাসের মাথায় ফিরে আসেন দেশে। পরে ক্ষমতাসীন দলে যোগ দেন। দলে পদ-পদবি বাগিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে নেন।

তিনি নাসির উদ্দিন নাসিম। তুরাগ থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তুরাগ-উত্তরা এলাকা। গড়ে তুলেছেন অগাধ বিত্ত।
চাঁদাবাজির টাকায় রাজধানীতে গড়েছেন একাধিক আলিশান বাড়ি। চলাফেরা করেন দামি গাড়ি হাঁকিয়ে। বিআরটিএর উত্তরা অফিসের দালালচক্র নিয়ন্ত্রণ থেকে তুরাগ এলাকার ফুটপাত, যন্ত্রচালিত রিকশা থেকে চাঁদাবাজি, জায়গাজমির দখলবাজি, গার্মেন্টের জুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি করে গড়ে তুলেছেন বিত্তের পাহাড়।

এ ধরনের লোক কিভাবে দলের পদ-পদবি পায় জানতে চাইলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যুবলীগ আদর্শভিত্তিক সংগঠন।

চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত কেউ যুবলীগে থাকতে পারবে না। দলীয় ফোরামে খোঁজ নিয়ে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

তুরাগ-উত্তরায় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে, নিজেদের আখের গোছাতে দারুণভাবে ঐক্যবদ্ধ তুরাগ থানা যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের চার নেতা। এঁরা হচ্ছেন যুবলীগের নিত্য ঘোষ, নাসির উদ্দিন নাসিম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাদেকুর রহমান ও শাহীন। এঁরাই ওই এলাকার সংগঠন দুটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

আদায় করা চাঁদাবাজির টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে বিত্তবান তাঁরা। চার নেতার যৌথ চাঁদাবাজির মূল নিয়ন্ত্রক নাসির উদ্দিন নাসিম। আদায় করা চাঁদাবাজির টাকা তিনিই বিলিবণ্টন করেন।

বিআরটিএর উত্তরা অফিসে নাসির উদ্দিন নাসিমের ছাড়পত্র নিয়ে তবেই কাজ করতে হয় দালালদের। বিআরটিএ অফিসে দালালি করেন এমন একজন বলেন, ‘আমরা প্রায় ২৫ জন এখানে কাজ করি। কিছু টাকা বেশি নিয়ে বিভিন্ন লোকের গাড়ির কাগজপত্র ঠিক করে দিই। কেউ লাইসেন্স করতে এলে লাইসেন্স পাইয়ে দিতে সহায়তা করি। বিনিময়ে বাড়তি কিছু অর্থ নিই। মাঝেমধ্যে র‌্যাব পুলিশ আমাদের ধরে নিয়ে যায়, মারপিট করে। অথচ কেউ দেখে না, দিনে আমরা যদি এক হাজার টাকা আয় করি, এ থেকে ৭০০ টাকা দিতে হয় নাসির উদ্দিন নাসিমকে। তার অনুমতি ছাড়া এখানে কেউ দালালির কাজ করতে পারে না।’

সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে দালালচক্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা ছাড়াও বিআরটিএতে এই চক্রের আয়ের আরেকটি বড় উৎস হলো প্রশিক্ষণ গাড়ি ভাড়া দেওয়া। বিআরটিএর উত্তরা অফিসে চালক লাইসেন্স নিতে আসা যুবক রাকিব হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গাড়ি চালাতে পারি কি না তা দেখার জন্য আমাকে একটি লক্কড়-ঝক্কড় গাড়িতে ওঠানো হয়। মিনিট দুই গাড়ি চালাই। এর জন্য দালালরা আমার কাছ থেকে ২০০ টাকা আদায় করে।’

একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, উত্তরা বিআরটিএ অফিসে দুটি প্রশিক্ষণ গাড়ি আছে। গাড়ি দুটি সরবরাহ করেছেন নাসির উদ্দিন নাসিম। কেউ প্রশিক্ষণ পরীক্ষা দিতে এলে গাড়িভাড়া বাবদ দিতে হয় ২০০ টাকা। বিআরটিএর অফিস রেকর্ডে দেখা যায়, প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় হাজার লোক প্রশিক্ষণ পরীক্ষায় অংশ নিতে আসে। এ হিসাবে শুধু গাড়িভাড়া থেকেই আদায় করা হয় প্রতিদিন দেড় লাখ টাকা। দালালদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সব মিলিয়ে বিআরটিএর অফিস থেকে প্রতি মাসে অবৈধ আয় হয় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা। এই টাকা নাসির উদ্দিন নাসিমের কাছে জমা হওয়ার পর তিনি ভাগ-বাটোয়ারা করেন।

বিআরটিএতে দালালচক্রের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআরটিএ উত্তরা অফিসের সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমরা মানুষের সেবা দিই। কেউ এমন কোনো অভিযোগ দিতে পারবে না। অফিসের কেউ বলেছে কি আপনারা দালালের কাছে যান? তার পরও লোকজন কেন দালালের কাছে যায়, সেটাই বুঝি না।’

যৌথ চাঁদাবাজির আরেকটি বড় খাত তুরাগ থানার বিভিন্ন এলাকায় চলাচল করা যন্ত্রচালিত রিকশা। একাধিক যন্ত্রচালিত রিকশার চালক কালের কণ্ঠকে বলে, ‘আমরা প্রতি মাসের শুরুতে এক হাজার টাকা জমা দিয়ে টোকেন নিই। এটা রিকশা চালানোর অনুমতি। ওই টাকা নেয় নাসির উদ্দিন নাসিম।’ রিকশাচালকরা জানায়, তুরাগ থানা ও উত্তরা থানা এলাকায় প্রায় তিন হাজার যন্ত্রচালিত রিকশা চলাচল করে। এই হিসাবে এ খাত থেকে আয় হয় প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এই টাকাও নাসির উদ্দিন নাসিমের মাধ্যমে বণ্টন হয় চার নেতার মধ্যে।

এ ছাড়া নাসির উদ্দিন নাসিম তুরাগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় দোকান বসিয়ে চাঁদা আদায় করছেন। তুরাগ নদের তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে সেখানে অবৈধ বালু বিক্রির ব্যবসা করছেন। ১০ নম্বর সেক্টরে রাজউকের আটটি বরাদ্দ হওয়ার অপেক্ষায় থাকা প্লটে রিকশার গ্যারেজ করে ভাড়া আদায় করছেন তিনি।

২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের মিটিং-মিছিলে পা মেলাতে থাকেন নাসিম। ২০১৪ সালে যুবলীগের নেতৃত্বে আসার পর থেকে নাসির উদ্দিন নাসিমের ব্যক্তিগত সম্পদ বাড়তে শুরু করে।

তুরাগ থানার চণ্ডালভোগ মসজিদের পাশে পাঁচ কাঠা জায়গার ওপর পাঁচতলা ডাবল ইউনিটের ভবনটি তাঁর। এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, ওই এলাকায় বর্তমানে প্রতি কাঠা জমির মূল্য এক থেকে দেড় কোটি টাকা। সে হিসাবে ভবনের জায়গার মূল্য প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা। আর ভবনটি নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা। এ ছাড়া চণ্ডালভোগ এলাকায় তাঁর আরো একটি বাড়ি আছে ১২ কাঠা জমির ওপর।

এসব বিষয়ে নাসির উদ্দিন নাসিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিআরটিএর দালালি আমি নিয়ন্ত্রণ করি না। শুনেছি দলের কিছু লোক নিযন্ত্রণ করে। তবে কারা, সঠিক তা জানি না। তুরাগে আমাদের পারিবারিক সম্পত্তি আছে। সেখানে বাড়ি করেছি। আর দলীয় পদ ব্যবহার করে চাঁদাবাজির প্রশ্নই ওঠে না।’

নিজের কোন আয় থেকে বাড়ি করার টাকা পেয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে চুপ থাকেন নাসিম। অস্বীকার করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে বালু ব্যবসার বিষয়টিও।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক

জঙ্গি সন্দেহে বাংলাদেশি গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
কূটনৈতিক প্রতিবেদক
শেয়ার
জঙ্গি সন্দেহে বাংলাদেশি গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ

জঙ্গি সন্দেহে মালয়েশিয়ায় সম্প্রতি কয়েকজন বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জোরালো অবস্থান তুলে ধরে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশিদের বিষয়ে তথ্য দিয়ে তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

মালয়েশিয়া সফররত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গতকাল শুক্রবার কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো মোহাম্মদ বিন হাজি হাসানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ৩২তম আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামে (এআরএফ) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ফাঁকে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার পুলিশ সম্প্রতি জঙ্গিবাদের অভিযোগে যে বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার করেছে তাঁদের ব্যাপারে তদন্তে বাংলাদেশ সরকার মালয়েশিয়ার সঙ্গে কাজ করবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গতকাল মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং তথ্য ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে অভিযোগের তদন্তে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা চান। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ ও সহযোগিতা সহজতর করার আশ্বাস দেন।

এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে দুই নেতা বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। উভয় পক্ষ বাংলাদেশে চলমান সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট, এলডিসি-পরবর্তী সহায়তা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের উপমন্ত্রী ও প্রতিনিধিদলের প্রধানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।

সেখানে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ২০০৬ সালে এআরএফের সদস্য পদ লাভ করে। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৭টি সদস্যের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই ফোরাম প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ এআরএফের দুটি অগ্রাধিকার খাত সন্ত্রাসবাদ দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ এবং দুর্যোগ ত্রাণ-এর সহসভাপতিত্ব করছে। এআরএফ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পরবর্তী অধিবেশন আগামী বছর ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গতকাল বিকেলে আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেন। তিনি জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রভাব বিবেচনা করে রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি আরো বেশি মনোযোগ দেওয়ার আহবান জানান। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আসিয়ান সদস্যদের বাংলাদেশের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার প্রচেষ্টাকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করার আহবান জানান।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. ফরহাদুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।

মন্তব্য
জাতিসংঘের তথ্য

১৮ মাসে আরো দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
১৮ মাসে আরো দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে

মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ও নির্যাতনের কারণে গত ১৮ মাসে বাংলাদেশে নতুন করে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়, ২০১৭ সালে মায়ানমার থেকে প্রায় সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর এটি সর্বোচ্চসংখ্যক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা। নতুন আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

ইউএনএইচসিআর জানায়, গত জুন পর্যন্ত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নতুন এক লাখ ২১ হাজার রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে অনেককে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি, যদিও তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করছে।

কক্সবাজারের মাত্র ২৪ বর্গকিলোমিটার জায়গায় প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের কারণে এটি এরই মধ্যে বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পে পরিণত হয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, নতুন করে আরো রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় বিদ্যমান সহায়তাব্যবস্থার ওপর চরম চাপ পড়ছে।

খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ও আশ্রয়ের জন্য নতুন করে আগতরা অনেকাংশেই আগের রোহিঙ্গাদের ওপর নির্ভরশীল। এরই মধ্যে দাতাগোষ্ঠী তহবিল সংকটে পড়ায় গুরুত্বপূর্ণ সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি আছে। ডিসেম্বরের মধ্যে খাদ্য সহায়তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এ ছাড়া দুই লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর শিক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে।

মন্তব্য
ভারতে বাঙালিবিরোধী ষড়যন্ত্র

দিল্লির কাছে কারণ জানতে চেয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
দিল্লির কাছে কারণ জানতে চেয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দিল্লিতে বাঙালি উচ্ছেদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। ভারতজুড়ে বাঙালিবিরোধী এক অপচেষ্টা চলছে বলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ তোলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই উদ্যোগ নিলেন।

দক্ষিণ দিল্লির বসন্ত কুঞ্জে সম্প্রতি চলা উচ্ছেদ অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে এই আবেদন করা হয়। এই উচ্ছেদ অভিযান এমন জায়গায় হচ্ছে, যেখানে মূলত পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি অভিবাসী শ্রমিকরা থাকেন।

তাঁদের মধ্য থেকে বাংলাদেশি চিহ্নিতকরণের নামে উচ্ছেদ অভিযান চলছে বলে অভিযোগ। গত বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অভিযোগ করেছেন।

মমতার অভিযোগের পরেই আদালতে ওই ঘটনার বিরুদ্ধে আবেদন করা হয়েছে। তবে সেটি তিনি করেননি।

এ বিষয়ে ওড়িশা রাজ্য থেকে বাঙালি উচ্ছেদ নিয়ে আরেকটি মামলাও হাইকোর্টে চলছিল।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্য সচিবকেও এ বিষয়ে আদালতকে পৃথকভাবে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে দিল্লির মুখ্য সচিবের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথাবার্তা বলতে হবে।

সূত্র : টেলিগ্রাফ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
হেফাজতের বিক্ষোভ

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় খোলার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। ছবি : কালের কণ্ঠ

বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে এটি স্পষ্ট হুমকি বলে মন্তব্য করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, জাতিসংঘ বা কোনো বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে মানবাধিকার ইস্যুতে হস্তক্ষেপ দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী। এ ধরনের কার্যালয় স্থাপন সরকারের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতার প্রতিফলন। দেশীয় ইসলামী মূল্যবোধ, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটি দীর্ঘমেয়াদে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে এ মন্তব্য করেন হেফাজতের সিনিয়র নেতারা। সমাবেশে বক্তারা জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আঞ্চলিক কার্যালয় ঢাকায় স্থাপনের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানান।

সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলোঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, দেশের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেশের স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে দিতে হবে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম-খুনের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী, মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা জোবায়ের রশীদ, মাওলানা এহতেশামুল হক সাকী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে শুরু হয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মাওলানা মামুনুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমরা আপনাদের সহযোগিতা করেছি। শহীদদের রক্তের বিনিময়ে গঠিত এই সরকারকে জনগণের মতামত উপেক্ষা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো অধিকার দেওয়া হয়নি।

জাতিসংঘের তথাকথিত মানবাধিকার বাস্তবে ইসলাম ও মানবতার পরিপন্থী পশ্চিমা আদর্শের হাতিয়ার। খাল কেটে কুমির আনার অধিকার সরকারকে কেউ দেয়নি।

হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আজ আমরা শুধু প্রাথমিক প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু সরকার যদি এই সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে সরে না আসে, তাহলে হেফাজতে ইসলাম সারা দেশে তীব্র আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবে। প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে হলেও আমরা এই মানবাধিকার কার্যালয় ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হতে দেব না।

মামুনুল হক বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের এজেন্ডা ও ইতিহাস আমরা জানি। তাই বাংলাদেশে তাদের ডেকে আনার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। জনগণ তা মেনে নেবে না।

হেফাজতের নায়েবে আমির মুফতি আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, বর্তমান সরকার সুযোগের অপব্যবহার করছে। বিশ টাকার নোট থেকে মসজিদের ছবি সরিয়ে মন্দিরের ছবি দিয়েছে। দেশে মানবাধিকার কার্যালয় করার ম্যান্ডেট এ সরকারকে দেওয়া হয়নি।

তিনি জানান, প্রয়োজনে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও এবং ঢাকা ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ