<p>প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে কয়েক দিন ধরেই ‘নিরাপত্তাহীনতায়’ ভুগছিলেন নব্বইয়ের দশকের বিশিষ্ট কবি হেনরী স্বপন। বিষয়টি কোতোয়ালি থানার পুলিশকে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেনও। অথচ গতকাল মঙ্গলবার সকালে তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়েরের পর দুপুরেই তাঁকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর বিশেষ ব্যবস্থায় আদালত ঘুরে কবির ঠাঁই হয়েছে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে। কবিকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে বরিশাল নগরীসহ সারা দেশের মিডিয়া-সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।</p> <p>হেনরী স্বপনকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল রাত ৮টায় বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে বরিশাল নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে অবিলম্বে হেনরী স্বপনের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। পুলিশের সব ধরনের অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন প্রেস ক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটি। এদিকে আজ ঢাকায় শাহবাগে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।</p> <p>কবি হেনরী স্বপন বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক মতাবাদের সহসম্পাদক ও বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যকরী কমিটির সদস্য। এ ছাড়া লিটল ম্যাগাজিন ‘জীবনানন্দ’ ও সাময়িকী ‘ইতিবৃত্ত’র সম্পাদক তিনি।</p> <p>এ ব্যাপারে পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, বরিশাল নগরের ক্যাথলিক চার্চের ফাদার লেকা বেলি গোমেজ বাদী হয়ে হেনরী স্বপন, ইনডিপেনডেন্টস টিভির ক্যামেরাপারসন জুয়েল সরকার ও আলফ্রেড সরকারের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওই মামলায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিষয় উল্লেখ রয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই হেনরী স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, হেনরী স্বপন নিরাপত্তা চেয়ে থানায় যে লিখিত দিয়েছিলেন, সেটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। সেটিরও পুলিশ তদন্ত করছে।</p> <p>বরিশাল ক্যাথলিক ডাইওসিসের বিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদারের ব্যাপারে কবি হেনরী স্বপন দৈনিক মতবাদের অনলাইনে সংবাদ পরিবেশন করেন। সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রকাশ করেন।</p> <p>জানা গেছে, দুপুর সোয়া ২টার দিকে চারজন সাদা পোশাকধারী পুলিশ হেনরী স্বপনকে তাঁর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে সরাসরি আদালতে নিয়ে যায়। বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।</p> <p>কবি হেনরী স্বপন গত ২৩ এপ্রিল ফেসবুকে নিজের ওয়ালে লেখেন, ‘রোম যখন পুড়ছিল তখন সম্রাট নিরো নাকি বাঁশি বাজাচ্ছিল।’ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি লেখেন, ২১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর গির্জায় যখন আত্মঘাতী হামলায় শত শত মানুষ নিহতের আকস্মিকতায় শোকসন্তপ্ত বিশ্ববাসী, তখন বরিশাল ক্যাথলিক ডাইওসিসের বিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার চার্চ চত্বরে করছেন ধামাকা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।</p> <p>বিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদারের ব্যাপারে কবি উল্লেখ করেন, চার্চের পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শুধু নিজের ভাই, ভাইয়ের বউ এবং আত্মীয়দের কাজ দিয়েছেন। উদয়ন স্কুলের সদ্যোবিদায়ি প্রধান শিক্ষক ব্রাদার আলবার্ট রত্ন সিএসসির কাছ থেকে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে লক্ষাধিক টাকা নিজের কাজের জন্য নিয়েছেন। স্কুলের তহবিলের সঠিক হিসাব দিতে না পেরে ব্রাদার রত্নকে বরিশাল ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে।</p> <p>এ প্রসঙ্গে কবি হেনরী স্বপন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শনিবার আনুমানিক রাত আড়াইটার দিকে বাসার জানালায় দাঁড়িয়ে যুবক কণ্ঠের অজ্ঞাতপরিচয় দুজন আমাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়। এর পর থেকে আমি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা চেয়ে রবিবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তারা সেটি নিয়ে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে বলে আমাকে জানায়নি।’</p> <p>বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ বলেন, ‘হেনরী স্বপনকে এভাবে গ্রেপ্তারের ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। এর আগে হেনরী স্বপনের বাসায় গিয়ে যে হুমকি দেওয়া হয়েছে, সেটা ছিল উদ্বেগের বিষয়। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি পুরো ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি জানাই।’</p> <p>বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক স্বপন খন্দকার বলেন, ‘হেনরী স্বপনের বিরুদ্ধে মামলাটি পুরোপুরি হয়রানিমূলক। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে অন্যায়ভাবে লুকোচুরি খেলেছে। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং হেনরী স্বপনের নিরাপত্তা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও তাঁর মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’</p> <p> </p> <p> </p>