ঢাকা, শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
২৭ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
২৭ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ মহররম ১৪৪৭

‘পূর্বাচল ট্রাস্ট সিটি’র প্রতারণায় নিঃস্ব ৭ শতাধিক গ্রাহক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
‘পূর্বাচল ট্রাস্ট সিটি’র প্রতারণায় নিঃস্ব ৭ শতাধিক গ্রাহক

রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় ‘পূর্বাচল ট্রাস্ট সিটি’ নামে ভুঁইফোড় এক আবাসন কম্পানির প্রতারণায় নিঃস্ব হয়েছে সাত শতাধিক গ্রাহক। বাহারি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে এসব গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটি হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক শ কোটি টাকা। ভুঁইফোড় এই প্রতিষ্ঠানের ফাঁদে পা দিয়ে এখন প্লট বুঝে পাচ্ছে না গ্রাহকরা। ফেরত পাচ্ছে না বহু কষ্টে অর্জিত অর্থও।

একই সঙ্গে জমি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকরা।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২১ নম্বর সেক্টরের কাছে মাত্র ৯ বিঘা জমি কিনে এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছে বিক্রি করেছে তিন শ বিঘা জমির বিভিন্ন মাপের তিন হাজার কাঠার প্লট। ভুঁইফোড় এই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন ও প্লট বিক্রিতে রাজউকের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তার পরও চলছে ‘ট্রাস্ট সিটির’ সব ধরনের কার্যক্রম।

শতাধিক মামলা থাকার পরও ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে

জোরপূর্বক জমি দখল করে স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকদের নিঃস্ব করার অপকৌশলে মেতে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ভুঁইফোড় এই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচারসহ সব ধরনের অপতৎপরতা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাজউক কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের কুলিয়াদী ও রঘুরামপুর মৌজায় প্রকল্প দেখানো হয়েছে পূর্বাচল ট্রাস্ট সিটির। ২০১২ সালে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন শারমিন সুলতানা লিপি এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে আছেন মো. মাহবুবুল আলম।

ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানটি প্লট বিক্রি শুরু করে ২০১৫ সালে। আর রাজউকের পূর্বাচল সিটির পাশে তুলনামূলক কম দামে প্লট পাওয়ার আশায় এদের ফাঁদে পা দেয় সাধারণ গ্রাহকরা।

বাহারি বিজ্ঞাপনে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে কাঠাপ্রতি ১০ লাখ টাকা মূল্যে সাত শতাধিক প্লট বিক্রি করেছে ট্রাস্ট সিটি। এসব গ্রাহকের কাছ থেকে ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানটি হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক শ কোটি টাকা। গ্রাহকদের দেখানো নকশা অনুযায়ী ট্রাস্ট সিটি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গেলে বানাতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়, খেলার মাঠ, লেক, রাস্তা, হাসপাতাল ও শপিংমল।

সে ক্ষেত্রে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য ট্রাস্ট সিটির প্রয়োজন তিন শ বিঘার বেশি জমি। কিন্তু প্রকল্প এলাকায় এই প্রতিষ্ঠানের জমি রয়েছে মাত্র ৯ বিঘা। তবে প্রকল্প এলাকায় ৫০ বিঘা জমি কেনার দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় জমির দালাল বেলায়েত হোসেন টিক্কা ভুয়া দাতা দিয়ে সাধারণ কৃষকের বহু জমি ট্রাস্ট সিটির কাছে হস্তান্তর করেছে। এ ছাড়া সাইনবোর্ড টাঙানোর শর্তে কৃষকদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া জমি গত চার বছরে প্লট আকারে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে ট্রাস্ট সিটি। এমনকি ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে দখলে রেখে বেশ কিছু জমির প্লটও বিক্রি করেছে। এ ছাড়া ১৩৬ জন কৃষকের এক শ বিঘা জমিতে জোরপূর্বক কম্পানির সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শিমুলিয়া এলাকার মুরাদ হাসান সিপনের ১৩ শতাংশ, রিপন মিয়ার ৩৯, লুত্ফর রহমানের ১৩, সাজিদুর রহমানের ১৩, মাজহারুল ইসলাম রতনের ২৩, হ্যাপি আক্তারের ১৫, লিলি আক্তারের ১৫, মমতাজ বেগমের ১৫, শফিকুর রহমানের ১৭, বোরহানের ২১ ও কাউসারের ১৪ শতাংশ জমিতে জোরপূর্বক বালু ভরাট করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ ছাড়া স্থানীয় সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কুলিয়াদী মৌজার কুলিয়াদী এলাকার নাসির মিয়ার ২৭ শতাংশ, হাশেম মিয়ার ২৩, আমজাদ হোসেনের ১০০, আনোয়ার হোসেনের ১০০, নান্নু মিয়ার ১০০, ওহাব ভুঁইয়ার ১০০, মোজাম্মেল ভুঁইয়ার ২৬, আজিজুল হকের ১৩, মোস্তফা মিয়ার ২৯, ছালাম মিয়ার ৪৪, হাসমত আলীর ৪৫, শিমুলিয়ার হামিদ মিয়ার ১১, রঘুরামপুর মৌজার রঘুরামপুর এলাকার ঈমান খানের ২২, ফজলুল হক খানের ১২, মোফাজ্জাল হোসেনের ২৬ ও হারুনুর রশিদের ২৬ শতাংশ জমি দখলে নিয়েছে ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানটি।

এ ব্যাপারে কুলিয়াদী এলাকার মহিউদ্দিন, নুরজাহান, নুর আক্তার, নুরুজ্জামান, রঘুরামপুরের ঈমান আলী, শিমুলিয়ার মাজহারুল ইসলাম রতন, কামাল, কাউসার, মুরাদ হাসান সিপন, সফিকুর, রিপন, বোরহান, সানোয়ার, চোরাকাতলার ফজলুল হক ও রঘুরামপুর এলাকার আরমান মিয়া রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর ট্রাস্ট সিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। আর অভিযোগ দায়ের করায় মাজহারুল ইসলাম রতনের বিরুদ্ধে থানায় হয়রানিমূলক মামলা করেছে ট্রাস্ট সিটি কর্তৃপক্ষ। এমনকি তাঁর ভাই মুরাদ হাসান সিপনকে অস্ত্রের ভয় দেখাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানের সন্ত্রাসীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রাস্ট সিটি প্রকল্পের এসব বেআইনি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য মাসিক চুক্তিতে সন্ত্রাসী ও মাস্তানদের লালন করা হচ্ছে। হিরনাল এলাকার তারা মিয়ার ছেলে হুমায়ুন কবীর মিঠু ও তার সহযোগী কামরুল হাসান নয়ন, মোতাহার ফকির, হালিম মোল্লা, জামান, রেজু, শিবজন, বাবুল, ছলু, রুবেলসহ অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী পেশিশক্তি আর অস্ত্রের জোরে এলাকায় ট্রাস্ট সিটির স্বার্থ নিয়ন্ত্রণ করছে। সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় গেলে গ্রাহকদের পাশেই দাঁড়ানো থাকে এসব সন্ত্রাসী। স্থানীয় কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সাইনবোর্ড টাঙানোর কাজও ওরাই করে।

ট্রাস্ট সিটি থেকে জমি কিনে প্লট না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে শতাধিক গ্রাহক। স্থানীয় ১৩৬ জন জমির মালিকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাস্ট সিটির প্রকল্পে ন্যূনতম জমি না কিনে এবং রাজউকের অনুমোদন না নিয়ে সংস্থাটির বিজ্ঞাপন প্রচার, জমি দখল, বালু ভরাটসহ প্লট বিক্রির ওপর ২০১৭ সালের ১২ জুলাই নিষেধাজ্ঞা জারি করে রাজউক। রাজউকের সচিব সুশান্ত চাকমা স্বাক্ষরিত ওই নিষেধাজ্ঞার অনুলিপি দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) পাঠানো হয়। কিন্তু রাজউকের এই নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এলাকার মাস্তান ও সন্ত্রাসীদের সহায়তায় সব কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানটি।

এ ব্যাপারে ট্রাস্ট সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুবুল আলম বলেন, ‘একটি বড় প্রকল্প তৈরি করতে গেলে কিছু ভুল-ত্রুটি থাকবেই। সঠিক হিসাব দেখাতে না পারলেও এলাকায় বহু জমি আমরা কিনেছি। সাত শতাধিক প্লটও বিক্রি হয়েছে। ২৫ জনের কাছে প্লট হস্তান্তরও করা হয়েছে।’ এলাকার লোকজন ভালো নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের বদনাম ও আমাদের হয়রানি করার জন্য তারা অপপ্রচার ও মিথ্যা অভিযোগ করছে।’

প্রকল্প এলাকায় মাস্তান পোষা প্রসঙ্গে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘একটি বড় প্রজেক্ট দাঁড় করাতে গেলে কিছু লোক পালতে হয়। আর ওরা সন্ত্রাসী নয়, আমার স্টাফ।’

রাজউক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান এ ব্যাপারে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভুঁইফোড় এই প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের অনুমোদন নেই। তাই গ্রাহকদের কাছে অনুরোধ রইল ওদের বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য। দ্রুতই ওদের সাইনবোর্ড অপসারণ করা হবে।’

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত গ্রেপ্তার
আবুল বারকাত

অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুদকের মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, আবুল বারকাতের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা থাকায় ধানমণ্ডির ৩ নম্বর সড়কের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারের পর তাঁকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার তাঁকে দুদকে সোপর্দ করা হবে।

আবুল বারকাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি  বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। পাশাপাশি তিনি হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অবৈতনিক প্রধান উপদেষ্টা।

টানা দুইবার তিনি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ছিলেন। তাঁর জন্ম কুষ্টিয়া শহরে। বাবা আবুল কাশেম ছিলেন স্বনামধন্য চিকিত্সক।

অ্যাননটেক্স গ্রুপের নামে ২৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল বারকাত, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন আদালত।

দুদকের মামলার অন্য আসামিরা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান, সাবেক সহকারী পরিচালক ইসমত আরা বেগম, জনতা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম আজাদ, সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, মো. ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দিপু, আর এম দেবনাথ, মো. আবু নাসের, সঙ্গীতা আহমেদ, নিতাই চন্দ্র নাথ এবং অ্যাননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. ইউনূস বাদল।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আতিউর রহমান, আবুল বারকাত এবং তাঁর সহযোগীরা বিভিন্ন অনৈতিক উপায়ে ওই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তবে ২০২২ সালে ঋণ অনিয়ম নিয়ে দুদকের তদন্তে পর্যাপ্ত প্রমাণ না পাওয়ায় তখন মামলার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হয় আবুল বারকাতকে। ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি পাঁচ বছর এই পদে দায়িত্ব পালন করেন।

 

মন্তব্য

বাঁশ শিল্পের প্রদর্শনী

শেয়ার
বাঁশ শিল্পের প্রদর্শনী
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে বাঁশ শিল্পের প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে পছন্দের জিনিস দেখছেন দর্শনার্থীরা। গতকাল তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ
মন্তব্য

যানজট

শেয়ার
যানজট
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৩৪ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে। আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল বিশ্বরোড হয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর পর্যন্ত এই যানজট শুরু হয় গত বুধবার রাতে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত যানজট অব্যাহত ছিল। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য

চট্টগ্রামে নারীকে ১১ টুকরা করে হত্যা স্বামী পলাতক

    দেশজুড়ে অপঘাতে মৃত্যু ৮
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
চট্টগ্রামে নারীকে ১১ টুকরা করে হত্যা স্বামী পলাতক

চট্টগ্রামে এক নারীকে ১১ টুকরো করে স্বামী পালিয়ে গেছে। এছাড়া দেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের অপঘাতে ৮ ব্যক্তি মারা গেছেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন:

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার পাহাড়িকা হাউজিং সোসাইটির এক বাসায় ফাতেমা বেগম (৩২) নামের এক নারীকে ১১ টুকরা করে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার পর থেকে তাঁর স্বামী মো. সুমনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

পুলিশ ধারণা করছে, স্ত্রীকে খুন করে পালিয়ে গেছেন স্বামী। বুধবার রাত ১টার দিকে আর কে টাওয়ার নামের একটি ভবনের দশম তলায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত ফাতেমার স্বামী মো. সুমন পেশায় গাড়িচালক।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী মোহাম্মদ মাহফুজ হাসান সিদ্দিকী কালের কণ্ঠকে বলেন, ১০ বছর আগে ফাতেমার সঙ্গে সুমনের বিয়ে হয়েছিল।

তাঁদের আট বছর বয়সী একটি ছেলে আছে। ঘটনার সময়ে শিশুটি আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া চলে আসছিল। এরই জের ধরে বুধবার রাতে তাঁকে খুন করা হয়েছে।
তাঁর পুরো শরীর ক্ষতবিক্ষত করার পর কেটে ১১ টুকরা করা হয়। তিনি আরো বলেন, লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে তাঁর স্বামী পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তারের পর হত্যার সঠিক কারণ জানা যাবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফাতেমাকে খুনে ছুরি ও চাপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে টুকরা টুকরা করা হয়েছে। হাড় থেকে মাংস কেটে ফেলা হয়েছে। ১১টি টুকরা করে ঘরের মেঝেতে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে খুনি।

রাউজান : চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব মো. সেলিম উদ্দিনকে গুলি করে হত্যার পাঁচ দিনের মাথায় এবার তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী যুবদলকর্মী দিদারুল আলম নুংকুর (৪০) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার পশ্চিম বেতবুনিয়ার লুঙ্গিপাড়া এলাকার পাহাড়ি চরা থেকে তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়। বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টার পর তার এ মরদেহ উদ্ধার হয়। নুংকুর বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ সমশের পাড়ায়। তিনি মৃত জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে।

যশোর : যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ঘোষনগর গ্রামে স্টিলের বাক্সের ভেতর থেকে সুচিত্রা দেবনাথ (৫৮) নামের এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে নিজ ঘরের কাপড়ের বাক্সে লুকিয়ে রাখা হয় বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী তপন দেবনাথকে আটক করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে ৯ জুলাই রাত ১১টার দিকে। নিহত সুচিত্রা দেবনাথ বাঘারপাড়া উপজেলার বাসুয়াড়ী ইউনিয়নের ঘোষনগর গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় তপন দেবনাথকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা থেকে ঢেনা মুর্মু (৫৫) নামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক ব্যক্তির পানিতে ভাসমান প্রায় অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি নাচোল সদর ইউনিয়নের পীরপুর সাহানাপাড়া গ্রামের বুদ্ধাই মুর্মুর ছেলে। স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, ঢেনা মুর্মু গত সোমবার (৭ জুলাই)   সকাল ১১টার দিকে একই ইউনিয়নের প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরের  ঝিকরা গ্রামে তাঁর নাতনির বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এরপর তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। পরে বুধবার (৯জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঝিকড়া গ্রামসংলগ্ন একটি বিলের কচুরিপানার মধ্যে ঢেনার ভাসমান মরদেহ দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় মাদকাসক্ত  ছেলে  মাহাবুর ইসলাম বাবু (২৮) মারধর ও ইট দিয়ে আঘাত করে মা হেনা বেগমকে আহত করে। স্ত্রীকে রক্ষা করতে গেলে বাবা শিশ মোহাম্মদকে গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যাচেষ্টার পর স্বজন ও প্রতিবেশীদের প্রহারে বাবু নিহত হন। নিহত বাবুর বাড়ি রানীহাটী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের রামচন্দ্রপুরহাট বগিপাড়া গ্রামে। অভিযোগ রয়েছে, বাবু মাদক সেবনের টাকার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে অত্যাচার করে আসছিল।

পীরগঞ্জ : রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় আখিরা নদী থেকে আক্তার প্রধান সুজন (৩৬) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (১০ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার আখিরা নদীতে ভাসমান অবস্থায় কাপড়বিহীন লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে পীরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে। নিহত আক্তার প্রধান সুজন উপজেলার থানাপাড়া  গ্রামের বাসিন্দা।

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহগী ইউনিয়নের হাটুলিয়া গ্রামের বসতঘর থেকে এক তরুণের গলা কাটা ও ক্ষতক্ষিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই সময় লাশটি ছিল খাটের ওপর মশারির নিচে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছে রাতে বন্ধুদের নিয়ে ওই তরুণ মা-বাবাহীন ঘরে আড্ডায় মত্ত ছিল।  নিহত মো. রাকিবুল ইসলাম (১৯) ওই গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাটুলিয়া গ্রাম থেকে জুবায়ের (১৯, রাকিব মিয়া (২১) ও কাউসার (১৮) নামে তিন তরম্নণকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে।

কালিয়াকৈর : গাজীপুরের কালিয়াকৈরে শালবনের ভেতর থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার বড় গোবিন্দপুর বিন্নার চালা ফুটবল খেলার মাঠের পাশে শাল বনের ভেতর থেকে লাশটি উদ্ধার করে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ। নিহতের পরিচয় জানা যায়নি। তার বয়স আনুমানিক (৪০)। তার পরনে জিন্সের প্যান্ট ও খয়েরি রঙের টি শার্ট ছিল।

টঙ্গী : ফ্লাইওভার থেকে টঙ্গীতে নামার সময় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত মাহফুজুর রহমান (২১) বরিশাল সরকারি হাতেম আলী কলেজে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। বুধবার (৯ জুলাই)  রাত ১২ টার পর  ঢাকা-ময়মনসিংহগামী মহাসড়কের আব্দুল্লাহপুর ফ্লাইওভার থেকে টঙ্গীর সেনা কল্যাণ ভবনগামী সংযোগ সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাহফুজুর রহমান বরিশাল সদর উপজেলার হায়াতসার গ্রামের ফরিদ উদ্দিনের ছেলে। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি টঙ্গী পূর্ব থানাধীন ব্লু ফ্যাশনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ