দুই মেয়াদে টানা ১০ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বর মাসে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগ বর্তমানে নির্বাচনী প্রচারণায় অত্যন্ত সরব। দলীয় মনোনয়ন পেতে বিভিন্ন স্তরের নেতারা ভীষণ ব্যস্ত।
মনোনয়ন নিয়ে আ. লীগে কোন্দল জামায়াত নিয়ে সংকটে বিএনপি
এমদাদুল হক মিলন, দিনাজপুর

তবে দিনাজপুর জেলায় এর বিপরীত অবস্থা বিরাজ করছে বিএনপিতে। খালেদা জিয়ার পারিবারিক আসন হিসেবে পরিচিত সদর আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত না হলেও অন্য পাঁচটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের নিয়েও কিছুটা সংকটে রয়েছে বিএনপি।
দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনটি ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে চলে যায় জামায়াতের দখলে। এরপর জায়ায়াতের সংসদ সদস্য আব্দুল্যাহ আল কাফির মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শিল্পপতি মনজুরুল ইসলাম মঞ্জু। তাঁর মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত। তবে জামায়াতের বীরগঞ্জ শাখার উপজেলা আমির ও পৌর মেয়র মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।
দিনাজপুর-২ (বোচাগঞ্জ-বিরল) আসনটিতে গত দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তবে এবার এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সতিশ চন্দ্র রায়ের ছেলে কেন্দ্রীয় উপকমিটির স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সহসম্পাদক ডা. মানবেন্দ্র রায় মানব। তিনি এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীতে একদিকে খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি অপরদিকে মানবেন্দ্র রায় মানব পৃথক কর্মসূচি পালন করেন, যা ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির তিনজন প্রার্থীর মধ্যে সাবেক সেনাপ্রধান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি লে. জেনারেল (অব.) মাহাবুবুর রহমানের মনোনয়ন একপ্রকার নিশ্চিত। এ ছাড়া শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক মনজুরুল ইসলাম ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাদিক রিয়াজ চৌধুরী পিনাক মনোনয়নপ্রত্যাশী। আবার বোচাগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির সাংগঠনিক দ্বন্দ্ব অত্যন্ত প্রকট। এখানে দুটি গ্রুপ কেউ কারো নির্দেশ মানতে রাজি নয়।
দিনাজপুর-৩ (সদর) সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির মনোনয়ন নিশ্চিত বলে মনে করছে দলীয় নেতাকর্মীরা। এর বাইরে আরো কজন মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও তাদের মাঠে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু দলের সাধারণ কর্মীরা মনে করে, মূল দলের সঙ্গে হুইপ ইকবালুর রহিমের দূরত্ব অনেক। আগামী নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বিপরীতে এ আসনে বিএনপির অবস্থা টালমাতাল। খালেদা জিয়ার বড় বোন সাবেক মন্ত্রী খুরশীদ জাহান হকের মৃত্যুর পর এ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল অত্যন্ত প্রকট হয়ে ওঠে। তার জের এখনো চলছে। দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এ কারণে এ আসনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজেই প্রার্থী হতে পারেন। অথবা প্রয়াত মন্ত্রী খুরশীদ জাহান হক চকলেটের ছেলে শাহরিয়ার আকতার হক ডন প্রার্থী হবেন। এ আসনে বিএনপির আরো দুজন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন।
দিনাজপুর-৪ (খানসামা-চিরিরবন্দর) আসনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। এ আসনে আওয়ামী লীগে কোনো কোন্দল নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি এ আসনে মনোনয়ন পাবেন এটা সবাই নিশ্চিত। তার পরও তিনজন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। এ তিনজন এলাকায় গণসংযোগও চালাচ্ছেন। এঁদের মধ্যে ডা. আমজাদ আলী প্রচারণা চালাতে গেলে খানসামা থানা পুলিশ তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে অবশ্য ছেড়ে দেয়।
এ আসনে বিএনপির প্রার্থী তারেক রহমানের লোক হিসেবে পরিচিত জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান মিয়া ও শিল্পপতি হাফিজুর রহমান। মাঠে না থাকলেও শিল্পপতি হাফিজুর রহমান যদি মনোনয়ন পেয়ে যান অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে জোটগত নির্বাচন হলে এ আসনে জামায়াতের শক্ত প্রার্থী রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন মোল্লাকে নিয়ে বিপাকে পড়তে পারে বিএনপি।
দিনাজপুর-৫ (পার্বতীপুর-চিরিরবন্দর) আসনটিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মাঠে আছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া জাকির। এই দুজনকে কখনো এক মঞ্চে দেখা যায়নি। জাকারিয়া জাকিরকে বিভিন্ন সময় শোডাউন করতে দেখা যায়।
এ আসন থেকে বিএনপির একক প্রার্থী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শিল্পপতি সাবেক সংসদ সদস্য এ জেড এম রেজওয়ানুল হক। আর কোনো মনোনয়নপ্রত্যাশী আলোচনায় নেই।
দিনাজপুর-৬ (নবাবগঞ্জ-হাকিমপুর-ঘোড়াঘাট ও বিরামপুর) আসন এই জেলার সবচেয়ে বড় সংসদীয় আসন। বর্তমানে এ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হলেও নেতাকর্মীরা যেন নিজ দলেই বিরোধী দলের কর্মী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও এ আসনে ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত দলের নেতাকর্মীরা। এর মূলে রয়েছেন বর্তমান এমপি শিবলী সাদিক, সাবেক এমপি আজিজুল হক চৌধুরী, মনোনয়নপ্রত্যাশী নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলতাফুজ্জামান মিতা। শেষের তিনজন বর্তমান এমপির বিপক্ষে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী দুজন। চিকিৎসক নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও দিনাজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান মিন্টু ও জেলা জামায়াতের আমির আনোয়ারুল ইসলাম।
জাতীয় পার্টি : জেলা জাতীয় পার্টির একটি সূত্র জানায়, তারা এখনো নিশ্চিত নয়, নির্বাচন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে হবে; নাকি এককভাবে। তবে দলটি এককভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তার পরও শেষ পর্যন্ত দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যে নির্দেশনা দেবেন সেভাবেই নির্বাচন করবেন তাঁরা।
দলটি দিনাজপুর-১ আসনে বীরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর ইসলাম, দিনাজপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার চৌধুরী জীবন, দিনাজপুর-৩ আসনে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ শফি রুবেল, দিনাজপুর-৪ আসনে চিরিরবন্দর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আলীম হাওলাদার, দিনাজপুর-৫ আসনে জেলা কমিটির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম এবং দিনাজপুর-৬ আসনে দিনাজপুর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও স্বপ্নপুরীর স্বত্বাধিকারী দেলওয়ার হোসেনকে প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে।
জামায়াত : দলীয় একটি সূত্র জানায়, দিনাজপুর জেলায় জামায়াত ছয়টি আসনেই তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি হিসেবে প্রার্থী চূড়ান্ত করে রেখেছে। দলটি ভেতরে ভেতরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করেছে। জোটগত নির্বাচন হলে তারা দিনাজপুরের ১, ৪ ও ৬ এই তিনটি আসন চাইবে। দলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হলেও বিকল্প উপায়ে নির্বাচন করবে দলটি। তা ছাড়া সতন্ত্র প্রার্থী হতে যেসব শর্ত রয়েছে তা পূরণেও কাজ করছে দলটি। দিনাজপুর-১ আসনে পৌর মেয়র মাওলানা হানিফ, দিনাজপুর-২ আসনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আফজালুর রহমান, দিনাজপুর-৩ আসনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা মজিবর রহমান, দিনাজপুর-৪ আসনে চিরিরবন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন মোল্লা, দিনাজপুর-৫ আসনে পার্বতীপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, ও দিনাজপুর-৬ আসনে জেলা জামায়াতের আমির আনোয়ারুল ইসলামকে প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। দিনাজপুর জেলায় অন্য দলগুলোর কোনো তৎপরতা নেই।
► উন্নয়নের জন্যই ভোট পাবে আওয়ামী লীগ
► জোট ও জোট ছাড়া দুভাবেই বিএনপি প্রস্তুত
সম্পর্কিত খবর

দ্বিতীয় দফার বৈঠক শুরু
শুল্ক আলোচনায় ইতিবাচক সমাধান চায় পোশাক খাত
নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে দ্বিতীয় দফার আলোচনার জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর)। এই আলোচনা ৯ জুলাই শুরু হয়ে ১১ জুলাই পর্যন্ত চলবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প গত ৭ জুলাই ১৪টি দেশের সরকারপ্রধানদের কাছে চিঠি পাঠানোর পর বাংলাদেশ নতুন দফায় আলোচনা শুরু করা প্রথম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন, যিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে উপস্থিত থেকে সরাসরি আলোচনায় অংশ নেবেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন।
এ ছাড়া বাণিজ্যসচিব এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশ নিতে এরই মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেছেন।
শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশ আশা করছে, গত ২৭ জুন অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ফলপ্রসূ আলোচনার অগ্রগতির ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক চুক্তিটি দ্রুত সম্পন্ন করা যাবে।
এর আগে সোমবার বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে।
এদিকে শুল্ক আলোচনায় ইতিবাচক সমাধান আশা করেছে দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাত তৈরি পোশাক শিল্প। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ কার্যকর হলে দেশের রপ্তানি খাতের ওপর বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় একক বাজার। শুরু থেকেই আমরা সরকারকে বলেছি যেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করে।
ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যে গড়ে ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আদায় হয়েছে। নতুন শুল্ক কার্যকর হলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে।

শিশু কান্না


চীনা রাষ্ট্রদূত
বিনিয়োগের অনুকূলে পরিবেশ আনতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও চীনা কম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ আরো অনুকূলে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘চায়না-বাংলাদেশ শিল্প ও সরবরাহ চেইন সহযোগিতা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ কথা জানান রাষ্ট্রদূত।
ইয়াও ওয়েন জানান, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০টি চীনা কম্পানির সঙ্গে বিনিয়োগচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যাদের মোট প্রত্যাশিত বিনিয়োগ অঙ্গীকার কয়েক বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে অবকাঠামো, এনার্জি, বন্দর খাতে বিনিয়োগে চ্যালেঞ্জ আছে।
চায়নিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিএইবি) আয়োজিত সেমিনারে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে যেকোনো দেশ বিনিয়োগ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিডা সহযোগিতা করবে। চীনা বিনিয়োগ বাড়াতে সেখানে বিডার একটি অফিস খোলা হবে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে শীর্ষ দেশও চীন। তবে চীনের সঙ্গে আমাদের এনার্জি ও বিদ্যুৎ খাতে দুই দেশের সহযোগিতার আরো সুযোগ আছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন চীনা কম্পানি আইসিটি খাতে সহযোগিতা করছে। সাইবার নিরাপত্তা খাতেও আমরা চীনের সহযোগিতা পাচ্ছি। তবে আমাদের হাই-টেক পার্কে চীনা বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আরো সুযোগ নিতে পারেন।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন চায়নিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের সভাপতি হান কুন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দেলোয়ারা বেগম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাহেলা আক্তার, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. মোকছেদ আলী ও ঢাকা ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সালাম বেপারী।
১২ ক্ষেত্রে কাজ করতে সম্মত তিন দেশ
সম্প্রতি কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১২টি ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান। বাংলাদেশে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গতকাল ঢাকায় এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
ইয়াও ওয়েন জানান, ১২টি ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছে তিন দেশ। এর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, শিল্প, পরিবেশ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতি সহযোগিতা ইত্যাদি। তিন দেশের সহযোগিতার ভিত্তি হলো পারস্পরিক আস্থা।
এক প্রশ্নের উত্তরে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির পরিপ্রেক্ষিতে চীন সুরক্ষা পেতে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকেও সুরক্ষার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশে ‘অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের সক্ষমতা রয়েছে। আশা করি, বাংলাদেশ এটা কাটিয়ে উঠতে পারবে।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা জামায়াতে ইসলামী ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী। সে লক্ষ্যেই এই বৈঠক হয়েছে। তবে সেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়নি, কেননা নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণের বিষয়।’

কলকাতায় চোরাচালানের কাঠি নাড়ছেন
- তাজুল : রাজনীতি মানেই দুর্নীতি—শেষ পর্ব
বিশেষ প্রতিনিধি

সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের আদি ব্যবসা ছিল চোরাচালান। চোরাচালানের মাধ্যমেই ব্যবসায় হাতিখড়ি হয়েছিল তাঁর। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছেন এই দুর্নীতিবাজ। সেখান থেকে তিনি আবার তাঁর পুরনো ব্যবসা নতুন করে চালু করেছেন।
কলকাতা থেকে তাজুল নিজে এখন দুবাই যাচ্ছেন না। কারণ দুবাইয়ে তাঁর যেসব সম্পদ আছে সেগুলো দেখভাল করার জন্য বিশ্বস্ত লোক রয়েছে। কলকাতা থেকে ব্যবসা পরিচালনা তাঁর জন্য সহজ। এখনো বিপুল অবৈধ অর্থের লেনদেনের লোভেই কলকাতায় থিতু হয়েছেন তিনি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দুবাইয়ে শুধু তাজুল ইসলাম নয়, তাঁর স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামেরও বিপুল সম্পদ রয়েছে। দুবাইয়ে কমপক্ষে চারটি অ্যাপার্টমেন্টের মালিক তাজুল। এসব অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁর ছোট ভাই ও এপিএস এগুলো দেখাশোনা করেন। দুবাইয়ে তাজুল ইসলামের আরো কিছু বিনিয়োগ রয়েছে। সেগুলো আছে অন্যদের নামে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে তাজুলের একাধিক বাড়ি রয়েছে। সেগুলোও আছে অন্যদের নামে। এসব বাড়ি দেখভাল করেন তাজুল ইসলামের ছেলে ও ভাতিজা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডায় তাজুল ইসলামের বাড়ি রয়েছে দুটাি। বাড়ি দুটির মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২০ কোটি টাকা। কানাডার টরন্টোতেও তাজুল ইসলামের বাড়ি আছে। বাড়িটি এক কেয়ারটেকার দেখাশোনা করছেন। দেশে তাজুলের জব্দ হওয়া সম্পদ তাজুলের প্রকৃত সম্পদের তুলনায় সামান্যই। দেশে তাজুলের বেশির ভাগ সম্পদই এখনো অনেকের কাছে অজানা। বিদেশেও তাঁর বহু অবৈধ সম্পদ সম্পর্কে খোঁজ নেয়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, বেনামি সম্পদগুলোর ব্যাপারে দুদক কিছু করতে পারছে না। দুদক শুধু সেটুকুই জব্দ করেছে, যেগুলো তাজুলের নিজের বা তাঁর পরিবারের নামে ছিল। যেসব সম্পদ বেনামে রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে কোনো কিছু করার ক্ষেত্রে আইনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
তাজুল ও তাঁর স্ত্রীর দেশে বিভিন্ন নামে, এমনকি তাজুলের গাড়িচালকের নামেও জমি, ফ্ল্যাট রয়েছে। শুধু রাজধানীর গুলশান, বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় নয়, ধানমণ্ডি, লালমাটিয়া, খিলগাঁও, মিরপুরেও বিনিয়োগ রয়েছে তাঁর। ঢাকা মহানগরে তাজুল ইসলামের কম হলেও ৪২টি ছোট-বড় ফ্ল্যাট রয়েছে। বিভিন্ন শপিং মলে দোকান রয়েছে কম হলেও ৫০টি। এসব ফ্ল্যাট ও দোকান তাঁর সহকারী, গৃহকর্মী ও গাড়িচালকের নামে কেনা হয়েছে। তাজুল ইসলামের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ছিলেন আজমল। আজমলের নামে মিরপুরে একটি এবং জোয়ারসাহারায় আরো একটি অ্যাপার্টমেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। বর্তমানে আজমল পলাতক রয়েছেন। তবে তাঁর নামে কেনা এই অ্যাপার্টমেন্টগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এসব অ্যাপার্টমেন্টে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যাঁরা বাড়িতে ভাড়া থাকেন, তাঁরা জানেন, এটি সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের বাড়ি। ধানমণ্ডি ও খিলগাঁওয়ে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে তাজুল ইসলামের বিশেষ সহকারীর নামে। এ ছাড়া তাজুল ইসলাম যে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার, সেই ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তার নামেও বাড়ি আছে। এগুলোর মূল মালিক তাজুল। তাজুল তাঁদের দিয়ে রেজিস্ট্রি করিয়েছেন। আবার হেবা দলিলের মাধ্যমে এসব সম্পদের নিজের মালিকানা নিশ্চিত করেছেন। বাড়িগুলো এখন পর্যন্ত জব্দ করা হয়নি। এসব বাড়ির ভাড়া বাবদ যে বিপুল অর্থ আসছে, তা হুন্ডির মাধ্যমে কলকাতায় যাচ্ছে তাজুল ইসলামের কাছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, বাংলাদেশে এখনো তাজুল ইসলামের বিপুল বিনিয়োগ আছে, সেখান থেকে অর্থ তোলা হচ্ছে। কুমিল্লা শহরে তাজুল ইসলামের বেনামে একটি বহুতল মার্কেট রয়েছে, যেখান থেকে প্রতি মাসে অন্তত ১০ লাখ টাকা ভাড়া তোলা হয়। ভাড়ার অর্থ সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করছেন। এ কারণে তাজুল কলকাতায় সপরিবারে অবস্থান করছেন নির্ভাবনায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে জানা যায়, কলকাতায় আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা অভাব-অনটনে আছেন। তবে তাজুল নিউ টাউনের একটি সুরম্য ফ্ল্যাটে সপরিবারে থাকছেন। বিশাল ফ্ল্যাটে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভাড়ায় থাকেন বলা হলেও কেউ কেউ মনে করছেন, চোরাচালানের চক্রের পক্ষ থেকে তাঁকে সেখানে রাখা হয়েছে। সেখানে তাঁকে কোনো ভাড়া দিতে হয় না। বাংলাদেশে যেমন রাজকীয়ভাবে তাজুল ইসলাম চলতেন, এখন কলকাতায়ও ঠিক একই রাজকীয় কায়দায় চলছেন। বিলাসবহুল গাড়ি, দামি বাড়ি ছাড়াও তাজুল ইসলামের রয়েছে ব্যক্তিগত কর্মচারী। সম্প্রতি একটি অফিসও নিয়েছেন বলে শোনা গেছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, তাজুল ইসলাম শিগগিরই দুবাই যাবেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পরই তাজুল বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। যাওয়ার আগে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর এপিএস ও ছোট ভাই—দুজনই গত বছরের ৩ আগস্ট দুবাই চলে যান। তাঁরা সেখানেই অবস্থান করছেন। অন্যদিকে তাজুল ইসলামের স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলাম গত বছরের ৫ আগস্টের পর কিছুদিন কলকাতায় অবস্থান করেন। তারপর সেখান থেকে দুবাই গিয়েছিলেন। সেখান থেকে আবার কলকাতায় ফেরেন। সূত্র জানায়, তাজুল ইসলাম তাঁর পুরনো ব্যবসা ঠিকঠাক করে দুবাইয়ে পাড়ি জমাবেন এবং সেখানেই তিনি অবস্থান করবেন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের বেশি সময়ে রাজনীতিকে ব্যবসায় পরিণত করেছেন তাজুল। এই দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি যে বিপুল পরিমাণ সম্পদ লুণ্ঠন করেছেন, তার খুব সামান্যই এখন পর্যন্ত নজরে এসেছে এবং দুদক সেগুলো জব্দ করেছে। এখনো তাঁর বিপুল সম্পদ ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পরও তাজুল বহাল তবিয়তে আছেন।