ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭
যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক

দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে

পার্থ সারথি দাস
পার্থ সারথি দাস
শেয়ার
দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে
যেমন হবে যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে

দেশে প্রথম প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত এক্সপ্রেসওয়ে হতে যাচ্ছে পদ্মা সেতুর সংযোগ ৫৫ কিলোমিটার মহাসড়ক। পদ্মা সেতুর এপার যাত্রাবাড়ী-মাওয়া ও ওপার পাচ্চর-ভাঙ্গা অংশকে যোগ করবে চার লেনের দোতলা পদ্মা সেতু। ২০১৮ সালে পদ্মা সেতু চালুর চার মাসের মধ্যেই পুরো এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শেষ করার কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে পদ্মা সেতু চালুর সময়েই এক্সপ্রেসওয়ে চালুর লক্ষ্য রয়েছে প্রকল্প প্রকৌশলীদের।

দেশে প্রথম এই এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে যাত্রাবাড়ী থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় যেতে সময় লাগবে বড়জোড় ৪২ মিনিট। ছয়টি ফ্লাইওভার ও ১৫টি আন্ডারপাস-বিশিষ্ট নির্মিতব্য এক্সপ্রেসওয়ের কোথাও ট্রাফিক ক্রসিং থাকবে না। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন-পশ্চিম এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে।

গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অন্য চারটি প্রকল্পের সঙ্গে এই প্রকল্পের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। পাশের দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশেই প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত একাধিক এক্সপ্রেসওয়ে আছে। ভারতে এক্সপ্রেসওয়ে আছে ২১টি, আরো নতুন ১৬টি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে জাপানের কাছে অর্থ সহযোগিতা চেয়েছে দেশটি। মালয়েশিয়ায় এক্সপ্রেসওয়ে ৩৭টি, পাকিস্তানে ১১টি এমনকি শ্রীলঙ্কায় আছে তিনটি এক্সপ্রেসওয়ে।
বাংলাদেশে এ ধরনের এক্সপ্রেসওয়ে এখনো নির্মিত হয়নি। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের সমান্তরালে ২৩২ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সওজ অধিদপ্তর। ২০২২ সালের মধ্যে এটি নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। ঢাকার কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার সুপারিশ অনুসারে, ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
এটির কাজ করছে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এটির আগেই শেষ হবে যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। তবে মহাসড়ককে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রথম উদ্যোগ যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গায়। 

২০১৫ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের মহাসড়ক আছে মাত্র ১ শতাংশ। দুই পাশে হালকা যানবাহনের জন্য আলাদা লেনসহ আন্তর্জাতিক মানের মহাসড়ক নেই। এক পাশে হালকা যানবাহনের আলাদা লেন আছে ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বনপাড়া-হাটিকুমরুল অংশে। ওই মহাসড়কটির তিনটি অংশের মধ্যে একটি অংশ এক বছরের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়ে যায় নির্মাণ ত্রুটির কারণে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল ২০০৪ সালে। তবে পদ্মা সেতুর সংযোগ এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশেই থাকবে হালকা যানবাহন চলাচলের আলাদা লেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, এক্সেস কন্ট্রোলড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম উদাহরণ হতে যাচ্ছে যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক। দুর্ঘটনা ঘটবে না, যানজটে মোড়ে মোড়ে আটকে থাকতে হবে না এ ধরনের মহাসড়কে। শুধু নির্মাণ করলেই হবে না, তার পরিচালনা করতে হবে সঠিকভাবে। থাকতে হবে নজরদারি। ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের আগেই এটি নির্মিত হবে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা তখন বুঝতে পারবেন, এটা কতটা উপকারে আসবে। আমরা আগে বিনিয়োগবান্ধব ও পর্যটকবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ করিনি। এখন করতে যাচ্ছি।  নির্মিতব্য প্রথম এক্সপ্রেসওয়ের যাত্রাবাড়ী-মাওয়া ও পাচ্চর-ভাঙ্গা অংশে দুটো করে সব মিলে চারটি বেস ক্যাম্প নির্মাণের জন্য কাজ শুরু হয়েছে। চলছে বিভিন্ন ধরনের জরিপকাজ। প্রকল্প পরিচালক কর্নেল ইফতেখার আনিসের কাছে জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, স্থানীয় সংযোগ সড়কগুলোর যানবাহন এই এক্সপ্রেসওয়ের এপারে-ওপারে চলাচল করতে পারবে না। যানবাহন চলাচল করবে বাধাহীনভাবে। ফলে হানিফ ফ্লাইওভার থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা যেতে লাগবে বড়জোড় ৪২ মিনিট।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ মে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছে। বিদ্যমান দুই লেন থেকে চার লেন করা হবে এক্সপ্রেসওয়ে মহাসড়কটি। মহাসড়কের দুই পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য নির্মাণ করা হবে আলাদা লেন। এই দুটোর প্রতিটি লেন হবে ৫ দশমিক ৫০ মিটার প্রশস্ত। চার লেন মহাসড়কের মধ্যস্থান বা মিডিয়ান হবে পাঁচ মিটার প্রশস্ত। ভবিষ্যতে এই মিডিয়ানের ওপর দিয়ে মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। মহাসড়কের কোথাও ট্র্যাফিক ক্রসিং থাকবে না। ফলে যানবাহন চলাচল করতে পারবে নির্বিঘ্নে। ঢাকা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে ইকুরিয়া-বাবুবাজার সংযোগ সড়কসহ মাওয়া পর্যন্ত ও পাচ্চর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ে হবে ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। ধীরগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেন থাকবে চার লেনের দুই পাশে। ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুর এ চার জেলায় পড়েছে প্রকল্পের অবস্থান। প্রকল্পের মেয়াদ প্রকল্প অনুমোদনের সময় গত মে মাস থেকে শুরু হয়েছে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করার কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ছয় হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ দুটো। তার মধ্যে একটি হলো যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার। অন্য অংশ হলো পাচ্চর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার। প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে ২৪ দশমিক ৮৮ হেক্টর। প্রকল্প এলাকায় সব মিলে ৩১টি সেতু নির্মাণ করা হবে। তার মধ্যে পিসি গার্ডার সেতু হবে ২০টি। আরসিসি সেতু হবে ১১টি। এগুলোর মধ্যে ধলেশ্বরী-১ সেতু হবে ২৫৮ মিটার দীর্ঘ। ধলেশ্বরী-২ সেতু হবে ৩৮২ মিটার দীর্ঘ। এ ছাড়া আড়িয়াল খাঁ সেতু হবে ৪৫০ মিটার দীর্ঘ। প্রকল্পে ফ্লাইওভার বা উড়াল সড়ক হবে ছয়টি। উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হবে আবদুল্লাহপুর, হাঁসারা, শ্রীনগর, কদমতলী, পুলিয়া বাজার ও সদরপুরে। রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা হবে জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে। প্রকল্পের বিভিন্ন স্থানে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে ১৫টি।

গত অক্টোবর মাসে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল পাঁচ হাজার ২৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। গত মার্চে তা বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৯৬২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সর্বশেষ প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকায়। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, জমির দাম ও বিভিন্ন আনুষঙ্গিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় দুই দফায় বেড়েছে এক হাজার ২২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হবে ২৪ দশমিক ৮৮ হেক্টর। এর মধ্যে ঢাকা জেলায় ১৯ দশমিক ৩৭ ও মুন্সীগঞ্জে ৫ দশমিক ৫১ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ডেঙ্গু রোগী বেড়েই চলেছে

শেয়ার
ডেঙ্গু রোগী বেড়েই চলেছে

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগী বেড়েই চলেছে। বড়দের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরাও। এক সপ্তাহ ধরে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে ১০ মাস বয়সী মরিয়ম। গতকাল তোলা।

ছবি : মঞ্জুরুল করিম

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ঠাকুরগাঁও ও সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলি দুই বাংলাদেশি নিহত

ঠাকুরগাঁও ও সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁও ও সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
শেয়ার
ঠাকুরগাঁও ও সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলি দুই বাংলাদেশি নিহত

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে মো. রাসেল (১৫) নামে এক বাংলাদেশি কিশোর নিহত হয়েছে। গতকাল শনিবার ভোরে উপজেলার মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলারের কাছে ভারতের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে শুক্রবার রাতে সুনামগঞ্জের বাগানবাড়ী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন শফিকুল ইসলাম (৪৫) নামের আরেকজন বাংলাদেশি।

নিহত রাসেল ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার রাজবাড়ী এলাকার নিয়াজ উদ্দিনের ছেলে।

স্থানীয় সূত্র ও বিজিবি জানায়, গতকাল ভোর ৪টার দিকে রাসেলসহ কয়েকজন মিনাপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতের ভেতরে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে যায়। এ সময় ভারতের কিষানগঞ্জ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে রাসেল ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

দিনাজপুর ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গেই বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেছে। নিহত যুবকের লাশ ফেরত আনার জন্য পতাকা বৈঠকে বসার আহবান জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে সুনামগঞ্জে নিহত শফিকুল ইসলাম দোয়ারাবাজার উপজেলার ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবি ও পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাতে শফিকুলসহ ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু আনতে যায়। তখন বিএসএফ টহল দলের নজরে পড়লে তারা চোরাকারবারিদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলিতে গুরুতর আহত শফিকুলকে সঙ্গীরা বাড়িতে নিয়ে আসে।

পরে  স্বজনরা তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রাত আড়াইটার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।

দোয়ারাবাজার থানার ওসি জাহিদুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গুলিটি সরাসরি শফিকুলের বুকে লেগেছে।

সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. ক. জাকারিয়া কাদির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা এ ঘটনায় বিবৃতি ও পতাকা বৈঠক আহবান করে প্রতিবাদ জানিয়েছি। পাশাপাশি সীমান্তে নজরদারি আরো জোরদার করা হয়েছে।

আড়াই মাস পর যুবকের মরদেহ ফেরত

ঝিনাইদহ থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবক ওবাইদুল হোসেনের মরদেহ প্রায় আড়াই মাস পর হস্তান্তর করা হয়েছে।

গতকাল শনিবার বিকেলে গোপালপুর সীমান্ত এলাকায় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাঁর মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ। এ সময় নিহত যুবকের পিতা হানেফ আলী, মহেশপুর থানার ওসি তদন্ত সাজ্জাদুর রহমান, স্থানীয় যাদবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দীন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ২৮ এপ্রিল মহেশপুর সীমান্তে ওবাইদুল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ।

মন্তব্য
ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব

ফ্যাসিজমমুক্ত করতেই নতুন টেলিকম নীতিমালা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ফ্যাসিজমমুক্ত করতেই নতুন টেলিকম নীতিমালা

বিগত ১৫ বছরের ফ্যাসিজম থেকে টেলিকম খাতকে মুক্ত করতেই অন্তর্বর্তী সরকার নতুন নীতিমালা করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। তিনি বলেছেন, টেলিকম খাতকে করমুক্ত করার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের দাবি পূরণে নতুন নীতিমালা করা হচ্ছে। দ্রুতই প্রস্তাবিত নীতিমালা উপদেষ্টা পরিষদে উত্থাপিত হবে। নীতিমালাকে সমৃদ্ধ করতে যৌক্তিক পরামর্শগুলো বিবেচনা করা হবে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং লাইসেন্সিং নীতি সংস্কারবিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। টিআরএনবি সভাপতি সমীর কুমার দের সভাপতিত্বে বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ জুলফিকার। তিনি জানান, ডিজিটাল অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে টেলিকম অপারেটররা।

  মোবাইল নেটওয়ার্কে সাড়ে ছয় কোটি সোশ্যাল মিডিয়ায় সংযুক্ত। তার পরও দেশের ৯ কোটির মতো মানুষ এখনো আমাদের নেটওয়ার্কে সংযুক্ত নয়। তারা ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে না।  বিদ্যমান নীতিমালায় স্থানীয় পর্যায়ে ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ ও লক্ষ্য পূরণে সময় বেঁধে দেওয়া রীতিমতো ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।

প্রস্তাবিত নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়ে মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, নতুন লাইসেন্সিং কাঠামো প্রযুক্তি নিরপেক্ষ করার পাশাপাশি নীতিমালায় লাইসেন্স তিনটিতে নামিয়ে আনা হচ্ছে। একই লাইসেন্সের আওতায় একাধিক ধরনের সেবা দিতে পারবেন অপারেটররা। ভয়েস, ডেটা (ইন্টারনেট), ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (ভ্যাস) ও ওভার-দ্য-টপ (ওটিটি) সার্ভিস দেওয়ার সুযোগ থাকছে নতুন লাইসেন্স নীতিমালায়। এটি এই খাতের বিকাশে সহায়তা করবে। তবে শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ না রাখায় উন্নয়নের গতি স্লথ হবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, প্রজন্মের দাবি পূরণে কানেক্টিভিটি থেকে জেনারেশন সার্ভিস ট্রান্সফরমেশনের জন্য নতুন নীতিমালা হচ্ছে। অনেক বেশি জঞ্জালের ওপর থেকে এই নীতিমালা করতে যাওয়ায় এটিকে অনেকটা বিবরণমূলক করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশের কল্যাণে কারো কারো স্বার্থে আঘাত আসতে পারে। কেননা আমরা নেটওয়ার্কের জঞ্জাল ছেঁটে ফেলব। নীতিমালাকে সমৃদ্ধ করতে যৌক্তিক পরামর্শগুলো বিবেচনা করা হবে। একই সঙ্গে সরকারের ভালো উদ্যোগকেও সবার স্বাগত জানানো উচিত।

বিশেষ সহকারী আরো বলেন, নীতিমালায় লাইসেন্সের সংখ্যা কতগুলো হবে তা নির্ভর করবে লাইসেন্স অবলিগেশন অ্যান্ড কেপিআই পারফরম্যান্সের ওপর। তবে বিটিআরসি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার মাধ্যমে জানতে পারে কী পরিমাণ লাইসেন্স লাগবে বা কী পরিমাণ লাইসেন্স থাকলে অপটিমাল হয়। তবে এই লাইসেন্স সংখ্যার নাম করে নতুন বিনিয়োগকারীদের বাধা দেওয়া যাবে না। তা ছাড়া টোল কালেক্টর হিসেবে যে লাইসেন্সগুলো বিগত সরকারের সময় দেওয়া হয়েছিল সেগুলো কন্টিনিউ করা হবে না। বিদেশি কম্পানির দেশীয় প্রতিনিধিদের দেশের বৃহত্তম স্বার্থ রক্ষায় কাজ করার আহবান জানান তিনি।

নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে তা অন্তত ১৫ বছরের জন্য টেলিযোগাযোগ খাতকে সুরক্ষা দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. জহুরুল ইসলাম।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, বিগত সময়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা পেশিশক্তি খাটিয়েছেন। এখনো ৯ কোটি মানুষ ও আড়াই কোটির মতো হাউসহোল্ড আনকানেক্টেড। এই অবস্থার উত্তরণ করতে, সেবার ব্যবহার সুফল বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। সে কারণে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে পলিসিটা ধীরে ধীরে করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, টেলিকম পলিসি সরকারের এখতিয়ার। অরাজক পরিস্থিতির উত্তরণ থেকে সরকার এই পরিবর্তন আনছে। তাই অংশীজনদের নিয়েই এরপর গাইডলাইন করবে। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কাউকে নতুন নীতিমালায় বঞ্চিত করা হবে না।

বিশ্বব্যাংক পরামর্শক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, মন্ত্রণালয়ের বর্তমান লিডারশিপ গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য। তারা একটি যুগোপযোগী পলিসি উপহার দেবেন বলে সবার প্রত্যাশা।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবির বলেন, আমি মনে করি, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কনসিস্টিন্সি, ক্যাপাসিটি, কোলাবরেশন ও কো-অর্ডিনেশন দরকার। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ থাকা দরকার। প্রতিবছর মোবাইল অপারেটররা নেটওয়ার্ক চালু রাখতে ৬০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। সে কারণে দেশে টেলিকম রোডম্যাপ দরকার।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, দেশের মানুষের মোট চাহিদা ৭.৫ টেরাবাইট। এর ৬৫-৭০ শতাংশ প্রয়োজন মেটায় আইএসপিরা। এ জন্য ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়। কিন্তু মোবাইল অপারেটরদের ৩৫ শতাংশ বাজার শেয়ার থাকলেও তাদের কর দিতে হচ্ছে না। এই বৈষম্য দূর করা দরকার। পলিসির মাধ্যমে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে যে নীতিমালা করা হচ্ছে, তা রাজনৈতিক সরকারের সময় টিকবে কি নাতা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

ফাইবার অ্যাট হোম সিআইও সুমন আহমেদ সাবির বলেন, গত সাত বছরে এই খাতে কত টাকা বিনিয়োগ হয়েছে, তা হিসাব করা দরকার। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ খরচ সাশ্রয়ী পথ বেছে নিতে হবে।

বৈঠকে আরো বক্তৃতা করেন গ্রামীণফোন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান, রবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) (ভারপ্রাপ্ত) রিয়াজ রশীদ, বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইওহান বুসে, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল মাবুদ প্রমুখ।

মন্তব্য
ফেনীতে উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম

বন্যা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সহায়তায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের চিন্তা সরকারের

ফেনী প্রতিনিধি
ফেনী প্রতিনিধি
শেয়ার
বন্যা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সহায়তায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের চিন্তা সরকারের

টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গতকাল শনিবার সকালে ফেনীর ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম (বীরপ্রতীক)।

আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা দুর্গত মানুষের খোঁজখবর নেন তিনি। অনেকে খাদ্য সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ তুলে ধরেন। উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শুধু খাদ্য নয়, প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, অতি দরিদ্র মানুষগুলো এখন অসহায়। তাদের ঘরবাড়ি নেই, খাবার নেই। প্রথমে তাদের বাঁচাতে হবে। এরপর ধাপে ধাপে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।

বন্যা নিয়ন্ত্রণে টেকসই বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধ যেন সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন হয়, সে জন্য আমরা সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়ার চিন্তা করছি। এটি একটি বৃহৎ প্রকল্পকারিগরি দক্ষতাসহ সব বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, কেউ কেউ বলছেন ত্রাণ নয়, শুধু টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। তবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প, বাস্তবায়নে সময় লাগবে।

আর এখন মানুষকে বাঁচানো জরুরি। তাই ত্রাণ সহায়তা অত্যাবশ্যক।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মিরাজ হোসেনের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ত্রাণ কার্যক্রমে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না। সবাইকেই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমিও একজন সেবক।

এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ফেনীর মানুষ যেন বারবার এই দুর্ভোগে না পড়ে, সে জন্য একটি স্থায়ী, টেকসই পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। কাজের মান খারাপ হলে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।

তিনি জানান, আগামী সপ্তাহে তিনি আবার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে আসবেন।

এদিকে গত শুক্রবার বিকেলে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ফেনী বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ পরিষদ-এর ব্যানারে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর তীরে টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণের দাবিতে এই কর্মসূচি হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে মানুষের জানমাল ও জীবিকা বিপন্ন হয়েছে। এই অবস্থায় টেকসই বাঁধ নির্মাণই একমাত্র সমাধান।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ