ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫
১৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৫ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫
১৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৫ সফর ১৪৪৭

\'ম্যাডামের এপিএস\' পদে চাকরি!

  • ভুয়া প্রতিষ্ঠানের চার প্রতারক গ্রেপ্তার, জেল-জরিমানা
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
\'ম্যাডামের এপিএস\' পদে চাকরি!
প্রতারণার দায়ে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়া চারজন। ছবি : কালের কণ্ঠ
সংবাদপত্রের পাতায় আকর্ষণীয় চাকরির বিজ্ঞাপন- প্রবাসী ম্যাডামের এপিএস (ব্যক্তিগত সহকারী) অবশ্যক। বিমানবালা ম্যাডাম, প্রবাসীর স্ত্রী, চলচ্চিত্রের নায়িকা বা ধনাঢ্য ব্যক্তির স্ত্রীরও লাগবে এপিএস। আবার কখনো বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়- এমন প্রভাবশালী ‘ম্যাডামরা’ বডিগার্ড বা দেহরক্ষী নিয়োগ দিবেন। বিজ্ঞাপনের ভাষায় বোঝানো হয়, বিত্তবান নারীর ব্যক্তিগত সহচর হবেন নিয়োগকৃত ব্যক্তি।
পাবেন অনেক সুবিধা। একে নিয়োগদাতা একজন নারী, দ্বিতীয়ত আছে অনেক ‘সুবিধা’। সহজেই এসব বিজ্ঞাপন নজর কাড়ে চাকরিপ্রার্থীদের। যোগাযোগ শুরু করেন বিজ্ঞাপনে দেওয়া মিডিয়ার মোবাইল ফোন নম্বরে।
মিলে যায় ‘চাকরি’। তবে চাকরির জন্য থাকে সামান্য কিছু শর্ত। সে অনুযায়ী তারা প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা জামানত হিসেবে কয়েক হাজার টাকাও তুলে দেন কথিত মিডিয়ার হাতে। এরপর একসময় মিডিয়া আর ম্যাডামের দেখা না পেয়ে গোলকধাঁধায় পড়েন সেই চাকরিপ্রার্থী।
এভাবেই রাজধানীতে চাকরির খোঁজে আসা হাজারো মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে বেশ কয়েকটি চক্র। অভিনব এ প্রতারণায় পড়ে জামানতের টাকা খোয়ানো ব্যক্তিরা অনেক সময়ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন না। লজ্জায় স্বজনদের কাছেও ঘটনা গোপন রাখেন অনেকে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকায় এমনই একটি ভুয়া চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানকে শনাক্ত করার পর র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন অভিনব কায়দায় প্রতারণার অনেক তথ্য। অভিযানকালে বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করে এক বছরের কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা করে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
দণ্ডিতরা হলেন- সজরুল ইসলাম তরিকুল (৩০), আমিরুল ইসলাম (৩৬), মহিউদ্দিন রনি (৪১) ও রফিকুল ইসলাম (২২)। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশা এ আদালত পরিচালনা করেন। অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাব-১-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাদা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সকাল ১০টার দিকে নিকুঞ্জের ৬ নম্বর রোডের ৫৪ নম্বর বাড়ির নিচতলায় ‘বিটকো’ নামের ওই ভুয়া চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালান র‌্যাব-১ সদস্যরা। এ চক্রটি বিভিন্ন পত্রিকায় আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে ‘সিকিউরিটি অ্যান্ড সার্ভিস চার্জ’ বাবদ দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে আদায় করে আসছিল। তবে বেশির ভাগ চাকরিপ্রত্যাশীদের চাকরি না দিয়ে তারা ঘন ঘন অফিস পরিবর্তন করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে। এই চক্রটি প্রবাসী ম্যাডাম, বিমানবালা ম্যাডাম, প্রবাসীর স্ত্রী-ম্যাডাম, নায়িকা বা ধনাঢ্য ব্যক্তির স্ত্রী-ম্যাডামের এপিএস বা দেহরক্ষী নিয়োগ করা হবে উল্লেখ করে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেয়। চাকরিপ্রার্থীরা ফোন করলে মিডিয়া বলে পরিচয় দিয়ে একপর্যায়ে ‘ম্যাডামের’ সঙ্গেও মোবাইল ফোনে কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। পরে চাকরির জন্য জামানত হিসেবে টাকা নিয়ে সটকে পড়ে তারা। এভাবে বহু মানুষ প্রতারিত হয়ে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ করেছে।
র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা কালের কণ্ঠকে বলেন, এ চক্রটি অত্যন্ত কৌশলী। গ্রামের একজন সাধারণ মানুষ তাদের প্রতারণার শিকার হয়েও বুঝতে পারেন না যে প্রতারিত হয়েছেন তিনি। ম্যাডাম বলে একজন নারীর ঘনিষ্ঠ সহচর হওয়ার প্রলোভন দেওয়া হয়। বোঝানো হয়, সেই ম্যাডামের আয়-ব্যয় সব দেখবেন নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি। আবার কখনো বোঝানো হয়- একা থাকা ম্যাডামের সব নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির। আনোয়ার পাশা আরো বলেন, ‘এমন প্রতারণার ঘটনা বেশির ভাগই চেপে যান ভুক্তভোগীরা। আর অপরাধীরা স্থান পরিবর্তন করে আবারও অপকর্ম করে। এর আগেও একটি চক্রকে ধরেছিলাম আমরা।’
গতকাল অভিযানের সময় বিটাকে অন্তত ২০ জন চাকরিপ্রত্যাশী ছিলেন, যাঁরা জামানতের টাকা জমা দিতে এসেছিলেন। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ইটালি প্রবাসী ম্যাডামের এপিএস’ নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেয় চক্রটি। বিজ্ঞাপন দেখে যাঁরা এসেছেন তাঁদের একজন  ঝালকাঠির নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে অফিসে এসে জামানত দিতে বলা হয়। পরে এরা ম্যাডারের চাকরির বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেনি।
সিরাজগঞ্জের আবদুল হাকিম জানান, তাঁকে এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে ১৮,৫০০ টাকা বেতনে চাকরির জন্য ডাকা হয়েছে। তিনি বিএ পাস করার পর বিভিন্ন জব সাইটে চাকরির জন্য তাঁর জীবনবৃত্তান্ত মেইল করেছেন। অভিযুক্তরা সেখান থেকে তাঁর তথ্য সংগ্রহ করে তাঁকে ই-মেইলের মাধ্যমে চাকরির নিয়োগপত্র পাঠায় এবং সিকিউরিটি চার্জ জমা দিতে বলে।
র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত সজরুল জানান, কিছু লোককে তাঁরা মোটা বেতনের চাকরির কথা বলে কম বেতনের সিকিউরিটি গার্ডের চাকরিতে পাঠাতেন। সেখানে টিকতে না পেরে কিছুদিন পর বেতন না নিয়েই পালিয়ে যান ওই ব্যক্তিরা। এতে জামানত আর বেতন পুরোটাই পকেটস্থ করেন সজরুল। তিনি জানান, মিলন নামে এক ব্যক্তিকে ম্যাডারের চাকরি দেওয়ার কথা বলে এভাবে অন্য কাজে দেওয়া হয়েছে।
এই ভুক্তভোগী বলেন, প্রতিবাদ করায় তাঁকে চাবুক দিয়ে পিটিয়ে জখম করেছেন সজরুল ও তাঁর সহযোগীরা।
র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, ৯ মাস আগে আমিরুল বিটাকের ওই অফিসটি ভাড়া নেন। এরপর সজরুলের নেতৃত্বে তাঁরা প্রতারণার কারবার চালিয়ে আসছেন। সজরুল কয়েক বছর আগে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের ধলেশ্বর এলাকা থেকে রাজধানীতে চাকরির জন্য এসে প্রতারিত হন। পরে তিনি নিজেই রপ্ত করেন সেই অপকর্মের ‘বিদ্যা’। চক্রটি শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত এবং অশিক্ষিত- এই তিন শ্রেণির মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে প্রতারিত করছে। তারা শ্রেণি অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির সঙ্গে ই-মেইল, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন এবং মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে।
প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

রাউজানে সংঘর্ষ

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত, গিয়াস কাদেরের পদ স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও রাউজান প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও রাউজান প্রতিনিধি
শেয়ার
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত, গিয়াস কাদেরের পদ স্থগিত

চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সংঘর্ষের পর রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে গতকাল বিকেল সোয়া ৪টার দিকে রাউজান পৌরসভার সত্তারঘাট এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। তাতে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সংসদ সদস্য এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার গুরুতর আহত হন।

সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন নেতাকর্মী আহত হন, ভাঙচুর করা হয় গোলাম আকবরের পাজেরো গাড়ি এবং অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গোলাম আকবর খোন্দকার রাউজানের সুলতানপুরে বিএনপির সাবেক নেতা মহিউদ্দিন আহমেদের পারিবারিক কবরস্থান জিয়ারত করতে যাচ্ছিলেন। পথে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দীন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে সংঘর্ষ বাধে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি চলে।

এক পর্যায়ে গুলির ঘটনাও ঘটে।

গোলাগুলিতে গিয়াস কাদেরের পক্ষের দুই-তিনজন এবং ইটপাটকেলে গোলাম আকবর খোন্দকারসহ উভয় পক্ষের আরো অন্তত ৪০ জন আহত হন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

 

গিয়াস কাদেরের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

ঘটনার পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দীন কাদের চৌধুরীকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, গিয়াস কাদের চৌধুরী কয়েক মাস ধরে নিজের এলাকায় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মদদ ও সহিংসতায় উসকানি দিয়ে আসছিলেন।

চিঠিতে বলা হয়, আপনাকে একাধিকবার সতর্ক করার পরও আপনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করছেন। তাই দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আপনাকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হলো। পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার

একই দিন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি ও যুবদলের পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার করে। তাঁরা হলেনচট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব গাজী নিজাম উদ্দিন, বারৈয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দিদারুল ইসলাম মিয়াজী, যুবদল নেতা সিরাজুল ইসলাম এবং যুবদল নেতা কামাল উদ্দিন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মিরসরাইয়ে বিএনপির অন্তত অর্ধডজন নেতাকর্মী দলীয় কোন্দলের জেরে নিহত হন। ওই সব ঘটনার তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিলুপ্ত ঘোষিত কমিটি ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর গঠন করা হয়েছিল। গোলাম আকবর খোন্দকার ছিলেন আহ্বায়ক, সদস্য ছিলেন ৪৩ জন। পরে ২০২২ সালের জুলাইয়ে সদস্যদের মধ্য থেকে ৯ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হলেও এই কমিটির মাধ্যমেই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কার্যক্রম চলছিল।

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, সংঘর্ষের পাশাপাশি চলমান অভ্যন্তরীণ কোন্দল, পাল্টাপাল্টি অবস্থান এবং বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনায় কেন্দ্রীয় কমিটি কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

 

মন্তব্য
রংপুরে হিন্দুবাড়িতে হামলা

ফিরেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা বাড়িঘর মেরামত করে দিচ্ছে প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর
নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর
শেয়ার
ফিরেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা বাড়িঘর মেরামত করে দিচ্ছে প্রশাসন

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ির আলদাদপুর বালাপাড়া গ্রামে হিন্দুপল্লীতে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামত করে দিচ্ছে প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে এই কার্যক্রম শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগকে কেন্দ্র করে শনিবার রাত ও রবিবার কয়েক দফা হামলায় অন্তত ২২টি হিন্দু বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

হিন্দুপল্লীতে হামলার ঘটনায় গত তিন দিনেও কোনো মামলা করা হয়নি।

গ্রেপ্তার করা হয়নি কাউকে। পুলিশ সুপার আবু সাইম হামলায় জড়িত সন্দেহে পাঁচ-ছয়জনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গ্রামে এখনো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হামলার কারণে স্বজনদের বাড়িতে যাওয়া রঞ্জন রায়ের পরিবারসহ অন্যরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরেছেন।

  প্রশাসনের শ্রমিকদের সঙ্গে মিলে ক্ষতিগ্রস্তরা ঘরদোর ঠিক করছেন। ঘরের আসবাব মেরামত করা হচ্ছে। গঙ্গাচড়ার ইউএনও মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, সেদিনের ঘটনায় ২২টি পরিবারে হামলা করা হয়। এর মধ্যে ১৫টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ১৫ বান্ডেল ঢেউটিন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১০ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, চিনি, লবণ, মরিচের গুঁড়াসহ আট উপকরণের ৩০টি বস্তা দেওয়া হয়েছে। ১০টি চুলা ও চারটি টিউবওয়েল দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ ও প্রয়োজন অনুযায়ী নগদ অর্থ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইউএনও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি।

তারা স্বজনদের বাড়িতে ছিল, সকালেই বাড়িতে ফিরেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়িঘর সংস্কার করাসহ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

স্থানীয়  ইউপি সদস্য শ্রী পরেশ চন্দ্র জানান, শনিবার রাত ও রবিবার দুই দফা হামলায় ২২টি পরিবারের মধ্যে ১৫টি পরিবার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসনের নিয়োগ করা শ্রমিকরা সকাল থেকে সেখানে মেরামতের কাজ করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরে নতুন টিন লাগানো হয়েছে। ঘরের আসবাব মেরামত করা হচ্ছে।

স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন প্রশাসনের পদক্ষেপে কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করলেও আতঙ্ক কাটেনি তাদের। কেশবের স্ত্রী সন্ধ্যা রাণী বলেন, পুলিশ আছে, তার পরও আমাদের আতঙ্ক কাটেনি, আবার হামলা করবেএমন টেনশন হয়।

চন্দনা বলেন, সকাল থেকে সমস্যা নাই। সবাই মিলে আছি। বাড়িঘর তো সব ভাঙ্গি দিছে। সকালে সরকার থাকি টিন দিছে, চাল দিছে, রান্না করি খাইছি। কিন্তু টেনশন তো আছে।

রংপুরের পুলিশ সুপার আবু সাইম বলেন, মামলার প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে আমরা পাঁচ-ছয়জনকে শনাক্ত করেছি। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, নিরাপত্তার ঘাটতি নেই। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা আছেন। ক্ষতিগ্রস্তরা বাড়িতে আছেন।

দুপুর দেড়টার দিকে রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্যসচিব আনিছুর রহমান লাকু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে শাড়ি-লুঙ্গিসহ শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ পেয়ে গত শনিবার রাতে এক কিশোরকে আটক করে থানায় আনা হয়। পরদিন সাইবার সুরক্ষা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। আদালত তাকে শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। ওই কিশোর একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী।

মন্তব্য
জামায়াত আমির

বিচার ও সংস্কারের আগে নির্বাচন হলে বিপর্যয় হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বিচার ও সংস্কারের আগে নির্বাচন হলে বিপর্যয় হবে
শফিকুর রহমান

জুলাই আন্দোলন ঘিরে আওয়ামী লীগের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের আগে কোনো নির্বাচন হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

জামায়াত আমির বলেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে হবে। বিচার ও সংস্কারের আগে নির্বাচন হলে সেটা জাতির জন্য ডিজাস্টার (বিপর্যয়) হবে।

তিনি আরো বলেন, শহীদ পরিবারের দাবি, বিচার না দেখে তারা কোনো নির্বাচন চায় না।

বিচারের বিষয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার চাই, কিন্তু যেন বিচারের নামে ওদের ওপর অন্যায় না হয়। ওদের প্রাপ্য বিচার বুঝিয়ে দেওয়া হোক। জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, ইতিহাস যেন হারিয়ে না যায়, সেটিকে ধরে রাখা আমাদের কর্তব্য।

শ্রদ্ধার সঙ্গে আমাদের স্মরণ করতে হবে, কারণ আজকের অবস্থানও এসেছে সেই ত্যাগের বিনিময়ে।

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিংয়ের উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, সেখানে কিছু অপূর্ণতা ছিল, তা পূরণ করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের ওপর অবিচার হয়েছে, আমাদের নেতাদের বিচারিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছেএমন বিচার আর দেখতে চাই না।

জামায়াত আমির বলেন, বিচার যেন শতভাগ স্বচ্ছ ও ন্যায়ের ভিত্তিতে হয়।

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেলে কেউই পার পাবেন নাএ বিশ্বাসই আমাদের।

তিনি বলেন, যারা খুন করেছে, তারা যেন তাদের ন্যায্য শাস্তি পায় এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর হয়। এই প্রক্রিয়ায় দলের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

সরকার গঠনে সুযোগ পেলে কিংবা বিরোধী দলে থাকলেও জামায়াতের ভূমিকা হবে স্পষ্ট, ন্যায়নিষ্ঠ ও অকুতোভয় জানান জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, আমরা কাউকে ভয় করব না, শুধু আল্লাহকে।

দায়বদ্ধ থাকব নিজের বিবেক ও দেশবাসীর কাছে। অন্য দলগুলো থেকেও একই প্রতিশ্রুতি আশা করি।

মন্তব্য
কুমিল্লার মুরাদনগর

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ

কুমিল্লা (উত্তর) প্রতিনিধি
কুমিল্লা (উত্তর) প্রতিনিধি
শেয়ার
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ
কুমিল্লার মুরাদনগরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে মুরাদনগর উপজেলার সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা। বিকেলে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগের দাবিতে কুমিল্লার মুরাদনগরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র-জনতা।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সর্বস্তরের সাধারণ ছাত্র-জনতার ব্যানারে মুরাদনগর উপজেলা গোলচত্বর থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি উপজেলা পরিষদ চত্বর, থানা প্রাঙ্গণ ঘুরে গোলচত্বরে এসে শেষ হয়। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন শিক্ষার্থীরা।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাড়ি মুরাদনগর উপজেলারই আকুবপুর গ্রামে।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে বক্তারা বলেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন মাস্টার নানা অপকর্মে জড়িত। তিনি মব সৃষ্টি করে মুরাদনগরের আকুবপুরে ট্রিপল মার্ডার ঘটানোর পেছনে ইন্ধন দিয়েছেন। এক স্কুল শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।

বর্তমানে ওই নারী ভয়ে বাড়ি যেতে পারছেন না। এ ছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পুকুর দখলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। আর এসব অপকর্মের প্রশ্রয় দিচ্ছেন উপদেষ্টা আসিফ।

বক্তারা আরো বলেন, আসিফ মাহমুদের বাবা ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিরীহ মানুষদের পুলিশ দিয়ে মামলা ও গ্রেপ্তার করিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন।

অবিলম্বে এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার   করতে হবে। তিনি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের লোকজন ও আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনে সহযোগিতা করছেন।

সমাবেশে বক্তব্য দেন উপজেলা হিন্দু পরিষদের নেতা দুলাল দেবনাথ, মুরাদনগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিপ্লবী কমিটির সদস্যসচিব নাহিদুল ইসলাম নাহিদ, ছাত্রদলের আহ্বায়ক খায়রুল হাসান প্রমুখ।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ