<p>মহান আল্লাহ ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান ও কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষের ধর্ম বলে ঘোষণা করেছেন। ফলে ইসলামকে সব যুগ, সময় ও স্থানের মানুষের উপযোগী করেছেন এবং জীবনের জন্য প্রয়োজন এমন সব কিছুর অনুমোদন দিয়েছেন।</p> <p>শরিয়তের দৃষ্টিতে জীবনঘনিষ্ঠ বিষয় : ইসলামী শরিয়তের একটি সাধারণ মূলনীতি হলো ‘প্রকৃতার্থে যা মানুষের জন্য উপকারী তা বৈধ এবং যা ক্ষতিকর তা অবৈধ।’ আবার যে বৈধ কাজ বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করে, ইসলাম তাকে ইবাদতের মর্যাদা দেয়। যেমন হাসি মানুষের একটি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক বিষয়। কিন্তু এর মাধ্যমে যদি কোনো ব্যক্তি অপর মুমিনের মন ভালো করার নিয়ত করে, তবে তা সদকাস্বরূপ। একইভাবে শরীরচর্চার মাধ্যকে কোনো মুমিন যদি ভালো কাজ ও ইবাদতের সামর্থ্য লাভের নিয়ত করে, তবে তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে।</p> <p>শারীরিক গঠন সুন্দর করা প্রশংসনীয় : শরীরিক গঠন সুন্দর করার প্রচেষ্টা নিন্দনীয় নয়; বরং তা প্রশংসনীয়। তবে শর্ত হলো তা অহংকার, অহমিকা বা অন্য কোনো অন্যায় কাজের উপলক্ষ হতে পারবে না। নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা যা বোঝা যায়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, মানুষ চায় যে তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, এটাও কি অহংকার? রাসুল (সা.) বললেন, অল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে ভালোবাসেন। প্রকৃতপক্ষে অহংকার হচ্ছে দম্ভভরে সত্য ও ন্যায় অস্বীকার করা এবং মানুষকে ঘৃণা করা।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬৬)</p> <p><strong>শরীরচর্চায় কোরআনের অনুপ্রেরণা</strong></p> <p>শরীরচর্চার প্রধানত শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক প্রশান্তি এবং নিজেকে সুবল ও সুঠাম হিসেবে গড়ে তুলতে করা হয়। আর পবিত্র কোরআনে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে, যারা শরীরিকভাবে সুস্থ ও সুঠাম দেহের অধিকারী।</p> <p>১. আল্লাহ শক্তিধর : আল্লাহ নিজের গুণ হিসেবে ‘জুল-কুওয়াতি’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহই তো জীবিকা দান করেন এবং তিনি প্রবল, পরাক্রান্ত।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ৫৮)</p> <p>২. ফেরেশতারা সামর্থ্যশালী : আয়াতে জিবরাইল (আ.)-এর প্রশংসায় বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এই কোরআন সম্মানিত বার্তাবাহকের আনীত বাণী যে সামর্থ্যশালী, আরশের মালিকের কাছে মর্যাদাসম্পন্ন।’ (সুরা তাকভির, আয়াত : ১৯-২০)</p> <p>৩. সুবল শরীর আল্লাহর দান : পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মানুষের শারীরিক শক্তিকে নিজের একান্ত অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ, তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেন দুর্বল অবস্থায়, দুর্বলতার পর তিনি দেন শক্তি; শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।’ (সুরা তাকভির, আয়াত : ৫৪)</p> <p>৪. সামর্থ্য বৃদ্ধি করা কল্যাণকর : মানুষের জন্য তার শক্তি-সামর্থ্য বৃদ্ধি করা কল্যাণকর। কেননা তা আল্লাহর অনুগ্রহ। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে সম্প্রদায়, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কোরো, অতঃপর তাঁর দিকেই ফিরে আসো। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন এবং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৫২)</p> <p>৫. শক্তিশালীরাই ভালো কাজ করতে পারে : যারা শারীরিকভাবে সুবল ও সামর্থ্যশীল, তারাই ভালো কাজ করার সৎ সাহস রাখে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সে নারী বলল, হে পরিষদবর্গ, আমার এই সমস্যায় তোমাদের অভিমত দাও। আমি কোনো ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না তোমাদের উপস্থিতি ছাড়া। তারা বলল, আমরা তো শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা; তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আপনারই, কী আদেশ করবেন তা আপনি ভেবে দেখুন।’ (সুরা নামল, আয়াত : ৩২-৩৩)</p> <p><strong>হাদিসের অনুপ্রেরণা </strong></p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও মুমিনদের শারীরিক সামর্থ্য অর্জনে উৎসাহিত করেছেন।</p> <p>১. শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর প্রিয় : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শক্তিধর মুমিন দুর্বল মুমিনের তুলনায় আল্লাহর কাছে উত্তম ও অতীব পছন্দনীয়। তবে প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ নিহিত আছে, যাতে তোমার উপকার আছে তা অর্জনে তুমি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা কোরো। তুমি অক্ষম হয়ে যেও না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৬৬৭)</p> <p>২. সুস্থতা শরীরের অধিকার : রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন সব কাজ থেকে বারণ করেছেন যা মানুষের শারীরিক সুস্থতার জন্য হুমকি। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি রোজাও রাখো এবং ইফতারও কোরো, তাহাজ্জুদও আদায় কোরো এবং ঘুমাও। কেননা নিশ্চয়ই তোমার ওপর তোমার শরীরের অধিকার আছে, তোমার ওপর তোমার চোখের অধিকার আছে, তোমার ওপর তোমার স্ত্রীর অধিকার আছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৯৯)</p> <p>৩. তীর নিক্ষেপে উৎসাহ : একবার আসলাম গোত্রের কিছু লোক বাজারের কাছে প্রতিযোগিতামূলক তীর নিক্ষেপের চর্চা করছিল। এমন সময় নবী (সা.) বের হলেন এবং তাদের দেখে বললেন, হে ইসমাইলের বংশধর, তোমরা তীর নিক্ষেপ কোরো। কেননা তোমাদের পিতাও তীর নিক্ষেপে অভিজ্ঞ ছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৫০৭)</p> <p>আল্লাহ সবাইকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করুন। আমিন</p> <p> </p>