<p>আরব উপদ্বীপ (The Arabian Peninsula) এটি এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে এবং আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি বিস্তীর্ণ আরব অঞ্চল। এর পূর্বদিকে আরব উপসাগর, পশ্চিমে লোহিত সাগর, উত্তর-পশ্চিমে এডেন উপসাগর, ওমান উপসাগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ভারত মহাসাগর অবস্থিত। আরব উপদ্বীদের উত্তর অংশটি খ্রিস্টপূর্ব ৫২৫-৪০০ পর্যন্ত পারস্য সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। দক্ষিণ অংশটি প্রাচীন ইয়েমেন, সাবা ও শিমার রাজত্বের অধীন ছিল। জুফারকে মনে করা হতো অত্র অঞ্চলের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। যা মূলত সানার প্রতিনিধিত্ব করত। একটি সম্মিলিত গোত্রীয় শাসন দীর্ঘ সময় পর্যন্ত এ অঞ্চলে কার্যকর ছিল। এ অঞ্চল বিভিন্ন সময়ে রোমান, পর্তুগিজ, উসমানীয় ও ব্রিটিশদের শাসনাধীন হয়।</p> <p>ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য : আরব উপদ্বীপের কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান মানব ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের ভেতর সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করেছে এবং হাজার বছর ধরে মানবসভ্যতার বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আরব উপদ্বীপের বৈশিষ্ট্যগুলো এভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে।</p> <p>মরুভূমি : আরব উপদ্বীপের মরুভূমিকে তিনটি প্রধান অংশে ভাগ করা যায়। আন-নাফুদুল কাবির, দাহনা ও রুবউল খালি। নাফুদুল কাবির সৌদি আরবের উত্তর-মধ্যভাগে অবস্থিত। আয়তন ৬৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার। রুবউল খালি সৌদি আরবের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল, ইয়েমেন, ওমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কিছু অংশে অবস্থিত। আয়তন ছয় লাখ ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। দাহনা আরবের মরু অঞ্চলের মধ্যভাগে অবস্থিত, যা নুফুদুল কাবির ও রুবউল খালির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে।</p> <p>পর্বত ও মালভূমি : আরব উপদ্বীদের বৃহত্তম পর্বতশ্রেণি হলো সারওয়াত পর্বতমালা। জর্দান ও সৌদি আরবের সীমান্তে অবস্থিত পর্বতমালাটি ইয়েমেনের এডেন উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। নজদ আরব উপদ্বীপের মালভূমি, যা দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত। এ অঞ্চলটি কৃষি কাজের উপযুক্ত।</p> <p>লাভা ক্ষেত্র : প্রায় ৪০ মিলিয়ন বছর আগে লোহিত সাগরে গঠিত আরব এবং আফ্রিকান টেকটোনিক প্লেটগুলোর ফাটল পৃথিবীর ভূত্বকের পাশের দিকে প্রসারিত হয়েছিল। যার ফলে একটি বিস্তীর্ণ ব্যাসাল্টিক লাভা এলাকা সৃষ্টি হয়েছিল। যাকে আল-হাররাহ নামকরণ করা হয়।</p> <p>সমভূমি : আরব উপদ্বীপের বারায়া আর-রাকবা সমভূমিটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা জেদ্দা ও মক্কানগরীর পূর্বে, মদিনা মুনাওয়ারা ও আল-হাররাহর দক্ষিণে অবস্থিত। সমভূমিটি বালুকাময়। এখানে গাছ ও জনবসতি আছে।</p> <p>উপকূলরেখা : আরব উপদ্বীপে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব থাকলেও এটি একটি সমুদ্র বেষ্টিত অঞ্চল। এর তিনদিকে আছে লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর, আরব সাগর, ওমান উপসাগর ও পারস্য উপসাগর।</p> <p>আরব উপদ্বীদের জলবায়ু : সাধারণত আরব উপদ্বীপে শুষ্ক জলবায়ু বিরাজ করে। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। কোনো অঞ্চলে তা ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও পৌঁছে যায়। উপকূলীয় ও দক্ষিণাঞ্চলীয় উচ্চভূমিতে তুলনামূলক আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে। বসন্ত ও শরৎকালে আবহাওয়া মনোরম থাকলেও শীতকালে কিছু অঞ্চল ছাড়া সমগ্র উপদ্বীপের তাপমাত্রা অনেকাংশে কমে যায়। শীতের মাঝামাঝি ও গ্রীষ্মের শুরুতে আরব উপদ্বীপে ধূলিঝড় ও বৃষ্টিপাত দেখা যায়। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের হার ৭৭-১০২ মিলিমিটার।</p> <p>বৃষ্টিপাতের হার কম হওয়ায় এই উপদ্বীপে নদী-নালার সংখ্যা খুবই কম। বেশির ভাগ নদী পাহাড়ি উপত্যকার পাদদেশে অবস্থিত। যাতে বর্ষার সময় পানি থাকে এবং অন্য সময় তা শুকিয়ে থাকে। বৃষ্টিপাতের হার কম হওয়ায় সেখানে কৃষিকাজের পরিমাণও সামান্য। কেবল মরূদ্যান অঞ্চলে কৃষিকাজ হয়ে থাকে।</p> <p>তথ্যসূত্র : মওদু ডটকম</p>