<p>শয়তান মুমিনের প্রকাশ্য শত্রু। মুমিনের ইবাদত ধ্বংস করাই তার একমাত্র কাজ। মুমিনকে বিপথগামী করাই তার নেশা। আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত ও জান্নাত থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর শয়তান নিজেই ঘোষণা দিয়েছিল যে সে কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর বান্দাদের পথভ্রষ্ট করবে। মহান আল্লাহও তাকে এর শক্তি দিয়ে দিয়েছেন, যাতে পরীক্ষা হয়ে যায় যে শয়তানের কুমন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে কারা মহান আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে বলল, আপনি আমাকে যে শাস্তি দিয়েছেন সে জন্য আমি আপনার সরল পথে তাদের জন্য ওত পেতে থাকব। অতঃপর আমি তাদের কাছে আসব তাদের সামনে, পেছনে, বাম ও ডান দিক থেকে। আপনি তাদের বেশির ভাগকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৬-১৭)</p> <p>শয়তানের এই মিশনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো, মুমিনের নামাজ ছিনতাই করা। কেউ নামাজে দাঁড়িয়ে গেলে শয়তান বিভিন্নভাবে তার নামাজকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করে। নিম্নে শয়তান কর্তৃক মুমিনের নামাজ নষ্ট করার কিছু চিত্র তুলে ধরা হলো—</p> <p><strong>নামাজে অমনোযোগ সৃষ্টি করে :</strong> শয়তান নামাজরত মুসল্লির মনে বিভিন্ন দুনিয়াবি চিন্তা প্রবেশ করিয়ে দেয়। ফলে নামাজরত মুসল্লির মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়, তখন শয়তান হাওয়া ছেড়ে পলায়ন করে, যাতে সে আজানের শব্দ না শোনে। যখন আজান শেষ হয়ে যায়, তখন সে আবার ফিরে আসে। আবার যখন নামাজের জন্য ইকামত বলা হয়, তখন আবার দূরে সরে যায়। ইকামত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে এসে লোকের মনে কুমন্ত্রণা দেয় এবং বলে এটা স্মরণ করো, ওটা স্মরণ করো, বিস্মৃত বিষয়গুলো সে মনে করিয়ে দেয়। এভাবে লোকটি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে সে কত রাকাত নামাজ আদায় করেছে তা মনে করতে পারে না। (বুখারি, হাদিস : ৬০৮)</p> <p><strong>নামাজে উদাসীনতা সৃষ্টি করে :</strong> শয়তান কখনো কখনো কুমন্ত্রণা দিয়ে নামাজির মনে উদাসীনতা এনে দেয়, ফলে সে ঠিক সময়ে নামাজ আদায় করে না। অলসতার দরুন কখনো কখনো নামাজই ছেড়ে দেয়, যা একজন মুমিনকে ধ্বংস করে দেয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, কাজেই দুর্ভোগ সে নামাজ আদায়কারীদের, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে উদাসীন। (সুরা : মাউন, আয়াত : ৪-৫)</p> <p><strong>নামাজে এদিক-সেদিক তাকাতে কুমন্ত্রণা দেয় :</strong> আয়েশা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে নামাজে এদিক-ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, এটা এক ধরনের ছিনতাই, যার মাধ্যমে শয়তান বান্দার নামাজ থেকে বিশেষ অংশ ছিনিয়ে নেয়। (বুখারি, হাদিস : ৭৫১)</p> <p><strong>নামাজির মনে রিয়া এনে দেয় :</strong> শয়তান কখনো কখনো নামাজির মনে অহংকার, রিয়া এনে নামাজির নামাজ ছিনতাই করে। তখন নামাজির নামাজ লোক-দেখানোর উদ্দেশ্যে হওয়ায় সেই নামাজ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। পবিত্র কোরআনে লোক-দেখানোর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়াকে মুনাফিকদের কাজ বলা হয়েছে। ‘যখন তারা (মুনাফিকরা) নামাজে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সঙ্গে, কেবল লোক-দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে থাকে।’ (সুরা: নিসা, আয়াত: ১৪২)</p> <p>মহান আল্লাহ আমাদের সবার নামাজকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে হেফাজত করুন।</p> <p> </p>