<p>আমাদের সবার ঘরেই কমবেশি ইঁদুরের উপদ্রব আছে। একে আমরা যতটা হালকা ভাবি, ব্যাপারটা ততটা হালকা নয়। ছোট্ট এই ইঁদুর একটি ঘরে ডেকে নিয়ে আসতে বড় বিপর্যয়। করে ফেলতে পারে অপূরণীয় ক্ষতি। রাসুল (সা.) এই ইঁদুরের ব্যাপারে উম্মতকে সতর্ক করেছেন।</p> <p>হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা দরজা বন্ধ করবে, পানির পাত্রের মুখ বাঁধবে, পাত্রগুলো উল্টে রাখবে কিংবা পাত্রগুলো ঢেকে রাখবে, বাতি নিভিয়ে দেবে। কেননা শয়তান বন্ধ দুয়ার খুলতে পারে না, মশকের গিঁট খুলতে পারে না, পাত্রের মুখও অনাবৃত করতে পারে না। (বাতি নিভিয়ে দেবে) কেননা দুষ্ট ইঁদুরগুলো লোকদের ঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১৮১৯)</p> <p>এই দুষ্ট ইঁদুর শুধু আগেকার যুগের চেরাগ থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটায় না; বর্তমান যুগেও বিভিন্ন ঘরের বিদ্যুতের তার কেটে রাখে, যা থেকে ঘটে অনেক বড় বিপদ। শুধু তা-ই নয়, ইঁদুরের ছড়ানো রোগে পৃথিবীতে এসেছিল ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর মহামারিগুলোর কয়েকটি। এর মধ্যে অন্যতম মহামারির নাম দ্য ব্ল্যাক ডেথ। কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে, এই মহামারিতে অন্তত ১০ কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। শুধু ইউরোপের ইতিহাসেই নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও এটি সবচেয়ে আলোচিত মহামারি। ১৪ শতকে কৃষ্ণসাগরের (ব্ল্যাক সি) উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলো থেকে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল বলে একে ব্ল্যাক ডেথ বলা হয়। সে যুগে ইউরোপ ও এশিয়ার বাণিজ্য জাহাজগুলো যাতায়াত করত কৃষ্ণসাগর দিয়েই। আর এখান থেকে খাদ্যদ্রব্যের জাহাজগুলোতে চড়ে বসত অসংখ্য ইঁদুর, যেগুলো মূলত রোগের জীবাণু বহন করত। ইতিহাসবিদদের মতে, ব্ল্যাক ডেথের সময় যে রোগটি অসংখ্য মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল, তা গ্রন্থিপ্রদাহজনিত প্লেগ। কারো কারো মতে, ভয়াবহ এই রোগটি ছড়িয়েছিল এবোলা ভাইরাসে। ১৩৪৭-৫১ খ্রিস্টাব্দ সময়কালেই ইউরোপের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছিল ইঁদুরের ছড়ানো এই ভাইরাসের কারণে। পৃথিবীতে অভিশপ্ত মহামারির প্রভাব টিকে ছিল অন্তত দুই শ বছর।</p> <p>এর আগে ৫৪০ খ্রিস্টাব্দের দিকে মিসরে এক ভয়ানক প্লেগের উৎপত্তি ঘটে। সেই প্লেগও মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল ইঁদুরের মাধ্যমে। যেহেতু সে যুগের পৃথিবীতে মিসর থেকেই সব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্যশস্যের জোগান দেওয়া হতো, ফলে এখানে সৃষ্ট রোগটি সহজেই ছড়িয়ে পড়ে গোটা অঞ্চলে। কোনো  কোনো ইতিহাসবিদের মতে, মহামারির চূড়ান্ত পর্যায়ে সেখানে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার মানুষ মারা যেত!</p> <p>প্রায় ৫০ বছর ধরে টিকে থাকা এই মহামারি আড়াই কোটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। তবে কিছু কিছু উৎসে সংখ্যাটা ১০ কোটিতেও ঠেকেছে।</p> <p>শুধু তা-ই নয়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের কিছু কিছু রোগ ইঁদুরবাহিত দেখা গেছে, যার নাম লেপটোস্পাইরোসিস। এই রোগটির উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, কাশি, হাঁচি, চোখ লাল হওয়া ইত্যাদি। কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে জন্ডিসও হতে পারে।</p> <p>এই রোগটি নিয়ে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আইইডিসিআরের প্রধান ড. মাহমুদুর রহমান বলেছিলেন, রোগটি মূলত ইঁদুরের রোগ। তবে গরু, ছাগল ও ভেড়ার মাধ্যমেও হতে পারে। মূলত এসব প্রাণীর মূত্র থেকে এই রোগ ছড়ায়। এ রোগে মৃত্যুর হার ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। কারণ  রোগটি কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো আক্রান্ত করতে পারে। তবে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটি নিরাময় করা সম্ভব।</p> <p>সে কারণেই রাসুল (সা.) এই প্রাণীর ব্যাপারে স্বীয় উম্মতদের সতর্ক করেছেন। ইসলামের দৃষ্টিতেও এই প্রাণীকে হত্যার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। হজরত  আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর সূত্রে হাফসা (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পাঁচ প্রকার প্রাণী হত্যা করায় তার কোনো দোষ নেই। যেমন : কাক, চিল, ইঁদুর, বিচ্ছু ও পাগলা কুকুর। (বুখারি, হাদিস : ১৭০৯)</p> <p>কোনো হাদিসে তো ইহরাম অবস্থায়ও এ ধরনের প্রাণীকে হত্যা করা বৈধ বলা হয়েছে। তাই আমাদের সবারই উচিত রাসুল (সা.)-এর হাদিসের ওপর আমল করা। রাসুল (সা.)-এর দেওয়া কোনো নির্দেশনা আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে বোঝা সম্ভব না হলেও এর পেছনে অবশ্যই বড় কোনো মাহাত্ম্য থাকবে।</p>