<p>তৈরি পোশাকের পাশাপাশি পাট, চামড়া ও হোম টেক্সটাইলসহ আরো নানা ধরনের পণ্য রপ্তানি করে বিশ্ববাজারে ক্রমেই অবস্থান সুসংহত করছে বাংলাদেশ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিক্যাল রিভিউ ২০২১’ শীর্ষক সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৯তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়। এ অঞ্চলে ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। তৃতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তান।</p> <p>প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি করে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের। করোনা মহামারির কারণে রপ্তানি ২০১৯ সালের চেয়ে ১৫ শতাংশ কমলেও বৈশ্বিক অংশীদারি ০.২ শতাংশ। ২০২০ সালে ২৭৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে থাকা ভারতের বৈশ্বিক অবস্থান ১৬তম। গত বছর দেশটির পণ্য রপ্তানি ১৫ শতাংশ কমলেও বিশ্ববাজারে অংশীদারি ১.৯ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থানে থাকা পাকিস্তানের বৈশ্বিক অবস্থান ৪৫তম। ২০২০ সালে দেশটি ২২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। করোনার কারণে রপ্তানি কমে ৬ শতাংশ।</p> <p>অন্যদিকে বিশ্বের ৩২তম পণ্য আমদানিকারক দেশ বাংলাদেশ। গত বছর পণ্য আমদানি হয় ৫২ বিলিয়ন ডলারের। আগের বছরের চেয়ে আমদানি কমে ১১ শতাংশ। বৈশ্বিক অংশীদারি ০.৪ শতাংশ। পণ্য আমদানিতে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম স্থানে রয়েছে ভারত, দ্বিতীয় বাংলাদেশ এবং তৃতীয় স্থানে পাকিস্তান।</p> <p>তবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালের শুরুর দিকে কমলেও শেষের দিকে ঘুরে দাঁড়াতে থাকে বাংলাদেশের রপ্তানি। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ৩৮.৭৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, এর আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে যা ১৫.১০ শতাংশ বেশি। ওই বছর ৩৩.৬৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।</p> <p>তবে ডাব্লিউটিওর প্রতিবেদনে দেখা যায়, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের চেয়ে পিছিয়ে তৃতীয় অবস্থানে চলে এসেছে বাংলাদেশ। বরাবরের মতোই প্রথম স্থানে চীন। ২০২০ সালে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি করে প্রথম অবস্থান ধরে রেখেছে চীন। বিশ্ববাজারে তাদের অংশীদারি ৩১.৬ শতাংশ।</p> <p>দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসা ভিয়েতনামের রপ্তানির পরিমাণ ২৯ বিলিয়ন ডলার; বিশ্ববাজারে অংশীদারি ৬.৪ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৬.২ শতাংশ। আর গত বছর বাংলাদেশ ২৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে; মোট বিশ্ব রপ্তানিতে অংশ ৬.৩ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৬.৮ শতাংশ।</p> <p>তালিকায় ওঠানামা হলেও মোট রপ্তানির পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে উভয় দেশেরই কমেছে। তবে বাংলাদেশের কমার পরিমাণ ছিল তুলনামূলক বেশি।</p> <p>এদিকে বর্তমান বিশ্বের রপ্তানি বাজার বরাবরের মতোই শাসন করছে চীন। ডাব্লিউটিওর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালে দুই হাজার ৫৯১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে দেশটি। এমনকি বিশ্বের ১৮.১ শতাংশ পণ্য রপ্তানি হয় দেশটি থেকে। এর বিপরীতে আমদানিতে শীর্ষ স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৈশ্বিক আমদানির ১৬.৫ শতাংশ করে এই দেশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা চীন বিশ্বের ১৪ শতাংশ পণ্য আমদানি করে।</p> <p>প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারির প্রভাবে ২০২০ সালের প্রথম ভাগে বিশ্বে পণ্য বাণিজ্য ও প্রকৃত জিডিপি কমে ব্যাপকভাবে। যদিও বছরের দ্বিতীয় ভাগে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হয়। ফলে ২০২০ সালের পুরো বছরে বিশ্বে পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ কমেছে ৫.৩ শতাংশ এবং বাজার বিনিময় হার অনুযায়ী প্রকৃত জিডিপি কমেছে ৩.৬ শতাংশ।</p> <p>গত বছর বিশ্বজুড়ে রপ্তানি প্রায় ৮ শতাংশ কমে হয়েছে ১৭.৫৮ ট্রিলিয়ন ডলার। এর পাশাপাশি বাণিজ্যিক সেবা রপ্তানিও ২০ শতাংশ কমে হয়েছে ৪.৯১ ট্রিলিয়ন ডলার।</p>