ঢাকা, বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫
১৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৪ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫
১৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৪ সফর ১৪৪৭
ফিরে দেখা ১৯ জুলাই ’২৪

কমপ্লিট শাটডাউনের দ্বিতীয় দিনে নিহত ৬৭ কারফিউ জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
কমপ্লিট শাটডাউনের দ্বিতীয় দিনে নিহত ৬৭ কারফিউ জারি

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ১৯তম দিনে (২০২৪ সালের ১৯ জুলাই) সারা দেশে দ্বিতীয় দিনের মতো কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় রাজধানীসহ সারা দেশে অন্তত ৬৭ জন নিহত হয়। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই নিহত হয় ৬২ জন।

আর রাজধানীর বাইরে রংপুরে দুজন, সাভার, সিলেট ও নরসিংদীতে একজন করে মোট পাঁচজন প্রাণ হারায়।

শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দিনের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে এদিন (১৯ জুলাই) সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনা আগের কয়েক দিনকে ছাড়িয়ে যায়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এদিন রাতে দেশে কারফিউ জারি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।

দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে ১৯ জুলাই প্রাণহানির একাধিক সংখ্যা পাওয়া যায়।

তবে সর্বোচ্চ ৬৭ জন নিহতের সংবাদ প্রকাশ করে শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ। নিহত ও আহতদের মধ্যে বিক্ষোভকারী, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, পথচারী, রাজনৈতিক দলের কর্মী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন।

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় তিন দিনেই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।

১৬, ১৮ ও ১৯ জুলাই প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও ১৭ জুলাইয়ের সহিংসতায় কারো প্রাণহানি হয়নি।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় এদিন রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সরকার। তবে জরুরি পরিষেবা কারফিউয়ের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানানো হয়। নৈরাজ্য করলে দুর্বৃত্তদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) তথ্য অনুযায়ী, এদিন মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে আটক করা হয়।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সরকারবিরোধীদের হাতে চলে গেছে। গণভবনে ১৪ দলের বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের দাবি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন অরাজনৈতিক। কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অপচেষ্টা করলে তা তারা সমর্থন করেন না।

পরিস্থিতি সামাল দিতে এদিন সারা দেশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৩০০ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়। আগের দিন রাতের ধারাবাহিকতায় এদিনও ইন্টারনেট সেবা ছিল সম্পূর্ণ বন্ধ। রাজধানী ছিল কার্যত বিছিন্ন ও অচল। রাজধানী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। বাসের পাশাপাশি বন্ধ ছিল রেল যোগাযোগও। ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক অনেক ফ্লাইটও বাতিল করা হয়।

এদিন ঢাকা মহনগরীতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তবে তা উপেক্ষা করে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পুরনো ভবনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। মেট্রো রেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ স্টেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ছাড়া রাজধানী ও রাজধানীর বাইরে যানবাহন, বিভিন্ন স্থাপনা, সরকারি দপ্তর ও রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়।

এদিন আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। তবে র‌্যাবের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। র‌্যাব জানায়, তারা আকাশ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। হেলিকপ্টার থেকে কোনো গুলি ছোড়া হয়নি, বরং উদ্ধার কার্যক্রম চালানো হয়েছে।

এদিন বিকেলে বিএনপির পূর্বঘোষিত সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হলে পল্টনসহ আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কোটা আন্দোলনে তাঁদের পরিপূর্ণ সমর্থন আছে। যতক্ষণ না শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায় এবং সরকারের পতন না হবে ততক্ষণ আন্দোলন চালাবেন তাঁরা।

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় এদিন বিকেলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ তাঁর অনুসারীদের ওপর হামলা হয়। জাহাঙ্গীরের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী জুয়েল মোল্লাকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। গুরুতর আহত হন জাহাঙ্গীরসহ অনেকে।

রাজধানীর বাইরে সিলেট, মুন্সীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, হবিগঞ্জের বানিয়াচং, মাদারীপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, বগুড়া, চট্টগ্রাম, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ একাধিক স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এমন পরিস্থিতিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূর্ব নির্ধারিত ২১ জুলাইয়ের স্পেন সফর স্থগিত করেন।

 

জাতির কাছে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনাসহ ৯ দফা দাবি শিক্ষার্থীদের

এদিন আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক সরকারের তিন মন্ত্রীর সঙ্গে রাতে দেখা করে প্রথমে আট দফা দাবি পেশ করেন। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের গণমাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে ৯ দফার ঘোষণা দেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, কয়েকজন সমন্বয়কের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা গেছে, তাঁরা বৈঠক করে ৯ দফা দাবি ঠিক করেছেন।

৯ দফা দাবির মধ্যে প্রথমে ছিল ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ, ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ, যেসব এলাকায় ছাত্র হত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার পুলিশের ডিআইজি ও পুলিশ সুপারকে বরখাস্ত করা, অভিযুক্ত পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের আটক ও হত্যা মামলা দায়ের করা, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ও ছাত্রসংসদ চালু করার দাবি জানানো হয়।

 

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অভিভাবকদের প্রতিবাদ

রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় সর্বস্তরের অভিভাবক সমাজ ব্যানারে আয়োজিত এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান অভিভাবকরা। দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবিও জানান তাঁরা।

 

নরসিংদীতে জেল ভেঙে কয়েদি ছিনতাই, অস্ত্র লুট

এদিন নজিরবিহীনভাবে নরসিংদী জেলা কারাগারের ফটক ভেঙে ৮২৬ জন কয়েদিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে ৯ জন জঙ্গি ছিল বলে জানান জেল সুপার। জেল সুপার জানান, বিকেলে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কারাগারের মূল ফটক ও পেছনের দুটি ফটক ভেঙে কয়েক হাজার লোক ভেতরে ঢুকে পড়ে। কারাগারের অস্ত্রাগার থেকে লুট হয় ৬৬টি চায়নিজ রাইফেল, ১৯টি শটগান এবং আট হাজার গুলি। কারাগারের অফিসকক্ষ, বন্দিশালাসহ বিভিন্ন ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মার্কিন দূতকে প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই
ড. মুহাম্মদ ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার। সন্ত্রাসবাদের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের মাটি থেকে সন্ত্রাসীদের উচ্ছেদ করব।

গতকাল সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

৪০ মিনিটব্যাপী ওই বৈঠকে তাঁরা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন, যার মধ্যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের চলমান শুল্ক আলোচনা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স জ্যাকবসন বাংলাদেশের সংস্কার প্রচেষ্টা ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রতি তাঁর সরকারের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন, যা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া কমিশনের অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন, যা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মূল সংস্কারগুলোর বিষয়ে ঐক্য গঠনে সচেষ্ট।

তিনি আরো বলেন, আমি বিশ্বাস করি, কমিশন খুবই ভালো কাজ করছে। অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে সদস্যরা কঠোর পরিশ্রম করছেন।

 

মন্তব্য
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি

আরো এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু, বার্নে ভর্তি ৩৩

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আরো এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু, বার্নে ভর্তি ৩৩
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থী ও স্টাফদের চিকিৎসায় ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিচালনা করছে বিমানবাহিনী। গতকাল তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আরেক শিশু শিক্ষার্থী মারা গেছে। এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪ হলো।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সর্বশেষ মারা যাওয়া শিক্ষার্থী সাহিল ফারাবি আয়ান (১৪)। ইংরেজি ভার্সনের সপ্তম শ্রেণির এই ছাত্র গত রবিবার রাত পৌনে ২টার দিকে মারা যায়।

সে মোহাম্মদ আলী মাহমুদ ও তামান্না দম্পতির সন্তান। তাদের বাসা মিরপুরের মধ্য মণিপুর এলাকায়।

এদিকে গতকাল চলমান ছুটি আরো তিন দিন বাড়িয়েছে মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে তৃতীয় দফায় ছুটি বৃদ্ধি করা হলো।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন আয়ানের শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। দুর্ঘটনায় দগ্ধ ৩৩ জন এখনো বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে ২৭ জনই শিশু। তাদের অনেকের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।

হতাহতদের পরিবারের পাশে রয়েছে বিমানবাহিনী।

বার্ন ইনস্টিটিউটে সংকটাপন্ন তিনজন : দগ্ধ তিনজন বর্তমানে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছে। এর মধ্যে একজন  লাইফ সাপোর্টে। তুলনামূলকভাবে একটু কম গুরুতর, অর্থাৎ সিভিয়ার ক্যাটাগরিতে রয়েছে ৯ জন। গতকাল বিকেল ৩টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন।

ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, আজ আরো তিনজনকে ছুটি দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তবে আবহাওয়া খারাপ থাকায় এবং তাদের আরেকটি ড্রেসিং দরকার মনে করায় ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। তবে চলতি সপ্তাহে আরো বেশ কয়েকজনকে ছাড়পত্র দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, চীন ও ভারত থেকে আসা চিকিৎসকরা পর্যায়ক্রমে নিজ নিজ দেশে চলে গেছেন এবং অন্যরা চলে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৪৫ : দগ্ধদের মধ্যে ৪৫ জন বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ৩৩ জন, ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১১ জন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে একজন রয়েছে।

সকাল থেকে সেবাপ্রার্থীদের আনাগোনা : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল ফটকে টানানো হয়েছে অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্পের ব্যানার। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর চিকিৎসকরা সেখানে বিনামূল্যে সেবা দিচ্ছেন। গতকাল সকাল ৯টা থেকে চালু করা হয়েছে অস্থায়ী এই সেবামূলক কার্যক্রম। মেডিক্যাল টিম সূত্রে জানা যায়, তাদের এই সেবা কার্যক্রম চলবে সপ্তাহজুড়ে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আগতদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। ১৫ সদস্যের এই মেডিক্যাল ক্যাম্পে দুজন চিকিৎসক আছেন। মূলত দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মানসিক ও শারীরিক সহায়তা দেওয়া এই ক্যাম্পের প্রধান লক্ষ্য। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনে চালু করা হয়েছে এই চিকিৎসাসেবা।

মেডিক্যাল ক্যাম্পের চিকিৎসক শিহাব আলী বলেন, সকাল থেকে অনেক রোগী আসছে। তাদের ড্রেসিং করার পাশাপাশি বিনামূল্যে ওষুধ দিচ্ছি। আবার অনেকে মানসিক ট্রমা নিয়ে আসছে। তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তৃতীয় দফা ছুটি বাড়াল মাইলস্টোন

স্কুল ভবনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বন্ধ রয়েছে রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। চলমান ছুটি আরো তিন দিন বাড়িয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে তৃতীয় দফায় প্রতিষ্ঠানটির ছুটি বৃদ্ধি করা হলো।

গতকাল সোমবার বিকেলে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস-প্রিন্সিপাল (প্রশাসন) মো. মাসুদুল আলম ছুটি বৃদ্ধির বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, তৃতীয় দফায় আরো তিন দিন মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার (২৯, ৩০ ও ৩১ জুলাই) ছুটি ঘোষণা করেছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দিয়াবাড়ী স্থায়ী ক্যাম্পাস। আগামী রবিবার (৩ আগস্ট) খুলবে প্রতিষ্ঠানটি।

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রথম দফায় ২২, ২৩ ও ২৪ জুলাই তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় ২৭ ও ২৮ জুলাই (রবি ও সোমবার) ছুটি ঘোষণা করা হয়।

 

মন্তব্য

জুলাই সনদে ৭ দফা অঙ্গীকার, দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন

    এই সনদ ভবিষ্যতের পথরেখা তৈরি করবে : আলী রীয়াজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জুলাই সনদে ৭ দফা অঙ্গীকার, দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন

সনদে উল্লিখিত প্রস্তাব বা সুপারিশ দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাসহ সাত দফা অঙ্গীকার করে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ স্বাক্ষর করবে রাজনৈতিক দলগুলো। চলতি মাসেই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা সম্ভব হবে বলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আশা করছে। দ্বিতীয় দফা সংলাপের পরও যেসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছা যায়নি, সেসব বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত জানাবে। ওইসব বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) দিয়ে সনদে স্বাক্ষর করতে পারবে রাজনৈতিক দলগুলো।

এদিকে, ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।  জাতীয় সনদের খসড়ার বিষয়ে ৩০ জুলাই বুধবারের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে মতামত দিতে আহবান জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ। এই সনদ ভবিষ্যতের পথরেখা তৈরি করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

কমিশন সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত খসড়ায় জাতীয় সনদের শিরোনাম রাখা হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫

এই সনদের সূচনা বক্তব্যে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত সফল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠনের এক ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জোট ও শক্তিসমূহের প্রতিনিধিরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়ে সংস্কারের লক্ষ্যে নিম্নলিখিত বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছি।

সনদের অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে—“(১) হাজারো মানুষের জীবন ও রক্ত এবং অগণিত মানুষের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ এবং তেপ্রক্ষিতে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করব। (২) সনদে দেশের শাসনব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার বিষয়ে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ এই সনদে লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, লিখন ও পুনর্লিখন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, লিখন, পুনর্লিখন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।

(৩) সনদে দেশের শাসনব্যবস্থার বিষয়ে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ এই সনদে লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, লিখন ও পুনর্লিখন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, লিখন, পুনর্লিখন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন এই সনদ গৃহীত হওয়ার পরে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে এবং এসব সংস্কার টেকসই করতে অঙ্গীকার করছি। (৪) এই সনদ গৃহীত হওয়ার পর এতে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো পরবর্তী দুই বছর মেয়াদকালের মধ্যে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। সনদ বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষার পূর্ণ নিশ্চয়তা বিধান করব। (৬) সনদ বাস্তবায়নে এবং এর আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা প্রদানে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। (৭) ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সংবিধানে যথাযোগ্য স্বীকৃতি দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব।

সনদের প্রথম দফায় পটভূমিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের নীতিকে ধারণ করে সংগঠিত মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো গঠনের আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছিল, দীর্ঘ ৫৩ বছরেও তা অর্জন করা যায়নি। কারণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও সংস্কৃতি বিকাশের ধারা বারবার হোঁচট খেয়েছে। বস্তুতপক্ষে বিগত পাঁচ দশকে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একদিকে টেকসই ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করা যায়নি, অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নামে মাত্র থাকলেও তা অত্যন্ত দুর্বলভাবে কাজ করেছে। বস্তুত রাষ্ট্রকাঠামোতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে দলীয় প্রভাবের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকর ও বিচারহীনতার সহায়ক হিসেবে পরিচালনা করা হয়েছে।

২০০৯ সালে একটি দলীয় সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে ক্রমান্বয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে অগণতান্ত্রিক চরিত্র ধারণ করতে থাকে। তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সমালোচকদের মানবাধিকার হরণ, গুম, খুন, নিপীড়ন-নির্যাতন, মামলা ও হামলার মাধ্যমে একটি নৈরাজ্যকর ও বিভীষিকাময় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বন্দনার জন্য নিবেদিত রাখা হয়। দেড় দশকে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার জনস্বার্থের বিরুদ্ধে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানের বিকৃতি সাধন, বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসনকে দলীয়করণ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুটপাট করে। এই পটভূমিকায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিপুল ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণের ফলে এক অভূতপূর্ব সফল গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এতে শাসকগোষ্ঠীর প্রতিহিংসার শিকার হয়ে শিশু, নারীসহ এক হাজার চার শর বেশি নিরস্ত্র নাগরিক নিহত এবং ২০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়। তাদের আত্মাহুতি ও ত্যাগের বিনিময়ে এবং জনগণের সম্মিলিত শক্তি ও প্রতিরোধের কাছে স্বৈরাচারী শাসক ও তার দোসররা পরাজিত হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

এ অবস্থায় জনগণের মননে রাষ্ট্রকাঠামো পুনর্গঠনের একটি প্রবল অভিপ্রায় সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কার, বিশেষ করে সংবিধানের মৌলিক সংস্কার, নির্বাচনী ব্যবস্থার পুনর্গঠন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অনুশীলন, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা এবং সুশাসিত জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যার সদ্ব্যবহার করা আমাদের সবার পবিত্র দায়িত্ব।

সনদের দ্বিতীয় দফায় সংস্কার কমিশন গঠন, তৃতীয় দফায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন এবং চতুর্থ দফায় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ছয় মাস মেয়াদে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে। সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ছাপানো কপি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। এরপর পুলিশ সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ স্প্রেডশিট আকারে দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এ বিষয়ে ৩৫টি দল ও জোট তাদের মতামত কমিশনের কাছে পাঠায়। প্রথম পর্যায়ে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩২টি দল ও জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ৪৪টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কমিশন অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মোট ২০টি বিষয় নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় মিলিত হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ রচিত হয়।

সনদের পঞ্চম দফায় ঐকমত্যে উপনীত হওয়ার বিষয়গুলো উল্লেখ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আলোচনা চলমান থাকায় এখনো খসড়ায় তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে এ পর্যন্ত ১২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ১০ বছর, নির্বাচন কমিশন গঠনে বাছাই কমিটি গঠন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, স্বাধীন পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন, জরুরি অবস্থা ঘোষণা সংক্রান্ত সংবিধানের বিদ্যমান অনুচ্ছেদ পরিবর্তন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার, প্রধান বিচারপতির নিয়োগপ্রক্রিয়া নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদানের জন্য আইন প্রণয়ন, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণে কমিটি গঠন, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন এবং উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত গঠন।

এই সনদে নাম ও পদবি উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা স্বাক্ষর করবেন। এরপর ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা এবং সর্বশেষ ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা স্বাক্ষর করবেন। এই জুলাই সনদ আমাদের আগামীর পথরেখা তৈরি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, জুলাই সনদকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে তৈরি করতে চায় কমিশন। এর মাধ্যমে একটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভব হবে। মৌলিক সংস্কারের ২০টি বিষয়ের মধ্যে এরই মধ্যে ১২টিতে একমত হয়েছে দলগুলো। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে এ নিয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভব হবে।

 

মন্তব্য
‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে চাঁদাবাজি

মহেশপুরে রানার জীবন বদলে গেছে, ‘ছোটদের’ কাছে জিম্মি হবিগঞ্জবাসী

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ ও রায়হান আহমেদ, হবিগঞ্জ
অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ ও রায়হান আহমেদ, হবিগঞ্জ
শেয়ার
মহেশপুরে রানার জীবন বদলে গেছে, ‘ছোটদের’ কাছে জিম্মি হবিগঞ্জবাসী

সমন্বয়ক হওয়ার পর ঝিনাইদহের মহেশপুরের হামিদুর রহমান রানার পকেট প্রায় প্রতিদিনই ভারী থাকছে। বিভিন্ন স্থানে কাজের ভাগ নিতে, চাঁদাবাজিতে তাঁর নেতৃত্বে অপতৎপরতা চলছে ঝিনাইদহের বিভিন্ন স্থানে। এলাকাবাসী বলছে, সমন্বয়ক হয়েই বদলে গেছে রানার জীবন। অন্যদিকে সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজদের তৎপরতায় অতিষ্ঠ হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ।

তারা বলছে, অকন শুরু হইছে ছোড ছোড চান্দাবাজদের যন্ত্রণা।

সমন্বয়ক রানার জীবন পাল্টে যাচ্ছে : সংসার চলত টেনেটুনে। লেগেই থাকত অভাব-অনটন। এই অনটনের পরিবারের সদস্য গ্রামের মসজিদে মাসিক তিন হাজার টাকা বেতনে ইমামতির চাকরি নিয়েছিলেন।

চলাচলের জন্য ব্যবহার করতেন বাইসাইকেল। হাতে থাকত স্বল্প দামের  মোবাইল ফোনসেট। তবে হঠাৎ করেই বদলে যায় তাঁর জীবনযাপন। বাইসাইকেলের বদলে ব্যবহার শুরু করেন দামি মোটরসাইকেল, আগের কম দামের মোবাইলের বদলে ব্যবহার করতে থাকেন লাখ টাকার মোবাইল ফোনসেট।
শুধু একটি পদ তাঁর জীবন বদলে দিতে শুরু করেছে। এই পদটির নাম সমন্বয়ক। আর যাঁর জীবন বদলে যেতে শুরু করেছে, তিনি হামিদুর রহমান রানা। সদ্যোবিলুপ্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঝিনাইদহ জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। তাঁর গ্রামের বাড়ি মহেশপুরের বলিভদ্রপুরে।
এলাকায় এখন সবাই তাঁকে সমন্বয়ক রানা নামেই ডাকে। জানা গেছে, জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সাইদুর রহমানের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত এই হামিদুর রহমান রানা। সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা মহেশপুরে একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, পুড়াপাড়া পশুর হাট থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায়, নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে কমিশন ও চাল বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। মহেশপুর পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকার বরাদ্দ আছে। এই কাজের ঠিকাদারি নিয়ে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সোহেল রানার সঙ্গে হামিদুর রহমান রানার বনিবনা হচ্ছিল না। পৌরসভার কাজ বণ্টনের জন্য গত ২২ জুলাই দুপুরে জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবকে নিয়ে মহেশপুরে গিয়ে জনরোষে পড়েন রানা ও অন্যরা। ওই সময় আরেকটি পক্ষ তাঁদের অবরোধ করে রাখে। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে রেহাই পান তাঁরা। রানার বিরুদ্ধে মহেশপুর সীমান্তে চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে। সম্প্রতি মহেশপুর উপজেলা প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদাও দাবি করেন রানা। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ওই কর্মকর্তাকে মবের ভয় দেখান রানা। পরে ভয়ে ওই কর্মকর্তা অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যান।

জেলা জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মেহেদী হাসান বাপ্পী কালের কণ্ঠকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের লড়াই-সংগ্রামের সময় আমি মাঠে কখনো রানাকে দেখিনি। হঠাৎ একদিন জানতে পারি, সে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা হয়েছে। এর পর থেকে মহেশপুরের বিভিন্ন স্থানে সমন্বয়ক পরিচয়ে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে সে। এ নিয়ে আমরা একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি, কিন্তু কোনো ফল পাইনি। তার অপকর্ম নিয়ে প্রতিবাদ করলে উল্টো আমাদের হামলা-মামলার ভয় দেখায়।

তিনি আরো বলেন, রানা আগে টাকার অভাবে চলতে পারত না। এখন সে লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেছে। দামি মোটরসাইকেলে চড়ে। এলাকায় বেশ কয়েক বিঘা জমি কিনেছে বলেও শোনা যাচ্ছে। সে মূলত চাঁদাবাজিসহ সীমান্তে অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে অল্প দিনে অনেক টাকার মালিক হয়ে গেছে।

মহেশপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, সমন্বয়ক রানা আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে পৌরসভার ঠিকাদারির কাজ বাগিয়ে নিতে চায়। গত ২২ জুলাই একটি দরপত্রের কাজের ভাগ নেওয়ার জন্য তার সংগঠনের জেলা নেতাদের আমাদের এখানে নিয়ে এসেছিল। পরে আরেকটি গ্রুপের হস্তক্ষেপে তারা পালিয়ে যায়। মহেশপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খাদিজা আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। তবে লোকমুখে সমন্বয়ক রানার অপকর্মের কথা শুনেছি। কেউ তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত হামিদুর রহমান রানা কালের কণ্ঠকে বলেন, কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি এর আগে সংবাদ সম্মেলন করে আমার অবস্থান তুলে ধরেছি। আমাদের সঙ্গে এখন বিভিন্ন মানুষ শত্রুতা করছে।

ছোড চাঁদাবাজদের কাছে জিম্মি হবিগঞ্জবাসী : এদিকে সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন হবিগঞ্জবাসী। শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই চাঁদাবাজদের ভয়ে তটস্থ। বাড়ি নির্মাণ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে দিতে হচ্ছে চাঁদা। প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, শিল্প-কারখানার মালিকরাও এ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। জেলা শহরে এক সমন্বয়কের চাঁদাবাজিতে বাধা দেওয়ায় ছুরিকাঘাতের ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, এই চাঁদাবাজরা হঠাৎ করেই চাঁদাবাজিতে নেমেছে। সংগঠনের জন্য, অনুষ্ঠানের জন্য অর্থ দরকারবলে তারা চাঁদা তুলতে তৎপর রয়েছে। এদের বেশির ভাগের বয়স ২৫ বছরের নিচে। এলাকার লোকজন এখন কৌতুক করে তাই বলেন, অকন শুরু হইছে ছোড ছোড চাঁন্দাবাজদের যন্ত্রণা।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হবিগঞ্জ জেলা শাখার সমন্বয়ক এনামুল হক সাকিব শহরের উমেদনগরে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন গত বছরের জুলাই থেকেই। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে তাঁকে চাঁদাবাজি থেকে থামাতে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবু তাঁকে দমানো যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে সংগঠনের আরেক সমন্বয়ক সোহাগ গাজী রুখে দাঁড়ান। তিনি সাকিবের চাঁদাবাজি বন্ধে জনমতও গঠন করছিলেন। এক পর্যায়ে তাতে সংক্ষুব্ধ হয়ে সাকিব গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর রাত ১টার দিকে দলবলসহ শহরের সিনেমা হল রোডে সোহাগ গাজীকে ছুরিকাঘাত করেন। ছুরিকাঘাতে আহত সোহাগকে পরে আধুনিক জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করান আশপাশের লোকজন। ওই অপরাধের জেরে চলতি বছরের গত ৬ মে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয় সাকিবকে। এরপর আরো কিছু অপরাধের তথ্য পেয়ে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে সাকিবকে শহরের চৌধুরী বাজার এলাকা থেকে গত ৬ জুলাই রাতে গ্রেপ্তার করে। সাকিব এখন হবিগঞ্জ কারাগারে রয়েছেন। সাকিব কারাগারে থাকলেও তাঁর অনুসারীরা চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে বলে ভুক্তভোগী অনেকে অভিযোগ করেছেন। তবে তাঁরা ভয়ে থানায় মামলা করতে পারছেন না।

হবিগঞ্জ শহরের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর মিয়া জানান, কিছুদিন আগে চার-পাঁচজন যুবক তাঁর দোকানে এসে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে অনুষ্ঠান করার জন্য অর্থ দরকার বলে চাঁদা দাবি করে। জাহাঙ্গীর চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।

সমন্বয়ক পরিচয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছ থেকেও বিভিন্ন উপায়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে।

জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা নিবাসী মো. রিমন সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বারবার চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠলে রিমনের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হবিগঞ্জ জেলা শাখার কোনো সম্পর্ক নেই বলে গত ৯ মে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।  গত ৪ মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অলিপুর প্রাণ কম্পানির কাছ থেকে চাঁদাবাজিসংক্রান্ত একটি চিঠি ছড়িয়ে পড়ে। তাতে লেখা ছিল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হবিগঞ্জ জেলা কমিটির শীর্ষ নেতারা।

জেলার চুনারুঘাটে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সমন্বয়ক পরিচয়ে এক যুবক লক্ষাধিক টাকা নেন এক ব্যক্তির কাছ থেকে। অর্থ নেওয়ার পর আট মাস পেরোলেও চাকরি জুটিয়ে দিতে পারেননি সেই সমন্বয়ক

চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের এক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ছয় মাস ধরে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে প্রায় দিনই তাঁর কাছে কিছু যুবক তদবির করে থাকে।

সদ্য লুপ্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হবিগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক আরিফ তালুকদার বলেন, সমন্বয়ক পরিচয়ে যারা সেখানে চাঁদাবাজি করতে যাবে, তাদের আটকে রেখে পুলিশে দেওয়ার জন্য আমরা সবাইকে বলেছি। আমরা চাঁদাবাজিকে সমর্থন করি না। তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, কেউ যদি চাঁদাবাজি করতে আসে আপনারা সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করবেন। প্রয়োজনে আমাদের ডাকবেন, আমরা শক্ত হাতে বিষয়টি দেখব।

চাঁদাবাজি পরিস্থিতির বিষয়ে হবিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম শাহাবুদ্দিন শাহীন বলেন, আমরা অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। পরিস্থিতি আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ