ঢাকা, বুধবার ১৩ আগস্ট ২০২৫
২৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৮ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ১৩ আগস্ট ২০২৫
২৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৮ সফর ১৪৪৭

সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ

  • জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্বে সোহাগকে হত্যা : ডিএমপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ
সোহাগ হত্যার বিচার দাবিতে গতকাল মানববন্ধন করেন ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। ছবি : কালের কণ্ঠ

ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্বে রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ডে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লাল চান ওরফে সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পুলিশের ভাষ্য, চাঁদাবাজি নয়, ভাঙ্গারি ব্যবসা এবং একটি দোকানে কারা ব্যবসা করবে, তা নিয়ে সোহাগের সঙ্গে হত্যায় জড়িতদের দ্বন্দ্ব চলছিল।

গতকাল শনিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দিন।

সোহাগ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে এ পর্যন্ত তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল আসামি টিটন গাজীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ ছাড়া অস্ত্র মামলায় আসামি তারেক রহমান রবিন আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার এ মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

ডিসি মো. জসীম উদ্দিন বলেন, গত ৯ জুলাই বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট থেকে ৬টার মধ্যে কোতোয়ালি থানাধীন মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটসংলগ্ন এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। অনেক লোক এক হয়ে একজনকে নানাভাবে আঘাত করে হত্যা করেছে। এ ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করে।

মো. জসীম উদ্দিন বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আমরা লাশের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠাই।

এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা দ্রুত ভাইরাল হয় এবং দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।

ডিসি বলেন, যতটুকু জানতে পেরেছি, সেখানে একটি ভাঙ্গারি দোকান ছিল, সেই দোকানে কারা ব্যবসা করবে, এ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। আমরা জানতে পেরেছি, যিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং যাঁরা হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাঁরা পরস্পর সম্পর্কিত। তাঁরা একসঙ্গে ব্যবসাটা কিছুদিন করেছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ব্যাবসায়িক লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।

তাঁরা নিজেদের মতো ব্যবসা করার জন্য সোহাগের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটান।

তিনি বলেন, ৯ জুলাই এই হত্যাকাণ্ডের পর ১০ জুলাই সোহাগের বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এ ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ দেখে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করি এবং এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব ও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

পুুলিশ জানায়, গত ১১ জুলাই পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেপ্তার করে। এ সময় রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে র‌্যাব আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে ছোট মনির (২৫) নামের আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। শুক্রবার রাতে মো. টিটন গাজী (৩২) নামের আরেক এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিসি বলেন, একটি অপরাধ ঘটলে কে অপরাধী, সেটি বিবেচনায় পুলিশ মামলার তদন্ত করে। তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় আমাদের কাছে মুখ্য নয়। তাঁরা কেন অপরাধটি করেছেন, এটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

চাঁদাবাজির কোনো বিষয় ছিল কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এমন কোনো তথ্য পাইনি। যতটুকু জেনেছি, এটা পারস্পরিক দ্বন্দ্বের বিষয়।

তবে গতকাল নিহতের পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, সোহাগ হত্যায় যাঁরা সরাসরি জড়িত, তাঁদের বাদ দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যুবদল নেতাদের এবং আসামি করা হয়েছে নিরীহ মানুষকে।

হত্যায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল রাজধানীর পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স ও ঢাকা জেলা পুলিশ লাইনস পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই ঘটনাটা বড়ই দুঃখজনক। একটা সভ্য দেশে এমন একটি ঘটনা কখনোই আশা করা যায় না। এটার জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

অনেকে অভিযোগ করছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এখনো কঠোর হচ্ছে না। এমন অভিযোগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কঠোর না হলে পাঁচজনকে কিভাবে গ্রেপ্তার করা হলো? গতকাল কাঠমাণ্ডুর বিমানের ফ্লাইটে ফেরত আসার ঘটনায় যে মহিলা টেলিফোন করেছিলেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে যে পরামর্শ দিয়েছেন, তাঁকেও আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর এই অবস্থান মোটেও নির্লিপ্ত নয়।

দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাবও গতকাল কারওয়ান বাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে একটি ব্রিফ করে। বাহিনীটির মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, মিটফোর্ডে যে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে, এর মূল তদন্ত ডিএমপি করছে। তারাই তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িতদের বের করবে। আমরা (র‌্যাব) ছায়াত দন্তের মাধ্যমে ডিএমপিকে সহায়তা করছি। আমরা আমাদের ছায়া তদন্ত গোপনে চালিয়ে যাচ্ছি।

রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের রাজধানীজুড়ে বিক্ষোভ

সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতকাল ঢাকাজুড়ে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়। গতকাল জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি বায়তুল মোকাররম থেকে শুরু হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়।

বিক্ষোভ মিছিল-পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপিকে তো শুধু নির্বাচন চাইতেই দেখি, কিন্তু চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলে না কেন? নির্বাচন চায় অথচ মিটফোর্ডের খুনিদের নিয়ে কথা বলে না কেন? আপনারা কি এখনো দলীয় সন্ত্রাসীদের চিন্তা-চেতনার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি?

তিনি বলেন, মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সারা দেশের মানুষকে অবাক করেছে। সোহাগের অপরাধ কী ছিল? শুনছি, তিনি নাকি যুবদলেরই লোক ছিলেন। যে দলেরই হোক, মানুষ তো। তাঁর অপরাধ, তাঁর কাছে চাঁদা চেয়েছে, দেননি। এটা কোনো অপরাধ?

মিটফোর্ডে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। গতকাল সংগঠনটির আয়োজিত এক সমাবেশে এই প্রতিবাদ জানানো হয়। সমাবেশে সংগঠনটির সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, জাহেলিয়াত কায়েম করে কোনো সরকার থাকতে পারেনি। আওয়ামী জাহেলিয়াত টিকতে পারেনি, এখন নব্য জাতীয়তাবাদী জাহেলিয়াতও টিকতে পারবে না।

পুরান ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল : সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে পুরান ঢাকায় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। দিনভর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে সাধারণ শিক্ষার্থী, একাধিক রাজনৈতিক সংগঠনসহ সাধারণ জনগণ অংশ নেন।

সকাল ১১টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা। মিছিলটি রায়সাহেব বাজার, তাঁতিবাজার অতিক্রম করে মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে শেষ হয়।

একই দিন দুপুর ২টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। জবির কাঁঠালতলা থেকে শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস এবং রায়সাহেব বাজার মোড় প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসে ফিরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে বিক্ষোভ মিছিলটি শেষ হয়। এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের দুই নেতা পদত্যাগ করেছেন।

বিক্ষোভে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা : গতকাল দুপুর ১টার দিকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বিক্ষোভে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ ব্যানারে এই বিক্ষোভ হয়।

হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের দশম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ফারাবি জিসান বলেন, মিটফোর্ডের সামনে চাঁদাবাজির কারণে একজন মানুষকে পাথর দিয়ে থেঁতলে নৃশংসভাবে মেরে ফেলেছেন যুবদল-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। অথচ দল দায় না নিয়ে তাঁদের শুধুই বহিষ্কার করেছে। আমরা বলতে চাই, এখানে অবশ্যই দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ সাকিব বলেন, বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে সবাই মিলেমিশে কাজ করার যেই মানসিকতা তৈরি হয়েছিল, সেটা নষ্ট হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংসতা বেড়ে গেছে। একজন মানুষকে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে একটি মিছিল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা প্রদক্ষিণ করে এনএসইউর ১ নম্বর গেট এলাকায় এসে শেষ হয়। এ সময় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন।

দুপুর ১টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে প্রতিবাদী বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। বিচার দাবিতে দুপুরে ইডেন কলেজের সামনে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন।

মিটফোর্ডের ঘটনায় কিছু রাজনৈতিক দল ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী। গতকাল উত্তরা ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প উদ্বোধনকালে তিনি এই মন্তব্য করেন। রিজভী বলেন, গত বুধবার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সত্য উদঘাটনের দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর। তবে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের রাতেই আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ড সাজানো, দাবি চবি ছাত্রদল নেতার : গতকাল ব্যক্তিগত ফেসবুক পোস্টে সোহাগ হত্যার ঘটনাটি সাজানো বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়।

ফেসবুকে সাজ্জাদ লেখেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, গতকালকের খুন ছিল একটা বড় পরিকল্পনার অংশ, একটা সাজানো মঞ্চ, যেটা মঞ্চায়ন করেছে জান্নাতের টিকিট বিক্রি করা গুপ্ত সংগঠন। বিএনপি খুন করেনি অথচ একদল গর্দভ বিএনপির বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।

জাতীয় পার্টির শোক : সোহাগ হত্যার ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জি এম কাদের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

এইচআরএসএসের উদ্বেগ : সোহাগ হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও শোক প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। তারা এ ঘটনাকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং দেশের সামাজিক ও বিচারিক ব্যবস্থার ওপর এক ভয়াবহ প্রশ্নবোধক চিহ্ন হিসেবে বর্ণনা করেছে। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং দ্রুত বিচার দাবি করেন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

গণপিটুনির সংস্কৃতি আইনের শাসনের জন্য হুমকি : আসক

    সাত মাসে নিহত ১১১
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গণপিটুনির সংস্কৃতি আইনের শাসনের জন্য হুমকি : আসক

গণপিটুনির মতো অপরাধ প্রচলিত আইন, সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য এবং বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, এ ধরনের ঘটনা বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে দীর্ঘায়িত করছে, যা সামাজিক সম্প্রীতি ও আইনের শাসনের জন্য হুমকি।

গতকাল সোমবার আসকের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরের পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদে নাগরিকের জীবন ও আইনগত সুরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

গণপিটুনির ঘটনায় যা গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হয়। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে অন্তত ১১১ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় চোর সন্দেহে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই নাগরিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আসক। একই সঙ্গে সংস্থাটি দাবি করেছে, এসব ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

মন্তব্য
মানবতাবিরোধী অপরাধ

চানখাঁরপুলে হত্যা মামলার সাক্ষ্যে আসামিদের ফাঁসি চান শহীদ আনাসের বাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
চানখাঁরপুলে হত্যা মামলার সাক্ষ্যে আসামিদের ফাঁসি চান শহীদ আনাসের বাবা

গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কয়েক ঘণ্টা আগে ঢাকা মহানগরীর চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হয় দশম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাস। সেদিন পুলিশের গুলিতে আরো শহীদ হন শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া।

গতকাল সোমবার এই মামলায় প্রথম সাক্ষ্য দিয়েছেন শহীদ আনাসের বাবা সাহরিয়ার খান (পলাশ)। তাঁর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১-এ মামলার সূচনা বক্তব্য তুলে ধরেন চিফ প্রোসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পুলিশের সাবেক আট সদস্য এই মামলার আসামি। তাঁদের মধ্যে চারজন পলাতক। তাঁরা হলেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম এবং রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক (অপারেশন) আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও নাসিরুল ইসলাম। বিচারকাজের সময় তাঁরা ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় ছিলেন।

সূচনা বক্তব্যে চিফ প্রোসিকিউটর জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট ও মামলার আদ্যোপান্ত তুলে ধরে বলেন, এই বিচার কার্যক্রম পুরনো রাজনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য নয়, বরং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া। এটি প্রমাণ করে যে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাবান বাক্তিদেরও আইনসম্মত জবাবদিহির আওতায় আনা যেতে পারে।

আনাসের সঙ্গে থাকা আন্দোলনকারী রাব্বী হোসেন, সৌরভ আহম্মেদের বরাত দিয়ে গত বছর ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল এলাকার পরিস্থিতির বর্ণনা দেন সাক্ষী সাহরিয়ার খান (পলাশ)। তিনি বলেন, তারা (আনাস, রাব্বি, সৌরভসহ আন্দোলনকারীরা) চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল, শটগান ও চায়নিজ রাইফেল দিয়ে নির্বিচারে গুলি করে। নিমতলীর নবাব কাটরা গলির ভেতর আনাসকে টার্গেট করে গুলি করে পুলিশ। একটা গুলি আমার ছেলের বুকের বাঁ পাশে বিদ্ধ হয়ে পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে যায়।

গুলি করা লোকটি এপিবিএনের পোশাক পরা ছিল। রাব্বিসহ অনেকেই ঘটনাটির ভিডিও করে। পরে ভিডিওগুলো আমাকে দেওয়া হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার কাছ থেকে তা জব্দ করেছেন।

আনাসসহ ছয়জনকে গুলি করে হত্যার জন্য সাক্ষী সাহরিয়ার খান (পলাশ) আসামিদের দায়ী করে তাঁদের বিচার ও ফাঁসি দাবি করেন ট্রাইব্যুনালের কাছে।

আজ মঙ্গলবার এই মামলায় ফের সাক্ষ্যগ্রহণ।

 

মন্তব্য
মন্তব্য প্রতিবেদন

জরিপের আড়ালে নির্বাচন-বিমুখতার কৌশলী ন্যারেটিভ

    সাঈদ খান
শেয়ার
জরিপের আড়ালে নির্বাচন-বিমুখতার কৌশলী ন্যারেটিভ

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক মনস্তাত্ত্বিক খেলা শুরু হয়েছে যার মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে জরিপ। নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের আস্থা নষ্ট করা এবং বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা চলছেএমন অভিযোগ তুলেছেন রাজনীতিসচেতন মানুষ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও ভয়েস ফর রিফর্ম যৌথভাবে প্রকাশিত পালস সার্ভে ৩ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সচেতন নাগরিক মহলে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। 

এই জরিপে দেখা গেছে, আগামী নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেনএই প্রশ্নে সিদ্ধান্তহীন মানুষের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮.৫০ শতাংশে।

মাত্র আট মাস আগে (২০২৪ সালের অক্টোবর) এই ছিল ৩৮ শতাংশ। কাকে ভোট দেবেন, তা বলতে চান না ১৪.৪০ শতাংশ, আর সরাসরি ভোট দেবেন না বলেছেন ১.৭০ শতাংশ।

দলভিত্তিক সমর্থনের চিত্রেও এসেছে বড় পরিবর্তন। বিএনপির ভোট ১৬.৩০ শতাংশ থেকে নেমে ১২ শতাংশ, জামায়াতের ১১.৩০ থেকে ১০.৪০ শতাংশ, আর এনসিপির ভোট ২ শতাংশ থেকে সামান্য বেড়ে ২.৮০ শতাংশ হয়েছে।

নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ভোটও ৮.৯০ থেকে নেমে ৭.৩০ শতাংশ। অন্যান্য ইসলামী দলের ভোট নেমে এসেছে ০.৭০ শতাংশে।

তবে প্রশ্নটি উল্টো করে—‘আপনার এলাকায় কোন দলের প্রার্থী জিতবে বলে মনে হয়?’—জিজ্ঞেস করলে ৩৮ শতাংশ বিএনপির, ১৩ শতাংশ জামায়াতের, ১ শতাংশ এনসিপির এবং ৭ শতাংশ আওয়ামী লীগের নাম বলেছে। এর মাধ্যমে বর্তমান প্রেক্ষাপটেও আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করা হয়েছে।

জরিপে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ কমেছে। অক্টোবরের তুলনায় রাজনৈতিকভাবে দেশ সঠিক পথে আছে বলে মনে করা মানুষের হার ৫৬ শতাংশ থেকে নেমে ৪২ শতাংশে এসেছে। তবে অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে বলে মনে করা মানুষের হার ৪৩ থেকে বেড়ে ৪৫ শতাংশ হয়েছে।

সংস্কারনির্ভর ভোটের দাবি এখানে প্রাধান্য পেয়েছে৫১ শতাংশ বলেছে ভালোভাবে সংস্কার করে তারপর নির্বাচন, ১৭ শতাংশ চায় কিছু জরুরি সংস্কারের পর নির্বাচন, আর মাত্র ১৪ শতাংশ চায় সংস্কার বাদ দিয়ে নির্বাচন

প্রয়োজনীয় সংস্কারের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়ন (৩০%), দুর্নীতি দমন (১৭%), আইন ও বিচারব্যবস্থার উন্নতি (১৬%), অর্থনীতি চাঙ্গা করা (১৬%), নিত্যপণ্যের দাম কমানো (১৩%), রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অসহনশীলতা কমানো (১৯%) এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার (১৯%)।

যদিও ৭০ শতাংশ মানুষ মনে করে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে১৫ শতাংশ এর বিপক্ষে মত দিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই জরিপ শুধু তথ্য দেয়নি, বরং এক কৌশলী ন্যারেটিভ দাঁড় করিয়েছে, যাতে একদিকে ভোটের আগ্রহ কমিয়ে দেখানো হচ্ছে, অন্যদিকে বিএনপি, জামায়াতের মতো রাজনৈতিক শক্তির জনপ্রিয়তাকে খাটো করে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হলো, বিগত শাসনামলে সংঘটিত সীমাহীন দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডএসবের বিচার নিয়ে জনগণের অবস্থান জরিপে একেবারেই অনুপস্থিত।

বিআইজিডির প্রভাবশালী ব্যক্তিদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দৈনিক বণিক বার্তার এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সিআরআইয়ের সঙ্গে আসিফ সালেহ যুক্ত ছিলেন। সিআরআই শুধু নীতি-পরামর্শই দেয়নি, বরং বিরোধী মত দমনে অপপ্রচার ছড়ানোর অভিযোগও রয়েছে।

যদিও আসিফ সালেহ পরে ফেসবুকে স্পষ্ট করেন তিনি রাদওয়ানের পরামর্শক পরিষদের সদস্য নন, তবে স্বীকার করেন ২০২০ সালে সিআরআই সংশ্লিষ্ট হোয়াইট বোর্ড পলিসি ম্যাগাজিনে তিনি সামাজিক সেক্টরের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত ছিলেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে একটি লেখা দেন। তাঁর দাবি, এটি ছিল সম্পূর্ণ নির্দলীয় ভূমিকা।

তবু প্রশ্ন রয়ে যায়, যে প্রতিষ্ঠান সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মস্তিষ্ক হিসেবে কাজ করে, তার সঙ্গে যুক্ত থেকে কতটা নিরপেক্ষ থাকা সম্ভব? আর সেই প্রভাব কি এই জরিপের ফলাফল ব্যাখ্যায় ভূমিকা রাখেনি?

এ ধরনের তথ্যবহুল কিন্তু অসম্পূর্ণ জরিপ জনগণের মধ্যে ভোট ও গণতন্ত্রের প্রতি অবিশ্বাস সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই চালানো হতে পারে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার পরিকল্পিত কৌশল এটা।

গণতন্ত্রের শক্তি হচ্ছে জনগণের অংশগ্রহণ ও ভোটের মর্যাদা। এ ধরনের প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হতে হবে।

সব মিলিয়ে এই জরিপ কেবল ভোটের হার বা দলের জনপ্রিয়তার তথ্য দেয়নি, বরং এক সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক ন্যারেটিভ তৈরি করেছে, যা আগামী নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ও জনগণের মনোভাব প্রভাবিত করার সরাসরি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা কি না, সেই প্রশ্ন এখন জনমনে। সচেতন নাগরিকদের ভাষায়, গবেষণার ছদ্মবেশে গণতন্ত্রবিরোধী প্রোপাগান্ডা

 

লেখক : যুগ্ম সম্পাদক, দৈনিক কালের কণ্ঠ

মন্তব্য

জনসমর্থনে এগিয়ে বিএনপি : জরিপ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জনসমর্থনে এগিয়ে বিএনপি : জরিপ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেনএমন প্রশ্নে ৪৮.৫ শতাংশ মানুষই জানিয়েছেন, তাঁরা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। তবে যাঁরা ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা বিএনপিকেই ভোট দেবেন। অর্থাৎ ভোটের বিচারে এখনো সবচেয়ে বেশি জনসমর্থন বিএনপির দিকেই। নির্বাচনে কোন দলের প্রার্থী জিতবেএমন প্রশ্নেও সবচেয়ে বেশি, ৩৮ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, বিএনপি জিতবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের মূল্যায়ন, সংস্কার, নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা নিয়ে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) করা এক জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরে জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে বিআইজিডি ও সংস্কারবিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ভয়েস ফর রিফর্ম।

অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন বিআইজিডির গবেষক সৈয়দা সেলিনা আজিজ।

তিনি জানান, দেশের ৬৪ জেলায় চলতি বছরের ১ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত মোট ২০ দিন ধরে টেলিফোনে প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে জরিপটি চালানো হয়। জরিপে মোট ৯ হাজার ২০৩ জনকে টেলিফোন করা হয়। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ, অর্থাৎ পাঁচ হাজার ৪৮৯ জন উত্তর দিতে রাজি হন। এর আগে গত বছরও বিআইজিডি একই ধরনের জরিপ করেছিল।

ভোট দেওয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় প্রায় অর্ধেক মানুষ : দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ, ৪৮.৫ শতাংশই জানিয়েছেন, তাঁরা আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন পক্ষকে ভোট দেবেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। গত অক্টোবরে এই সংখ্যা ছিল ৩৭.৬ শতাংশ। অর্থাৎ আট মাসে ভোট দেওয়ার প্রশ্নে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। অন্যদিকে ভোটের বিচারে বিএনপির পরের অবস্থানেই রয়েছে বাংলাদেশ

জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতকে ১০.৪ শতাংশ, আওয়ামী লীগকে ৭.৩ শতাংশ এবং এনসিপিকে ২.৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।

অবশ্য চলতি বছরের জুলাইয়ের সঙ্গে গত বছরের অক্টোবরে হওয়া জরিপের তুলনা করে দেখা গেছে, জনসমর্থন কমেছে বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগের। তবে সামান্য বেড়েছে এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি)। গত অক্টোবরে ১৬.৩০ শতাংশ উত্তরদাতা বিএনপি, ১১.৩০ শতাংশ জামায়াত এবং ২ শতাংশ মানুষ এনসিপিকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া আট মাসে জাতীয় পার্টির ভোট ০.৭০ শতাংশ থেকে কমে ০.৩০ শতাংশ এবং অন্যান্য ইসলামী দলের ভোট ২.৬০ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ০.৭০ শতাংশ।

তবে আপনার নির্বাচনী এলাকায় কোন দলের প্রার্থী জিতবে বলে মনে হয়এমন প্রশ্নে ৩৮ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, বিএনপি জিতবে। একই প্রশ্নের উত্তরে ১৩ শতাংশ মানুষ জামায়াত, ৭ শতাংশ আওয়ামী লীগ এবং ১ শতাংশ মানুষ এনসিপির কথা বলেছেন।

জাতীয় নির্বাচন কখন চানএমন প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি, ৩২ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তাঁরা চলতি বছরের ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন চান। অন্যদিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তাঁরা আগামী বছরের ডিসেম্বর অথবা এর পরে নির্বাচন চান। ৭০ শতাংশ মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী হলেও ১৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।

নির্বাচনের আগেই প্রয়োজনীয় সংস্কার চান বেশির ভাগ মানুষ : জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের বেশির ভাগই সংস্কার সম্পর্কে সচেতন। জরিপে অংশ নেওয়া ৫১ শতাংশই মনে করেন, ভালোভাবে সংস্কার করে তারপর নির্বাচন করা উচিত। কিছু জরুরি সংস্কার করেই নির্বাচনে চলে যাওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন ১৭ শতাংশ। ১৪ শতাংশ জানিয়েছেন, সংস্কার বাদ দিয়ে নির্বাচন দেওয়াই ভালো। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিচারব্যবস্থার উন্নয়ন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অসহিষ্ণুতা কমানো এবং নির্বাচনী সংস্কার মানুষের প্রধান দাবি।

৮০ শতাংশ মানুষ মব সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন : জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮০ শতাংশই জানিয়েছেন, তাঁরা মব সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে ৬২ শতাংশ, রাতে চলাফেরায় নিরাপত্তা নিয়ে ৬১ শতাংশ এবং পোশাকের জন্য রাস্তাঘাটে হয়রানি নিয়ে ৬৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন।

রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ কমেছে, কিছুটা আস্থা বেড়েছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে : বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে কি নাএমন প্রশ্নের উত্তরে ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, দেশ রাজনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে। অন্যদিকে ৪৫ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, দেশ অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে।

গত বছরের অক্টোবরে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ উত্তরদাতা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। তবে চলতি বছর জুলাইয়ে এই সংখ্যা নেমে এসেছে ৯ শতাংশে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমের মূল্যায়ন নম্বরও আগের চেয়ে কমেছে। জরিপে উত্তরদাতাদের এ বিষয়ে ০ থেকে ১০০-র মধ্যে নম্বর দিতে বলা হয়। উত্তরদাতাদের মূল্যায়নে চলতি বছরের জুলাইয়ে সরকার ৬৩ নম্বর পেয়েছে। গত বছরের আগস্ট ও অক্টোবরে সরকারের স্কোর ছিল যথাক্রমে ৭৫ ও ৬৮।

জরিপের ফলাফল প্রকাশের পর অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বিআইজিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মির্জা এম হাসান, গবেষক সৈয়দা সেলিনা আজিজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান। আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-আহ্বায়ক ফাহিম মাশরুর।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ