পুরান ঢাকার হোসেনি দালান এলাকা। শুক্রবারও এখানকার রাস্তা বেশ কোলাহলমুখর। গাড়ির হর্ন, রিকশার টুংটাং আর স্ট্রিট ফুডের দোকানের সামনে কলগুঞ্জন। এমন পরিবেশে একমনে কাজ করা কঠিন।
অন্য জীবন
রিকশাচিত্রের অনন্য কারিগর মনির
পিন্টু রঞ্জন অর্ক

চারপাশের কোলাহলেও নিভৃতে কাজ করে যাওয়া এই শিল্পীর নাম মো. মনির হোসেন। তাঁর আঁকা চিত্র ফুটে আছে ঢাকার বিভিন্ন অলিগলির অগণিত রিকশার গায়ে।
মনির শৈশবেই রিকশাচিত্রের প্রেমে পড়েন। আঁকাআঁকির এই নেশায় মজে পড়াশোনা পর্যন্ত ছেড়েছেন। মা-বাবার বকুনি, লোকের বাঁকা চাহনি—সবই উপেক্ষা করেছেন।
মনিরের গুরু বাংলাদেশের সিনেমার ব্যানার পেইন্টিং ও রিকশাচিত্রের স্বনামখ্যাত শিল্পী মোহাম্মদ হানিফ পাপ্পু। নানা ঝড়ঝাপটা সামলেও তিনি আমাদের ঐতিহ্যের যে মশাল জ্বালিয়ে রেখেছেন, এখন সেটা তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি মনিরের হাতে। হানিফ পাপ্পুও বলেন, ‘অনেকে আমার কাছে এসেছে। কাজ শিখে আবার চলে গেছে। কিন্তু মনির লেগে ছিল। ওর মধ্যে একটা সাধকের মন আছে।’
মনিরের ভাষায়, ‘যদি হানিফ পাপ্পুর ছাত্র না হতাম, তাহলে শিল্পী হতে পারতাম না।’
এবার এই গুরু-শিষ্য মিলে শুরু করতে যাচ্ছেন একটি আর্ট স্কুল, যেখানে বিনা পয়সায় রিকশাচিত্রের কলাকৌশল শেখার সুযোগ পাবে দরিদ্র ও প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েরা।
১৯৯৪ সাল থেকে শুরু : মনির তখন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। থাকতেন পুরান ঢাকার হোসেনি দালান এলাকায়। সেখানে বেশ কয়েকটি রিকশার গ্যারেজ ছিল। ছিল রিকশা বা সিনেমার ব্যানার পেইন্টিংয়ের দোকান। শিল্পী হানিফ পাপ্পুর সিনেমা ব্যানার কারখানাও ছিল। পুরো এলাকা যেন রঙের দুনিয়া। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে মনির দেখতেন—নানা রঙে নায়ক-নায়িকাদের অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। কেউ কেউ নতুন বউয়ের মতো সাজাচ্ছে রিকশা। খুব ভালো লাগত কিশোর মনিরের। গণিত খাতায় পেনসিল দিয়ে নিজেও আঁকার চেষ্টা করতেন সিনেমার জনপ্রিয় মুখগুলো। একসময় তা রপ্ত করে ফেলেন। পুরো খাতা ভরে ফেলতেন পেনসিল স্কেচে।
তখন তিনি চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। স্কুল ছুটি হতো দুপুর ১২টায়। এরপর দোকানে কাজ শিখতেন মনির। আঁকার নেশা এমনভাবে পেয়ে বসল যে একসময় স্কুলে যাওয়া বাদ দিতে লাগলেন। কাজের নেশায় স্কুলে যাওয়াই বন্ধ করে দিলেন। গোপনে বছরখানেক স্কুলে যাননি। এক পর্যায়ে স্কুলের এক শিক্ষক বাসায় এসে বলেন, ‘তুমি ভালো ছাত্র। ভালো আর্ট করো। পড়াশোনা করলে বহুদূর যাবে। স্কুল বন্ধ কোরো না।’
মা ছবি আঁকা তেমন পছন্দ করতেন না। বাবাও বোঝালেন, ‘এই কাজের ভবিষ্যৎ নেই। পড়াশোনা না করলে তোমাকে একটা ফ্রিজের দোকানে লাগিয়ে দেব।’
কিন্তু মনির মজেছিলেন রিকশাচিত্রের প্রেমে। তাই কারো কথা কানে তুললেন না তিনি।
মনির বলেন, ‘রিকশাচিত্রের প্রতি ভালোবাসা থেকে পড়ালেখা ছেড়েছি। এটি আমার নেশা ছিল, আর আমি সেই নেশাকেই পেশায় পরিণত করেছি।’
জেলায় জেলায় যেতেন : তখন বিভিন্ন কম্পানি নিজেদের পণ্যের প্রচারে বাইরের উঁচু দেয়াল বা দোকানের সামনে পেইন্ট করাত। এসব কাজ বেশি করিয়েছে কোকা-কোলা বা পেপসির মতো কোমল পানীয়ের কম্পানিগুলো। তাদের হয়ে এই কাজ করতে জেলায় জেলায় যেতেন মনির। কিন্তু এই কাজে কষ্ট বেশি। তাই এক পর্যায়ে সেটা ছাড়লেন।
শুরুর দিকে গুরু হানিফ পাপ্পুর সঙ্গে কাজের তেমন সুযোগ পাননি। কারণ কাজের সূত্রে মনিরকে প্রায়ই ঢাকার বাইরে থাকতো হতো। ঢাকায় ফিরলে শিল্পচর্চা নিয়ে আলাপ হতো দুজনের। তিনি মনিরের কাজের খুব প্রশংসা করতেন। ‘মনির সাইন’ নামের একটি ব্যানার সাইনবোর্ডের দোকান দিলেন হোসেনি দালান এলাকায়। সেখানে নিয়মিত আসতেন হানিফ পাপ্পু। কাজও করতেন। এর মধ্যে হঠাৎ করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন মনিরের বাবা। চিকিৎসা করাতে গিয়ে পথে বসার দশা। ছেড়ে দিতে হয় দোকান। হানিফ পাপ্পু বললেন, ‘চিন্তা কোরো না। আমি আছি তো।’
তখন থেকে হানিফ পাপ্পুর সঙ্গে আছেন মনির। সেই থেকে যাত্রা শুরু করল তাঁদের ‘বিডি রিকশা আর্ট গ্যালারি’। রিকশাচিত্র নিয়ে গুরু-শিষ্য কাজ করতে লাগলেন পুরোদমে। মনিরের দাবি, ‘বাংলাদেশে আউটডোরে রিকশা পেইন্টিং নিয়ে যত কাজ হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই ওস্তাদ হানিফ পাপ্পু আর আমার করা।’
যেমন—মগবাজার ফ্লাইওভার পেইন্টিং, টিএসসিতে চায়ের স্টলে রিকশা পেইন্টিং, অমর একুশের বইমেলায় রিকশা পেইন্টিংয়ের থিমে স্টল। নবান্ন প্রকাশনীর সেই স্টলটি সেবার অঙ্গসজ্জায় প্রথম হয়েছিল।
কঠিন ছিল সেসব দিন : এসব কাজে শিল্পী হিসেবে মনিরের দক্ষতা যেমন বিকশিত হয়েছে, তেমনি রিকশাশিল্পের মর্যাদাও বেড়েছে। শত বাধা ও দুঃসময়ের মধ্যেও তিনি অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ঢাকার ইতিহাসের নানা গল্প থেকে। রিকশা হয়ে উঠেছে তাঁর চলমান ক্যানভাস, যেখানে আঁকা থাকে সংগ্রাম আর আশার কাহিনি।
২০০০ থেকে ২০১০ সাল ছিল রিকশাশিল্পীদের জন্য সবচেয়ে কঠিন সময়। অনেকে আর্থিক চাপে পড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। কিন্তু মনির হাল ছাড়েননি। ডিজিটাল যুগে ধাক্কা খেলেও তিনি নতুন পথ খুঁজে বের করেন। তাঁর কথা, ‘মানুষ তখন ডিজিটালে চলে যাচ্ছিল, আমাদের কাছে কোনো কাজ ছিল না। টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়ে।’ তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে আমি আর ওস্তাদ হানিফ পাপ্পু রিকশা পেইন্টিংয়ের শিল্প নিয়ে চশমা, হারিকেন ল্যাম্প, বোতল, গয়না, কেটলি ইত্যাদি জিনিসপত্র সাজানো শুরু করি।’
দেশে তো বটেই, দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে গেছে মনিরের কাজ। বিদেশিরা তাঁর কাজের খুব প্রশংসা করেছে। এ পর্যন্ত ছয়টি দলীয় প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। তবে এখনো একক প্রদর্শনী হয়নি।
তবু আশা জেগে রয় : মনির বলেন, ‘অনেকে আমাদের কাজ বুঝতে চায় না বা সম্মান দিতে চায় না। আমাদের মূল্য না দিলে আমরা হয়তো একদিন শুকনো পাতার মতো হারিয়ে যাব! অনেকেই আমাদের পাগল বলে, কিন্তু বিদেশিরা যখন আমাদের দোকানে এসে আমাদের কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে ছবি কেনে, সেটা আমাদের জন্য অনেক বড় উৎসাহ!’
অন্যান্য রিকশা পেইন্টারের তুলনায় মনিরের কাজ আলাদাভাবে নজর কাড়ার কারণ কী?
এ ব্যাপারে মনির বলেন, ‘আমি খুব উজ্জ্বল (ফ্লোরেসেন্ট) রং ব্যবহার করি এবং রিকশা আর্টের স্ট্রোকগুলো নিজের মতো করে করি। ফ্লোরেসেন্ট কালার ব্যবহারের কিছু বিষয় আছে, যা অনেকেই জানে না। বহু মিডিয়ায় এই রিকশা পেইন্ট নিয়ে কাজ করেছি।’
মনির স্বপ্ন দেখেন, ভবিষ্যতে একটা রিকশা আর্ট ইনস্টিটিউট গড়ার। তবে এ জন্য সরকারি সহায়তা ও অর্থনৈতিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। প্রাথমিক প্রচেষ্টা হিসেবে আগামী মাসে ওস্তাদের সঙ্গে মিলে ‘পাপ্পু সবার জন্য আর্ট স্কুল’ নামের একটি স্কুল চালু করবেন। সেখানে গরিব ও প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েকে বিনা পয়সায় রিকশাচিত্রের কলাকৌশল শেখানো হবে। আর চারুকলাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদেরও নামমাত্র মূল্যে শেখানো হবে। এখন সেই স্কুলের কাজ নিয়েই ব্যস্ত গুরু-শিষ্য।
সম্পর্কিত খবর

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য
শিশুদের আর্তচিৎকারে হতবিহ্বল হয়ে পড়ি
রেজোয়ান বিশ্বাস ও শরীফ শাওন

দুপুরে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ছাত্রাবাসে ছিলাম। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে রুম থেকে বের হয়ে দেখি আগুনের কুণ্ডলী। দৌড়ে এসে দেখতে পাই বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। শিশুরা পুড়ে অঙ্গার।
এভাবেই বলছিলেন রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মেহেদী হাসান।
ঘটনাস্থল থেকে অক্ষত অবস্থায় বেঁচে ফিরেছে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান রাফি। প্রত্যক্ষদর্শী এই শিক্ষার্থী কালের কণ্ঠকে বলে, প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি একটি তিনতলা ভবনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়। আমাদের ক্লাস মাত্র শেষ হয়। আমরা গাড়িতে গিয়ে উঠি। কিছু শিক্ষার্থী ক্যান্টিনে গিয়েছিল। আর কিছু শিক্ষার্থী ক্লাসরুমে কোচিংয়ের জন্য অবস্থান করছিল। এমন সময় বিকট একটি শব্দ হয়ে বিস্ফোরণ হয়। একটি বিমান ভবনটির সামনে আছড়ে পড়ে এবং ভবনটিতে আঘাত করে।’
একই শ্রেণির শিক্ষার্থী জারাফ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলে, ‘চোখের সামনে বিস্ফোরণ দেখে কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে যাই। মুহূর্তেই চোখের সামনে থাকা অন্তত চারজনের মৃত্যু দেখেছি। তাদের মধ্যে একজনের পুরো শরীর পুড়ে বীভৎস অবস্থায় ছিল। তাকে শনাক্ত করা কঠিন। এ ছাড়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অন্তত ৫০ জনকে গুরুতর অবস্থায় দেখতে পাই। তারাও বাঁচবে বলে মনে হয় না।’
প্রত্যক্ষদর্শী মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজটির নিরাপত্তাকর্মী আকবর হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে ছিলাম। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কেবল বের হচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দের পর তিনতলা ভবনের সামনের নারিকেলগাছ ভেঙে ভবনে ধাক্কা দিলে বিমানটিতে সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়।’ আকবর হোসেনের বর্ণনা অনুযায়ী তিনতলা ভবনের নিচতলা মাটির নিচে, সেখানে ক্লাস হয় না। বিমানটি সেখানে ঢুকে পড়ে। পরে বিকট শব্দে বিমানটি বিস্ফোরিত হয়।
শিশুদের খোঁজে দিশাহারা প্রত্যক্ষদর্শী অভিভাবকরা : ঘটনার সময় অনেক অভিভাবক স্কলের আশপাশেই ছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণে তাঁরা ব্যাপক আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন। স্কুলে আগুন দেখে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শী তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবক তাসপিয়া আক্তার বিলাপ করে কান্নার সুরে বলছিলেন, ‘আমার নিষ্পাপ শিশুকে আমার কোলে ফিরিয়ে দাও খোদা। আমার একটি মাত্র মেয়ে, তাকে ছাড়া আমি কিভাবে বাঁচব? কেউ আমাকে তার খোঁজ এনে দাও।’
দুপুর সোয়া ২টায় কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধার মুখে পড়ে ফিরে যাওয়ার সময় এমন বিলাপ দিতে থাকেন তিনি। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এলোমেলো হাঁটছিলেন তিনি, কখনো আবার পড়ে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে থাকা দুজন নারী তাঁকে ধরে রাস্তা পার করছিলেন।
দুপুর সোয়া ১টায় বিমান বিধ্বংসের পর থেকেই কলেজ ক্যাম্পাসে মা-বাবা, ভাই-বোনসহ অভিভাবকদের এমন আহাজারি দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বজনদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। তবে উদ্ধারকাজ নির্বিঘ্নে পরিচালনার জন্য কলেজ ক্যাম্পসে প্রবেশে বাধা দেন উদ্ধারকর্মীসহ ভলান্টিয়াররা। শুধু তাই নয়, উদ্ধারকর্মীসহ উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত গাড়ি অবাধে চলাচলের লক্ষ্যে সড়ক থেকেও সরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল সবাইকে।
তবে পথে পথে বাধা উপেক্ষা করেই অনেক অভিভাবককে ক্যাম্পাসের মূল গেটের কাছ পর্যন্ত চলে যেতে দেখা যায়। ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে অনেক অভিভাবককে বিতর্কেও জড়াতে দেখা গেছে। অভিভাবকদের অনেকে নিজেদের বিভিন্ন পরিচয় উপস্থান করেও ভেতরে প্রবেশে ব্যর্থ হয়েছেন।
বোরহান কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার সন্তান চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাইনি। বিষয়টি জানার পরও আমাকে ভেতরে যেতে দেয়নি।’
পাশে থাকা একজন ভলান্টিয়ার বলেন, ‘ভেতরে দুর্ঘটনায় যারা পড়েছে, তারা সবাই কারো না কারো সন্তান, আত্মীয়। তবে এভাবে সবাই ভেতরে প্রবেশ করলে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হবে। এতে তাদের জীবনে ঝুঁকি আরো বাড়বে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা হতাহতদের উদ্ধারে চেষ্টা করছি। দ্রুততার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্ট হাসপাতালেও পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের খোঁজ নিতে পারবেন।’
ঘটনাস্থলে আরো অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ বিমান বিধ্বস্তের পর আগুন ও ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে যেতে থাকে তাঁদের। তাঁরা স্কুলে থাকা সন্তানদের খুঁজতে থাকেন। এতটুকু শরীর নিয়ে ভয়ংকর আগুনের সামনে অভিভাবকদের আর কিছুই করার ছিল না। তাঁদের চোখের সামনে শরীরে আগুন নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ছিল একের পর এক সন্তানরা। আগুনে কারো শরীর, কারো কপাল পুড়ে গেছে, মাথা ফেটে গেছে, কেউ যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে।
প্রসঙ্গত, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। আহত হয়েছে শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক মানুষ। হতাহতদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশু শিক্ষার্থী।

৫৩ বছরে বিমান হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ১০৫
- নিহতদের মধ্যে পাইলট কো-পাইলট ৩০ জন
কাজী হাফিজ

গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে বিমান ও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০৫ জন। তাঁদের মধ্যে বিমান বা হেলিকপ্টারের সাধারণ যাত্রী ও ক্রু ছাড়া পাইলট ও কো-পাইলট রয়েছেন ৩০ জন। বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল খাদেমুল বাশার, বাংলাদেশের প্রথম মহিলা পাইলট কানিজ ফাতিমা ও দেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের কন্যা ফারিয়া লারাও রয়েছেন এই তালিকায়। দেশের ভেতরে এসব দুর্ঘটনা ছাড়াও বিদেশে বিমান ও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় যেসব বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা এই ১০৫ জনের বাইরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বিমান দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ১৯৮৪ সালের ৪ আগস্ট। বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসের একটি ফকার এফ-২৭ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পথে বিধ্বস্ত হলে দেশের প্রথম মহিলা পাইলট কানিজ ফাতিমাসহ বিমানের কো-পাইলট, ক্রু ও যাত্রীরা সবাই নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় মোট ৪৯ জন নিহত হন।
১৯৯৩ সালে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান এফটি-৫ বিধ্বস্ত হলে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কুদ্দুস নিহত হন। ১৯৯৬ সালে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে বিমানবাহিনীর দুটি পিটি-৬১ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে উইং কমান্ডার হক, স্কোয়াড্রন লিডার ইসলাম ও ফ্লাইং অফিসার মাসুদ নিহত হন। ১৯৯৮ সালের ২৬ অক্টোবর টাঙ্গাইলের মধুপুরে বিমানবাহিনীর মিগ-২১ বিধ্বস্ত হলে পাইলট নিহত হন। ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০২ সালের ৭ জুন পর্যন্ত পারাবত ফ্লাইং একাডেমির বিমান দুর্ঘটনায় তিনজন পাইলটের মৃত্যু হয়। ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্রশিক্ষণ উড্ডয়নের সময় এয়ার পারাবতের একটি বিমানে আগুন ধরে গিয়ে ঢাকার পোস্তগোলায় বিধ্বস্ত হলে নিহত হন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের কন্যা পাইলট ফারিয়া লারা (২৬) ও কো-পাইলট সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। এর আগে ওই বছরের ২৭ জুন এয়ার পারাবতের আরেকটি বিমান সাভারের কাছে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করে। এতে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। ২০০২ সালের ৭ জুন এয়ার পারাবতের আরেকটি সেসনা-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন পাইলট মুখলেছুর রহমান সাকিব। এসব দুর্ঘটনার পর বন্ধ হয়ে যায় বেসরকারি এয়ারলাইনস এয়ার পারাবত।
এর আগে ২০০১ সালে ৭ জানুয়ারি একটি এফটি-৭ যুদ্ধবিমান ঢাকা বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হলে স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ মহাসীন নিহত হন। ২০০২ সালের ৩০ জুলাই চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে নিহত হন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আদনান মুকিত। ২০০২ সালের ১৯ অক্টোবর বিমানবাহিনীর একটি এম-১ হেলিকপ্টার চট্টগ্রামে সার্জেন্ট জহুরুল হক বিমানঘাঁটির কাছে একটি টেলিভিশন টাওয়ারে ধাক্কা লেগে বিধ্বস্ত হলে নিহত হন উইং কমান্ডার কাজী কামরুল নেওয়াজ, ফ্লাইং অফিসার সাব্বির আহমেদ, ওয়ারেন্ট অফিসার জহির হোসেন ও সার্জেন্ট আবদুস সামাদ।
২০০৫ সালের ৭ জুন ঢাকার উত্তরায় একটি ভবনে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ে বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ এমবি যুদ্ধবিমান। এ ঘটনায় পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আহসানুল কবীর প্যারান্ডাটের মাধ্যমে অবতরণ করে নিজের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হলেও দুই শিশুসহ ছয় বেসামরিক নাগরিক আহত হন। ২০০৬ সালের ২৪ এপ্রিল বিমানবাহিনীর একটি পিটি-৬১ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় ফ্লাইট ক্যাডেট তানিউল ইসলাম নিহত হন।
২০০৭ সালের ৯ এপ্রিল বিমানবাহিনীর একটি পিটি-৬১ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে নিহত হন বিমানটির পাইলট ফ্লাইট ক্যাডেট ফয়সল মাহমুদ। ২০০৮ সালের ৮ এপ্রিল আরেকটি এফ-৭ এমবি জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়িপাড়া গ্রামে। বিমানটির পাইলট স্কোয়াড্রন লিভার মোরশেদ হাসান বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে প্যারাশুটের মাধ্যমে অবতরণের চেষ্টা করলেও শেষরক্ষা হয়নি। পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
২০০৯ সালের ৯ মার্চ যশোর থেকে ঢাকায় আসার পথে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে নিহত হন মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলাম ও হেলিকপ্টারের পাইলট লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহীদ ইসলাম। ২০০৯ সালের ১৬ জুন এফটি-৬ মডেলের প্রশিক্ষণ বিমান চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটির পাইলট সে সময় প্যারাশুটের মাধ্যমে অবতরণ করে জীবনরক্ষায় সক্ষম হন। একই বছরের ২২ অক্টোবর বগুড়ার কাহালুর কাছে এরোলিয়ায় রানওয়েতে অবতরণের সময় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। ২০১০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে বিমানবাহিনীর এফ-৭ এমবি মডেলের একটি জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়। ওই ঘটনায়ও পাইলট তাঁর জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হন। ওই বিমানটিসহ আগের পাঁচ বছরে বিমানবাহিনীর তিনটি এফ-৭ এমবি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়।
২০১০ সালের ৩০ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার কাছে যমুনা নদীতে বিধ্বস্ত হয় ফ্লাইং ক্লাবের একটি প্রশিক্ষণ বিমান। এতে পাইলট কামরুল হাসানের মৃত্যু হয়। আরেকটি বিয়োগান্ত ঘটনা ঘটে ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর। এদিন বরিশালের কাছে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে বিমানবাহিনীর দুজন বৈমানিক স্কোয়াড্রন লিডার আশরাফ ইবনে আহমেদ ও স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ মাহমুদুল হক নিহত হন।
২০১১ সালের ১০ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ বিমানে আগুন লেগে গেলে দুজন পাইলট আহত হন।
২০১২ সালের ৮ এপ্রিল টাঙ্গাইলের মধুপুরে মুরইল ইউনিয়নের বড়মহর গ্রামে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শরিফ রেজা নিহত হন।
২০১৩ সালের জুলাইয়ে রাশিয়ার তৈরি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান এ-ফাইভ পটিয়া উপজেলার একটি বিলে পড়ে। তার আগে প্যারাশুটের সাহায্যে নিরাপদে অবতরণ করেন পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আবু জাহের আরাফাত। ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি যশোরের সদর উপজেলার মাহিদিয়া গ্রামের ধানক্ষেতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। ওই ঘটনায় অক্ষত থাকেন বিমানের দুই পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার ফারুক ও পাইলট অফিসার জামি। একই বছরের ৩০ এপ্রিল চট্টগ্রামে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়।
২০১৫ সালের ১ এপ্রিল রাজশাহীর শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমির একটি ১৫২ মডেলের সেনা প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে প্রশিক্ষণার্থী পাইলট তামান্না রহমান (২২) ঘটনাস্থলে নিহত হন। তাঁর প্রশিক্ষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাঈদ কামালও পরে মারা যান। একই বছরের ২৮ জুন চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ চলাকালে সাগরে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ যুদ্ধবিমান। এতে বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ নিখোঁজ হন। ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে কক্সবাজারের উখিয়ার সোনারপাড়া সমুদ্রসৈকতে মেঘনা এভিয়েশনের একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে একজন নিহত ও চারজন আহত হন।
২০১৬ সালের ৯ মার্চ ট্রু এভিয়েশনের একটি কার্গো বিমান কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পর বঙ্গোপসাগরের নাজিরারটেক পয়েন্টে বিধ্বস্ত হয়। এতে পাইলটসহ তিন ক্রু নিহত হন। আহত হন আরো এক বিদেশি। বিমানটি চিংড়ি পোনা নিয়ে কক্সবাজার থেকে যশোর যাচ্ছিল। নিহতরা হলেন বিমানটির পাইলট মুরাদ কাপারত, ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার কুলিশ আন্ত্রে ও কো-পাইলট ইভান ডেমান।
২০১৭ সালে মহেশখালীতে বিমানবাহিনীর দুই প্রশিক্ষণ বিমানের মধ্যে সংঘর্ষে দুটি বিমানই বিধ্বস্ত হয়। তবে পাইলটরা অক্ষত ছিলেন।
২০২১ সালের ১৬ মার্চ রাজশাহীর তানোরে আলুক্ষেতে বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাবের একটি প্রশিক্ষণ বিমান আছড়ে পড়ে।
২০২২ সালের ২৭ জুলাই আর্মি এভিয়েশনের একটি বেল-২০৬ হেলিকপ্টার ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার একটি ধানক্ষেতে পড়ে। হেলিকপ্টারটি নিয়মিত প্রশিক্ষণ ফ্লাইট পরিচালনার অংশ হিসেবে ‘ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিং প্রসিডিউর’ অনুশীলন করার সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অবতরণ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। হেলিকপ্টারের উভয় পাইলট লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইসমাইল ও মেজর শামসকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা সিএমএইচে আনা হয়।
২০২৪ সালের ৯ মে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ নিহত হন।
গত ১৩ মার্চ যশোর বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণকালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়। এ ঘটনায় বিমানের দুই পাইলট গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোল্লা মোহাম্মদ তহিদুল হাসান ও স্কোয়াড্রন লিডার আহমদ মুসা সুস্থ ছিলেন।
সর্বশেষ গতকাল ২১ জুলাই সোমবার বাংলাদেশে বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাসে একটি শোকের দিন হিসেবে স্থান পায়। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে গতকাল দুপুর ১টা ৬ মিনিটে ঢাকার উত্তরায় দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। নিহত হন বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম সাগরসহ অনেকে। আইএসপিআর জানায়, গতকাল বিকেল ৫টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২০ জনে। আহতের সংখ্যা ১৭১। এদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী।

ফেসবুকজুড়ে নিখোঁজ শিশুদের মুখ
- সন্তানদের না পেয়ে কাঁদছেন অভিভাবকরা
কেয়া আক্তার

হলুদ জামা পরা ছোট্ট একটি মেয়ের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। নাম সায়মা। উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের ক্লাউড সেকশনের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। তার ভাই সুমন আহমেদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘উত্তরার মাইলস্টোন ক্যাম্পাসের বিমান বিধ্বস্তের স্থান থেকে আমার বোন নিখোঁজ।
এমন অসংখ্য শিশু-কিশোরের ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে এখন ফেসবুকে। কেউ নিজ সন্তানকে খুঁজছেন, কেউ হয়তো অন্যের সন্ধান জানাতে পোস্ট করছেন। অনেকে আবার উদ্ধার হওয়া শিশুদের নাম-পরিচয় না জানায় অভিভাবকের খোঁজ করছেন।
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. জুনায়েত হাসানের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
ধচতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফসি আক্তার রাফিয়া উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছবি দেখে পরিবার তাকে শনাক্ত করে হাসপাতালে পৌঁছেছে।
আরেক শিক্ষার্থী সাবিহা জাহানের সন্ধানেও ফেসবুকে অনুরোধ করা হচ্ছে উত্তরার আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করার জন্য।
তৃতীয় শ্রেণির আফিয়া উম্মে মরিয়ম, সাদ সালাউদ্দীন ও রাইসা মনিকেও খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা। কারো খবর মিলেছে, কেউ এখনো নিখোঁজ।
প্রথম আলোর সাংবাদিক সেলিম জাহিদ নিজের ছেলে সায়ের মাহবুবের সন্ধান চেয়ে ব্যক্তিগত ফেসবুকে পোস্ট দেন। সায়ের মাইলস্টোন মেইন ক্যাম্পাসের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পরে তাকে সুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়।
নুসরাত জাহান আনিকা (তৃতীয় শ্রেণি) ও মেহনাজ আফরিন হুমায়রা (দ্বিতীয় শ্রেণি)—এই দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ রয়েছে সিএমএইচের মর্গে, এমন খবর ছড়িয়েছে ফেসবুকে। তাদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজা হচ্ছে।
অভিনেত্রী তমা মির্জার ফেসবুক প্রোফাইলে মোছা. আসমাউল হুসনা জায়রা নামের এক শিশুর আইডি কার্ড পোস্ট করে তিনি জানান, বাচ্চাটি তাঁর স্কুল ফ্রেন্ডের ভাইয়ের অফিসে আছে, সেফ আছে, তবে নাম-ঠিকানা কিছুই বলতে পারছে না।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভির আহমেদের মৃত্যুর খবর আসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে। তার পরিচয় মিললেও পরিবারের সন্ধানে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হয়।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী আরিয়ান নাফিসের অভিভাবকদেরও খোঁজা হচ্ছে ফেসবুকে।
ওয়াকিয়া ফেরদৌস নিধি, তাসফিয়া সুলতানা, রাইসা মনি—তাদের কাউকে এখনো পাওয়া যায়নি।
২১ বছর বয়সী ইয়াসীন মাইলস্টোন পার্মানেন্ট ক্যাম্পাসের পরিবহন বিভাগের কর্মী। বাড়ি নোয়াখালী। বর্তমানে উত্তরার মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এ ছাড়া মাইলস্টোন হোস্টেলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফুয়াদ এখনো নিখোঁজ।
প্রতিটি নামই এখন পরিবারের কাছে একেকটি আশার আলো। আর প্রতিটি ছবি যেন ফেসবুকে চোখ আটকে রাখা কান্নার দলিল।

হঠাৎ আগুন জ্বলে ওঠে দাউদাউ
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর গতকাল সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিল স্থানীয় লোকজন। ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা বিস্মিত হয়। তারা গণমাধ্যমকে বলে, দুর্ঘটনার পর স্কুলের মাঠে একজন প্যারাশুট দিয়ে নামেন। আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল ব্যাপক আকারে।
দুর্ঘটনার সময় একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আজমাইন ক্লাসে ছিল। বিকট শব্দ শুনে নিচে নেমে সে দেখে আগুন জ্বলছে। দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদমান তানভীর বলে, ‘আমরা যখন ক্লাসে ছিলাম, তখন বিস্ফোরণের শব্দ হয়। প্রথমে কেউ বুঝতে পারিনি বিষয়টি।