ঢাকা, শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ মহররম ১৪৪৭
বিশেষ লেখা

মাদকেও সেনাবাহিনীর যুগান্তকারী অ্যাকশনের অপেক্ষা

  • মোস্তফা কামাল
শেয়ার
মাদকেও সেনাবাহিনীর যুগান্তকারী অ্যাকশনের অপেক্ষা

জনস্বার্থে ও রাষ্ট্রের যেকোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে বলে লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার ঘোষণা ছিল সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের। জরুরি প্রয়োজনে সেনা ক্যাম্পগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, জরুরি দরকারে নিকটস্থ সেনাবাহিনী ক্যাম্পে জানাতে। একটা নতুন স্বপ্ন, নতুন সময়ের পরিবর্তনের আশায় তা বেশ মন কেড়েছে মানুষের।

সেনা ক্যাম্পের টেলিফোন নম্বরের তালিকা অনেকেই পকেটে রাখছেন। আস্থা-ভরসার স্থল ভেবে কাউকে না জানিয়ে তাঁরা তথ্য জানিয়ে দিচ্ছেন ক্যাম্পে। দ্রুত অ্যাকশনে ফল মিলছে ম্যাজিকের মতো। আবার তথ্যদাতার পরিচয়ও গোপন থাকছে।

https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/06.June/27-06-2025/kalerkantho-ft-3a.jpgগত মাস কয়েকের কেসস্টাডিতে দেখা যাচ্ছে, এসব তথ্যের বেশির ভাগই মাদকসংক্রান্ত। কাজও হচ্ছে সেনা সদস্যদের হাইভোল্টেজ অ্যাকশনে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-চট্টগ্রাম-কুমিল্লাসহ নানা জায়গায় অভিযান চলমান। গেল বুধবার রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় আচমকা এক অভিযানে নারীসহ সাত মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী।

সেটির নেপথ্যেও ছিল স্থানীয় একজনের মোবাইল বার্তা। দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে সাতজনকে হাতেনাতে ধরাসহ বিপুল পরিমাণ গাঁজা এবং মাদক বিক্রির নগদ অর্থ জব্দ করা হয়।

বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই একটি সংঘবদ্ধ চক্র মাদকের কারবার চালিয়ে আসছিল। যাত্রী সেজে অবস্থান নিয়ে নারী ও কিশোরীদের মাধ্যমে গাঁজা সরবরাহ করত তারা। এদের কুকর্ম পুলিশ বা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জানার বাইরে ছিল না।

মিলেমিশে বোঝাপড়ায় চলত মাদকের কারবার। স্থানীয়রা বিভিন্ন জায়গায় জানাতে গিয়ে আপদের ওপর বিপদে পড়েছে। অবশেষে সেনাবাহিনীকে জানিয়ে কোনো আপদ-বিপদ নয়, বরং স্বস্তি মিলেছে। সেনাবাহিনীর দিক থেকে জানানো হয়েছে, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, মাদক নির্মূল এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ ধরনের অভিযান সামনে আরো জোরদার করা হবে। স্থানীয়রা জানায়, মাদক ব্যবসায়ীদের কারণে এলাকায় চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ বেড়ে গিয়েছিল। হঠাৎ সেনাবাহিনীর অভিযান তাদের চমকে দেয়, টোকা দেয় ভরসার পারদে।

মাত্র দিন দুয়েক আগে সাবলীল মানুষ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী স্বভাবসুলভে বলে ফেলেছেন, মাদক ও দুর্নীতি আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি। সঙ্গে আরো কিছু কথাও বলেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সব সময় দাবি করা হয়, মাদকের বিস্তার কমে আসছে। এ বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যান আছে কি নাজানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি কিন্তু কোনো দিন এটা দাবি করিনি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালোর দিকে, কিন্তু মাদক কমিয়ে এনেছি তা কোনো দিন বলিনি। এ ব্যাপারে তাঁর একটি সদিচ্ছার কথাও জানান তিনি। সেনাবাহিনী থেকেও সেই আভাস মিলছে।

নির্বাচন, সংস্কার, বিচারসহ রাজনৈতিক-কূটনৈতিক নানা যন্ত্রণার মধ্যে দেশে ভেতরে-ভেতরে মাদকের কারবার বাড়ছে। চক্রবিশেষ এটিকে একটা সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক মাদক সিন্ডিকেটগুলো বাংলাদেশকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে আগের চেয়ে বেশি ব্যবহার করতে শুরু করায় কোকেন চোরাচালান, বিশেষ করে আকাশপথে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকা ও বড় বড় শহরে তালিকাভুক্ত বহু মাদক চোরাকারবারি এখনো সক্রিয়। তারা মাদক পরিবহনের কাজে ছোটখাটো অপরাধী, দিনমজুর ও রিকশাচালকদের নিয়োগ করছে। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, সাতক্ষীরা, পঞ্চগড় এবং দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ফেনসিডিল, গাঁজা এবং হেরোইন পাচার হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক বৈঠকে দেশজুড়ে মাদক পাচার বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করার পর পুলিশ সদর দপ্তর সব জেলার পুলিশ সুপারদের মাদক পাচারকারীদের নতুন তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে।

পাচারকারীদের আস্তানা ধ্বংস, নতুন এবং পুরনো পাচারকারীদের শনাক্ত এবং বিচারাধীন মাদক মামলার তদন্তের জন্য অভিযান জোরদার করতে বলা হয়েছে তাঁদের। শেষ পর্যন্ত কাজ কত দূর হবে, তা নিয়ে বেশি আশাবাদী হওয়া যায় না। কারণ মাদক কখনোই নিজে নিজে কারো হাতে যায় না। জড় পদার্থ মাদককে মানুষ নামের জীবকুলের হাতে পৌঁছে দেওয়ার বহু প্রাণী রয়েছে পথে-ঘাটে। কারবারি-পুলিশসহ আরো কারো কারো মধুর সম্পর্ক মাদকের বিস্তার ঘটাচ্ছে। চাহিদা দৃষ্টে জোগান বাড়ছে। যে কারণে মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স মাঠে মারা যাচ্ছে। স্থল-জল সীমান্তে যার যা করার করছে।  আকাশপথেও অনেকের হাত পড়েছে। আর মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নামের প্রতিষ্ঠানটি আসলে কোন কিছিমের নিয়ন্ত্রণ করছে, তা-ও কম-বেশি সবার জানা। তারা দমন নয়, প্রকারান্তরে নিজেদের মতো মাদক নিয়ন্ত্রণই করে। সেখানে বিশাল লগ্নি, নিয়োগ-বিনিয়োগ, লোভনীয় পদ-পদায়নের বিষয়-আশয় রয়েছে।

এসবের আড়ালে প্রকারান্তরে চলছে মাদকের আরেক কারবার। মাদক নিরাময়ে দেশে সরকারি-বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। সেগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল থেকে আইজিপি পর্যন্ত মাদকাসক্ত শনাক্তকরণের কথা বলে এক ধরনের চমক তৈরি করা হয়েছিল। অন্য কোনো সেক্টরে তো ডোপ টেস্টের আলোচনাই নেই।  পুলিশেও ডোপ টেস্ট নিয়ে নন-ক্যাডার অফিসার ও সদস্যদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। এটাই নিষ্ঠুর বাস্তবতা। আরেক বাস্তবতা হচ্ছে, উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও ভৌগোলিক বাস্তবতায় মাদকের সর্বগ্রাসী আগ্রাসনে পুরো বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কেওয়াস, ব্যবসা-বিনিয়োগে খরাসহ অর্থনৈতিক দুর্দশা, কূটনৈতিক টানাপড়েনের আলোচনা-সমালোচনার ব্যতিব্যস্ততার ফাঁকে অনেকের অলক্ষ্যে মাদকের বিস্তার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দেশের কোনো কোনো লোকালয়ে ঘরে ঘরে মাদকের কারবার। নেশাগ্রস্ত সন্তানের হাতে মা-বাবা, স্বামীর হাতে স্ত্রী হত্যার মতো ঘটনা মাঝেমধ্যে প্রকাশ্যে এসে দিন কয়েক মাতামাতি পর্যন্তই সার। এবারের পরিপ্রক্ষিত একটু ভিন্ন। সেনাবাহিনী মাঠে আছে। তা-ও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে। যৌথ বাহিনীর অংশীজন হয়ে তারা পেশাদারির সঙ্গে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের কয়েকটি অভিযান ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। হত্যা মামলার আসামি, অবৈধ অস্ত্রধারী, তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী, চোরাকারবারি, কিশোর গ্যাং সদস্য, অপহরণকারী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ পাকড়াও হচ্ছে নিয়মিত। মববাজও ধরা পড়ছে তাদের হাতে। পরিস্থিতি ও বাস্তবতার তাগিদে সেনা সদস্যদের মাদক দমনে বিশেষভাবে কাজে লাগানোর একটি মোক্ষম সময় এখন।

এ ব্যাপারে সরকারের কী নির্দেশনা, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে মানুষ তাদের লুফে নিয়েছে সর্বন্তকরণে। সেনা সদস্যদের গত কিছুদিনের মাদকবিরোধী অ্যাকশনে সেই নমুনা স্পষ্ট।  স্বয়ং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার যখন উপলব্ধি হয়েছে, মাদক দমন বা নিয়ন্ত্রণে সাফল্য আসেনি, তখন একটি পদক্ষেপ অত্যন্ত আকাঙ্ক্ষিত। আর তালিকা তো তৈরি করাই আছে। নতুন-পুরনো তালিকার একটি ফর্দ বা সারসংক্ষেপ তাদের ধরিয়ে দিলে এ যাত্রায় মাদকবিরোধী অভিযানের একটি যুগান্তকারী ইতিহাস তৈরি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার শঙ্কা কম। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতায় মাঠে রাখার সিদ্ধান্ত দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তাদের সুবাদে কেবল আইন-শৃঙ্খলা আয়ত্তে থাকছে না, দানবীয় মব সন্ত্রাস দমনে কিছু পদক্ষেপে সেনাবাহিনীর প্রতি সব পর্যায়ের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। মাদকের ভয়াল থাবার দিকে সেনাবাহিনীর পদক্ষেপও পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে। বিশ্বের কিছু কিছু দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সামরিক বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশেও এখন একটি সুবর্ণ সময় সেনাবাহিনীকে এই গুরুদায়িত্ব পালনে স্পষ্ট নির্দেশনা ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ার। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে মাদকের ব্যাপকতায় চিন্তিত-অতিষ্ঠরা তো মুখিয়েই আছে। সেই অপেক্ষাই করছে।

লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল

সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে

প্রায় দুই দশক পর জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামীকাল শনিবার ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ হবে। বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত দলটির নেতাকর্মীরা।

সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াত।

এতে দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। এতে দেশে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে, যা জনগণ মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক সংস্কার জরুরি। কোনো ষড়যন্ত্র যেন এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। অংশ নেবেন ইসলামী দলগুলোর নেতারা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা।

গোলাম পরওয়ার বলেন, স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে আমাদের দল নানা নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার কিছুটা ফিরে এসেছে।

তিনি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি চান তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। দলটির পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।

জুলাই মাসে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি বলেও দাবি করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল।

তিনি বলেন, বিষয়টি জাতীয় সমাবেশে জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে।

তিনি জানান, সমাবেশ সফল করতে একটি বাস্তবায়ন কমিটিসহ আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ মাইক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাবেশের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

সমাবেশে থাকবে ২০টি পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ঢাকার আশপাশ থেকে আগতদের জন্য ১৫টি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

সমাবেশস্থলের ভেতরে ও বাইরে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ থাকবে, প্রতিটিতে থাকবেন দুজন করে চিকিৎসক, জরুরি ওষুধ এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকবে।

ড্রোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও ধারণ ও সরাসরি সম্প্র্রচারেরও আয়োজন থাকবেএলইডি স্ক্রিন ছাড়াও ফেসবুক ও ইউটিউবেও সম্প্রচার করা হবে।

সমাবেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান গোলাম পরওয়ার।

সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি বলেন, সারা দেশ থেকে মানুষ রেল, সড়ক ও নৌপথে সমাবেশে অংশ নিতে আসবে। এতে নগরবাসীর কিছুটা দুর্ভোগ হতে পারে। আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। তিনি জানান, সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়। তবে সকাল ১০টা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলবে।

এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনারও নিন্দা জানান গোলাম পরওয়ার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতার অভিযোগও করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সাত দফা দাবিও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলোঅবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ; সব গণহত্যার বিচার; মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার; জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন; জুলাই শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন; পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

মন্তব্য

তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ

ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল  ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন যোগ্য নাগরিকরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক।

পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান প্রধান উপদেষ্টার  প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং সিনিয়র সহকারী  প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।

সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহম্মদ বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৮ বছর হয়, তাঁরা পরবর্তী জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। নির্বাচন কমিশন প্রতিবছরের ২ জানুয়ারি ওই খসড়া ভোটার তালিকা এবং  ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়, অর্থাৎ ভোটার হওয়ার জন্য যোগ্য হন, তাঁরা ওই নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ পান না।

তাঁদের পরবর্তী নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

ফয়েজ আহম্মদ আরো বলেন, এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁদের ভোটার তালিকায় নিয়ে আসাকে যৌক্তিক মনে করে। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ধরুন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। তার সর্বোচ্চ দুই মাস আগে তফসিল ঘোষিত হয়।

তার মানে নভেম্বর পর্যন্ত যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁরা ভোটার হওয়ার সুযোগ পান না। বরং আগের বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁদের বয়স ১৮ বছর হয়েছে, তাঁরাই ভোটাধিকার পান।

ফয়েজ আহম্মদ বলেন, আজ যে অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন করা হলো, এর ফলে যখন নির্বাচনের তফসিল  ঘোষণা হবে, তার অন্তত এক মাস আগ পর্যন্ত যেসব ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর হবে, তাঁরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।

মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ : গতকাল সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম  বলেন, অনেকের কিডনি ড্যামেজ হয়, অনেকে চোখে দেখতে পায় না, কর্নিয়া সংযোজন হলে অন্ধত্ব দূর করা যায়, এসব বিষয়ে বাংলাদেশের যে আইন ছিল সেটা অনেক দিন থেকে আপডেট হয়নি।

 

তিনি বলেন, নতুন এই অধ্যাদেশের ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনটা খুব সহজ হবে। আগে যেমন ছিল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য খুবই কাছের যেমনভাই, বোন, মা-বাবা থেকে নিতে পারতেন, এখন এটাকে একটু সম্প্রসারণ করা হয়েছে। 

অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে নতুন করে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আগে যেমন ভাতিজা, ভাগিনা তারা অঙ্গ দান করতে পারত না। এখন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, মানে পরিধি বাড়ানো হয়েছে।

প্রেস সচিব আরো বলেন, এর ফলে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অনেককেই এখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আর বিদেশে যাওয়া লাগবে না। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোও এই সার্ভিস দিতে পারবে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী আইন। 

একই সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গোপালগঞ্জে গত বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে, সে সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে, ওই তথ্য হয়তো ছিল না।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গতকাল (বুধবার) এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ ঘটনায় আমাদের ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

আহতদের মধ্যে দুজনকে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। আহত আরো তিনজন পুলিশ সদস্যকেও রাজারবাগ হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে।

এ ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এনসিপি নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

যারা অন্যায় করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং হবে। কাউকে কোনো রকম ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত সব অপরাধী ধরা না পড়বে, তত দিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপদেষ্টা এ সময় গোপালগঞ্জের ঘটনা লাইভ করায় সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থা দেখতে যান।

 

মন্তব্য

আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিবন্ধিত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সব নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম।

তিনি বলেন, নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে এবং আগের নীতিমালা  বাতিল হয়েছে। তাই আগের নীতিমালার অধীন নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে।

২০২৩ সালে দুই দফায় ৯৬ সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ নিবন্ধন দেওয়া হয়।  এসব সংস্থার বেশির ভাগই ছিল নতুন। আগে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা ছিল না।

নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম যোগ্যতাগণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার অভিজ্ঞতাও অনেক সংস্থার ছিল না।

একাধিক সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা,  প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল।  সে সময় বেশ কিছু অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন পেতে উৎসাহ বোধ করেনি বা আবেদন করলেও নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।

সে সময় নির্বাচন কমিশন পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা বাড়াতে দ্বিতীয়বার আবেদন আহবান করে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন  নির্বাচন পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা আনতে আগের সব পর্যবেক্ষক সংস্থাকেই বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে নতুন করে নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল  সেই নতুন নীতিমালা-২০২৫ জারি ও  ২০২৩ সালের নীতিমালা বাতিল করা হয়েছে। ফলে আগের নীতিমালা অনুসারে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে।

এসব পর্যবেক্ষক সংস্থার মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। নতুন নীতিমালায়  নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি ও এর সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। ২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক সংস্থার  নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। ওই সময় প্রথমবারের মতো ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ