সংখ্যানুপাতিক ভোটব্যবস্থা (পিআর পদ্ধতি) চালু এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে দলটি বলেছে, প্রচলিত পদ্ধতিতে জনরায় বিকৃত হয়, আর পিআর পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা, বৈচিত্র্য ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব।
গতকাল বুধবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা জানান জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।
সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে জামায়াতের একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে যায়।
তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এবং কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার।
গত মঙ্গলবার ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকসহ দলীয় নিবন্ধন ফিরে পায় জামায়াত। প্রতীক বুঝে নেওয়া এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা সংক্রান্ত কিছু প্রস্তাব দিতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করেন জামায়াতের প্রতিনিধিরা।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশেও এই পদ্ধতি চালু হলে ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য প্রতিনিধিত্বের সুযোগ তৈরি হবে। আমরা কমিশনে প্রস্তাব দিয়েছি, ১ শতাংশ ভোট পেলেই যেন একটি আসনের যোগ্যতা তৈরি হয়।’
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হলে তা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে দলীয় প্রভাব ও প্রশাসনিক সুবিধা নিয়ে প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করা হয়।
ফলে জনগণের রায় প্রতিফলিত হয় না। আমরা বারবার বলছি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিরপেক্ষ হতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা আছে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াত নেতা বলেন, ‘আমরা কমিশন ও সরকার—সবই পর্যবেক্ষণ করছি। কাজেই এখনই আস্থা বা অনাস্থা বলার সময় নয়। আমরা যা দেখব, তাই বলব।
কালোকে কালো, সাদাকে সাদা বলব।’
প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রসঙ্গে সাবেক এই এমপি বলেন, ‘প্রায় এক কোটি ১০ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসে থাকেন। কিন্তু তাঁরা ভোট দিতে পারেন না। ভোট তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছি এই অধিকার নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে।’
এদিকে রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী ১৯ জুলাই (শনিবার) দুপুর ২টায় জাতীয় সমাবেশ করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং প্রবাসীদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থার দাবিতে এ ‘জাতীয় সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
জাতীয় সমাবেশ সফল করতে সভায় বিভিন্ন বিভাগের অগ্রগতি ও প্রস্তুতি পর্যালোচনা করা হয়। একই সঙ্গে সমাবেশকে শান্তিপূর্ণ ও কার্যকর করতে দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতার আহবান জানানো হয়।
বৈঠকে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মো. সেলিম উদ্দিন, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ড. রেজাউল করিম, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, মো. ইয়াসিন আরাফাত, কামাল হোসাইন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে জাতীয় সমাবেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কমিটির বিভিন্ন বিভাগের কাজের পর্যালোচনা করা হয় এবং সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সফল করার জন্য সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহবান জানানো হয়।