ঢাকা, রবিবার ১০ আগস্ট ২০২৫
২৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৫ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ১০ আগস্ট ২০২৫
২৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৫ সফর ১৪৪৭
অন্য জীবন

টাকার নকশা করেন যিনি

পিন্টু রঞ্জন অর্ক, গাজীপুর থেকে ফিরে
পিন্টু রঞ্জন অর্ক, গাজীপুর থেকে ফিরে
শেয়ার
টাকার নকশা করেন যিনি
বাজারে যে নোটগুলো আসছে, সেগুলোও মুছলিম মিয়ার নকশায় করা। ছবি : মোহাম্মদ আসাদ

হুট করে বৃষ্টি নামল। একটা টং দোকানে ঢুকে পড়লাম। চায়ে চুমুক দিচ্ছি, কানে এলো দুজনের কথা। ৫০ টাকার একটা নোট দেখিয়ে এক তরুণ বললেন, বাংলাদেশে আর কোনো নোটে এমন চিত্রকর্ম নেই।

নোটটা কী সুন্দর না? এটি জয়নুলের চিত্রকর্ম।

সায় দিয়ে পাশের জন বললেন, বাজারে নাকি নতুন নোট আসবে। আজও জানলাম না আমাদের নোটগুলোর ডিজাইনার কে!

এমন সময় পাশে বসা এক ভদ্রলোক মুচকি হেসে বললেন, এই নোটটার নকশা আমার করা।

ভদ্রলোক মাঝবয়সী।

গায়ে হাফশার্ট। মাথায় টুপি। মুখে সাদা দাড়ি। চোখে চশমা।

শুনে অবাক দুই তরুণ। বেশ কৌতূহল হলো। পরিচয় দিয়ে ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ জমালাম। সদালাপী মানুষটির নাম মুছলিম মিয়া। থাকেন গাজীপুরে।

কথায় কথায় জানলাম, শুধু ৫০ টাকার নোটই নয়, দেশে এখন প্রচলিত সব নোটেরই নকশাকার তিনি। আগামীকাল বাজারে যে নোটগুলো আসছে, সেগুলোও তাঁর নকশায় করা। নতুন নোটগুলোর নকশা প্রণয়ন কমিটির সদস্য তিনি।

ইচ্ছামতো আঁকতেন : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর ধুলদিয়া গ্রামের সন্তান মুছলিম মিয়া। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি মেজো। শৈশবে ইচ্ছামতো আঁকতেন। খাতাপত্র তো বটেই, বাড়ির দেয়াল, আশপাশের ভবনসবই তাঁর ক্যানভাস। আঁকার উপাদান বলতে কয়লা, ইটের গুঁড়া আর সবুজ রং। দেখে প্রশংসা করত অন্যরা।

তাঁর বড় ভাই পড়তেন মোহাম্মদপুরের গ্রাফিকআর্ট কলেজে। এসএসসি পাসের পর তিনি মুছলিম মিয়াকে বললেন, এখানে একটা আর্ট কলেজ আছে। ভর্তি হবি? পরে দুই ভাই মিলে গেলেন আর্ট কলেজে (এখনকার চারুকলা অনুষদ)। সেখানেই দেখা শিল্পী হামিদুজ্জামান খানের সঙ্গে। তিনি একটা মাটির পট এবং কয়েকটা পাতার চিত্র দিয়ে বললেন, এগুলো আঁকার চর্চা করো। দিন কুড়ি পর উনাকে আবার দেখালেন। পরে লিখিত ও অঙ্কন পরীক্ষার বৈতরণী পার হয়ে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হলেন মুছলিম মিয়া। ১৯৭৮ সালে প্রি-ডিগ্রিতে ভর্তি হলেন চারুকলায়। ছাপচিত্র বিভাগ থেকে স্নাতক হলেন ১৯৮৪ সালে।

এক নামে চিনত তাঁকে : তখন তিনি প্রথম বর্ষে। জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী হয়েছিল শিল্পকলা একাডেমিতে। কাঠের ওপর করা মুছলিম মিয়ার একটা শিল্পকর্ম ঠাঁই পেল প্রদর্শনীতে। এর পর থেকে এশিয়ান আর্ট বিয়েনালেসহ ঢাকায় আয়োজিত প্রদর্শনীগুলোতে থাকত মুছলিম মিয়ার ছবি। সেই সুবাদে চারুকলায় সবাই এক নামে চিনত তাঁকে।

স্নাতকের পর একটা অ্যাড ফার্মে যোগ দিলেও ফরমায়েশি কাজে মন বসছিল না। এনগ্রেভার পদে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে তিনি আবেদন করেন। ভাইভা বোর্ডে এক পরীক্ষক কাগজ, পেনসিল ও রাবার দিয়ে বললেন, ১০ মিনিট সময়। আমার একটা পোর্ট্রেট আঁকেন। মুছলিম মিয়ার আঁকা দেখে উপস্থিত সবাই মুগ্ধ। পরে জেনেছেন সেই ভদ্রলোক ছিলেন টাঁকশালের প্রধান প্রকৌশলী।

অনেক দূর যাবে : ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে শিক্ষানবিশ এনগ্রেভার পদে যোগ দিলেন। তখন গাজীপুরে টাঁকশাল ভবন নির্মাণ হচ্ছিল। সিনিয়ররা যেসব নকশা করতেন, সেগুলো নিজের মতো করে আঁকতেন। ১৯৮৬ সালে দুই টাকার নতুন নোট ছাড়ার উদ্যোগ নিল বাংলাদেশ ব্যাংক। নকশা করেন শিল্পী রফিউদ্দিন। ট্রেসিং পেপারে দোয়েল পাখির স্কেচটা করে দিলেন মুছলিম মিয়া।

১৯৮৭ সালে প্রশিক্ষণের জন্য শিল্পী মাহমুদা খাতুন আর মুছলিম মিয়াকে পাঠানো হলো সুইজারল্যান্ড। সেখানে টাকা, মুদ্রা নকশা ও অবয়ব খোদাই (এনগ্রেভিং) বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিলেন। ইতালিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের একজন এনগ্রেভার ছিলেন তাঁদের প্রশিক্ষক। মুছলিম মিয়ার আঁকা দেখে সেই প্রশিক্ষক বলেছিলেন, তোমার কাজের যে গতি, লেগে থাকলে অনেক দূর যেতে পারবে।

উৎপাদনে গেল টাঁকশাল : ১৯৮৮ সালে দেশে ফিরলেন মুছলিম মিয়া। তত দিনে টাঁকশাল ভবন নির্মাণ হয়ে গেছে। তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সুফিয়া কামাল, জাহানারা ইমাম, এস এম সুলতানসহ ব্যাংক নোটে ব্যবহার উপযোগী অনেকে পোর্ট্রেট করতে লাগলেন। ১৯৮৯ সালে উৎপাদনে গেল টাঁকশাল। দেশেই শুরু হলো টাকা ছাপানো। প্রথমে এক ও ১০ টাকার নোট ছেপেছিল। তখনো দেশে লেটার এনগ্রেভিং মেশিন ছিল না। তাই বিদেশ থেকে করিয়ে আনা হয়েছিল।

প্রথমে এখানে ছাপানো এক টাকার নোটের নকশা করাই ছিল। নোটটি বাজারে ছাড়া হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। নকশাকার ফজলুল করিম। চাকরি করতেন পাকিস্তান সিকিউরিটি প্রিন্টিংয়ে। গাজীপুরে আর যোগ দেননি। টাঁকশাল চালুর পর মুছলিম মিয়ারা নকশা শুরু করলেন। অনেক ডিজাইন করা হয়েছিল। শিল্পী মাহমুদা খাতুন স্মৃতিসৌধের ছবিযুক্ত ৫০ টাকার নোটের ডিজাইন করলেন। শিল্পী রফিউদ্দিন আহমেদ দোয়েল পাখিওয়ালা দুই টাকার নোটের নকশা করলেন ১৯৮৮ সালে। তাঁরা আরো কিছু নোটের নকশা করেছিলেন। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেগুলো পছন্দ করেনি। তারা নতুনত্ব চাইছিল।

মুছলিম মিয়ার নকশা : ১৯৯৫ সালের দিকে প্লেট খোদাইয়ের কাজ করতেন মুছলিম মিয়া। একদিন টাঁকশাল কর্তৃপক্ষ ডেকে বলল, আমাদের যে দুজন ডিজাইনার আছেন, তাঁরা কিছুদিন পর অবসরে যাবেন। আপনিই নকশা করেন, দেখি কেমন হয়।

১০, ৫০ আর ৫০০ টাকার নোটের ডিজাইন বদলাতে চেয়েছিল কর্তৃপক্ষ। মুছলিম মিয়া পরীক্ষামূলকভাবে নোটগুলোর নকশা করলেন। অন্যরাও করল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক পছন্দ করল মুছলিম মিয়ারটা। প্রথমে তারা পছন্দ করল বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত একটি নীল রঙের ১০ টাকার নোট। উল্টো পাশে ছিল লালবাগকেল্লা মসজিদ। একটা ৫০০ টাকার নোটের রং ছিল লালচে হলুদ। সামনে স্মৃতিসৌধ, পেছনে হাইকোর্ট ভবন। ৫০ টাকার নোটের সামনে সংসদ ভবন, পেছনে রাজশাহীর বাঘা মসজিদ। ১৯৯৬ সালে তিনটি নোটই অনুমোদন পেল। নোটগুলো প্রসেসিংয়ের জন্য ১৯৯৭ সালে আবার সুইজারল্যান্ড গেলেন মুছলিম মিয়া। কালার সেপারেশন ও প্লেট করে সেগুলো দেশে এনে ছাপানো হলো। এরপর দুই টাকা, ২০ টাকার নোটও মডিফাই করলেন। মানে নোটগুলো বেশ বড় ছিল। পরে সেগুলো স্ট্যান্ডার্ড সাইজ করা হয়েছে। আবার ১০০ ও ৫০০ টাকার নতুন নোটও ডিজাইন করলেন। হাঙ্গেরিতে গিয়ে সেগুলো প্রসেস করলেন মুছলিম মিয়া। বাংলাদেশের প্রথম ১০০০ টাকার লাল রঙের নোটটাও (শহীদ মিনারের ছবিযুক্ত) তাঁর নকশায় করা।

কয়েক কোটি টাকা সাশ্রয় হলো : ২০০০ সালে দেশে প্রথমবারের মতো পলিমারে করা ১০ টাকার নোট চালু হলো। নকশাকার এক অস্ট্রেলিয়ান। কিন্তু আমাদের টাঁকশালে এ ধরনের নোটের কাজ করার মতো উপযুক্ত কম্পিউটার ছিল না। মুছলিম মিয়া নিজের বাসার কম্পিউটার সেট নিয়ে গিয়েছিলেন টাঁকশালে। সেখানেই নোটটার পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন সেই ডিজাইনার। সেই সুবাদে মুছলিম মিয়াও শিখলেন পলিমারে নকশার কলাকৌশল। নতুন সরকার এসে নোটটা আবার কাগজে ছাপতে চাইল। পরে বঙ্গবন্ধুর ছবির জায়গায় সরকারি মনোগ্রাম এবং বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ছবি দিয়ে ১০ টাকার নোটের নতুন ডিজাইন করলেন। এ ধরনের নোটের প্লেট এবং প্রসেসের জন্য যেতে হতো সুইজারল্যান্ড বা হাঙ্গেরিতে। কিন্তু টাঁকশালে বসেই মুছলিম মিয়া প্লেট করলেন, প্রসেসও। এতে সরকারের কয়েক কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছিল।

২০১১ সালে দুই টাকা থেকে শুরু ১০০০ হাজার টাকার নতুন ৯টি নোটের ডিজাইন করলেন।

জয়নুল এলেন নোটে : ১৯৯৬-৯৭ সালের নোটের নকশা বাছাই কমিটিতে শিল্পী রফিকুন নবী, মুস্তাফা মনোয়ার ও কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন। তাঁরা মত দিয়েছিলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একটি চিত্রকর্ম টাকায় ব্যবহার করলে ভালো হয়। কিন্তু কাজটি আলোর মুখ দেখেনি। পরে যখন নোটের সিরিজ নকশা শুরু করেন মুছলিম মিয়া, তখন আবার শিল্পাচার্যের প্রসঙ্গ এলো। তখন মই দেওয়া চিত্রকর্মটি নির্বাচন করা হয়। কর্তৃপক্ষ বলেছিল, চিত্রকর্মটি যেন হুবহু থাকে। হাঙ্গেরিতে এই নোটের কালার সেপারেশন করা হয়েছিল। লাইন ডিরেকশনও দেখিয়ে দিয়েছিলেন মুছলিম মিয়া।

যেভাবে হয় নোটের নকশা : নোটের নকশা বদলের দরকার হলে বাংলাদেশ ব্যাংক টাঁকশাল কর্তৃপক্ষকে এ ধারণা দেয়। সে অনুযায়ী কিছু খসড়া করেন ডিজাইনাররা। বাংলাদেশ ব্যাংক মনোনীত নকশা প্রণয়ন কমিটি আছে। চারুকলার শিক্ষক, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালকদের সমন্বয়ে গঠিত হয় এই কমিটি। তাঁরাই নকশার চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। পরে টাঁকশাল কর্তৃপক্ষ সেটা মুদ্রণপ্রক্রিয়া শুরু করে। এ জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহবান করা হয়। ডিজাইনাররা সংশ্লিষ্ট দেশে গিয়ে নোটের নকশা তত্ত্বাবধান করেন। প্রয়োজনীয় প্লেট প্রিন্ট করে ডিজাইনারকে একটা কালার চার্ট দিয়ে দেয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। টাঁকশালে আরো কিছু প্রক্রিয়া শেষে কালার ম্যাচিং করে লিথোগ্রাফ ও ইন্টাগ্লিও পদ্ধতিতে ছাপা হয় নোটগুলো, যা হাতে খসখসে অনুভূত হয়।

মুছলিম মিয়া জানালেন, জলছাপ এবং সিকিউরিটি থ্রেডযুক্ত শতভাগ কটন কাগজে বাংলাদেশি নোটগুলো করা হয়। বাছাই কমিটির অনুমোদনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদামতো টাঁকশালে নতুন টাকা ছাপা হয়।   

টাঁকশালের জেনারেল ম্যানেজারের (প্রডাকশন অ্যান্ড কন্ট্রোল, ডিজাইন অ্যান্ড এনগ্রেভিং) পদ থেকে মুছলিম মিয়া অবসর নিয়েছেন ২০২০ সালে। এখন নিজের স্টুডিওতে আঁকাআঁকিতেই সময় কাটছে প্রচারের আড়ালে থাকা মানুষটির।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আলী রীয়াজ

জুলাই সনদের চূড়ান্ত ঘোষণা শিগগিরই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জুলাই সনদের চূড়ান্ত ঘোষণা শিগগিরই

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে কমিশন আশাবাদী। এ আশাবাদ নিয়ে কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করেযে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ গণতন্ত্রের পথে আরো এগিয়ে যাবে।

গতকাল শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অধ্যাপক রীয়াজ।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফররাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।

আলী রীয়াজ জানান, রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই জুলাই সনদ-এর চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হবে। কয়েক দিনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সনদের পূর্ণাঙ্গ খসড়া পাঠানো হবে এবং তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে আগামী সপ্তাহে আরো একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে রচিত এবং প্রত্যাশিত এই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কেমন হবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই ঠিক করতে হবে। সে লক্ষ্যে আগামী সপ্তাহে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এক দফা সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে এবং সেই আলোচনার আলোকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় পর্যায়ের বৈঠকে বসবে কমিশন। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে এবং একটি টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তৈরি হবে।

বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, গত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

এ বিষয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশ রয়েছে, যা সরকারের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নও হচ্ছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন নিজেও কিছু ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, সম্মিলিত প্রয়াসে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।

আগামী জাতীয় নির্বাচন সনদের ভিত্তিতে হবে কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, নির্বাচন কিভাবে হবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের দায়িত্ব নয়।

সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনার মাধ্যমে তা ঠিক করবে। আমাদের কাজ একটি জাতীয় ঐকমত্যের সনদ তৈরি করে দেওয়া। এখন পর্যন্ত দুই দফা আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণসংখ্যক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে।

নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে যেসব সুপারিশে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলোর ভবিষ্যৎ কী এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, টিআইবির পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে আমরা নির্দিষ্টভাবে কিছু বলছি না। তবে আমরা চেয়েছি এই প্রক্রিয়ায় যেন একটি সম্মতিতে পৌঁছানো যায়। বাস্তবায়নের দায়িত্ব যদিও আমাদের নয়, তার পরও আমরা আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।

কমিশনের ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা নিজেরা কোনো ব্যয় করি না। কমিশনের অর্থসংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখে আইন মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়। সরকারের পক্ষ থেকে অডিট নিশ্চয়ই হবে।

স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় সংসদ সদস্যদের প্রভাব প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, আদালতের রায় অনুযায়ী স্থানীয় পর্যায়ের কার্যক্রমে সংসদ সদস্যদের সম্পৃক্ততা আইনত বৈধ নয়। অথচ বর্তমানে তাঁরা স্থানীয় সরকারে হস্তক্ষেপ করছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনায় এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ এসেছে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় রকমের পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের কয়েকটি প্রস্তাবে এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। যেমনপ্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছরে সীমিত করা এবং প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে দলীয় প্রধান হওয়া বন্ধ করার বিষয়ে অধিকাংশ দল একমত। জাতীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কমিটিতে বিরোধী দলের সভাপতিত্ব থাকলে এক ধরনের চেক অ্যান্ড ব্যালান্স প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।

প্রসঙ্গত, সংবিধান সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। এরই  মধ্যে ৩০ জুলাই প্রথম দফায় ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ৬২টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। দ্বিতীয় দফার খসড়া ২৮ জুলাই পাঠানো হয় এবং ৩১ জুলাই সেই দফার আলোচনা শেষ হয়।

 

মন্তব্য

বাড়িভাড়া বিতর্কে ব্রিটিশ মন্ত্রীর পদ ছাড়লেন রুশনারা

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বাড়িভাড়া বিতর্কে ব্রিটিশ মন্ত্রীর পদ ছাড়লেন রুশনারা
রুশনারা আলী

স্বেচ্ছায় মন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেছেন ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রী রুশনারা আলী এমপি। গত বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী লন্ডনের বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি নির্বাচনী আসনে লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত এমপি। মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের আগ পর্যন্ত ব্রিটেনের লেবার সরকারের হোমলেসনেস (গৃহহীনতা) মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

তাঁর পদত্যাগের বিষয়টি ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, লেবার পার্টির আরেক এমপি টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর সমালোচনার মুখে গত ১৪ জানুয়ারি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিত্ব ছাড়েন। তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। অন্যদিকে ২০২৪ সালের ৫ জুলাই যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে টানা পঞ্চমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী দেশটির নতুন সরকারে দায়িত্ব পান।

তাঁকে গৃহায়ণ, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি করা হয়।

তবে হঠাৎ করেই মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের কারণ হিসেবে জানা যায়, লন্ডনে নিজের মালিকানাধীন একটি বাড়িভাড়ার বিষয়ে দ্বিচারিতার অভিযোগ ওঠার পর বাড়িভাড়া বাড়ানোর পদ্ধতি নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গৃহহীনতাবিষয়ক একাধিক দাতব্য সংস্থা এবং বিরোধীদলীয় রাজনীতিকরা তাঁর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে রুশনারা আলীর বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনার ঝড় ওঠার পর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা পদত্যাগপত্রে আলী লেখেন, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করছি।

আমি বিশ্বাস করি, আমি আমার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি এবং প্রমাণও তা-ই বলে। তবে স্পষ্ট যে আমার অবস্থানে থাকা সরকারের কাজকে বিভ্রান্ত করছে।

প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে রুশনারা আলীর কাজের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, রুশনারা আলীর পরিশ্রমী ভূমিকার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ এবং ভবিষ্যতেও তিনি ব্যাকবেঞ্চ থেকে সরকারের কাজকে সমর্থন দিয়ে যাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

দি আই পেপার-এর অনুসন্ধানে উঠে আসে রুশনারা আলী পূর্ব লন্ডনের একটি বাড়ির ফিক্সড টার্ম কন্ট্রাক্ট বাতিল করে সেটি বিক্রির উদ্দেশ্যে তালিকাভুক্ত করেন।

কিন্তু মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই ওই বাড়িটি আবার ভাড়া দেওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়। এবার আগের চেয়ে প্রতি মাসে ৭০০ পাউন্ড বেশি ভাড়ায়।

সাবেক এক ভাড়াটে জানান, ২০২৪ সালের নভেম্বরে তাঁকে চার মাসের নোটিশ দিয়ে বলা হয়, বাড়ির লিজ নবায়ন হবে না। তিনি ও বাকি তিন ভাড়াটে বাড়ি ছাড়ার পর সেই বাড়িটিই আবার নতুন করে ভাড়া দেওয়া হয়। সূত্র : ডেইলি মিরর

 

মন্তব্য
অন্য জীবন

সেন্টুর ডাকে আসে ইঁদুরের ঝাঁক

পিন্টু রঞ্জন অর্ক
পিন্টু রঞ্জন অর্ক
শেয়ার
সেন্টুর ডাকে আসে ইঁদুরের ঝাঁক
পান, বিড়ি, সিগারেট কিছুই খান না কামাল হোসেন সেন্টু। সে টাকা ব্যয় করেন ইঁদুর-পাখির আপ্যায়নে। ছবি : কালের কণ্ঠ

দৃশ্যটা অদ্ভুত সুন্দর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনের ফুটপাত। আয়, আয় বলে ডাকছেন একজন।  সে ডাকে ম্যানহোলের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে ইঁদুর! ইঁদুরগুলোকে তিনি পরোটার টুকরা দিচ্ছেন।

সাধারণত মানুষ দেখলে দৌড়ে পালায় ইঁদুর। কিন্তু এখানে ঘটনা পুরো উল্টো। খাবারের লোভে একেকবার একেকটা ইঁদুর পরোটার টুকরা কামড়ে শূন্যে পর্যন্ত ঝুলে থাকছে!

চারুকলার সামনের এই রাস্তায় প্রতিদিন দুপুরে এমন দৃশ্য  দেখা যায়। ব্যতিক্রমী এই দৃশ্যের নায়ক কামাল হোসেন সেন্টু।

শুধু ইঁদুর নয়, চড়ুই, শালিক, কাঠবিড়ালিও আসে খাবারের  খোঁজে। এমন মনকাড়া দৃশ্য দেখে অনেকে থমকে দাঁড়ায়। অবাক হয়ে ছবিও তোলে। কুকুর, বিড়াল কিংবা পাখিকে অনেকেই পোষ মানায়।

তাই বলে ইঁদুর! ওদের পোষ মানানো চাট্টিখানি কথা নয়।

সাধারণ সেন্টুর অসাধারণ কাজ : সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষটা মধ্যবয়সী। পরনে অতি সাধারণ পোশাক। কিন্তু করে যাচ্ছেন অসাধারণ কাজ। চারুকলার শিক্ষার্থীরা তাঁকে সেন্টু ভাই বলে ডাকেন।

একযুগের বেশি সময় ধরে চারুকলার সামনের ফুটপাতে কালো সুতায় বাঁধানো লকেট, মালা, হাতে বানানো আংটি, ব্রেসলেট এসব বিক্রি করছেন। আর বছর দুয়েক ধরে অদৃশ্য বন্ধন গড়ে তুলেছেন ইঁদুরের সঙ্গে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চারুকলার দেয়াল ঘিরে তাঁর অস্থায়ী গয়নার দোকান। তাঁকে চারপাশে ঘিরে থাকে পাখি, কাঠবিড়ালি, বিড়াল। তিনি ডাকলেই গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে কয়েকটি সাহসী ইঁদুর। ছোট ছোট পা আর ডানাওয়ালা এই ক্ষুধার্ত অতিথিরা সেন্টুর কাছে আসে খাবারের আবদার নিয়ে। তিনিও নিরাশ করেন না ওদের।

রাজপথে সংসার : সেন্টুর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। অভাবের সংসারে বেশি দূর পড়তে পারেননি। জীবনের শুরু থেকে সংগ্রাম নিত্যসঙ্গী। স্কুল ছেড়ে বেছে নিতে হয়েছে শ্রমিকের জীবন। মজুরি দিয়েছেন হাজারীবাগের ট্যানারিতে। সায়েন্স ল্যাবের পাশে খেলনা বিক্রি করেছেন। একসময় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে গ্যাস সিলিন্ডার ভরেছেন। কখনো ধানমণ্ডি, ফার্মগেট আর সায়েন্স ল্যাবে কাঁধে ব্যাগ আর চোখে স্বপ্ন নিয়ে ঘুঙুরও ফেরি করেছেন। কিছু টাকা জমিয়ে ছোট্ট এক স্টেশনারির দোকান দিয়েছিলেন নবাবপুরে। সেটা ২০০০ সালের কথা। অনেক স্বপ্ন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। বিশ্বাস করে মানুষকে বাকি দিয়েছেন। কিন্তু তা আর ফেরত পাননি। দীর্ঘস্থায়ী হয়নি তাঁর ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার স্বপ্ন। ফলে আবার নামতে হলো রাজপথে। যেন হেলাল হাফিজের সেই কবিতার মতো সেন্টুর জন্মই হয়েছে রাজপথে সাজাতে সংসার। এবার তাঁর ঠিকানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

চলার পথে হোঁচট খেয়েছেন বারবার। আবার সাহস নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন। জীবনে বিশ্বাসভঙ্গের বেদনায় পুড়েছেন অনেকবার। তবে সেন্টু হারাননি বুকের কোণে পুষে রাখা স্বপ্নটুকু। স্রোতের ভিড়ে হারাননি আত্মমর্যাবোধ আর মমতার পরশপাথর। যার প্রমাণ মেলে পশুপাখির প্রতি তাঁর ভালোবাসা দেখে।

সেন্টু বলেন, আমার মতো অবস্থায় থাকলে অনেকে হতাশায় মুষড়ে পড়ে। কিন্তু স্ত্রী আর ছেলেমেয়ের মুখের পানে চেয়ে আমি বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি। কারো মুখাপেক্ষী হয়ে নয়, বাঁচতে চেয়েছি পরিশ্রম করে।

চা-বিড়ির টাকায় ইঁদুর-পাখির আপ্যায়ন : গত ১৩ বছর ধরে চারুকলার সামনের ফুটপাতে ছোট্ট এক গয়নার স্টল নিয়ে বসেন সেন্টু। প্রতিদিন দুপুর ১২টার দিকে গয়নাভর্তি কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে আসেন। পরে গয়নাগুলো সাজিয়ে দেন চারুকলার দেয়ালে। স্টলটা সাধারণ। কিন্তু তাঁর দোকানের প্রতিটি পণ্য যেন একেকটা গল্প বয়ে বেড়ায়। কোনোটা অলংকরণে ভরপুর, কোনোটা যেন হারিয়ে যাওয়া কোনো রূপকথার অংশ। সেন্টুর ভাষায় আসলে শুধু লকেট বা ব্রেসলেট নয়, আমি গল্প বিক্রি করি। বোঝা যায়, কষ্ট নয়তিনি নিজে অন্তরে পোষেণ মায়া আর মমতার গল্প। সেই মায়ার টানে ছুটে আসে তাঁর অতিথিরাইঁদুর, কাঠবিড়ালি আর চড়ুই পাখি। চালের খুদ, পরোটা সবই নিয়ে আসেন ওদের জন্য। দুপুরে এসে আয় আয় ডাক দিলেই ছুটে আসে তারা। যেন তারা তাঁর আত্মার আত্মীয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল কুমারের ভাষায়, বিনি সুতোর মালায় গাঁথা বন্ধন। এভাবে দৈনিক গড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকার মতো খরচ হয় সেন্টুর। পান, বিড়ি, সিগারেট কিছুই খাওয়ার অভ্যাস নেই তাঁর। পারতপক্ষে চা-ও না। সেই টাকা ইঁদুর-পাখির খাবারের পেছনে খরচ করেন বলে জানালেন। সেন্টু বলেন, গয়না বিক্রির টাকায় সংসার চলে। নিজে চা-বিড়ি খাইলে যে পয়সা খরচ হতো, সেটা ব্যয় করি ইঁদুর আর পাখির জন্য। আসলে এদের খাওয়াই আত্মার শান্তির জন্য। নিজের দুঃখ ভুলে ওদের নিয়ে মেতে থাকি। ওদের খেতে দেখলে আনন্দ লাগে। শান্তি পাই।

ওদের জন্য মন পোড়ে : মানুষ নানা প্রাণীকে খাওয়ায়। তাই বলে ইঁদুর? ফসল থেকে শুরু করে কাপড়, বইপত্র নষ্ট করে বলে লোকে ইঁদুর মারে। সেন্টুর ভাষায়—‘ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়েই এসব করে ইঁদুর। ক্ষুধার জ্বালায় কে কি না করে?

অস্থিরতা বা অন্য কোনো কারণে যখন ক্যাম্পাসে প্রবেশাধিকার সীমিত হয়ে যায়, অসুস্থতা বা কোনো কারণে যেদিন নিজে ক্যাম্পাসে আসতে পারেন না, তখন খুব খারাপ লাগে সেন্টুর। বলেন, ওদের জন্য মন পোড়ে। আবার ভুলে কোনো দিন যদি খাবার না আনি, তাহলে দেখি ওরা ঘোরাঘুরি করছে। তখন আফসোস লাগেআহা রে, আজ খাবার আনলাম না!

আহত পাখি বা বিড়াল নিয়ে অনেক সময় তাঁর কাছে আসেন চারুকলার শিক্ষার্থী বা পথচারীরা। তিনি সাধ্যমতো শুশ্রূষা করে সেগুলোকে আবার ছেড়ে দেন প্রকৃতির মাঝে। যেমনটা বলছিলেন চারুকলার ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের ছাত্রী সুবাহ সামাউন ওহি, চারুকলায় আসার পর থেকে সেন্টু ভাইকে দেখছি, ইঁদুর পোষেণ, খাওয়ান। অনেক সময় চারুকলায় আহত কাক, বিড়াল পেলে সেন্টু ভাইয়ের কাছে দিয়ে যাই। তিনি সেগুলোকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। মানুষটার মাঝে অনেক মায়া। 

সেন্টুর এসব কর্মকাণ্ড দেখে অনেকে তাঁকে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা বলে। কিন্তু হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা ইঁদুরগুলোকে ঠেলে দিয়েছিল মৃত্যুর মুখে। আর সেন্টু দিচ্ছেন বাঁচার রসদ। মমতার বার্তা ছড়ানো সেন্টু জানালেন, যত দিন বেঁচে আছেন, কাজটি চালিয়ে যাবেন।

 

 

মন্তব্য

কলকাতায় ‘পার্টি অফিস’ খুলে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম চলছে কিভাবে

বিবিসি বাংলা
বিবিসি বাংলা
শেয়ার
কলকাতায় ‘পার্টি অফিস’ খুলে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম চলছে কিভাবে

কলকাতা লাগোয়া উপনগরীতে শয়ে শয়ে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স, রাত-দিন লাখ লাখ মানুষের ভিড় সেখানে। ব্যস্ত এই এলাকায় একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে এমন কয়েকজন যাতায়াত করছেন, যাঁদের কয়েক মাস আগেও সেখানে দেখা যেত না। ওই বাণিজ্যিক পরিসরে যাতায়াত করে, এমন বেশির ভাগ লোকই চেনে না এই নবাগতদের, চেনার কথাও নয়।

তবে এঁদের অনেকেই মাত্র এক বছর আগেও বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।

তাঁরা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ ও মধ্যম স্তরের নেতা। তাঁরা যে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সটিতে যাতায়াত করছেন কয়েক মাস ধরে, সেখানেই দলীয় দপ্তর খুলেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

এর আগে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা  বাংলাদেশ ছাড়ার পরের কয়েক মাসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে যাঁরা ভারতে অবস্থান করছেন, তাঁরা নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো বৈঠক বা দলীয় দপ্তরের কাজকর্ম চালাতেন নিজেদের বাসাবাড়িতেই। বড় বৈঠকগুলো অবশ্য করতে হতো কোনো রেস্তোরাঁ বা ব্যাংকুয়েট হল ভাড়া করে।

সে কারণেই একটা নির্দিষ্ট পার্টি অফিস-এর দরকার ছিল বলে জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

কী রকম সেই পার্টি অফিস?

বাণিজ্যিক পরিসরটির পেছনের দিকের ভবনটির অষ্টম তলায় লিফট দিয়ে উঠে বাঁ দিকে গেলেই সার দিয়ে বাণিজ্যিক সংস্থার দপ্তর। করিডরের দুই দিকে হালকা বাদামি রঙের একের পর এক দরজা। তার মধ্যেই একটিতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস।

শুধু বাইরে কেন, ৫০০ থেকে ৬০০ স্কয়ার ফুটের ঘরটিতে উঁকি দিলেও কেউ বুঝতে পারবে না যে এই ঘরটির সঙ্গে কোনোভাবে আওয়ামী লীগ জড়িত আছে। কোনো সাইনবোর্ড, শেখ হাসিনা অথবা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো ছবি কোথাও নেই ঘরটির বাইরে বা ভেতরে।

একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধু বা নেত্রীর কোনো ছবি, সাইনবোর্ড কোনো কিছুই আমরা রাখিনি খুবই সচেতনভাবে। আমরা চাইনি যে এই ঘরটার পরিচিতি প্রকাশ করতে। এমনকি একটা দলীয় দপ্তরে যেসব ফাইল ইত্যাদি থাকে, সেসবও এখানে রাখা হয় না।

নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ, বৈঠক ইত্যাদির জন্য একটা ঘর দরকার ছিল, এটা পাওয়া গেছে। এটাকে আমরা পার্টি অফিসই বলি, কিন্তু আদতে এটা একটা বাণিজ্যিক অফিস। আগে যে সংস্থা কাজ করত এখানে, তাদেরই ছেড়ে যাওয়া চেয়ার ও টেবিলই আমরা ব্যবহার করি।

তিনিই জানালেন, ৩০ থেকে ৩৫ জনের বৈঠক এই দপ্তরেই হয়ে যায়, কিন্তু একটু চাপাচাপি করে বসতে হয়। ছোটখাটো বৈঠক বিভিন্ন নেতার বাসাবাড়িতে এখনো হয়। তবে বড় বৈঠকগুলো, যেখানে শ দুয়েক নেতাকর্মী হাজির হওয়ার কথা, সে রকম বৈঠকের জন্য কোনো ব্যাংকুয়েট হল বা কোনো রেস্তোরাঁর একটি অংশ ভাড়া নেওয়া হয়।

কারা যাতায়াত করেন পার্টি অফিসে?

গত বছরের ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অনেক শীর্ষ নেতা এবং সাবেক মন্ত্রীই কলকাতা বা তার আশপাশের অঞ্চলে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। এর বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবী, সরকারি কর্মচারী, পুলিশ কর্মকর্তা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারাও চলে এসেছেন ভারতে। মাস ছয়েক আগে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানিয়েছিল, অন্তত ৭০ জন সাবেক সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার সভাপতি ও সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, মেয়রসহ শীর্ষ নেতৃত্বের অন্তত ২০০ জন কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে থাকছেন। এঁদের কেউ সপরিবারে থাকেন, আবার কোথাও একসঙ্গে কয়েকজন মিলেও একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন। কারো পরিবার মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ থেকে এসেও কিছুদিন কাটিয়ে যায়।

আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, এখন যে সংখ্যাটা খুব বেশি বেড়েছে তা নয়। বর্তমানে দ্বাদশ সংসদের ৮০ জনের মতো সংসদ সদস্য এবং তারও আগে সংসদ সদস্য ছিলেন, এমন ১০ থেকে ১২ জন নেতা আছেন এখানে। আবার এমনও কয়েকজন এসেছেন যাঁরা কলকাতায় এসে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা অন্যান্য দেশে চলে গেছেন।

সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাও থাকেন কলকাতার আশপাশেই। কলকাতা বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আওয়ামী লীগের যে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বাস করছেন, তাঁদের প্রায় সবাই পার্টি অফিসে যাতায়াত করে থাকেন। ওই আওয়ামী লীগ নেতা জানান, অফিস খোলার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যে রকম প্রয়োজন, সে রকমই আসেন নেতারা। আবার রোজই যে সবাই আসেন, তা-ও নয়। আসলে প্রয়োজনীয়তা ছিল একটা নির্দিষ্ট জায়গা গড়ে তোলা, সে জন্যই এই পার্টি অফিস

আওয়ামী লীগের এই নতুন পার্টি দপ্তরের ব্যাপারে ওই বাণিজ্যিক পরিসরে যাতায়াত করা সাধারণ মানুষ যে কিছু জানবে না, সেটাই স্বাভাবিক। দলেরও কোন স্তরের নেতাকর্মীরা এই দপ্তরের ব্যাপারে কতটা জানেন, সেটা জানা যায়নি। কিন্তু এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে ভারতীয় গোয়েন্দারা এই দপ্তরের ব্যাপারে জানেন এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ স্তরের অনুমোদন ছাড়া এই দলীয় দপ্তর থেকে আওয়ামী লীগের কাজকর্ম চলতে পারত না।

যেভাবে দল চলছে এক বছর ধরে

গত এক বছরের কিছুটা কম সময় ধরে ভারত থেকেই আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা দিল্লির কাছাকাছি কোথাও থাকেন, আর বড় অংশ থাকে কলকাতাসংলগ্ন অঞ্চলে। তবে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, এই ধারণাটা ঠিক নয় যে ভারত থেকে দল চলছে। মূল দল বা সহযোগী সংগঠনগুলোর কতজন নেতাই বা ভারত অথবা অন্যান্য দেশে রয়েছেন? বেশির ভাগ তো এখনো বাংলাদেশেই আছেন। সাদ্দাম হোসেনও বর্তমানে কলকাতায় আছেন।

কিন্তু দলের নেত্রী শেখ হাসিনা এবং শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ ভারতে আছে বলে সেখান থেকেই যে রাজনৈতিক দিশা-নির্দেশ দেওয়া বা দলীয় অবস্থান চূড়ান্ত হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবু দুই সপ্তাহ আগে পর্যন্তও শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি দেখা হয়নি দলনেত্রীর। গত ৩১ জুলাই শীর্ষ নেতৃত্বের কয়েকজনকে দিল্লিতে এক বৈঠকে ডেকেছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ওই বৈঠকের বিষয়টি বিবিসি বাংলার কাছে নিশ্চিত করেছিলেন, তবে বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, কোথায় বৈঠক হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি ওই নেতারা।

দলের নেত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকটি ছাড়া এবং নিজেদের মধ্যে সশরীরে দেখা-সাক্ষাৎ ও বৈঠক ছাড়া দলটির বাকি সব কাজই চলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের জন্য আলাদা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, টেলিগ্রাম গ্রুপ ইত্যাদি গড়া হয়েছে। এ ছাড়া নিয়মিতই লাইভ অনুষ্ঠান করে থাকে দলটি। এ রকম লাইভ অনুষ্ঠানে মাঝেমধ্যেই যোগ দেন শেখ হাসিনা নিজেও। সেসব আলোচনায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা যেমন হয়, তেমনই আবার মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী, যাঁরা বাংলাদেশেই থেকে গেছেন, তাঁদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়ে থাকে।

কর্মীরা দেশে মার খাচ্ছেন, নেতারা কেন ভারতে?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মাঝেমধ্যেই এই প্রশ্ন ওঠে যে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা যখন দেশে মার খাচ্ছেন, গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যাচ্ছেন, তখন শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ কেন ভারতে পালিয়ে আছে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, এই প্রশ্ন ওঠা যে খুব অযৌক্তিক, তা নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ১৯৭১ সালে যদি তখনকার নেতৃত্ব ভারতে চলে এসে প্রবাসী সরকার গঠন না করতেন, তাহলে কি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ পরিচালনা করা সম্ভব হতো? আমি ১৯৭১ সালের সঙ্গে তুলনা করছি না বর্তমান সময়ের, কিন্তু এ রকম উদাহরণ আমাদের দেশেও রয়েছে, অন্যান্য দেশেও আছে যে বিদেশ থেকে দল পরিচালনা করে, শক্তি সঞ্চয় করে দেশে ফিরে ক্ষমতা দখল করেছেন নেতারা। পাকিস্তানে নওয়াজ শরিফ বা বেনজির ভুট্টো বলুন বা আমাদের দেশের তারেক রহমান। সবাই তো বিদেশ থেকেই দল পরিচালনা করেছেন বা এখনো করছেন।

তাঁর প্রশ্ন, দেশে থাকলে হয় জেলে থাকতে হতো, মেরেও ফেলতে পারত। কিন্তু তাহলে আমাদের যে রাজনৈতিক কাজকর্ম, বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরা, দলকে আবারও সংগঠিত করা, সেগুলো কি আমরা করতে পারতাম?

নেতাদের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা

দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন প্রচার করেছিল এই সরকার, তাতে তারা গত এক বছরে সব দিক থেকেই ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনীতি ফেইল করেছে, বিচারব্যবস্থা প্রহসনে দাঁড়িয়েছে। আর সব ক্ষেত্রেই তাদের ব্যর্থতার জন্য তারা শেখ হাসিনা আর ভারতের ওপরে দায় চাপাতে ব্যস্ত। একটা যেন ইন্ডিয়া ফোবিয়া, হাসিনা ফোবিয়া হয়ে গেছে তাদের।

তিনি বলেন, এক বছর পরে তাদের নিয়ে সেই উন্মাদনা কিন্তু আর নেই। তাদের মুখের কথায় মানুষ আর বিশ্বাস করতে পারছে না, বিভ্রান্ত হচ্ছে না। সবাই বাস্তবতার নিরিখে মূল্যায়ন করছে সরকারের। তাদের এই ব্যর্থতার জন্য বহু মানুষ বলছে, শেখ হাসিনার সময়েই ভালো ছিলাম।’”

অর্থায়ন কিভাবে হচ্ছে?

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, দেশে-বিদেশে থাকা শুভাকাঙ্ক্ষীরাই তাঁদের খরচ চালাচ্ছেন। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সাংগঠনিকভাবে আগস্টের পর যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, সেই অন্ধকার অতিক্রম করা কঠিন কাজ। যেসব নেতাকর্মী দেশে বা বিদেশে আছেন, তাঁরাই এই দুঃসময়ে এগিয়ে আসছেন, অর্থ দিয়ে সাহায্য করছেন। কর্মীরা এখানে কষ্ট করেই আছেন, তবে মনোবলই আমাদের সম্বল।

আরেক নেতা নাম উল্লেখ না করার শর্তে বলেন, দেশ থেকে আমার পরিবার-পরিজন ও সহকর্মীরা প্রয়োজন মতো অর্থ পাঠিয়ে দেয়। তবে এই এক বছরে আমাদের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে। তাঁর কথায়, আমরা যে এখানে মানবেতর জীবন যাপন করছি, বা ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময়ের মতো শরণার্থীশিবিরে থাকছি, তা নয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে যাদের মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত জীবনযাত্রা ছিল, সে সবই পরিবর্তন করতে হয়েছে। যাঁরা ঢাকায় হয়তো গাড়ি ছাড়া চলতেন না, তাঁদের এখন কলকাতার গণপরিবহন ব্যবহার করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমি একটি ফ্ল্যাটে আরো তিনজনের সঙ্গে থাকি। বাসে, ট্রেনে বা মেট্রো রেলে যাতায়াত করি। আবার সহকর্মীদের মোটরসাইকেল বা বাইকেও চেপে ঘোরাঘুরি করি। যদি কয়েকজন মিলে একসঙ্গে কোথাও যেতে হয়, তখন হয়তো ট্যাক্সিতে উঠলাম। ভাড়াটা ভাগাভাগি করে নিলে গায়ে লাগে না। আসলে সঞ্চিত অর্থে যতটা স্বল্প খরচে চলা যায়।

কিন্তু কত দিন থাকবেন তাঁরা দেশ ছেড়ে? ওবায়দুল কাদের বলন, দিনক্ষণ ঠিক করে ওভাবে তো রাজনৈতিক লড়াই হয় না, আবার লড়াই ছাড়া উপায়ও নেই।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ