ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৪ আগস্ট ২০২৫
২৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৯ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৪ আগস্ট ২০২৫
২৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৯ সফর ১৪৪৭
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা

শুধু শিল্প নয়, উদ্যোক্তাদেরও মেরে ফেলা হচ্ছে

  • শিল্প বাঁচাতে না পারলে দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থা হবে
  • আট মাসে এক টাকার বিনিয়োগও আসেনি
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শুধু শিল্প নয়, উদ্যোক্তাদেরও মেরে ফেলা হচ্ছে

১৯৭১ সালে খুঁজে খুঁজে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে, আর ২০২৫ সালে শুধু শিল্প নয়, শিল্পোদ্যোক্তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। তিনি বলেন, এটাকে আমরা ষড়যন্ত্র মনে করি। শিল্প বাঁচাতে না পারলে দেশে দুর্ভিক্ষ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ঢাকার গুলশান ক্লাবে গতকাল রবিবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।

চলমান বিদ্যুত্ ও জ্বালানি সংকট নিয়ে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সম্মেলনে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এলএফএমইএবি, বিসিআই ও আইসিসি-বাংলাদেশের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

শওকত আজিজ রাসেল বলেন, আমাদের উপদেষ্টা সাহেবরা মনে হয় উটপাখির মতো হয়ে গেছেন। চারদিকে কী হচ্ছে মনে হয় তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন না।

প্রতিনিয়ত আমাদের কারখানা লে-অফ হচ্ছে। কিছুদিন পর মানুষ রাস্তায় নামবে। আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থা হবে, যদি আপনি শিল্পকে বাঁচাতে না পারেন।

বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, আমরা তো গ্যাস বিল দিই, তাহলে গ্যাস আসবে না কেন। কারণ আমরা তো গ্যাসের ওপর নির্ভর করেই ইন্ডাস্ট্রি করেছি। এখন ব্যাংক চাচ্ছে ব্যাংকের টাকা দ্রুত ফেরত দাও, কিন্তু কারখানা তো চলে না, আমি কোথা থেকে টাকা এনে দেব। ব্যাংকঋণের সুদ এত বেশি কেন? আর কত জুলুম হবে আমাদের ওপর। শিল্প না বাঁচাতে পারলে দুর্ভিক্ষ হয়ে যাবে।

আলোচনায় বক্তারা আরো বলেন, বিপুল পরিমাণ গ্যাস বিল দিতে হলেও পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এগুলো শিল্প ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র। উদ্যোক্তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আর টিকে থাকার উপায় নেই বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরা।

তাঁরা বলেন, ৬০ শতাংশের বেশি উত্পাদন হচ্ছে না। ব্যাংকে সুদ বেড়েছে, গ্যাস নেই। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি। এনবিআরে অবরোধসব মিলিয়ে শিল্প বন্ধ হওয়ার পথে। তাঁরা বলেন, শিল্প বন্ধ হলে সরকারকে এই দায় নিতে হবে। ব্যবসায়ীরা বলেন, এদিকে শিল্প চালাতে সহায়তা করছে না, অন্যদিকে  সময় বেঁধে দিয়ে বেতন দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আর দেশি উদ্যোক্তাদের জিন্দা লাশ বানিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ এনে কর্মসংস্থান করার চিন্তা করা হচ্ছে।

আট মাসে এক টাকার বিনিয়োগও আসেনি উল্লেখ করে বিটিএমএ সভাপতি আরো বলেন, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডা বড় বড় বিনিয়োগের কথা বলে, সরকার টু সরকার আলোচনা হলেও দৃশ্যমান কিছু নেই, কারণ এখানে ব্যবসায় খরচ অনেক বেশি। তাই তারা আসবে না। এ ছাড়া এখানে বিনিয়োগ করে উত্পাদনে যেতেও পাঁচ বছর লাগবে।

সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, কিছুদিন আগে বই ছাপানোর নামে ১০ হাজার টন কাগজ নিয়ে আসা হয়েছে। যখন কাগজ দেশে পৌঁছেছে তখন বই ছাপানো শেষ। সেই পেপারের এখনো ডিউটিও দেয়নি। পোর্ট ডেমারেজও দেওয়া হয়নি। সেটা এখন খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে। এতে আমাদের স্থানীয় শিল্প হুমকির মুখে পড়ছে। নতুন করে আরো ৩০ হাজার টন কাগজ আমদানি করা হচ্ছে ডিউটি ফ্রি ও ডেমারেজ ফ্রিতে। সরকার নিজেই স্থানীয় কাগজ কলগুলোকে গলা টিপে মেরে ফেলছে। চিনিকল থাকার পরও চিনি আমদানি করা হচ্ছে, যা স্থানীয় শিল্পবিরোধী নীতি।

বিসিআইয়ের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ব্যাংকঋণের সুদের হার বেড়ে গেছে। গ্যাস সংকটের কারণে ৬০ শতাংশের বেশি উত্পাদন হচ্ছে না কারখানায়। তিন মাস সুদ না দিলেই ঋণখেলাপি করছে ব্যাংক। আবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেতন পরিশোধের ধমক দিচ্ছে সরকার।

কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়বে উল্লেখ করে আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী পারভেজ বলেন, অর্থনীতি যদি ঠিক না থাকে, বিদ্যমান শিল্প রক্ষা করা না গেলে যে চলমান কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করছেন তাঁরা যদি কর্মহীন হয়ে পড়েন, তাহলে দেশের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। 

বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিলেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) চেয়ারম্যান হোসেন মেহমুদ বলেন, গ্যাসের অভাবে এরই মধ্যে পাঁচ-ছয়টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এই সমস্যা সমাধান করতে না পারলে সামনে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।

তিনি আরো বলেন, সব দোষ কী শুধু ব্যবসায়ীদের। সরকার গ্যাস-বিদ্যুত্ দিতে পারছে না, এটা কি দোষ নয়? গ্যাসসংকট মোকাবেলায় এখন থেকে কূপ খননে নজর দেওয়া উচিত মন্তব্য করে রাজীব বলেন, তা না হলে আগামী পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। ভোলার গ্যাস ঢাকায় আনতে পাইপলাইন স্থাপন ও সমুদ্রে অফশোর গ্যাসকূপ খননে মনোযোগী হতে হবে। কয়লা উত্তোলনে নীতি প্রণয়ন করতে হবে। কারণ কয়লার জন্য রামপাল বিদ্যুত্ কেন্দ্র চলে না। অথচ কয়লা মাটির নিচে পড়ে আছে। পরিবেশের প্রভাব পর্যালোচনা করে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বিটিএমএ  পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, সরকার কী টেক্সটাইল শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে চায়, নাকি পাট ও চিনিশিল্পের মতো অন্যরা হাতিয়ে নিতে চায়, তা বুঝতে পারছি না। গ্যাস না থাকলেও অদ্ভূত বিল করা হচ্ছে।

বিটিএমএর সহসভাপতি সালেহ-উদ-জামান খান বলেন, গ্যাসসংকটের কারণে কারখানায় দিনের বেশির ভাগ সময় উত্পাদন বন্ধ থাকছে। অথচ আমার কারখানায় প্রতিদিন বেতন আসে ৬০ লাখ টাকা। শ্রমিকরা শুয়ে-বসে সময় কাটিয়ে বাড়িতে চলে যাচ্ছে। গত পাঁচ-ছয় মাস যাবত্ শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিচ্ছি। তার ওপর পালস মিসিং-এর নামে গ্যাস কম্পানিগুলো অনেক বিল নিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের শিল্পমালিকরা আগামী দিনে কিভাবে টিকে থাকবেন। যে অবস্থা চলছে আগামী দিনে কেউ আর ব্যবসায়ী হতে চাইবেন না।

তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবীদের খুঁজে খুঁজে মারা হয়েছে, ভবিষ্যত্ নষ্ট করার জন্য। আর আজ গ্যাস-বিদ্যুতের সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়ে শিল্পোদ্যোক্তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট চলমান থাকলে আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে অর্ধেক কারখানা শাটডাউন হয়ে যাবে।

বিটিএমএ সহসভাপতি সালেহ-উদ-জামান খান বলেন, যেভাবে চলছে এভাবে চললে আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে দেশের ৫০ শতাংশ ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। সরকার বলে দিচ্ছে ৭ তারিখের মধ্যে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিতে হবে। না হলে অ্যাকশনে যাবে। তাহলে একজন শিল্প মালিক যদি তাঁর শ্রমিক কাজ না-ও করে প্রতি মাসে ১৫ কোটি টাকা দিতে হয়। তাহলে আমার মতো ফ্যাক্টরির মালিক কোথা থেকে তা দেবেন। আমার ফ্যাক্টরি গত পাঁচ থেকে ছয় মাস যাবত্ শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিচ্ছি। গ্যাস কম্পানিগুলো গ্যাস সাপ্লাই না করে বিল নিচ্ছে। ফ্যাক্টরিতে ১০ কোটি টাকা গ্যাস বিল দিতে হচ্ছে গ্যাস ব্যবহার না করে। আমরা জানতে চাই, কিভাবে বাংলাদেশের শিল্প ও মালিকরা টিকে থাকবেন। আপনার কাছে যদি টাকা থাকে হয়তো বাপের জায়গা বিক্রি করে ভবিষ্যতে ব্যবসায়ী হতে পারবেন। কিন্তু আজকে যে শিল্প মালিকরা মারা যাবেন। বাংলাদেশে শিল্প-মালিক উদ্যোক্তা কিন্তু আর হবে না?

সালেহ-উদ-জামান খান বলেন, ব্যাংকের সুদের হার আজকে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। যে জায়গায় আগে আমরা ২ থেকে ৩ শতাংশ দিতাম। তাহলে আপনারাই বলেন, কিভাবে একটা শিল্পমালিক বাঁচবে। যদি এভাবে চলতে থাকে আমি মনে করি, আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে দেশের ৫০ শতাংশ ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। তা আর জীবনে খোলা হবে না।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়তে চান পান্না, ট্রাইব্যুনালের না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়তে চান পান্না, ট্রাইব্যুনালের না

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান মামলায় জেড আই খান পান্না রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হতে চাওয়ার আবেদন করলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বলেছেন, ট্রেন স্টেশন ছেড়ে গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১-এ আইনজীবী নাজনীন নাহার বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে চলা মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হতে চান। উনি অসুস্থ, তাই উনার পক্ষে আমি এই আবেদনের বিষয়টি তুলে ধরছি।

এ সময় ট্রাইব্যুনাল ১ বলেন, উনি (জেড আই খান পান্না) এই নির্দিষ্ট মামলায়ই আসতে চাচ্ছেন কেন? আর ওই মামলায় তো রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী এখন আছেনই।

আমরা আগে তো রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী অনেক খুঁজেছিলাম। তখন তো উনি আসেননি। আর কোন মামলায় আমরা কাকে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী করব, সেটা আমাদের এখতিয়ার।

এক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ জেড আই খান পান্নার রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হওয়ার আবেদন প্রসঙ্গে বলেন, ট্রেন স্টেশন ছেড়ে গেছে।

ট্রেন যাওয়ার পরে আপনি স্টেশন মাস্টারকে বললেন, আমি ট্রেনে যেতে চাই। এটা কি হয়? এরপর ট্রাইব্যুনাল ১ আইনজীবী নাজনীন নাহারকে বলেন, রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হতে চাইলে উনার সিভি উনি দিতে পারেন। অন্য কোনো মামলার ক্ষেত্রে আমরা বিষয়টি দেখব।

মন্তব্য

সারজিসের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা বিএনপি নেতার

    এসব মামলা দিয়ে আমাদের ভয় দেখানো যাবে না : সারজিস আলম
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর
শেয়ার
সারজিসের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা বিএনপি নেতার
সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মানহানির মামলা করেছেন বিএনপির এক নেতা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর বিচারক মো. আলমগীর আল মামুনের আদালতে মামলাটি করা হয়।

সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপিকে জড়িয়ে অপপ্রচারের অভিযোগে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানা বিএনপির সভাপতি মো. তানভীর সিরাজ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

এ ব্যাপারে সারজিস আলম বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করা হয়েছে।

এসব মামলা দিয়ে আমাদের ভয় দেখানো যাবে না।

মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শুনানি শেষে বিচারক সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত-পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। সারজিস বেশ কয়েকবার বিএনপিকে নিয়ে এমন অপপ্রচার চালিয়েছেন।

বিষয়টি দলের কর্মীদের মনে আঘাত করেছে। আশা করি তিনি আরো সচেতন হবেন।

মামলার বাদী তানভীর সিরাজ অভিযোগ করে বলেন, অপরাধীচক্রের ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিক তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু সারজিস আলম না জেনেই ফেসবুকে এই ঘটনায় বিএনপিকে জড়িয়ে ভিত্তিহীন ও মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন, যা দলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে।

এরই মধ্যে গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার হত্যাকাণ্ডের  রহস্য উদঘাটন করেছেন। এই হত্যাকাণ্ডে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই জানিয়েছেন তিনি। দলের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি এই মামলা করেছি। আশা করি ন্যায়বিচার পাব।

সারজিস আলম তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে গত ৭ আগস্ট রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে লেখেন, গাজীপুরে এক বিএনপি নেতার চাঁদাবাজি নিয়ে নিউজ করায় দুপুরে আনোয়ার নামের এক সাংবাদিককে ইট দিয়ে থেঁতলে দেয় বিএনপির কর্মীরা।

দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের সাংবাদিক তুহিনকে গাজীপুরের চৌরাস্তায় চা দোকানে রাতে জবাই করে হত্যা করেছে চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা! আনোয়ার ও তুহিন বন্ধু ছিলেন। পরদিন ৮ আগস্ট সকাল ১০টা ৩৯ মিনিটে তিনি পোস্টটি সম্পাদনা করে চাঁদাবাজ শব্দটি বাদ দিয়ে ছিনতাইকারী শব্দ ব্যবহার করেন।

সারজিস আলমের প্রতিক্রিয়া : এদিকে আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যায় এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত জাতীয় যুব সম্মেলনে সারজিস আলম বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করা হয়েছে। এসব মামলা দিয়ে আমাদের ভয় দেখানো যাবে না। বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে সারজিস আলম বলেন, বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান ও ফজলুর রহমানের বক্তব্য শিক্ষার্থীদের আশাহত করে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, তাঁরা বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেন না। এনসিপির এই নেতা বলেন, আগে এ্যানি ভাইয়েরা (বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির প্রতি ইঙ্গিত করে) কারাগার থেকে বুক ফুলিয়ে কোর্টে হাজিরা দিতে আসতেন। আমরা তাঁদের সাহস দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। আজ আমি যদি বিএনপির কোনো নেতার বিরুদ্ধে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য কথা বলি, আমার নামে ১০ কোটি টাকার মামলা করা হয়। আমরা স্তব্ধ থাকব না। আওয়ামী লীগ হোক, বিএনপি হোক কিংবা এনসিপি, আমরা ছাড় দেব না।

তিনি বলেন, ডিবি অফিসে রুহুল কবীর রিজভী, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও অন্য সাহসী নেতাদের সঙ্গে ছোট্ট একটি গারদে থাকার স্মৃতি আজও জীবন্ত। সেই দিনগুলোতে আমরা অনেক বেশি সাহস নিয়ে ফিরতাম।

তিনি বলেন, আজ তানভীর সিরাজ, ফজলুর রহমানের মতো নেতাদের বক্তব্য আমাদের হতাশ করেছে। সত্যিকার অর্থে যদি আমাদের দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকে, তাহলে বিএনপির সেন্ট্রাল অফিস থেকে এসব নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মন্তব্য

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৯৩৫ কোটি টাকায় কেনা হচ্ছে দুই জাহাজ

    শত প্রতিষ্ঠান ছাপবে প্রাথমিকের ৪ কোটি বই
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৯৩৫ কোটি টাকায় কেনা হচ্ছে দুই জাহাজ

আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বই ছাপানোর দরপত্র প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এই বই ছাপানোর কাজ করবে প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণের জন্য সরকার চার কোটি চার লাখ ৪২ হাজার ৪৯১ কপি পাঠ্যবই এনসিটিবির কাছ থেকে সংগ্রহ করবে। বইগুলোর মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহে ব্যয় হবে প্রায় ২০০ কোটি ৯১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।

গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া সভায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুটি জাহাজ ও সিঙ্গাপুর থেকে দুই কার্গো   এলএনজি আমদানির অনুমোদন হয়েছে।

সভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৯৮টি লটের মধ্যে ৯৬টি লটের বই ছাপা, বাঁধাই ও সরবরাহের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবে মোট চার কোটি চার লাখ ৪২ হাজার ৪৯১ কপি বই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।

এই কাজে প্রতিটি বইয়ের গড় খরচ ধরা হয়েছে ৪৯ টাকা ৬৮ পয়সা। এতে মোট ব্যয় হবে ২০০ কোটি ৯১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮০ টাকা। 

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী নতুন বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর কাছে তাদের প্রত্যাশিত পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করবে সরকার। এ জন্য প্রাথমিক স্তরের (প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির) বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের ৯৮টি লটে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ (কাগজসহ), বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানে ১৮২টি দরপত্র পড়েছে।

এর মধ্যে ১৭৬টি দরপত্র কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। তবে মূলত এই বই ছাপার কাজ করবে প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে এক প্রতিষ্ঠান একাধিক কাজ পেয়েছে। 

দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষ। টিইসি ৯৮টি লটের বিপরীতে ৯৬টি লটে সুপারিশ করা রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা ৫৬টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২০০ কোটি ৯১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮০ টাকায় চার কোটি চার লাখ ৪২ হাজার ৪৯১টি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হচ্ছে দুই জাহাজ  : যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫৫-৬৬ হাজার ডিডব্লিউটিসম্পন্ন দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি থেকে এই জাহাজ দুটি কিনতে ব্যয় হবে ৯৩৫ কোটি ৭১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই জাহাজ কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ৫৫-৬৬ হাজার ডিডব্লিউটিসম্পন্ন বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ অর্জন প্রকল্পের আওতায় দুটি জাহাজ ও আনুষঙ্গিক সেবা ক্রয়ের জন্য একধাপ দুই খাম দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহবান করা হলে তিনটি প্রতিষ্ঠান দর প্রস্তাব জমা দেয়। এর মধ্যে দুটি প্রস্তাবই বিবেচিত হয়।

দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি থেকে ৭৬.৬৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে জাহাজ দুটি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৯৩৫ কোটি ৭১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। জাহাজ দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে কেনা হবে।

৯৮৭ কোটি টাকায় কেনা হবে দুই কার্গো এলএনজি : দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে স্পট মার্কেট থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সিঙ্গাপুর থেকে এই দুই কার্গো এলএনজি আনতে ব্যয় হবে ৯৮৭ কোটি ৩৩ লাখ ১৮ হাজার ৯২ টাকা। ক্রয় কমিটিতে এই এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ অনুসরণে আন্তর্জাতিক কোটেশন প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। সিঙ্গাপুরের আরামকো ট্রেডিং সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড এই জ্বালানি সরবরাহ করবে। প্রতি এমএমবিটিইউয়ের দাম ধরা হয়েছে ১১.৯৭ মার্কিন ডলার। এতে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানি ব্যয় ৫০২ কোটি ৯৪ লাখ ৯১ হাজার ৩৯৮ টাকা।

বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আরেক প্রস্তাবে একই প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে আরো এক কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এই এলএনজি সরবরাহ করবে সিঙ্গাপুরের পেট্রোকেমিক্যাল ইন্টারন্যাশনাল (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতি এমএমবিটিইউয়ের দাম ধরা হয়েছে ১১.৯০ মার্কিন ডলার। এতে এক কার্গো বা ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ৪৮৪ কোটি ৩৮ লাখ ২৬ হাজার ৬৯৪ টাকা।

মন্তব্য

রোডম্যাপে এগোচ্ছে বিসিএস, আগামী বছর থেকে কমবে জট

শরীফুল আলম সুমন
শরীফুল আলম সুমন
শেয়ার
রোডম্যাপে এগোচ্ছে বিসিএস, আগামী বছর থেকে কমবে জট

বিসিএসের জট কমাতে সম্প্রতি রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। সেই রোডম্যাপ অনুযায়ীই এগোচ্ছে বিসিএস। একই সঙ্গে ৪৬তম বিসিএস থেকে সার্কুলার পদ্ধতিতে দেখা হবে লিখিত পরীক্ষার খাতা। এতে খাতা দেখায় আগের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ সময় লাগবে।

সব মিলিয়ে আগামী বছর থেকে বিসিএসের জট কমার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে কমিশন।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই একাধিক বিসিএসের জট লেগে আছে পিএসসিতে। একটি বিসিএস শেষ করতে তিন বছর বা এরও বেশি সময় লাগছে। প্রায় চার বছর ধরে আটকে থাকা ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল গত জুনে প্রকাশ করা হয়েছে।

৪৫তম বিসিএস আটকা প্রায় তিন বছর, আর ৪৬তম দুই বছর। ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে আট মাস আগে। এর বাইরেও ৪৮ ও ৪৯তম বিশেষ বিসিএস চলছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণত প্রতিবছর নভেম্বরে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি।
গত পাঁচ বিসিএসে এমনই হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি হলেও গত ১৫ বছরে বাছাই, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা সময়মতো হয়নি। ফলে জটের কারণে পরবর্তী পরীক্ষাগুলোয় দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে। এতে একই প্রার্থীর বারবার পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে, আবার রাষ্ট্রীয় সম্পদেরও অপচয় হচ্ছে। নতুনরা চাকরির সুযোগ হারাচ্ছেন।
পুরনো প্রার্থীরা জায়গা দখল করে রাখায় বিসিএসে জট সৃষ্টি হচ্ছে। তবে নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরই বিসিএসের জট নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে। গত ৩ জুন পিএসসি একটি রোডম্যাপ প্রকাশ করে। সে অনুযায়ী গত ৩০ জুন ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। রোডম্যাপ অনুযায়ী, ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের নির্ধারিত তারিখের এক দিন আগে গত ১৮ জুন ফল প্রকাশ করে পিএসসি। বর্তমানে মৌখিক পরীক্ষা চলছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর এই বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। রোডম্যাপ অনুযায়ী, ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত ২৪ জুলাই। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে ১৮ ডিসেম্বর। অন্যদিকে চিকিৎসক নিয়োগে ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হবে। শিক্ষক নিয়োগে চলছে ৪৯তম বিশেষ বিসিএস। এর চূড়ান্ত ফলও এ বছরের মধ্যে প্রকাশ করবে কমিশন। এরপর নভেম্বরের শুরুতেই ৫০তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে পিএসসি।  

পিএসসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম কালের কণ্ঠকে বলেন, রোডম্যাপ অনুযায়ীই বিসিএস এগোচ্ছে। এ বছর ছয়টি বিসিএস চলমান ছিল। এরই মধ্যে আমরা একটি সাধারণ বিসিএস অর্থাৎ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছি। বাকি পাঁচটির মধ্যে এ বছরই ৪৫তম, ৪৮তম  বিসিএস শেষ হবে। ৪৯তম বিসিএসের কার্যক্রম চলমান, চেষ্টা চলছে এ বছরের মধ্যেই শেষ করার। আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। সেগুলোর বাস্তবায়ন শুরু হলে বিসিএসে আর জট থাকবে না বলে আমরা আশা করছি। তবে এ জন্য আমাদের আরো কিছুটা সময় প্রয়োজন।

পিএসসির হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের বাকি সময়ে ৪৫তম, ৪৮তম ও ৪৯তমএই তিনটি বিসিএস শেষ হয়ে যাবে। এরপর থাকবে ৪৬তম ও ৪৭তম বিসিএস। আর নভেম্বরে যুক্ত হবে ৫০তম বিসিএস। ৪৬তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা যদি আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে শুরু হয়, তাহলে তিন-চার মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা সম্ভব। তাহলে থাকবে মাত্র দুই বিসিএস। এভাবে আগামী বছরের মাঝামাঝি থেকে জট অনেকটা কমে আসবে।  

নতুন কমিশন বিসিএসের জটের পেছনের কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। তারা দেখেছে, একটি বিসিএসে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখায়। এই কাজে আট মাস থেকে এক বছর বা তারও বেশি সময় লেগেছে। ফলে বিসিএসের জট লেগে যায়। এ জন্য ৪৬তম বিসিএস থেকেই সার্কুলার পদ্ধতিতে খাতা দেখার উদ্যোগ নিয়েছে পিএসসি। এই পদ্ধতিতে শিক্ষকরাই কমিশনে এসে খাতা দেখবেন। একটি বিষয়ের খাতা দেখার জন্য একাধিক টিম থাকবে। প্রতিটি টিমে ১৩ জন সদস্য থাকবেন। ১০ জন পরীক্ষক খাতা দেখবেন। যিনি ১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দেখবেন তিনি প্রতিটি খাতার সেটিই দেখবেন। যিনি ২ নম্বরটি দেখবেন তিনি প্রতিটি খাতার সেটিই দেখবেন। এভাবে ১০ জন পরীক্ষক ১০টি প্রশ্নের উত্তর দেখবেন। দুজন পরীক্ষক নম্বর যোগ করবেন। আর একজন প্রধান পরীক্ষক একটি বান্ডেলের মধ্য থেকে কিছু খাতা রিচেক করবেন, কোনো ভুলভ্রান্তি বা অসামঞ্জস্য আছে কি না। এতে একই খাতা একাধিক পরীক্ষককে দেখতে হবে না। আবার অনেক সময়ও বাঁচবে। এই পদ্ধতিতে একটি বিসিএসের খাতা তিন মাসের মধ্যে দেখা সম্ভব বলে মনে করছে পিএসসি।  

পিএসসির কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তরপত্রে দেখা যায়, একজন পরীক্ষার্থী প্রথমে ১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর লিখছেন, এরপর আবার ৭ নম্বর লিখছেন, আবার ৩ নম্বর লিখছেন। এতে যিনি খাতা দেখেন তাঁর মূল্যায়নে বেশি সময় লেগে যায়। এ ছাড়া একেকবার একেক প্রশ্নের উত্তর দেখায় নম্বরের ক্ষেত্রে পরীক্ষক কিছুটা দ্বিধায় পড়ে যান। এ জন্যই উত্তরপত্রের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উত্তরপত্রে যদি প্রশ্নের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া যায়, তাহলে পরীক্ষার্থীদেরও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। কারণ একই পরিমাণ জায়গায় কে কতটা গুছিয়ে উত্তর লিখতে পারে সেটাই হবে প্রধান বিবেচ্য। ৫০তম বিসিএস থেকে লিখিত পরীক্ষার খাতায় উত্তরের জন্য নির্ধারিত জায়গা রাখার পরিকল্পনা করেছে কমিশন।

জানা যায়, বর্তমান কমিশনে চেয়ারম্যানের পাশাপাশি ১৫ জন সদস্য রয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি নিয়মিত মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। তবে আইন অনুযায়ী, আরো পাঁচজন সদস্য দেওয়ার সুযোগ রয়েছে সরকারের। সেটা হলে কাজের গতি আরো বাড়বে বলে মনে করছেন কমিশনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ