লোকালয়ে আগুন লাগলে দেবালয়ও রক্ষা পায় না, বাজারে জমা পানি মাজারেও চলে যায়—জাগতিক এ নিয়মে গেল আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় হতাহতের শিকার হয়েছেন অনেক গণমাধ্যমকর্মী। বাস্তবতার তোড়ে তখন কে ছাত্র, আর কে জনগণ বা মহাজন সেই পরিচয় সামনে থাকেনি। কে কাকে কোথায় হেনস্তা করেছে ঠিক-ঠিকানাও ছিল না। তার মধ্যেও পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাবিয়েছে।
বিশেষ লেখা
গণমাধ্যমে মব : রুখতেই হবে এ গজব
- মোস্তফা কামাল

দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৫ আগস্টের পর নতুন প্রেক্ষাপটে আরেক ধরনের শিকার গণমাধ্যম এবং এ পেশায় যুক্তরা। নানা কারণে তখনকার বিশেষভাবে আলোচিত কিছু গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের কেউ কারাগারে, কেউ দেশান্তরি, কেউ বা গাঢাকায়।
এ রকম সময়ে এসে আবার গণমাধ্যমের ওপর মব-ভায়োলেন্স খোদার আরশ কাঁপানোর মতো যাতনার সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের কাছে। বিগত ১৫-১৬ বছর শাসনামলে গণমাধ্যমকে কী চাপে রাখা হয়েছিল, এর প্রথমত ভুক্তভোগীও সাংবাদিকরাই। দলান্ধতায় আসক্তদের কথা ভিন্ন। ওই অবস্থা থেকে মুক্তি মিললেও নানা ধরনের কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। দীর্ঘদিনের বদচর্চা কাটিয়ে রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রের প্রয়োজনে মুক্ত সাংবাদিকতার চর্চার মধ্যে নতুন আপদ কাম্য ছিল না। গণমাধ্যমকে উড়িয়ে দেওয়া, গুঁড়িয়ে দেওয়া, অপরাধী সাব্যস্ত করে তেড়ে আসা, ত্রাস তৈরির জন্য উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির কিছু লোক পাঠিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। ভাবনায়ও আসেনি। গণমাধ্যমের ওপর এই উৎপাত দেশকে গণতন্ত্রায়নের পথে আনতে চলমান নিরলস চেষ্টা ভুলের অংশও হয়ে থাকতে পারে। গণমাধ্যম মুক্ত হওয়ার অর্থ এখনো পরিষ্কার করতে না পারলে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা ব্যাহত হবে, তা বলা যায়।
স্বাধীনতা বা মুক্তি কোনো রকমের শর্ত দিয়ে হয় না। তার পরও গণমাধ্যমকে নিজ থেকেই কিছু শর্ত ও জবাবদিহির মধ্যে থাকতে হয়। নিজেকে নিজের কাছে জবাব দিতে হয় সারাক্ষণ। অডিয়েন্সকে (পাঠক, দর্শক, শ্রোতা) আমলে রাখতে হয় সেকেন্ডে সেকেন্ডে। কারণ পাঠক, দর্শক, শ্রোতারা পুরোপুরি স্বাধীন। দলবাজি, পক্ষপাতিত্ব বা তথ্যে হেরফেরের কারণে অপছন্দ হলে অন্য চ্যানেলে, পত্রিকা তথা গণমাধ্যমে চলে যেতে তাঁরা কাউকে জিজ্ঞাসার অপেক্ষা করবেন না। নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়ে নেবেন। দলীয়পনার গণমাধ্যম যে ওই দলও পছন্দ করে না, একটু চোখ মেললে এর বেশ কিছু দৃষ্টান্ত সামনেই রয়েছে। প্রসঙ্গের প্রয়োজনে বলতে হয়, আওয়ামী লীগের লোকেরা তাদের দলীয় মুখপত্র দৈনিক বাংলার বাণী ভালোবাসলে পত্রিকাটি লাখ নয়, কয়েক কোটি চলত। বাস্তবে বাংলার বাণী ‘নাই’ হয়ে গেছে সেই কবেই। বিএনপির দৈনিক দিনকাল আছে। দলটির লোকেরা এর পাঠক-গ্রাহক হলে পত্রিকাটি চলতে পারে কয়েক কোটি। জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামেরও প্রায় একই অবস্থা। যে যে দলই করুক, প্রথমত তিনি মানুষ। তারপর দলের নেতা-কর্মী-সমর্থক ইত্যাদি। আর মানুষ হিসেবে তাঁদের প্রথম চাওয়া নিরেট তথ্য। আর তথ্যক্ষুধা মেটাতে এই দলীয় লোকদেরও ভরসা হচ্ছে পেশাদার, দলবাজিমুক্ত গণমাধ্যম।
গণমাধ্যমের সঙ্গে সরকার কোনো না কোনোভাবে সম্পর্কিত। গণমাধ্যমের মালিকানা আছে, গণমাধ্যম পরিচালনাকারী সাংবাদিকরাও আছেন। কারো হুকুম ছাড়াও তাঁরা একটা জবাবদিহির মধ্যে থাকেন, থাকতে হয়। প্রয়োজনে তাঁদের আরো জবাবদিহি ও নীতিমালায় আনা যায়। সরকারসহ রাষ্ট্রের স্টেকহোল্ডারদের এখানে দায় আছে। দেশ-দুনিয়া কাঁপানো ৫ আগস্টের ছাত্র-জনশক্তিও স্টেকহোল্ডার। এসবের বাইরে ‘ফেউ’ গজানোর মতো যারা মাঠ চষছে, গণমাধ্যমেও ঢুঁ মারছে, এটাসেটা আরোপ করছে, কাকে রাখতে হবে, কাকে খেদাতে হবে—এসব দাওয়াও গেলাচ্ছে—এরা কারা? তাদের পেছনের শক্তিই বা কে ও কী? প্রশ্নটি গত কদিন ধরে ঘুরছে বিভিন্ন মহলে।
কয়েকটি ঘটনার তথ্য বলছে, গণমাধ্যম অফিসে ঢুকে পড়া আনকোরারা কার কাছে বা কাকে টার্গেট করে গেছে নিজেরাও জানে না। চেনেও না। এদিক-ওদিক খোঁজাখুঁজি করে সমানে একঝলক গালমন্দ দিয়ে বেরিয়ে যায়। নমুনাই বলে দেয় এরা কারো না কারো প্রেরিত। আলামতদৃষ্টে যে যা বোঝার বুঝে নিচ্ছেন। গণমাধ্যমের অভ্যন্তরে তা ক্রমেই বদহজম হয়ে উঠছে। বমি শুরু হলে কার বমন কার ওপর পড়বে কে জানে? এক জায়গা থেকে তা আরেক জায়গায় গড়াবে। চক্কর দেবে বাজার থেকে মাজার, লোকালয় থেকে দেবালয়, পাতাল থেকে হাসপাতালসহ নানা মোকামে। গণমাধ্যমে মব যারা করছে, নিশ্চয়ই তারা এতিম-বেওয়ারিশ নয়, কেয়ার অব আছে কেউ না কেউ। এটি বাজে প্রবণতা। আর এ দেশে একবার কোনো বাজে ট্রেন্ড চালু হলে সেটা বাজার পায় দ্রুত। অন্যদিকে ভালো কিছুর দৃষ্টান্ত ফলো করানো বড় কঠিন।
দীর্ঘদিন ধরেই মুক্ত গণমাধ্যমের প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষায় গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো লড়াই করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১৬ ধাপ এগিয়েছে। এটি কম সুখবর নয়। এবারের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের প্রতিবেদনে চলতি বছর বাংলাদেশে কোনো সাংবাদিকের মৃত্যুর খবর না থাকা একটি ইতিবাচক পরিবর্তন। পরিবর্তনের এই সূচনাকে ধরে আরো অনেক দূর যেতে হবে। কারণ গণমাধ্যমের কাছে এবং গণমাধ্যমকে নিয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষা আরো বেশি। কিন্তু সম্ভাব্য মবের শঙ্কায় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরে তৈরি হওয়া উৎকণ্ঠা সেল্ফ সেন্সরশিপকে আমন্ত্রণ করছে। সেল্ফ সেন্সরশিপ কোনো স্বৈর বা ফ্যাসিস্ট সরকারের আরোপিত সেন্সরশিপের চেয়ে ক্ষতিকর। তা গণমাধ্যমের চেয়ে সরকার, দেশ, সমাজের জন্য আরো বেশি ক্ষতির। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সমস্যা, নানামুখী চাপ-তাপ এবং সেন্সরশিপ নিয়ে এমনিতেই অনেক কথা রয়েছে।
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন
সম্পর্কিত খবর

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য
শিশুদের আর্তচিৎকারে হতবিহ্বল হয়ে পড়ি
রেজোয়ান বিশ্বাস ও শরীফ শাওন

দুপুরে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ছাত্রাবাসে ছিলাম। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে রুম থেকে বের হয়ে দেখি আগুনের কুণ্ডলী। দৌড়ে এসে দেখতে পাই বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। শিশুরা পুড়ে অঙ্গার।
এভাবেই বলছিলেন রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মেহেদী হাসান।
ঘটনাস্থল থেকে অক্ষত অবস্থায় বেঁচে ফিরেছে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান রাফি। প্রত্যক্ষদর্শী এই শিক্ষার্থী কালের কণ্ঠকে বলে, প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি একটি তিনতলা ভবনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়। আমাদের ক্লাস মাত্র শেষ হয়। আমরা গাড়িতে গিয়ে উঠি। কিছু শিক্ষার্থী ক্যান্টিনে গিয়েছিল। আর কিছু শিক্ষার্থী ক্লাসরুমে কোচিংয়ের জন্য অবস্থান করছিল। এমন সময় বিকট একটি শব্দ হয়ে বিস্ফোরণ হয়। একটি বিমান ভবনটির সামনে আছড়ে পড়ে এবং ভবনটিতে আঘাত করে।’
একই শ্রেণির শিক্ষার্থী জারাফ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলে, ‘চোখের সামনে বিস্ফোরণ দেখে কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে যাই। মুহূর্তেই চোখের সামনে থাকা অন্তত চারজনের মৃত্যু দেখেছি। তাদের মধ্যে একজনের পুরো শরীর পুড়ে বীভৎস অবস্থায় ছিল। তাকে শনাক্ত করা কঠিন। এ ছাড়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অন্তত ৫০ জনকে গুরুতর অবস্থায় দেখতে পাই। তারাও বাঁচবে বলে মনে হয় না।’
প্রত্যক্ষদর্শী মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজটির নিরাপত্তাকর্মী আকবর হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে ছিলাম। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কেবল বের হচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দের পর তিনতলা ভবনের সামনের নারিকেলগাছ ভেঙে ভবনে ধাক্কা দিলে বিমানটিতে সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়।’ আকবর হোসেনের বর্ণনা অনুযায়ী তিনতলা ভবনের নিচতলা মাটির নিচে, সেখানে ক্লাস হয় না। বিমানটি সেখানে ঢুকে পড়ে। পরে বিকট শব্দে বিমানটি বিস্ফোরিত হয়।
শিশুদের খোঁজে দিশাহারা প্রত্যক্ষদর্শী অভিভাবকরা : ঘটনার সময় অনেক অভিভাবক স্কলের আশপাশেই ছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণে তাঁরা ব্যাপক আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন। স্কুলে আগুন দেখে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শী তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবক তাসপিয়া আক্তার বিলাপ করে কান্নার সুরে বলছিলেন, ‘আমার নিষ্পাপ শিশুকে আমার কোলে ফিরিয়ে দাও খোদা। আমার একটি মাত্র মেয়ে, তাকে ছাড়া আমি কিভাবে বাঁচব? কেউ আমাকে তার খোঁজ এনে দাও।’
দুপুর সোয়া ২টায় কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধার মুখে পড়ে ফিরে যাওয়ার সময় এমন বিলাপ দিতে থাকেন তিনি। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এলোমেলো হাঁটছিলেন তিনি, কখনো আবার পড়ে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে থাকা দুজন নারী তাঁকে ধরে রাস্তা পার করছিলেন।
দুপুর সোয়া ১টায় বিমান বিধ্বংসের পর থেকেই কলেজ ক্যাম্পাসে মা-বাবা, ভাই-বোনসহ অভিভাবকদের এমন আহাজারি দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বজনদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। তবে উদ্ধারকাজ নির্বিঘ্নে পরিচালনার জন্য কলেজ ক্যাম্পসে প্রবেশে বাধা দেন উদ্ধারকর্মীসহ ভলান্টিয়াররা। শুধু তাই নয়, উদ্ধারকর্মীসহ উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত গাড়ি অবাধে চলাচলের লক্ষ্যে সড়ক থেকেও সরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল সবাইকে।
তবে পথে পথে বাধা উপেক্ষা করেই অনেক অভিভাবককে ক্যাম্পাসের মূল গেটের কাছ পর্যন্ত চলে যেতে দেখা যায়। ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে অনেক অভিভাবককে বিতর্কেও জড়াতে দেখা গেছে। অভিভাবকদের অনেকে নিজেদের বিভিন্ন পরিচয় উপস্থান করেও ভেতরে প্রবেশে ব্যর্থ হয়েছেন।
বোরহান কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার সন্তান চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাইনি। বিষয়টি জানার পরও আমাকে ভেতরে যেতে দেয়নি।’
পাশে থাকা একজন ভলান্টিয়ার বলেন, ‘ভেতরে দুর্ঘটনায় যারা পড়েছে, তারা সবাই কারো না কারো সন্তান, আত্মীয়। তবে এভাবে সবাই ভেতরে প্রবেশ করলে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হবে। এতে তাদের জীবনে ঝুঁকি আরো বাড়বে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা হতাহতদের উদ্ধারে চেষ্টা করছি। দ্রুততার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্ট হাসপাতালেও পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের খোঁজ নিতে পারবেন।’
ঘটনাস্থলে আরো অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ বিমান বিধ্বস্তের পর আগুন ও ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে যেতে থাকে তাঁদের। তাঁরা স্কুলে থাকা সন্তানদের খুঁজতে থাকেন। এতটুকু শরীর নিয়ে ভয়ংকর আগুনের সামনে অভিভাবকদের আর কিছুই করার ছিল না। তাঁদের চোখের সামনে শরীরে আগুন নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ছিল একের পর এক সন্তানরা। আগুনে কারো শরীর, কারো কপাল পুড়ে গেছে, মাথা ফেটে গেছে, কেউ যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে।
প্রসঙ্গত, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। আহত হয়েছে শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক মানুষ। হতাহতদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশু শিক্ষার্থী।

৫৩ বছরে বিমান হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ১০৫
- নিহতদের মধ্যে পাইলট কো-পাইলট ৩০ জন
কাজী হাফিজ

গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে বিমান ও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০৫ জন। তাঁদের মধ্যে বিমান বা হেলিকপ্টারের সাধারণ যাত্রী ও ক্রু ছাড়া পাইলট ও কো-পাইলট রয়েছেন ৩০ জন। বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল খাদেমুল বাশার, বাংলাদেশের প্রথম মহিলা পাইলট কানিজ ফাতিমা ও দেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের কন্যা ফারিয়া লারাও রয়েছেন এই তালিকায়। দেশের ভেতরে এসব দুর্ঘটনা ছাড়াও বিদেশে বিমান ও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় যেসব বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা এই ১০৫ জনের বাইরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বিমান দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ১৯৮৪ সালের ৪ আগস্ট। বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসের একটি ফকার এফ-২৭ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পথে বিধ্বস্ত হলে দেশের প্রথম মহিলা পাইলট কানিজ ফাতিমাসহ বিমানের কো-পাইলট, ক্রু ও যাত্রীরা সবাই নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় মোট ৪৯ জন নিহত হন।
১৯৯৩ সালে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান এফটি-৫ বিধ্বস্ত হলে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কুদ্দুস নিহত হন। ১৯৯৬ সালে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে বিমানবাহিনীর দুটি পিটি-৬১ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে উইং কমান্ডার হক, স্কোয়াড্রন লিডার ইসলাম ও ফ্লাইং অফিসার মাসুদ নিহত হন। ১৯৯৮ সালের ২৬ অক্টোবর টাঙ্গাইলের মধুপুরে বিমানবাহিনীর মিগ-২১ বিধ্বস্ত হলে পাইলট নিহত হন। ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০২ সালের ৭ জুন পর্যন্ত পারাবত ফ্লাইং একাডেমির বিমান দুর্ঘটনায় তিনজন পাইলটের মৃত্যু হয়। ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্রশিক্ষণ উড্ডয়নের সময় এয়ার পারাবতের একটি বিমানে আগুন ধরে গিয়ে ঢাকার পোস্তগোলায় বিধ্বস্ত হলে নিহত হন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের কন্যা পাইলট ফারিয়া লারা (২৬) ও কো-পাইলট সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। এর আগে ওই বছরের ২৭ জুন এয়ার পারাবতের আরেকটি বিমান সাভারের কাছে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করে। এতে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। ২০০২ সালের ৭ জুন এয়ার পারাবতের আরেকটি সেসনা-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন পাইলট মুখলেছুর রহমান সাকিব। এসব দুর্ঘটনার পর বন্ধ হয়ে যায় বেসরকারি এয়ারলাইনস এয়ার পারাবত।
এর আগে ২০০১ সালে ৭ জানুয়ারি একটি এফটি-৭ যুদ্ধবিমান ঢাকা বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হলে স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ মহাসীন নিহত হন। ২০০২ সালের ৩০ জুলাই চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে নিহত হন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আদনান মুকিত। ২০০২ সালের ১৯ অক্টোবর বিমানবাহিনীর একটি এম-১ হেলিকপ্টার চট্টগ্রামে সার্জেন্ট জহুরুল হক বিমানঘাঁটির কাছে একটি টেলিভিশন টাওয়ারে ধাক্কা লেগে বিধ্বস্ত হলে নিহত হন উইং কমান্ডার কাজী কামরুল নেওয়াজ, ফ্লাইং অফিসার সাব্বির আহমেদ, ওয়ারেন্ট অফিসার জহির হোসেন ও সার্জেন্ট আবদুস সামাদ।
২০০৫ সালের ৭ জুন ঢাকার উত্তরায় একটি ভবনে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ে বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ এমবি যুদ্ধবিমান। এ ঘটনায় পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আহসানুল কবীর প্যারান্ডাটের মাধ্যমে অবতরণ করে নিজের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হলেও দুই শিশুসহ ছয় বেসামরিক নাগরিক আহত হন। ২০০৬ সালের ২৪ এপ্রিল বিমানবাহিনীর একটি পিটি-৬১ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় ফ্লাইট ক্যাডেট তানিউল ইসলাম নিহত হন।
২০০৭ সালের ৯ এপ্রিল বিমানবাহিনীর একটি পিটি-৬১ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে নিহত হন বিমানটির পাইলট ফ্লাইট ক্যাডেট ফয়সল মাহমুদ। ২০০৮ সালের ৮ এপ্রিল আরেকটি এফ-৭ এমবি জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়িপাড়া গ্রামে। বিমানটির পাইলট স্কোয়াড্রন লিভার মোরশেদ হাসান বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে প্যারাশুটের মাধ্যমে অবতরণের চেষ্টা করলেও শেষরক্ষা হয়নি। পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
২০০৯ সালের ৯ মার্চ যশোর থেকে ঢাকায় আসার পথে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে নিহত হন মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলাম ও হেলিকপ্টারের পাইলট লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহীদ ইসলাম। ২০০৯ সালের ১৬ জুন এফটি-৬ মডেলের প্রশিক্ষণ বিমান চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটির পাইলট সে সময় প্যারাশুটের মাধ্যমে অবতরণ করে জীবনরক্ষায় সক্ষম হন। একই বছরের ২২ অক্টোবর বগুড়ার কাহালুর কাছে এরোলিয়ায় রানওয়েতে অবতরণের সময় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। ২০১০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে বিমানবাহিনীর এফ-৭ এমবি মডেলের একটি জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়। ওই ঘটনায়ও পাইলট তাঁর জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হন। ওই বিমানটিসহ আগের পাঁচ বছরে বিমানবাহিনীর তিনটি এফ-৭ এমবি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়।
২০১০ সালের ৩০ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার কাছে যমুনা নদীতে বিধ্বস্ত হয় ফ্লাইং ক্লাবের একটি প্রশিক্ষণ বিমান। এতে পাইলট কামরুল হাসানের মৃত্যু হয়। আরেকটি বিয়োগান্ত ঘটনা ঘটে ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর। এদিন বরিশালের কাছে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে বিমানবাহিনীর দুজন বৈমানিক স্কোয়াড্রন লিডার আশরাফ ইবনে আহমেদ ও স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ মাহমুদুল হক নিহত হন।
২০১১ সালের ১০ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ বিমানে আগুন লেগে গেলে দুজন পাইলট আহত হন।
২০১২ সালের ৮ এপ্রিল টাঙ্গাইলের মধুপুরে মুরইল ইউনিয়নের বড়মহর গ্রামে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শরিফ রেজা নিহত হন।
২০১৩ সালের জুলাইয়ে রাশিয়ার তৈরি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান এ-ফাইভ পটিয়া উপজেলার একটি বিলে পড়ে। তার আগে প্যারাশুটের সাহায্যে নিরাপদে অবতরণ করেন পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আবু জাহের আরাফাত। ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি যশোরের সদর উপজেলার মাহিদিয়া গ্রামের ধানক্ষেতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। ওই ঘটনায় অক্ষত থাকেন বিমানের দুই পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার ফারুক ও পাইলট অফিসার জামি। একই বছরের ৩০ এপ্রিল চট্টগ্রামে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়।
২০১৫ সালের ১ এপ্রিল রাজশাহীর শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমির একটি ১৫২ মডেলের সেনা প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে প্রশিক্ষণার্থী পাইলট তামান্না রহমান (২২) ঘটনাস্থলে নিহত হন। তাঁর প্রশিক্ষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাঈদ কামালও পরে মারা যান। একই বছরের ২৮ জুন চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ চলাকালে সাগরে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ যুদ্ধবিমান। এতে বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ নিখোঁজ হন। ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে কক্সবাজারের উখিয়ার সোনারপাড়া সমুদ্রসৈকতে মেঘনা এভিয়েশনের একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে একজন নিহত ও চারজন আহত হন।
২০১৬ সালের ৯ মার্চ ট্রু এভিয়েশনের একটি কার্গো বিমান কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পর বঙ্গোপসাগরের নাজিরারটেক পয়েন্টে বিধ্বস্ত হয়। এতে পাইলটসহ তিন ক্রু নিহত হন। আহত হন আরো এক বিদেশি। বিমানটি চিংড়ি পোনা নিয়ে কক্সবাজার থেকে যশোর যাচ্ছিল। নিহতরা হলেন বিমানটির পাইলট মুরাদ কাপারত, ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার কুলিশ আন্ত্রে ও কো-পাইলট ইভান ডেমান।
২০১৭ সালে মহেশখালীতে বিমানবাহিনীর দুই প্রশিক্ষণ বিমানের মধ্যে সংঘর্ষে দুটি বিমানই বিধ্বস্ত হয়। তবে পাইলটরা অক্ষত ছিলেন।
২০২১ সালের ১৬ মার্চ রাজশাহীর তানোরে আলুক্ষেতে বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাবের একটি প্রশিক্ষণ বিমান আছড়ে পড়ে।
২০২২ সালের ২৭ জুলাই আর্মি এভিয়েশনের একটি বেল-২০৬ হেলিকপ্টার ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার একটি ধানক্ষেতে পড়ে। হেলিকপ্টারটি নিয়মিত প্রশিক্ষণ ফ্লাইট পরিচালনার অংশ হিসেবে ‘ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিং প্রসিডিউর’ অনুশীলন করার সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অবতরণ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। হেলিকপ্টারের উভয় পাইলট লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইসমাইল ও মেজর শামসকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা সিএমএইচে আনা হয়।
২০২৪ সালের ৯ মে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ নিহত হন।
গত ১৩ মার্চ যশোর বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণকালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়। এ ঘটনায় বিমানের দুই পাইলট গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোল্লা মোহাম্মদ তহিদুল হাসান ও স্কোয়াড্রন লিডার আহমদ মুসা সুস্থ ছিলেন।
সর্বশেষ গতকাল ২১ জুলাই সোমবার বাংলাদেশে বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাসে একটি শোকের দিন হিসেবে স্থান পায়। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে গতকাল দুপুর ১টা ৬ মিনিটে ঢাকার উত্তরায় দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। নিহত হন বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম সাগরসহ অনেকে। আইএসপিআর জানায়, গতকাল বিকেল ৫টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২০ জনে। আহতের সংখ্যা ১৭১। এদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী।

ফেসবুকজুড়ে নিখোঁজ শিশুদের মুখ
- সন্তানদের না পেয়ে কাঁদছেন অভিভাবকরা
কেয়া আক্তার

হলুদ জামা পরা ছোট্ট একটি মেয়ের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। নাম সায়মা। উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের ক্লাউড সেকশনের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। তার ভাই সুমন আহমেদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘উত্তরার মাইলস্টোন ক্যাম্পাসের বিমান বিধ্বস্তের স্থান থেকে আমার বোন নিখোঁজ।
এমন অসংখ্য শিশু-কিশোরের ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে এখন ফেসবুকে। কেউ নিজ সন্তানকে খুঁজছেন, কেউ হয়তো অন্যের সন্ধান জানাতে পোস্ট করছেন। অনেকে আবার উদ্ধার হওয়া শিশুদের নাম-পরিচয় না জানায় অভিভাবকের খোঁজ করছেন।
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. জুনায়েত হাসানের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
ধচতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফসি আক্তার রাফিয়া উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছবি দেখে পরিবার তাকে শনাক্ত করে হাসপাতালে পৌঁছেছে।
আরেক শিক্ষার্থী সাবিহা জাহানের সন্ধানেও ফেসবুকে অনুরোধ করা হচ্ছে উত্তরার আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করার জন্য।
তৃতীয় শ্রেণির আফিয়া উম্মে মরিয়ম, সাদ সালাউদ্দীন ও রাইসা মনিকেও খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা। কারো খবর মিলেছে, কেউ এখনো নিখোঁজ।
প্রথম আলোর সাংবাদিক সেলিম জাহিদ নিজের ছেলে সায়ের মাহবুবের সন্ধান চেয়ে ব্যক্তিগত ফেসবুকে পোস্ট দেন। সায়ের মাইলস্টোন মেইন ক্যাম্পাসের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পরে তাকে সুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়।
নুসরাত জাহান আনিকা (তৃতীয় শ্রেণি) ও মেহনাজ আফরিন হুমায়রা (দ্বিতীয় শ্রেণি)—এই দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ রয়েছে সিএমএইচের মর্গে, এমন খবর ছড়িয়েছে ফেসবুকে। তাদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজা হচ্ছে।
অভিনেত্রী তমা মির্জার ফেসবুক প্রোফাইলে মোছা. আসমাউল হুসনা জায়রা নামের এক শিশুর আইডি কার্ড পোস্ট করে তিনি জানান, বাচ্চাটি তাঁর স্কুল ফ্রেন্ডের ভাইয়ের অফিসে আছে, সেফ আছে, তবে নাম-ঠিকানা কিছুই বলতে পারছে না।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভির আহমেদের মৃত্যুর খবর আসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে। তার পরিচয় মিললেও পরিবারের সন্ধানে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হয়।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী আরিয়ান নাফিসের অভিভাবকদেরও খোঁজা হচ্ছে ফেসবুকে।
ওয়াকিয়া ফেরদৌস নিধি, তাসফিয়া সুলতানা, রাইসা মনি—তাদের কাউকে এখনো পাওয়া যায়নি।
২১ বছর বয়সী ইয়াসীন মাইলস্টোন পার্মানেন্ট ক্যাম্পাসের পরিবহন বিভাগের কর্মী। বাড়ি নোয়াখালী। বর্তমানে উত্তরার মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এ ছাড়া মাইলস্টোন হোস্টেলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফুয়াদ এখনো নিখোঁজ।
প্রতিটি নামই এখন পরিবারের কাছে একেকটি আশার আলো। আর প্রতিটি ছবি যেন ফেসবুকে চোখ আটকে রাখা কান্নার দলিল।

হঠাৎ আগুন জ্বলে ওঠে দাউদাউ
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর গতকাল সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিল স্থানীয় লোকজন। ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা বিস্মিত হয়। তারা গণমাধ্যমকে বলে, দুর্ঘটনার পর স্কুলের মাঠে একজন প্যারাশুট দিয়ে নামেন। আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল ব্যাপক আকারে।
দুর্ঘটনার সময় একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আজমাইন ক্লাসে ছিল। বিকট শব্দ শুনে নিচে নেমে সে দেখে আগুন জ্বলছে। দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদমান তানভীর বলে, ‘আমরা যখন ক্লাসে ছিলাম, তখন বিস্ফোরণের শব্দ হয়। প্রথমে কেউ বুঝতে পারিনি বিষয়টি।