ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭
বিশেষ লেখা

১০ মাসে প্রায় ‘শূন্য অর্জন’ সমাধান দ্রুত নির্বাচন

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
১০ মাসে প্রায় ‘শূন্য অর্জন’ সমাধান দ্রুত নির্বাচন

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি আলোচিত তত্ত্ব হলো তিন শূন্য তত্ত্ব। তাঁর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার অসফলতার দিক থেকে যেন সেই শূন্য তত্ত্বের বাস্তবায়ন ঘটিয়েছে। গত ১০ মাসে শূন্য সংস্কার, শূন্য বিচার ও শূন্য নিরপেক্ষতা দেখিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটি প্রায় অসফল সরকার হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে। এটাই যেন অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র সাফল্য।

অবশ্য এই ১০ মাসে প্রধান উপদেষ্টা এবং তাঁর উপদেষ্টামণ্ডলীর ভাগ্যের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৬০০ কোটিরও বেশি টাকার আয়কর মওকুফ হয়েছে। প্রত্যাহার করা হয়েছে তাঁর সব মামলা। গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের শেয়ার কমেছে।
ড. ইউনূসের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, রিক্রুটিং এজেন্সির লাইন্সেস। ১০ মাসে একজন সরকারপ্রধান ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে লাভবান হয়েছেন, তা এক বিরল দৃষ্টান্ত। গত ১০ মাসে তিনি ১১ বার বিদেশ সফর করলেও বিশ্বে বাংলাদেশের জন্য দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ভিয়েতনাম ভিসা দিচ্ছে না, ভিসা বন্ধ সৌদি আরবের, সংযুক্ত আরব আমিরাতের।
থাইল্যান্ডের ভিসাও এখন মিলছে না সহজে। ইউরোপের দরজাও বন্ধ।

প্রধান উপদেষ্টার মতো অন্যরাও নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে নিচ্ছেন। উপদেষ্টাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি-লুটপাটের কাহিনি নিয়ে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। অথচ কারো বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থেকে শুরু করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উঠেছে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির গুরুতর অভিযোগ। এসব অভিযোগ নিয়ে কোনো নিরপেক্ষ তদন্তের উদ্যোগ নেই সরকারের। নতুন বাংলাদেশে দুর্নীতি কমেনি, বরং নতুন আঙ্গিকে চলছে লুটপাট। শেয়ারবাজার থেকে নিরীহ জনগণের ২৫ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এসবের   তদন্ত নেই, বিচার নেই। অর্থ উপদেষ্টা যেন আইএমএফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি। তাঁর কাজ দেশের অর্থনীতি ঠিক করা নয়, আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কাজ করা। উপদেষ্টাদের নানা বিতর্কিত কথাবার্তা ও কাজকর্মে মানুষ বিরক্ত।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একাধিক সদস্য দেশের নাগরিক নন। এই বিদেশি নাগরিকরা জনগণের ভাগ্যবিধাতা হয়ে গেছেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার নাগরিকত্ব নিয়েও বিতর্ক আছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই সরকারের প্রধান লক্ষ্য তিনটি। একটি হলো জুলাই গণহত্যার বিচার, দ্বিতীয়টি হলো সংস্কার এবং তৃতীয়টি হলো নির্বাচন। কিন্তু ১০ মাসে বিচারের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি আমরা লক্ষ করিনি। শেখ হাসিনাসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ পর্যন্ত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। বিচারের নামে হচ্ছে প্রহসন। শত শত আসামি বানিয়ে মামলার গুরুত্ব হালকা করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে নিরীহ মানুষকে, অথচ আসল অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। দেশজুড়ে বেশুমার মামলা বাণিজ্য চলছে। যে যার বিরুদ্ধে ইচ্ছা মামলা করছে। মামলার নামে চলছে ব্ল্যাকমেইলিং।

অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় এজেন্ডা হলো সংস্কার। অথচ সংস্কারও যেন এক প্রহসনে রূপ নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু বেশির ভাগ সংস্কার কমিশনই বিশেষ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য গঠিত হয়েছে।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের কথাই ধরা যাক। এই সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে। ওই বিশেষ গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে। যার ফলে বাস্তবতাবিবর্জিত এই গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন এরই মধ্যে অগ্রহণযোগ্য ও অপ্রয়োজনীয় হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তাহলে এই অর্থ ও সময় অপচয় করা হলো কার স্বার্থে?

রাষ্ট্র সংস্কার এখন পক্ষপাতদুষ্ট। অন্তর্বর্তী সরকার যেন একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে; আরো নির্দিষ্ট করে বললে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) পৃষ্ঠপোষকতা দিতে রাষ্ট্র সংস্কার কৌশল সাজিয়েছে। সবাই জানে, সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার একমাত্র জাতীয় সংসদের। কিন্তু নতুন সংবিধান, গণপরিষদ ইত্যাদি বিতর্ক তুলে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। সংস্কারে জনগণের অরুচি তৈরি করা হচ্ছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণ করে নিজেই বলেছিলেন, ছাত্ররা হলেন তাঁর নিয়োগকর্তা। গত ১০ মাসে তিনি শুধু নিয়োগকর্তার কথাই শুনেছেন। জনগণের প্রত্যাশার কথা শোনেননি। ফলে এই সরকার তার নিরপেক্ষতা খুইয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার এনসিপির পৃষ্ঠপোষক সরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এনসিপি যেভাবে চাইছে, সেভাবেই সব কিছু হচ্ছে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থের সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠেছে। ফলে রাষ্ট্র সংস্কারও মুখ থুবড়ে পড়েছে। নারী সংস্কার নিয়ে এরই মধ্যে পুরো দেশকে বিভক্ত করা হয়েছে। মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ কোনো সংস্কারই দৃশ্যমান নয়। এসব সংস্কার দেশকে একটা জগাখিচুড়ি অবস্থায় নিয়ে গেছে। সব কিছু দেখেশুনে মনে হচ্ছে, সংস্কার সরকারের কালক্ষেপণ করার; নির্বাচন না করার একটি কৌশল।

এবার আসা যাক নির্বাচন প্রসঙ্গে। নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার স্পষ্টত কালক্ষেপণ করছে। অতীতে সব তত্ত্বাবধায়ক সরকার ৯০ দিনের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করেছে। তারা এই সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারও করেছে। তাহলে বর্তমান সরকারের এত সময় লাগবে কেন? এর কারণ এখন সুস্পষ্ট। বিশেষ একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে নির্বাচন বিলম্বিত করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেই কথা রাখছেন না। তিনি বলেছিলেন, নির্বাচন হবে ডিসেম্বরের মধ্যে। পরে তিনি ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছিলেন, সংস্কার সম্পন্ন হলে জুলাই সনদ তৈরি হবে এবং জুলাই সনদ চূড়ান্ত হওয়ার পর নির্বাচন হবে। এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে কোনোভাবেই তিন মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। অথচ ১০ মাস পেরিয়ে গেছে। এনসিপি যেন দল গোছাতে পারে, তারা যেন নির্বাচনের মাঠে বিশেষ সুবিধা পায়, তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের তারিখ নিয়ে এই কৌশল চলতেই থাকবেএটা এখন সবাই বুঝে ফেলেছে। অন্যদিকে একতরফাভাবে এপ্রিলে নির্বাচনের ঘোষণা সংকট আরো গভীর করেছে।

শুধু এনসিপি ও জামায়াত ছাড়া কেউই প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণায় সন্তুষ্ট নয়। দেশের বেশির ভাগ জনগোষ্ঠীকে অসন্তুষ্ট করে তিনি কি একপেশে একটি নির্বাচন করতে চান?

গত ১০ মাসে দেশে চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ বেড়েই চলছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ন্যূনতম উন্নতি হয়নি; বরং প্রতিদিন অবনতি ঘটছে। দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীন। দায়িত্ব গ্রহণ করেই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করা হবে। কিন্তু গত ১০ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তিও বাতিল করেনি। ভারত উল্টো বাংলাদেশের সঙ্গে একাধিক চুক্তি বাতিল করেছে। স্থলপথে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করার নেতিবাচক প্রভাব এরই মধ্যে অর্থনীতিতে দেখা যাচ্ছে। সরকার দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে সফল হতে পারেনি। সব কিছুর দাম বেড়েই চলছে। নতুন বাজেট বাস্তবায়িত হলে দ্রব্যমূল্য আরো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

সরকার দেশের স্বার্থ রক্ষায়ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেনি। মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে নতুন করে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা দেশে ঢুকেছে। ভারত প্রতিদিন পুশ ইন করছে। অথচ সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, ঈদের পর রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে। তারা ফিরে যায়নি। বরং করিডরের নামে নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে করিডরের নানা নাম দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে প্রতিনিয়ত। মানবিক করিডর, চ্যানেল কিংবা ত্রাণপথ’—যে নামেই ডাকা হোক, এটা দেশের স্বার্থবিরোধী। তবু এ নিয়ে সরকার নানা কৌশল অব্যাহত রেখেছে। জনগণকে অন্ধকারে রেখে করা হচ্ছে সব কিছু।

দেশে নতুন বিনিয়োগ বন্ধ, শিল্প ধ্বংসসহ বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নিরাপত্তার অভাব, জ্বালানিসংকট, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা হত্যা মামলা অর্থনীতিকে রীতিমতো অচল করে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হলো বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বেশির ভাগ বড় বড় শিল্প গ্রুপের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে তাদের দুদক দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগের নামে কোটি টাকার বিনিয়োগ সম্মেলনের ফলাফল শূন্য।

উপদেষ্টারা দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তায় আওয়ামী লীগকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা একবার বললেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ পালিয়ে গেছেন। তাঁকে ইন্টারপোলের সাহায্যে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। আবার আবদুল হামিদ যখন দেশে ফিরলেন, তখন বলা হলো, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ওয়ারেন্ট নেই। এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা শোনা যায় প্রায় সব উপদেষ্টার মুখে।

তবে আমরা এসব সংকটের মধ্যেও একটা আশার আলো দেখছি, আর তা হলো আগামীকাল শুক্রবার (১৩ জুন) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওয়ান টু ওয়ান একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে আমরা আশা করি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেশের বাস্তবতা উপলব্ধি করাতে সক্ষম হবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশের মানুষ যে ভালো নেই, ব্যবসা-বাণিজ্য স্তব্ধ হয়ে আছে, একটি নির্বাচিত সরকারের জন্য জনগণ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেএই বাস্তবতাগুলো ড. ইউনূস যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন, তত দেশের জন্য মঙ্গল। দ্রুত দেশে একটি নির্বাচন দিয়ে একটি স্থিতিশীল শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি। সরকার অকার্যকর ও অচল হয়ে পড়ায় নির্বাচন নিয়ে এখন আর বিলম্ব করার সময় নেই। এখন প্রতিটি দিন, প্রতিটি মাস গুরুত্বপূর্ণ। যত দেরি হবে, তত সমস্যা বাড়তে থাকবে, দেশ অস্থিতিশীল হবে। এই অস্থিতিশীলতার মধ্যে ফ্যাসিবাদ ফের পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পাবে। আমরা কাউকে নিশ্চয়ই সে রকম একটি সুযোগ দিতে চাই না। আর সে কারণেই দেশবাসী প্রত্যাশা করে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জাতিকে একটি সুখবর দেবেন, স্বস্তির বার্তা দেবেন। জাতি যেন এই দমবন্ধ পরিবেশ থেকে মুক্তি পায়। আশা করি, সেই পথের সন্ধান পাওয়া যাবে এই বৈঠক থেকে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আজ রাজপথে নামছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আজ রাজপথে নামছে বিএনপি

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ হত্যাকাণ্ডের অপপ্রচার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণভাবে আজ থেকে রাজপথে থাকবে বিএনপি। বিএনপি মনে করছে, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজপথ দখল করার চেষ্টা করছে বলে মনে করছে বিএনপি। এ জন্য রাজপথে বিএনপিও শক্তি ও জনসমর্থন দেখাবে।

এখন পর্যন্ত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দিচ্ছে না দলটি।

এমনকি এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য দলে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতা। দলের নেতারা বলছেন, হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুজনকে চিহ্নিত করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। কিন্তু বিরোধী পক্ষ একতরফাভাবে বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছে। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করছে।
এর জবাব দিতে রাজপথে শক্তি দেখাবে দলটি। এরই অংশ হিসেবে আজ সোমবার ছাত্রদল ও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং অন্য অঙ্গসংগঠন পৃথক শোডাউন করবে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী কালের কণ্ঠকে বলেন, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে। জনগণ বিএনপির সঙ্গে আছে।
জনগণকে নিয়ে দেশবিরোধীদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা হবে।

মাঠে নামছে ছাত্রদল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, গোপন তৎপরতায় দীর্ঘদিন ধরে অভ্যস্ত গুপ্ত সংগঠন কর্তৃক মব সৃষ্টির অপচেষ্টা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আজ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল করবে। গুপ্ত সংগঠন বলতে ইসলামী ছাত্রশিবির ও তাদের সহযোগী সংগঠনকে বোঝানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।

ছাত্রদলের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি সারা দেশের সব জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

কর্মসূচির বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, গুপ্ত সংগঠন হিসেবে সেসব সংগঠনকেই বোঝানো হয়েছে, যারা প্রকাশ্যে নিজেদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার বদলে গোপনে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। গত ৫ আগস্টের পর একটি মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও তাদের এহেন গুপ্ত কার্যক্রম এ দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে অসহনশীল করে তুলছে এবং রাজনৈতিক বিষয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে তুলছে। এ রকম কুচক্রী কার্যক্রমের বিরুদ্ধেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যেন দেশবাসীকে এসব বিভ্রান্তিকর বিষয়ে সচেতন করে তোলা যায়।

গুপ্ত সংগঠন বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ছত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যারা ক্যাম্পাসগুলোতে মব সৃষ্টি করে সাধারণ শিক্ষার্থী নামে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করছে, তারাই গুপ্ত সংগঠন। ছাত্রশিবির এবং গুপ্তভাবে সংগঠন পরিচালনা করতে ছাত্রশিবিরকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে, আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তারা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির মেয়াদ আরো দুই মাস বাড়ল

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির মেয়াদ আরো দুই মাস বাড়ল

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরো দুই মাস (৬০ দিন) বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ১৩ মে থেকে তাঁদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতার মেয়াদ দুই মাস বাড়ানো হয়েছিল। সেই মেয়াদ গতকাল শেষ হয় ।

মেয়াদ বাড়ানোর আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কমিশন্ড কর্মকর্তাদের (কোস্ট গার্ড ও বিজিবিতে প্রেষণে নিয়োজিত সমপদমর্যাদার কর্মকর্তারাসহ) ‌‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮-এর ১২(১) ও ১৭ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করা হলো। এর মেয়াদ হবে ১৪ মার্চ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত। সারা দেশে তাঁরা এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮-এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারবেন।

প্রথমে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের (সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তা) এই ক্ষমতা দেওয়া হয়। অর্থাৎ শুধু সেনাবাহিনী নয়, বিমান ও নৌবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদেরও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়। তখন ৬০ দিনের জন্য এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।

সেই মেয়াদ নভেম্বরের মাঝামাঝি শেষ হয়েছিল। পরে সেই ক্ষমতার মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়।

মন্তব্য

শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ বিএনপির

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক পুলিশপ্রধান (আইজিপি)  বেনজীর আহমেদসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দিয়েছে বিএনপি।

গতকাল রবিবার দুপুরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে নিয়ে এই অভিযোগ দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য এবং তথ্য সেলের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন খান।

অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গুমের ঘটনায় ১১ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে লিখিত অভিযোগে।

তাঁরা হলেনঝালকাঠির নলছিটির মোহাম্মদ আলী খান, সাবেক যুবদল নেতা মো. জিল্লুর রহমান, আকিদুল আলী, খোরশেদ আলম, অ্যাডভোকেট আশরাফ আলী, মো. বাবুল, এনামুল, এরশাদ আলী, মো. গিয়াস উদ্দিন খান, মো. কবির উদ্দিন খান ও নজরুল ইসলাম।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এসব ভুক্তভোগীকে অপহরণের পর আয়নাঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। গত বছর ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পলায়নের পর মোহাম্মদ আলীকে হাত ও চোখ বেঁধে পূর্বাচলের শেষ প্রান্তে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফেলে আসা হয়। পাঁচ বছর তিন মাস ১৩ দিন পর তিনি মুক্তি পান।

এ ঘটনায় মোহাম্মদ আলী খান বিএনপি মহাসচিবের মাধ্যমে ন্যায়বিচার চেয়ে আবেদন করেন।

তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করে আবেদনটি করা হয় বলে জানান সালাহউদ্দিন খান।

সালাহউদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন, ভুক্তভোগীরা শেখ হাসিনাসহ ১৬ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৩০ থেকে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে ন্যায়বিচারের আশায় আবেদন করেছেন। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, শুধু বিএনপি করার অপরাধে বিগত সরকারের নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাঁদের।

মন্তব্য

সোহাগের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

বরগুনা প্রতিনিধি
বরগুনা প্রতিনিধি
শেয়ার
সোহাগের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে পুরান ঢাকায় নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মনি। গতকাল রবিবার বিকেলে তিনি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের সোহাগের গ্রামের বাড়িতে যান। তিনি স্থানীয় কাকচিড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তিনি নিহত সোহাগের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।

সোহাগের পরিবারের যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকারও আশ্বাস দেন। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে বিএনপির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন। স্বামীর হত্যার বিচার চেয়ে তখন সোহাগের স্ত্রী লাকি আক্তার বলেন, আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাই।
সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মনি বলেন, এই এলাকার সন্তান ঢাকার মিটফোর্ডের ব্যবসায়ী সোহাগকে তাঁর ব্যাবসায়িক পার্টনার ও তাদের ভাড়াটেরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। বিএনপি ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দলের পক্ষ থেকে এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে। সম্পৃক্তদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপি কোনো অপকর্মকে প্রশ্রয় দেয় না। পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক চৌধুরী মো. ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ফজলুল হক মাস্টার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম সফিকুজ্জামান মাহফুজ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাবেদুল ইসলাম জুয়েল, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম নাভিল প্রমুখ।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ