ঢাকা, মঙ্গলবার ০৫ আগস্ট ২০২৫
২১ শ্রাবণ ১৪৩২, ১০ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ০৫ আগস্ট ২০২৫
২১ শ্রাবণ ১৪৩২, ১০ সফর ১৪৪৭
প্রধান বিচারপতির সৌজন্য সাক্ষাৎ

বিচার বিভাগের প্রশংসা করলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বিচার বিভাগের প্রশংসা করলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান বিচারপতি
সৈয়দ রেফাত আহমেদ

বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সংস্কারে প্রধান বিচারপতির দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় বিচার বিভাগের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাংবিধানিক আদালতের প্রধান বিচারপতি ম্যানডিসা মায়া।

গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সফররত প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার সাংবিধানিক আদালতের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। আদালত ভবনেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে উভয় দেশের প্রধান বিচারপতি একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি নিজ নিজ দেশের বিচার বিভাগের নানা অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন।

এ সময় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সংস্কারের লক্ষ্যে তাঁর ঘোষিত রোডম্যাপ কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান বিচারপতি ম্যানডিসা মায়া বাংলাদেশের বিচার বিভাগে চলমান সংস্কার প্রচেষ্টা এবং মানবাধিকার রক্ষায় নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার মানবাধিকার কমিশনের অভিজ্ঞতা এবং সাংবিধানিক প্রশ্নে কমিশনের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

এক-এগারোর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে

বিবিসি বাংলা
বিবিসি বাংলা
শেয়ার
এক-এগারোর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে

অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, এক-এগারোর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্টে তিনি লেখেন ১/১১-এর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ফেসবুকে প্রথমে এক লাইনের এই পোস্টটি দেন। এর কিছুক্ষণ পর আবার সেই পোস্টটি এডিট করে আরো একটি লাইন যুক্ত করেন।

সেখানে তিনি লেখেন, ১/১১-এর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে! তবে জুলাই জয়ী হবে। জনগণের লড়াই পরাজিত হবে না।

পোস্টটি দেওয়ার ঘণ্টাখানেক পর কেন তিনি এই মন্তব্য করেছেন তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। ওই ফেসবুক পোস্টেরই কমেন্ট বক্সে তিনি লেখেন, ১/১১-এর পদধ্বনির কথা কেন বলসি? জুলাইয়ের শক্তিগুলোর ঐক্য নাই এবং এ ঐক্য ধরে না রাখার ক্ষেত্রে আমাদের যতটা দায়, তার   চেয়ে বেশি পুরাতন ১/১১ শক্তিগুলোর অন্তর্ঘাতী কর্মকাণ্ড দায়ী।

তিনি লেখেন, জুলাইয়ের শক্তিগুলোর আত্মতুষ্টির সুযোগে পুরাতন ১/১১পন্থীদের বিভাজন এবং অন্তর্ঘাতের সুযোগ বৃদ্ধি। আওয়ামী লীগকে স্বাভাবিকীকরণ এবং জুলাইয়ের ছাত্র-জনতাকে ভিলিফিকেশন মূলধারা হয়ে উঠসে। পুরাতন অর্থনৈতিক ও কালচারাল বন্দোবস্ত ফিরিয়ে আনার তোড়জোড়, যার পথ ধরে লীগকে ফিরিয়ে আনার পথ প্রশস্ত হবে। এই পোস্ট দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম গত বছরের ২ আগস্ট দেওয়া তাঁর একটি পুরনো পোস্ট শেয়ার দিয়ে লেখেন, যখন সবাই এক দফা দিয়ে হাসিনাকে পতনের কথা বলছিল, ২ তারিখ রাতে সমন্বয়কদের চাপের মুখে এক দফা দিতে বলা হচ্ছিল, তখন আমরা অসহযোগের কথা বলছিলাম।
অনেকের সমালোচনার মুখেও অসহযোগ আন্দোলনকে কর্মসূচি বানানো হইছিল।

মন্তব্য
সালাহউদ্দিন আহমদ

বর্তমান সরকারকে সাংবিধানিক বৈধতা দেবে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বর্তমান সরকারকে সাংবিধানিক বৈধতা দেবে বিএনপি
সালাহউদ্দিন আহমদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জাতীয় ঐক্য কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই জাতীয় সনদের যে খসড়া বিএনপিকে দেওয়া হয়েছে, তাতে যেকোনো সময় আমরা স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত। এতে কোনো দ্বিমত নেই। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, দেশের ঐতিহ্য অনুযায়ী বিএনপি বর্তমান সরকারকে (রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলে) সাংবিধানিক বৈধতা দেবে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশানের নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সনদের খসড়া যেটা আমাদের দেওয়া হয়েছে, সেই অনুযায়ী যদি সনদ আগামীকাল আমাদের কাছে প্রেরণ করে, তাহলে তা আমরা কালকেই সই করব। যেকোনো মুহূর্তে সই করতে রাজি। এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, কিছু কিছু বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টসহ, সেই কাগজ যখনই আমাদের দেবে তখনই আমরা সই করে দেব।

সেই অঙ্গীকারনামা আমরা দিয়েছি। এটা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তির সুযোগ নাই। তবে এগুলো বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ যদি আলোচনা করতে চান, তাহলে তাতেও আমরা যাব।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া ঐকমত্য কমিশন থেকে আমাদের কাছে যা পাঠানো হয়েছে এটার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করে আমাদের পক্ষ থেকে উত্তর দিয়েছি।

৩০ জুলাই দিয়েছি। ৩১ জুলাই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এখন এটার বাস্তবায়নের জন্য আইনি ভিত্তি থাকতে হবে বলে যে কেউ কেউ বলছে, সেই প্রক্রিয়ায় যদি আলোচনা করতে চায়, আমাদের আহবান জানালে সেখানেও আমরা যাব।

তিনি বলেন, সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। কিছু দলের রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা থেকে অনেক কথা তাঁরা বলতে পারেন।

এগুলো নিয়ে আলোচনা হলে আমরা অংশ নেব। কিন্তু এগুলো নির্বাচন পেছানোর কৌশল কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। শুধু সংবিধান সংশোধনের বিষয় বাদে বাকি সব বিষয় বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। কোনো আইনি বৈধ প্রক্রিয়া বা সংসদ ছাড়া কোন বৈধ প্রক্রিয়ায় সংবিধান সংশোধন করা যায়? সেটি কোন প্রক্রিয়ায় সেটা যদি তারা বলতে পারে, যদি বৈধ হয় তাহলে জাতি মেনে নেবে। তবে নির্বাচিত সংসদ ছাড়া প্রতিশ্রুত সংবিধান সংশোধন বাঞ্ছনীয় নয়।

বিএনপি বর্তমান সরকারকে সাংবিধানিক বৈধতা দেবে জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা লিখিতভাবে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। ২৪-এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থান রাষ্ট্রীয় এবং সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। সেটা কোথায় প্রদান করা হবে সেটা পরিষ্কার করেছি। যেহেতু এটা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকার, নির্বাচিত সরকার নয়। সাংবিধানিক নিয়ম-কানুন মেনে যদিও এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার পরও তাকে সাংবিধানিকভাবে বৈধতা দেওয়ার জন্য পুনরায় আমাদের ঐতিহ্যমাফিক চতুর্থ তফসিলে সেটার বর্ণনা থাকবে। সেই জায়গায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পথ ধরে এই যে সরকার প্রতিষ্ঠা হলো তার সব কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার একটা বর্ণনা থাকতে হয়। এটাই আমাদের ট্র্যাডিশন। সে অনুসারে আমরা সেখানে স্বীকৃতি দেব, সেটা আমরা বলেছি। রাষ্ট্রীয় এবং সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে এই ঘোষণাপত্রে। এখন সেই ঘোষণাপত্র প্রধান উপদেষ্টা উচ্চারণ করবেন কি না সেটা দেখার বিষয়।

দ্বিতীয় রিপাবলিকের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে একটা রিপাবলিকের মধ্যেই আছি। আমাদের একটা রাষ্ট্র আছে, সংবিধান আছে। আমাদের এই সংবিধান বিভিন্নভাবে রোগাক্রান্ত হয়েছে। অগণতান্ত্রিকভাবে বিভিন্ন সময় সংশোধন করা হয়েছে। সে জন্যই তো সংস্কার প্রস্তাবগুলো ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বসে আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা সংস্কার করছি। এগুলোর বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো পাব। এ জন্যই এই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি।

 

মন্তব্য

তিন খুন : উপদেষ্টা আসিফের বাবাকে গ্রেপ্তারের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
তিন খুন : উপদেষ্টা আসিফের বাবাকে গ্রেপ্তারের দাবি

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন এখন খুনিদের মদদ দিচ্ছেন। আমার মা, ভাই ও বোনকে পরিকল্পিতভাবে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেদিন আমাকেও হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখম করে খুনিরা। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই।

এখন মামলা করলেও প্রধান আসামি উপদেষ্টার বাবার নাম বাদ দিয়ে পুলিশ ইচ্ছামতো আসামিদের নাম দেয়। গ্রেপ্তার না হওয়ায় তারাই এখন আবার আমাদের পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গারা থানাধীন কড়ইবাড়ি গ্রামে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যার ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত রুখসানা আক্তার রুবির দ্বিতীয় সন্তান রুমা আক্তার। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা আকরম খাঁ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে আবেগতাড়িত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন নিহত রুবির স্বামী সৌদিপ্রবাসী খলিলুর রহমান, রিক্তা আক্তার ও নিহত রাসেলের স্ত্রী মিম আক্তার। তাঁরা সবাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচারের দাবি জানান।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা বিল্লাল মাস্টারকে খুনিদের মদদদাতা  দাবি করে তাঁকে আইনের আওতায় আনার দাবি করে রুমা বলেন, একজন উপদেষ্টার বাবা হয়ে তিনি কিভাবে এমন নির্মম হত্যার নির্দেশ দিতে পারেন? তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় থেকে অন্যতম খুনি শিমুল চেয়ারম্যানসহ অন্যরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে অপরাধীদের দ্রুত শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।

রুমা আক্তার জানান, ঘটনার দিন আওয়ামীপন্থী দোসর, স্থানীয় সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারী পরিবারের তিনজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে।  ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন রুকসানা আক্তার রুবি, তাঁর ছোট সন্তান জোনাকি আক্তার ও বড় ছেলে রাসেল।

ঘটনায় বাকিরাও আহত থাকায় আমার বোন রিক্তা আক্তার মামলায় আসামিদের নাম সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেননি দাবি করে রুমা বলেন, এখন মামলার পুনর্বিন্যাস করতে হবে। হত্যাকাণ্ডে সেই সময় অপরাধীদের অনেকের নামই বাদ পড়েছে, সেগুলো নতুন করে যুক্ত করতে হবে।

রুমা বলেন, আজকের পর থেকে আমাদের ওপর আর কোনো আঘাত এলে এর জন্য সব দায় থাকবে উপদেষ্টা আসিফ ও তাঁর বাবা বিল্লাল হোসেনের।

যেমনআমাদের বাবা জুয়েলকে কয়েক দিন আগে আসিফ মাহমুদের লোকজন তুলে নিয়ে জোরপূর্বক ভিন্ন বক্তব্য দিতে বাধ্য করিয়েছেন। এ সময় রুমা শিমুল চেয়ারম্যান, কাশিমপুর গ্রামের আনু মেম্বার, বাছির, শরীফ, রানা, আবু বকর, রবিউল, জহর আমিন, বাচ্চু মেম্বার, রফিক, বিল্লাল বাবুর্চি, ভাড়াটে খুনি গোলাপ মিয়া, সাদ্দামসহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবার বিচার দাবি করেন।

ঘটনায় মামলা করলেও প্রধান আসামি উপদেষ্টার বাবার নাম বাদ দিয়ে পুলিশ ইচ্ছামতো আসামিদের নাম দেয় জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার দিন ট্রিপল নাইনে ফোন দিয়েও প্রতিকার পাইনি।

তিনি বলেন, আমরা শুনেছি এবং আমাদের বিশ্বাস শিমুল চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টার ছেলে আসিফের বাসাতেই লুকিয়ে রেখেছেন তাঁর বাবা।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা বিল্লাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে রুমা বলেন,  উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। শিমুল চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আসামিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। রুমা আক্তার বলেন, আজকের পরে আমাদের কারো কোনো ভিন্ন বক্তব্য সামাজিক মাধ্যম বা কোথাও দেখলে আপনারা ধরে নেবেন, আসিফ মাহমুদের লোকজন জোরপূর্বক আমাদের দিয়ে সেগুলো বলিয়ে মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন। সর্বশেষ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের কাছে একটা নিবেদন, আমাদের পরিবারের মা, ভাই, বোন সবাইকে হারিয়ে আমরা নিঃস্ব। আমাদের আর নিঃস্ব করবেন না। আমরা বাঁচতে চাই। দয়া করে আমাদের বাঁচতে দিন।

রুমা বলেন, আমার মা ছিলেন জনপ্রিয়। স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে মা দুবার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও করেছিলেন। বিএনপি সমর্থিত হওয়ায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এই সন্ত্রাসীরা আমার মাকে বিজয়ী হতে দেননি। উল্টো জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তখন থেকেই হয়রানি করার জন্য বিভিন্ন মামলাও দিয়ে আসছিল।

মব তৈরি করে যেভাবে হত্যাকাণ্ড : হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে রুমা বলেন, ঘটনার একদিন আগে মোবাইল চুরির ঘটনা নিয়ে শুরু হয় হট্টগোল। মোবাইল চুরির কারণে একটা ছেলেকে আমাদের গ্রামের রবিউলের বাড়িতে মারধর করা হলে তার বাবা কোনোভাবেই তার ছেলেকে বাঁচাতে না পেরে আমার মায়ের কাছে এসে সাহায্য চায়। তখন আমার মা সেখানে গিয়ে তাদের বলে, চোরটা যদি মরে যায় তাহলে তো আমরা আশপাশের সবাই ফেঁসে যাব। হয় তাকে ছেড়ে দাও, না হয় পুলিশে দাও। এই কথা বলার  সঙ্গে সঙ্গে সেখানে থাকা বাচ্চু মেম্বার, রবি, শরিফ, বাছিদ, রফিক, আবু বক্কর, হারুনরা একযোগে বলে উঠে এই তুই চোরের পক্ষ ধরে আসছিস কেন?

রুমা আক্তারের বক্তব্য অনুযায়ী, তার মা একটি বিল্ডিং নির্মাণ করার কারণেই মূলত স্থানীয় লোকদের প্রতিহিংসার শিকার হন।

রুমা আক্তার বলেন, কী  নির্মমভাবে ওরা আমার চোখের সামনেই প্রথমে আমার মাকে, এরপর আমার ভাই ও বোনকে মেরে ফেলে, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না! ঘটনাস্থল থেকে বাঙ্গরা বাজার থানার দূরত্ব সর্বোচ্চ ১০ মিনিটের পথ হলেও পুলিশ আসে পরিবারের সবার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর, প্রায় ৩ ঘণ্টা পর।

মন্তব্য
গণভবন : তখন-এখন

ক্ষমতার সেই কেন্দ্র দুঃশাসনের সাক্ষী

    এখন জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ চলছে পুরোদমে
নিজামুল হক
নিজামুল হক
শেয়ার
ক্ষমতার সেই কেন্দ্র দুঃশাসনের সাক্ষী
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিকেলে গণভবনের ভেতর ঢুকে পড়েন বহু মানুষ (বাঁয়ে) এবং সেখানে এখন জাদুঘরের কাজ চলছে। ছবি : এএফপি

সময় বদলায়, রাজনীতির পটভূমি পাল্টায়, কিন্তু কিছু স্থানের গুরুত্ব অম্লান রয়ে যায় ইতিহাসের পাতায়। তেমন এক জায়গা গণভবন, যা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ছিল ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার শাসনামলে। এখানেই বাস করতেন তিনি। প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, সংবাদ সম্মেলন ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেছেন।

নিয়েছেন রাষ্ট্র ও জনজীবনে প্রভাব ফেলার মতো নানা সিদ্ধান্ত। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে তিনি এই গণভবন থেকেই বিদায় যাত্রা শুরু করেন।

শেখ হাসিনার পতন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে গণভবনের প্রভাব-প্রতিপত্তিও হারিয়ে গেছে। জৌলুসময় গণভবন স্বৈরাচার সরকার পতনের এক বছর পর এখন গুরুত্বপূর্ণ একটি পটপরিবর্তনের নীরব সাক্ষী বৈ আর কিছু নয়।

নিরাপত্তার চাদরে মোড়া থাকত পুরো এলাকা। বিভিন্ন নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা থাকত সার্বক্ষণিক পাহারায়।

গণভবনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দূত, দেশের মন্ত্রীসহ উচ্চপদস্থ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়মিত আনাগোনা ছিল। সরকারি ও রাজনৈতিক পর্যায়ে অনেক কৌশলগত সিদ্ধান্তের স্থান ছিল এটি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট : ৫ আগস্ট ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায়। দুপুর গড়াতেই ছড়িয়ে পড়ে খবর, দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এ ঘোষণার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। নিরাপত্তা বেষ্টনী  ভেঙে গণভবনে ঢুকে পড়ে লাখো ছাত্র-জনতা।

সবার চোখে-মুখে তখন বিজয়োল্লাস।

কারো হাতে জাতীয় পতাকা, কারো কণ্ঠে বিজয়ের স্লোগান, কারো চোখে দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণের আশা। গণভবনের প্রতিটি চত্বর, প্রতিটি বারান্দা, প্রতিটি করিডর তখন ইতিহাসের স্বাক্ষর হয়ে ওঠে।

শেখ হাসিনার প্রস্থান ছিল এক দীর্ঘ অধ্যায়ের যবনিকা। আর ছাত্র-জনতার প্রবেশ ছিল ভবিষ্যতের এক নতুন সকালের সূচনা।

ছাত্র-জনতা ক্ষোভে গণভবন থেকে টেলিভিশন, চেয়ার, সোফা, টেবিল ফ্যান, কম্বল, পানির ফিল্টার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ফ্রিজে রাখা মাছ-মাংস, খাবারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যায়। শেখ হাসিনা গণভবনে মাছ, ছাগল, হাঁস-মুরগি, কবুতরসহ বিভিন্ন পশুপাখি লালন-পালন করতেন। সেগুলোও যে যার মতো করে নিয়ে গেছে।

শেখ হাসিনা ও গণভবনের বিভিন্ন দায়িত্বে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৫ আগস্ট দুপুরের যে খাবার তৈরি করা হয়, সেই খাবারও খেয়ে নেয় আন্দোলনকারী অনেকে। তবে এসব জিনিস কিছু আবার ফেরত দেওয়ারও ঘটনা ঘটে।

শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সেদিন গণভবনের দেয়ালে অনেকে লিখে রাখে নানা বার্তা। যেমন—‘শেখ হাসিনা স্বৈরাচার, হাসু আপা পলাইছে, আবু সাঈদের রক্ত বৃথা যাবে না, শাপলা চত্বরের বিচার চাই, ফেনীতে ছাত্র হত্যার বিচার করব, হাসিনাকে জয়বাংলা করে দেওয়া হবে, কিলার হাসিনা’—এমন বহু স্লোগান এখনো রয়ে গেছে দেয়ালজুড়ে।

এসব স্মৃতি ধরে রেখে ভবনসহ ১৫ একরের বিশাল আয়তনে গড়ে তোলা হচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর। সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানিয়েছেন, গণভবন ছিল একটি ক্রাইম জোন। এখান থেকেই গুম-খুন ও নিপীড়নের পরিকল্পনা করা হতো। জাদুঘরের মাধ্যমে সেই ইতিহাসই সামনে আনা হবে। ভবনটিকে এমনভাবে সাজানো হবে, যাতে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনামলের বাস্তব চিত্র স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে।

গণভবনের গেটের সামনে এখনো নিরাপত্তাকর্মীরা দাঁড়িয়ে থাকেন। তবে আগের মতো কড়াকড়ি নেই। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে ১০ ফুট উঁচু বেড়া দিয়ে, বাইর থেকে ভেতরের কিছুই দেখা যায় না। তবু সাধারণ মানুষ এখনো প্রতিদিন গণভবনের গেটে আগ্রহ ও কৌতূহল নিয়ে ভিড় করে। ভবনের ভেতরকার চিত্র অবশ্য এখনো অগোছালো। নানা প্রান্তে ময়লার স্তূপ, মাঠে ও রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভাঙা আসবাব, যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী। বিশাল আঙিনা এখন যেন একটি নির্মাণকেন্দ্র। সেখানে কাজ করছেন শতাধিক শ্রমিক, কারিগর ও নকশাকার। কোথায় কী বসানো হবে, কোন দেয়ালে থাকবে কোন ছবি বা স্মারক, তা এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ চলছে পুরোদমে, তবে এখনো শেষ হয়নি। শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা বিভাগের পরিচালক তানজীম ওয়াহাব কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, ৫ আগস্ট জনসাধারণের জন্য জাদুঘর খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। কাজের প্রায় ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকিটুকু শেষ হলেই নতুন তারিখ ঠিক করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

যা থাকবে জাদুঘরে : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাসকে জীবন্ত করে তোলার উদ্দেশে গড়ে তোলা হচ্ছে স্মৃতি জাদুঘর, যেখানে শুধু নিদর্শন নয়, উঠবে একটি প্রজন্মের প্রতিরোধ, ত্যাগ আর জাগরণের কাহিনি।

এই জাদুঘর হবে যেন এক টাইম মেশিন, যা দর্শনার্থীদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে দুঃশাসনের১৬ বছরের রাতগুলোতে।

প্রদর্শনীর প্রতিটি কক্ষে থাকবে জীবনের ছোঁয়া। শহীদদের রক্তমাখা জামা, প্রিয়জনকে লেখা  চিঠি, আন্দোলনের সংবাদ ছাপা পত্রিকার পাতাগুলো, অডিও-ভিডিও দলিল, স্লোগান-বিষণ্নতা-বিজয়গাথার ধ্বনি। দর্শনার্থীরা দেখবে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের সেই ভিডিও চিত্র, যা একদিকে একটি অধ্যায়ের ইতি, আবার অন্যদিকে এক নতুন শুরুর সংকেত।

জাদুঘরের মাটিতে তৈরি হচ্ছে প্রতীকী গণকবর। যেখানে মাথা নত করে শ্রদ্ধা জানাবে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ওঠা নতুন প্রজন্ম। আরো থাকবে আয়নাঘরের রেপ্লিকা।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ