ঢাকা, শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ মহররম ১৪৪৭

দাবি আদায়ে জবি শাটডাউন

  • সড়কে ৩৩ ঘণ্টা অবস্থান
  • বোতল নিয়ে কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা
  • যোগ দিয়েছেন জবির অন্তত ২৪ গাড়ি শিক্ষক-কর্মচারী
  • শিক্ষক পেটানোর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেনি সরকার : শরীফ উসমান হাদী
নিজস্ব প্রতিবেদক ও জবি প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিবেদক ও জবি প্রতিনিধি
শেয়ার
দাবি আদায়ে জবি শাটডাউন
তিন দফা দাবিতে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। গতকাল বিকেলে তোলা। ছবি : শেখ হাসান

আবাসনসহ তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসব দফার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে পুলিশি হামলার বিচার দাবি। এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন ঘোষণা করেছেন শিক্ষক নেতারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন এ ঘোষণা দেন।

শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি এই সিদ্ধান্ত জানান। এ ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সব ইনস্টিটিউট ও বিভাগের পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হলো।

তিনি বলেন, আমরা কোনো ষড়যন্ত্র করতে আসিনি। কারো বিপক্ষেও কথা বলতে আসিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায্য দাবি আদায় করতে এসেছি। সেখানে আমাদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যাব না। কেউ যেন আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর আঘাত করতে না আসে।

গতকাল রাত ৯টায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তখনো দাবি আদায়ে সড়কে আন্দোলন করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। টানা ৩৩ ঘণ্টা তাঁরা কাকরাইল মোড় অবরোধ করে এই কর্মসূচি পালন করছেন।

সকাল থেকে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাঁরা তাঁদের বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন। কখনো স্লোগান, কখনো গান আবার কখনো বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রতিনিধিরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের বোতল নিয়েও বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা যায়।

  উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মাথায় বোতল নিক্ষেপ নিয়ে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, বোতল নিয়ে শিক্ষার্থীরা তার প্রতিবাদ জানান। এ সময় শিক্ষার্থীরা নিজেরা একে অপরের দিকে বোতল ছুড়ে তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান।

সকালে অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি স্থলে আসার আহ্বান জানান। ওই পোস্টের পর প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্তত পাঁচটি বাসে করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কাকরাইল যান। এরপর বিকেল পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২৫টি একতলা ও দোতলা বাসে করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা আন্দোলনে যোগ দেন। এ ছাড়া কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসেছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও। দেশের বিভিন্ন বিভাগ থেকে রাতে রওনা দিয়েছিলেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হন। সেখান থেকে বাসযোগে তাঁরা কর্মসূচিতে যোগ দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, শিক্ষার্থীরা হলে এসে জড়ো হলেই তাদের বাসে করে কাকরাইল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যাওয়ার জন্য জড়ো হচ্ছেন।

দুপুরে কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন ইকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ উসমান হাদী। তিনি বলেন, আমরা কথার জবাব কথা দিয়ে দেব, হামলা করে নয়। শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার বিষয়ে আমরা পিতৃতুল্য শিক্ষকদের দুঃখ প্রকাশ করতে দেখেছি। কিন্তু সেই শিক্ষকদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তার জন্য সরকার কোনো দুঃখ প্রকাশ করেনি।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ দেখছি। অথচ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিকে কেন্দ্র করে কর্মসূচিতে সব সংগঠন এক হয়েছে। তাদের বলব, আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকেন।

বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালনের অংশ হিসেবে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে সেখানেই ঘুমিয়েছেন। কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, শিবির, ছাত্র অধিকার ছাত্র ফ্রন্ট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান করেছেন। রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ অন্য শিক্ষকরাও সেখানে উপস্থিত হন। এ ছাড়া তাঁদের আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও সাদা দলের সভাপতি অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন ও ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক মঞ্জুর মোর্শেদ ভুইয়া। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কাকরাইল মোড় ও যমুনা অভিমুখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখা গেছে। ব্যারিকেড দিয়ে তারা সেখানেই অবস্থান করছে। সূত্র জানায়, বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষক প্রতিনিধিরা যমুনায় গিয়ে সরকারের সঙ্গে তাঁদের দাবির বিষয়ে আলোচনা করেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে রাত ১০টায় এই বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জানাতে কাকরাইলে আসেন। তবে ভিড় থেকে তাঁর মাথায় বোতল নিক্ষেপের কারণে তিনি আলোচনা শেষ না করেই চলে যান।

যানজট : শিক্ষার্থীদের টানা দুই দিনের কাকরাইল মোড় অবরোধের কারণে রাজধানীতে তীব্র যানজট দেখা গেছে। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এই যানজট আরো বেশি ভোগান্তির সৃষ্টি করে। কাকরাইল মোড় থেকে মত্স্য ভবন পর্যন্ত সড়ক অবরোধ থাকায় এই সড়ক দিয়ে শাহবাগ ও গুলিস্তানের বাসগুলো চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে মগবাজার রোড, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, বীর-উত্তম জিয়াউর রহমান সড়ক ও ভিআইপি সড়কে গাড়ির বাড়তি চাপ পড়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়।

দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জামায়াতের : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের ন্যায়সংগত দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম গতকাল এ বিষয়ে এক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকরা তাঁদের আবাসন সংকটসহ কিছু দাবিকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করছেন। এ আন্দোলনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে। শিক্ষাঙ্গনে এ ধরনের অশান্ত অবস্থা কারো কাম্য নয়।

জুমার আগে দাবি না মানলে শুরু হবে গণ-অনশন : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন বলেছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে। প্রয়োজনে মৃত্যু হবে। আগামীকাল (আজ শুক্রবার) জুমার নামাজের মধ্যে যদি আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া হয়, আমরা জুমার নামাজের পর গণ-অনশনে বসব। গত রাত ১২টার দিকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষে গণমাধ্যমের সামনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সমাবেশ আজ

১০ লাখের বেশি লোক সমাগমের লক্ষ্য

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
১০ লাখের বেশি লোক সমাগমের লক্ষ্য

দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আজ শনিবার আয়োজন করতে যাচ্ছে তাদের জাতীয় সমাবেশ। এবারই প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সর্ববৃহৎ জনসমাগমের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে দলটি। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে নানামুখী প্রস্তুতি।

সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়।

তবে সকাল ১০টা থেকেই থাকবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশ উপলক্ষে প্রায় ১০ হাজার বাস, বিশেষ ট্রেন ও লঞ্চে আসবেন নেতাকর্মীরা। ১০ লাখেরও বেশি মানুষের সমাগম আশা করছে দলটি।

এ জন্য তিনটি বিশেষ ট্রেন রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও ময়মনসিংহ রুটে চলাচল করবে, রেল কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে এর অনুমোদন দিয়েছে।

দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানিয়েছেন, বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে সমাবেশে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবার ও আহতরাও থাকবেন সম্মানিত অতিথি হিসেবে।

সমাবেশের মূল লক্ষ্য ৭ দফা দাবি জনসমক্ষে উপস্থাপন ও আদায়ের অঙ্গীকার।

এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছেঅবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের নিশ্চয়তায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা, সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন এবং এক কোটিরও বেশি প্রবাসী ভোটারকে ভোটাধিকার প্রদান।

জাতীয় সমাবেশ সফল করতে কাজ করছে একটি মূল বাস্তবায়ন কমিটি এবং অধীন আটটি উপকমিটি। দেশের সর্বত্র পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন, ভ্রাম্যমাণ মাইক এবং সাংস্কৃতিক দল নিয়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে। গান, নাটিকা আর স্লোগানে সমাবেশের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নগর থেকে গ্রামান্তরে।

সমাবেশস্থলে থাকবে কড়া নিরাপত্তা।

২০টি নির্দিষ্ট পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্বে থাকবেন, যাঁদের জন্য থাকছে আলাদা ইউনিফর্ম। ঢাকার বাইরে থেকে আসা মানুষের গাড়ি রাখার জন্য ১৫টি আলাদা পার্কিং জোন নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

অতিথিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে থাকবে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ, প্রতিটিতে দুজন এমবিবিএস চিকিৎসক, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও অ্যাম্বুল্যান্স সুবিধা।

বৃহৎ জনসমাগমের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হবে ড্রোন ও ক্যামেরা, যা প্রদর্শিত হবে এলইডি স্ক্রিনে এবং একযোগে প্রচারিত হবে ফেসবুক ও ইউটিউবেও।

এর আগে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জানিয়েছেন, সড়ক, রেল ও নৌপথে সারা দেশ থেকে ঢাকামুখী হবেন লাখো মানুষ। তিনি নগরবাসীর কাছে সম্ভাব্য যানজট ও ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা

পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের প্রয়োজনীয়তা দেখছে না বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের প্রয়োজনীয়তা দেখছে না বিএনপি

ভোটের অনুপাত (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন চায় না বিএনপি। দলটি সংসদের নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন চেয়ে আসছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আগামীর সংলাপে আবার যথারীতি তাদের আগের এ অবস্থানই তারা তুলে ধরবে। এ অবস্থায় ঐকমত্য কমিশন নিজেরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে উচ্চকক্ষ বাতিলের প্রস্তাব করলে, সেটার বিরোধিতা করবে না দলটি।

গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে ৩১ দফার আলোকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেই অঙ্গীকার রক্ষা করবে।

অর্থাৎ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে উচ্চকক্ষ গঠন করবে; মানে দলীয় অঙ্গীকার থেকে সরে যাবে না বিএনপি।

সর্বশেষ ঐকমত্য কমিশনার বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, আমরা সেই জায়গাতেই আছি। আমাদের ৩১ দফার ভিত্তিতে আমরা যে আইডিয়া নিয়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে বলেছিলাম, সেটি হলোযাঁরা দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজন, যাঁদের জাতি গঠনে অবদান আছে এবং যাঁরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, তাঁদের মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার অবদান যেন জাতি গঠনের কার্যক্রমে প্রতিফলিত হয়। জাতি যাতে সমৃদ্ধ হয়, সেই আইডিয়া থেকেই আমরা এই প্রস্তাবটি রেখেছিলাম।

সেখানে আমরা উচ্চকক্ষে ১০০টি আসন রাখার জন্য বলেছিলাম।

এর আগে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়। কিন্তু নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে একমত হতে পারেনি দলগুলো। পরে গত সপ্তাহের সোমবার ঐকমত্য কমিশন ৬৪ জেলা এবং ১২ সিটি করপোরেশন থেকে একজন করে নির্বাচিত সদস্য নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠনের বিকল্প প্রস্তাব করলেও তা সরাসরি নাকচ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ বেশির ভাগ দল।

পরদিন মঙ্গলবার কমিশনের সংলাপে বিএনপিসহ পাঁচটি দল প্রস্তাব করে, সংসদের নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হবে।

অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপিসহ ২১টি দল ভোটের অনুপাতে (পিআর) উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের পক্ষে দলীয় অবস্থান তুলে ধরে। কয়েকটি দল এমনও প্রস্তাব করেছে, উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে সে ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষেরই দরকার নেই।

দীর্ঘ আলোচনায়ও সদস্যরা কিভাবে নির্বাচিত হবেনএ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য না হওয়ায় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাবই বাদ যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়।

এমন পরিস্থিতিতে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী সপ্তাহে সংলাপে উচ্চকক্ষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। কমিশন মনে করে, সমাজে বিরাজমান বৈচিত্র্যকে প্রতিনিধিত্ব করতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রয়োজন রয়েছে।

অন্যদিকে বিদ্যমান সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলো একমত। তবে সংসদের উচ্চকক্ষের মতো নারী সংসদ সদস্যদের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও একমত হতে পারেনি দলগুলো।

কমিশনের প্রথম প্রস্তাব ছিল, সংসদের আসনসংখ্যা বাড়িয়ে ৪০০ করা হবে। ১০০ আসনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে শুধু নারীরা প্রার্থী হবেন। এতে ঐকমত্য না হওয়ায় গত সোমবার কমিশন প্রস্তাব করে ২৫টির বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেএমন দলগুলো অন্তত এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারী প্রার্থী দেবে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বেশির ভাগ দল এ প্রস্তাব নাকচ করে। বিএনপি আগের মতোই জানায়, নারী আসন ১০০ করতে একমত হলেও নির্বাচন হতে হবে বিদ্যমান পদ্ধতিতে অর্থাৎ কোনো দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের আসন সংখ্যার অনুপাতে।

জামায়াত জানায়, পিআর (ভোটের অনুপাতে) পদ্ধতিতে আসন বণ্টন হলে তারা আসন বৃদ্ধিতে রাজি। এনসিপি নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের নতুন ফর্মুলা দেয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংসদে নারী সদস্যদের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নেতারা অভিমত দেন, তাঁরা নারীর ক্ষমতা ও প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর পক্ষে। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসনসংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা ১০০টির মধ্যে ৫০টি নারী আসন সংরক্ষিত চাইবে। আর বাস্তবতার নিরিখে ধাপে ধাপে নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন চাইবে। এর অংশ হিসেবে আগামী নির্বাচনে ৩০০ সংসদ সদস্যের মধ্যে ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ১৫টি আসনে সরাসরি নির্বাচন এবং পরবর্তী নির্বাচন অর্থাৎ চতুর্দশ সংসদ নির্বাচনে ১০% মানে ৩০টি আসনে সরাসরি নির্বাচন হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলটি তাদের মধ্যে ক্ষমতার কিছু ভারসাম্য আনতে রাজি আছে। তবে এমন ভারসাম্য চায় না, যেখানে সরকার প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকবে না।

স্থায়ী কমিটি মনে করে, সার্বিক বিবেচনায় রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। বিএনপি নেতারা অভিমত দেন, যদি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ব্যাপক বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে সংসদীয় গণতন্ত্র তেমন অর্থবহ থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা না থাকলে, সেটা অকার্যকর হয়ে পড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির একজন সদস্য বলেন, আগামীতে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার কিংবা সংসদীয় সরকারযে পদ্ধতিই করা হোক, সরকারপ্রধানকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিতে হবে। তবে আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা নিয়ে আগামীতে আরো আলোচনা হবে।

মন্তব্য
সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা

গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. আশরাফুল হুদা বলেছেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা ছিল। তিনি আরো দাবি করেন, জুলাই চেতনা নস্যাৎ করে পতিত প্রধানমন্ত্রীকে পুনর্বাসন ও জাতীয় নির্বাচন পেছানোর একটি চক্রান্ত চলছে, গোপালগঞ্জের ঘটনা তারই অংশ।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সাবেক আইজিপি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর থাকলে গোপালগঞ্জের মতো এত বড় ঘটনা ঘটত না।

গোয়েন্দা ব্যর্থতাই এই ঘটনার জন্য দায়ী। তিনি আরো বলেন, পুলিশের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না থাকলে এবং যথাযথভাবে কাজ করতে দিলে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব।

সোহাগ হত্যা প্রসঙ্গে আশরাফুল হুদা বলেন, শহরের কেন্দ্রস্থলে হত্যাকাণ্ড ঘটে যাওয়ার পর পুলিশের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। দুই দিন পর বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়, এটা দুঃখজনক।

এখানে কোনো গাফিলতি থাকলে তারও সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, বলেন তিনি।

মব ভায়োলেন্স প্রসঙ্গে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সব সময় ভুক্তভোগীরাই মব ভায়োলেন্স করে না, অনেক সময় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যও এটি সংঘটিত হয়। কেউ কেউ পরিকল্পিতভাবে এমন ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা মব সন্ত্রাস বৃদ্ধির প্রধান কারণএ বিষয়ের ওপর অনুষ্ঠিত ছায়া সংসদে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের হারিয়ে বিজয়ী হয় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের বিতার্কিক দল।

সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, মব সন্ত্রাস জাতীয় জীবনে এক নতুন আপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশটা যেন মবের মুল্লুকে পরিণত হচ্ছে। এটি গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে কলঙ্কিত করছে। সমাজের ক্যান্সার হিসেবে এই সংস্কৃতি বন্ধ করা না গেলে জনজীবনে আতঙ্ক আরো বাড়বে।

মন্তব্য
মার্কিন কূটনীতিকদের প্রতি ট্রাম্প

অন্য দেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
অন্য দেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না

অন্য দেশের পার্লামেন্ট নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য না করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মার্কিন দূতাবাসগুলোতে তারবার্তা পাঠিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তারবার্তায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কি হয়নি, এই নিয়ে কোনো দেশের মার্কিন দূতাবাস বা রাষ্ট্রদূত যেন মন্তব্য না করেন। গত ১৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছে এই তারবার্তা।

এতে বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনো দেশের নির্বাচন নিয়ে সেই দেশের মার্কিন দূতাবাস কিংবা ওয়াশিংটন থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হবে না।

নির্বাচনে বিজয়ী পক্ষকে অভিনন্দন জানানো এবং যথাযথ সময়ে বিজয়ী পক্ষের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মার্কিন স্বার্থ নিয়ে আলোচনা শুরুর দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে।

তারবার্তায় আরো বলা হয়েছে, কোনো দেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কি হয়নি, বৈধ হয়েছে কি হয়নি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলোকে সমুন্নত রাখতে পেরেছে কি পারেনিএসব নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসে কর্মরত কূটনীতিকরা আগ বাড়িয়ে মন্তব্য তো করবেনই না, এমনকি কোনো পক্ষ প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তা এড়িয়ে যেতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

তারবার্তায় বলা হয়, অবশ্য কোনো দেশের নির্বাচন বা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যদি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত স্পষ্ট ও বাধ্যতামূলক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট থাকে, তাহলে এই নির্দেশনার ব্যতিক্রম ঘটবে; তবু সে ক্ষেত্রে ওই দেশের মার্কিন দূতাবাস, রাষ্ট্রদূত বা কর্মরত মার্কিন কূটনীতিকরা কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া জানাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত মুখপাত্ররা প্রতিক্রিয়া জানাবেন।

তারবার্তায় আরো বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো দৃঢ়ভাবে ধরে রেখেছে এবং তা উদযাপনও করছে। অন্যান্য দেশও একই পথ বেছে নিয়েছে। আমাদের প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবে বলেছেন, যেকোনো দেশ, যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, সেই দেশের সঙ্গে তিনি মার্কিন অংশীদারি বিস্তারের পক্ষে। সূত্র : রয়টার্স

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ