ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

মন্দা-বিভক্তির ধাক্কা রাজস্বে

ফারুক মেহেদী ও মো. জাহিদুল ইসলাম
ফারুক মেহেদী ও মো. জাহিদুল ইসলাম
শেয়ার
মন্দা-বিভক্তির ধাক্কা রাজস্বে

অর্থনীতিতে স্থবিরতা। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব। এর প্রভাবে রাজস্ব আয়ে বড় ঘাটতি। নতুন করে যোগ হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিভক্তি নিয়ে কর্মকর্তাদের ঢিলেমি।

এতে রাজস্ব আয়ে চলছে গাছাড়া ভাব। ফলে এটিও রাজস্ব ঘাটতিতে ঘি ঢালছে বলে কথা উঠেছে। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসেই রাজস্ব ঘাটতি ৭১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কর্মকর্তাদের সম্মিলিত কলমবিরতির ফলে দিনে গড়ে অন্তত এক হাজার ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে।
টানা তিন দিন কর্মকর্তারা কাজ না করলে এই ঘাটতি প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। দাবি না মানলে এই আন্দোলন চলবে। এভাবে অব্যাহত কলমবিরতি কিংবা আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হলে সামনে রাজস্ব আয়ে বড় ধাক্কা আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এটি হলে বাস্তবায়নও বড় ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তথ্য-উপাত্ত বলছে, ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও আগের সরকারের সময়ের অর্থনৈতিক স্থবিরতার রেশ কাটিয়ে ওঠা যায়নি। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বিনিয়োগে আস্থাহীনতা, ডলারের উচ্চ দর, উচ্চ সুদের হার, উচ্চ মূল্যস্ফীতি সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি শ্লথ করে দেয়; যার সরাসরি প্রভাব পড়ে রাজস্ব আয়ে। কারণ ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো না চললে, উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানের আয় না হলে সরকারও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব পায় না। এ ঘটনাই ঘটছে চলতি অর্থবছর প্রায় পুরো সময়ে, যার প্রভাবে প্রতি মাসেই দীর্ঘ হয়েছে রাজস্ব ঘাটতি।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, অর্থবছরের ১০ মাসে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৭১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। ৯ মাসে এটি ছিল ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। শেষ এক মাসেই ঘাটতি বেড়েছে পাঁচ হাজার ৮১১ কোটি টাকা।

এ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। আদায়ে ধীরগতির কারণে পরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় তা কমিয়ে চার লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। সে হিসাবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বছরে ৩৬৫ দিনের প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ২৭০ কোটি টাকা আদায় করার কথা। কিন্তু প্রথম ৯ মাসের আদায়ের বিরাট রাজস্ব ঘাটতি দেখা দেওয়ায় তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

ব্যবসা মন্দার কারণে রাজস্ব আয়ে যখন গতি নেই এবং প্রতিদিনই ঘাটতির অঙ্ক বড় হচ্ছিল, তখন আইএমএফের শর্ত মেনে নতুন করে সংস্থাকে দুই ভাগ করা নিয়ে তৈরি হয়েছে বাড়তি বিপত্তি। সরকার এনবিআর বিলুপ্ত করে অধ্যাদেশ জারির পর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আরো বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে এখন আন্দোলনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমনিতেই কিছুদিন ধরে এই ইস্যুতে সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ঢিলেমি। তার ওপর অধ্যাদেশ জারির ফলে তাঁরা আরো একাট্টা হয়ে তা বাতিলের আলটিমেটাম দেওয়ার ফলে রাজস্ব আয়ের দিকে তাঁদের এখন তেমন মনোযোগই নেই। আর এই অবস্থা যত দীর্ঘায়িত হবে রাজস্ব আয়ের নেতিবাচক ধারা তত বেগবান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চলমান তিন দিনের কর্মসূচির ফলেই অন্তত তিন হাজার ৮১০ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হবে বলে মনে করছেন সংস্থার কর্মীরা। তাঁরা দাবি করছেন, অন্যায্যভাবে এনবিআরকে বিভক্ত করা হয়েছে। এর যৌক্তিক সমাধান করতে হবে।

আন্দোলনকারীরা আরো জানান, ব্যাবসায়িক আস্থাহীনতার সঙ্গে এখন রাতের আঁধারে করা সংস্কারে সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মসূচিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে দীর্ঘসূত্রতা, রাজস্ব আদায়ে মন্দা, কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অনেকটাই ভেঙে গেছে এনবিআরের চেইন অব কমান্ড। শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভিলেন মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের জুনিয়র কর্মকর্তারা। তাতে নেতৃত্ব দুর্বল হওয়ায় কমে গেছে কাজের গতি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে সেবাগ্রহীতারা তাঁদের কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এনবিআরের চালচিত্র দেখে অনেকেই আসেননি রাজস্ব ভবনে। চেনা এনবিআর প্রাঙ্গণ অনেকটাই অচেনা রূপ ধারণ করেছে। কর্মব্যস্ততা নেই। নেই ফাইল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি। নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের মতামতের জন্য মিটিংয়ের পরিবেশও হারিয়ে গেছে অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে।

এ ব্যাপারে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, এনবিআরের নীতি ও আদায়কে আলাদা করার ক্ষেত্রে আমরা সব সময়ই নীতিগতভাবে একমত। এত তড়িঘড়ি করে রাতের বেলায় অধ্যাদেশ জারি করায় একটা সন্দেহের জায়গা তৈরি হয়। এটা কোনো চাপের কারণে করা হলো কি না। নীতিগতভাবে এনবিআর পৃথক করায় অংশীজনদের মধ্যে মতপার্থক্য অনেক বেশি না। ভেতরের বিস্তারিত জায়গায় হয়তো তাদের কিছু পার্থক্য রয়েছে। সরকারের ভেতরেও এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনার দরকার ছিল, বাইরেও এটা জরুরি। ভুল-বোঝাবুঝি থাকলে সামনে বাজেট আসছে, কর আদায়ের পরিস্থিতি ভালো না। এমন সময়ে এ বিষয়টা পরিহার করাই শ্রেয় ছিল। আমাদের সংস্কারও করতে হবে আবার সংস্কারের মধ্যে দেখতে হবে অংশীজনরাও যেন নিজেদের অংশীদারি বোধ করে।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজস্ব মূলত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করে। আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, বড় ব্যবসায়ীরা অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য রেখে পালিয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এটা তো স্বাভাবিক।

এমন পরিস্থিতিতে লক্ষ্য পূরণে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কি না, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কর ফাঁকি রোধ, নন-কমপ্লায়েন্ট করদাতাদের নোটিশ দিয়ে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়ের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত বছরের তুলনায় মোটামুটি প্রবৃদ্ধি আছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি যাওয়া খুবই চ্যালেঞ্জিং।

আলোচ্য সময়ে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ও আয়করএই তিন খাতের কোনোটিতেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। তিন খাতেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায় কমেছে।

আলোচ্য সময়ে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হয়েছে আয়কর খাতে। এ খাতে ঘাটতি ২৯ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকার মতো। আমদানি কমে যাওয়ায় অগ্রিম আয়কর আদায়ও কমেছে। রাজস্ব আদায়ে বড় অবদান রাখে ভ্যাট খাত। আমদানি, স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন, সরবরাহ, জোগানদার পর্যায় পর্যন্ত এই খাতের বিস্তৃতি। এর সর্বশেষ ধাপ ক্রেতা বা ভোক্তা। আমদানি, উৎপাদন, সরবরাহের পাশাপাশি উৎপাদন কমে যাওয়ার ফলে এই খাত বড় ধাক্কা খেয়েছে।

এ ছাড়া ব্যাংকে টাকা রাখার ওপর আবগারি শুল্ক আদায় করে এনবিআর। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার পরিমাণ কমায় আবগারি শুল্কেও পড়েছে এর প্রভাব। ভোগ কমে যাওয়ায় কমেছে উৎপাদনও। শিল্প কাঁচামাল ও পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় আমদানি শুল্ক আদায়ে ঘাটতি দেখা গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আমদানি সহজে বাড়বে না। কিছু ভোগ্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়ায়ও এই খাতে আদায় কমেছে। যদিও এতে দেশের মানুষ উপকৃত হয়েছে।

আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, পৃথিবীর সব দেশের নিজস্ব রাজস্ব আদায়কারী সংস্থা রয়েছে। অথচ কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই এনবিআর বিলুপ্ত করতে অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে অংশীজন বা ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে কোনো আলোচনাই করা হয়নি। একটি বিশেষ চক্র নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে সরকারকে ভুল বুঝিয়ে একতরফাভাবে খসড়া অধ্যাদেশ তৈরি করেছে। এ ক্ষেত্রে কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের মতামত দূরের কথা, অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র কমিটি বা এনবিআর সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশও আমলে নেওয়া হয়নি। সমীক্ষা ছাড়া এনবিআর বিলুপ্ত করলে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হবে। এতে দেশের অর্থনীতি ধসে পড়তে পারে।

এনবিআরের সাবেক সদস্য (কাস্টমস) জামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, একটা কর্মসূচি হলে রাজস্ব আদায়ে কিছু প্রভাব পড়েই। যারা কর্মসূচি করছে তাদের অবশ্যই কোনো স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় আছে। এত দিনের ঐতিহ্যবাহী এনবিআরের বিলুপ্তি হয়তো তারা মানসিকভাবে মেনে নিতে পারছে না।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম মাসরুর রিয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, শুধু রাজস্ব আদায় ছাড়াও যেহেতু সামনে বাজেট সেহেতু এটা আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করা দরকার। সেপারেশন গুরুত্বপূর্ণ, সেই সঙ্গে সেপারেশনের পরের কাঠামো সফল করতে গেলে আয়কর-কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সদিচ্ছা ও সহযোগিতা প্রয়োজন। রাজস্ব আদায় ও বাজেটের কার্যক্রম গতিশীল রাখতে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত এ বিষয়ের সমাধান দরকার।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আজ রাজপথে নামছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আজ রাজপথে নামছে বিএনপি

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ হত্যাকাণ্ডের অপপ্রচার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণভাবে আজ থেকে রাজপথে থাকবে বিএনপি। বিএনপি মনে করছে, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজপথ দখল করার চেষ্টা করছে বলে মনে করছে বিএনপি। এ জন্য রাজপথে বিএনপিও শক্তি ও জনসমর্থন দেখাবে।

এখন পর্যন্ত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দিচ্ছে না দলটি।

এমনকি এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য দলে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতা। দলের নেতারা বলছেন, হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুজনকে চিহ্নিত করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। কিন্তু বিরোধী পক্ষ একতরফাভাবে বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছে। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করছে।
এর জবাব দিতে রাজপথে শক্তি দেখাবে দলটি। এরই অংশ হিসেবে আজ সোমবার ছাত্রদল ও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং অন্য অঙ্গসংগঠন পৃথক শোডাউন করবে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী কালের কণ্ঠকে বলেন, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে। জনগণ বিএনপির সঙ্গে আছে।
জনগণকে নিয়ে দেশবিরোধীদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা হবে।

মাঠে নামছে ছাত্রদল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, গোপন তৎপরতায় দীর্ঘদিন ধরে অভ্যস্ত গুপ্ত সংগঠন কর্তৃক মব সৃষ্টির অপচেষ্টা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আজ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল করবে। গুপ্ত সংগঠন বলতে ইসলামী ছাত্রশিবির ও তাদের সহযোগী সংগঠনকে বোঝানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।

ছাত্রদলের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি সারা দেশের সব জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

কর্মসূচির বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, গুপ্ত সংগঠন হিসেবে সেসব সংগঠনকেই বোঝানো হয়েছে, যারা প্রকাশ্যে নিজেদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার বদলে গোপনে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। গত ৫ আগস্টের পর একটি মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও তাদের এহেন গুপ্ত কার্যক্রম এ দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে অসহনশীল করে তুলছে এবং রাজনৈতিক বিষয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে তুলছে। এ রকম কুচক্রী কার্যক্রমের বিরুদ্ধেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যেন দেশবাসীকে এসব বিভ্রান্তিকর বিষয়ে সচেতন করে তোলা যায়।

গুপ্ত সংগঠন বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ছত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যারা ক্যাম্পাসগুলোতে মব সৃষ্টি করে সাধারণ শিক্ষার্থী নামে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করছে, তারাই গুপ্ত সংগঠন। ছাত্রশিবির এবং গুপ্তভাবে সংগঠন পরিচালনা করতে ছাত্রশিবিরকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে, আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তারা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির মেয়াদ আরো দুই মাস বাড়ল

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির মেয়াদ আরো দুই মাস বাড়ল

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরো দুই মাস (৬০ দিন) বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ১৩ মে থেকে তাঁদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতার মেয়াদ দুই মাস বাড়ানো হয়েছিল। সেই মেয়াদ গতকাল শেষ হয় ।

মেয়াদ বাড়ানোর আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কমিশন্ড কর্মকর্তাদের (কোস্ট গার্ড ও বিজিবিতে প্রেষণে নিয়োজিত সমপদমর্যাদার কর্মকর্তারাসহ) ‌‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮-এর ১২(১) ও ১৭ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করা হলো। এর মেয়াদ হবে ১৪ মার্চ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত। সারা দেশে তাঁরা এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮-এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারবেন।

প্রথমে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের (সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তা) এই ক্ষমতা দেওয়া হয়। অর্থাৎ শুধু সেনাবাহিনী নয়, বিমান ও নৌবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদেরও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়। তখন ৬০ দিনের জন্য এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।

সেই মেয়াদ নভেম্বরের মাঝামাঝি শেষ হয়েছিল। পরে সেই ক্ষমতার মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়।

মন্তব্য

শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ বিএনপির

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক পুলিশপ্রধান (আইজিপি)  বেনজীর আহমেদসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দিয়েছে বিএনপি।

গতকাল রবিবার দুপুরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে নিয়ে এই অভিযোগ দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য এবং তথ্য সেলের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন খান।

অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গুমের ঘটনায় ১১ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে লিখিত অভিযোগে।

তাঁরা হলেনঝালকাঠির নলছিটির মোহাম্মদ আলী খান, সাবেক যুবদল নেতা মো. জিল্লুর রহমান, আকিদুল আলী, খোরশেদ আলম, অ্যাডভোকেট আশরাফ আলী, মো. বাবুল, এনামুল, এরশাদ আলী, মো. গিয়াস উদ্দিন খান, মো. কবির উদ্দিন খান ও নজরুল ইসলাম।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এসব ভুক্তভোগীকে অপহরণের পর আয়নাঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। গত বছর ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পলায়নের পর মোহাম্মদ আলীকে হাত ও চোখ বেঁধে পূর্বাচলের শেষ প্রান্তে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফেলে আসা হয়। পাঁচ বছর তিন মাস ১৩ দিন পর তিনি মুক্তি পান।

এ ঘটনায় মোহাম্মদ আলী খান বিএনপি মহাসচিবের মাধ্যমে ন্যায়বিচার চেয়ে আবেদন করেন।

তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করে আবেদনটি করা হয় বলে জানান সালাহউদ্দিন খান।

সালাহউদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন, ভুক্তভোগীরা শেখ হাসিনাসহ ১৬ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৩০ থেকে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে ন্যায়বিচারের আশায় আবেদন করেছেন। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, শুধু বিএনপি করার অপরাধে বিগত সরকারের নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাঁদের।

মন্তব্য

সোহাগের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

বরগুনা প্রতিনিধি
বরগুনা প্রতিনিধি
শেয়ার
সোহাগের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে পুরান ঢাকায় নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মনি। গতকাল রবিবার বিকেলে তিনি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের সোহাগের গ্রামের বাড়িতে যান। তিনি স্থানীয় কাকচিড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তিনি নিহত সোহাগের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।

সোহাগের পরিবারের যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকারও আশ্বাস দেন। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে বিএনপির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন। স্বামীর হত্যার বিচার চেয়ে তখন সোহাগের স্ত্রী লাকি আক্তার বলেন, আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাই।
সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মনি বলেন, এই এলাকার সন্তান ঢাকার মিটফোর্ডের ব্যবসায়ী সোহাগকে তাঁর ব্যাবসায়িক পার্টনার ও তাদের ভাড়াটেরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। বিএনপি ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দলের পক্ষ থেকে এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে। সম্পৃক্তদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপি কোনো অপকর্মকে প্রশ্রয় দেয় না। পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক চৌধুরী মো. ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ফজলুল হক মাস্টার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম সফিকুজ্জামান মাহফুজ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাবেদুল ইসলাম জুয়েল, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম নাভিল প্রমুখ।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ