ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ইউনিটে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৯৪ শতাংশই ফেল করেছেন। এসব শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই এসএসসি ও এইচএসসিতে ডবল জিপিএ ৫ পাওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটেও ৯০ শতাংশের বেশি ভর্তীচ্ছু ফেল করেছেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েও প্রায় সোয়া লাখ শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।
দুই জিপিএ ৫ পেয়েও ফেল সোয়া লাখ
শরীফুল আলম সুমন

শিক্ষাবিদরা বলছেন, অনেক শিক্ষার্থী প্রথাগত পড়াশোনায় ভালো ফল করছেন। অনেক ক্ষেত্রে সরকার তার সাফল্য দেখাতে জিপিএ ৫ বাড়িয়েছে। শিক্ষকদের ওভার মার্কিংয়ে বাধ্য করা হয়েছে। আবার অদক্ষ শিক্ষকরা কম সময়ে তাড়াহুড়া করে খাতা দেখতে গিয়ে গড়পড়তা নম্বর দিচ্ছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে তিনটি ইউনিটে ভর্তির জন্য মোট তিন লাখ দুই হাজার ৬০৬ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেন। এর মধ্যে ডবল জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ৪১ হাজার ৯৪ জন।
ভর্তি পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশ হওয়া দুই ইউনিটে ডবল জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ৩৩ হাজার ৫৬১। তবে বিজ্ঞান ও কলা ইউনিটে পাস করা শিক্ষার্থী ১৮ হাজার ৭৪৭ জন। যদিও উত্তীর্ণদের সবাই ডবল জিপিএ ৫ পাওয়া নন। তবে জিপিএ ৫ পাওয়া দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও প্রায় এক লাখ ২১ হাজার ডবল জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ফেল করেছেন।
বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করার কারণ জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের প্রশ্নও একই। পাবলিক পরীক্ষায় এত ভালো ফল করেও কেন বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ফেল করছে? এ ব্যাপারে গবেষণা হওয়া দরকার। তবে আমার যা মনে হয়, আমাদের শিক্ষার্থীরা যা পাওয়ার কথা নয়, তা তাদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। সরকার মনে করে, যত বেশি এ প্লাস দেখাবে, সেটা তাদের অর্জন, তাদের সাফল্য। এ জন্য যারা খাতা দেখবেন, তাঁদেরও ওভার মার্কিং করতে বলে দেওয়া হতো। ফলে যে শিক্ষার্থীর পাওয়ার কথা বি প্লাস, সে পেয়ে যাচ্ছে এ প্লাস।’
অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ বলেন, ‘শিক্ষকদের অনেক বেশি খাতা দেখতে দেওয়া হয়। আসলে সরকার কম সময়ে ফল প্রকাশ করে তাদের সাফল্য দেখাতে চায়। ফলে ওই শিক্ষক যে মার্কিংটা করছেন, সেটাও ফেয়ার হয় না। সর্বোপরি আমরা আমাদের শিক্ষার মানের দিক দিয়ে খুবই খারাপ জায়গায় আছি। আমাদের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নেই। শিক্ষা ব্যবস্থাটা খুবই দুর্বল। স্কুল-কলেজে পড়ানো হয় না। যা পড়ানো হয়, তা প্রাইভেট-কোচিংয়ে। কোনো মনিটরিং নেই, জবাবদিহি নেই। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় যে স্ট্যান্ডার্ডে প্রশ্ন করা হয়, ডবল জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই এর সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না।’
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেন মাত্র ৫.৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৯৪.০৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছেন। এই ইউনিটে এবার এক হাজার ৮৯৬টি আসনের বিপরীতে এক লাখ ৪৬ হাজার ৬৯৪ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেন। ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেন মাত্র সাত হাজার ৪৩৭ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেছেন ছয় হাজার ৯২২ জন, মানবিক থেকে ৩৯৩ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ১২২ জন।
এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন মাত্র ৯.৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৯০.১৫ শতাংশ ফেল করেছেন। এই ইউনিটের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এক লাখ ১৪ হাজার ৯০৪ জন শিক্ষার্থী। পাস করেছেন ১১ হাজার ৩১০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মানবিক বিভাগের পাঁচ হাজার ৭১৪ জন, বিজ্ঞানে চার হাজার ৮৫৭ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে ৭৩৯ জন।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ ফল এখনো প্রকাশিত হয়নি। আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে যাঁরা শুধু ব্যবসায় বিভাগের শিক্ষার্থী, তাঁদের আবার পরীক্ষায় বসতে হবে। এই ইউনিটে আসন রয়েছে এক হাজার ৫০টি। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ৪০ হাজার আটজন শিক্ষার্থী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর মেধা যাচাই করা হয়। এর সঙ্গে পূর্ববর্তী ফলের খুব একটা মিল নেই। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নে এসএসসি ও এইচএসসির বেসিক লেভেলটা ঠিক রেখেই প্রশ্ন করা হয়। যখন ফল প্রকাশিত হয়, তখন আমরাও হোঁচট খাই। একজন শিক্ষার্থী এসএসসি-এইচএসসির দুটিতেই ইংরেজিতে ৮০ প্লাস নম্বর পেয়ে সে পাস মার্কই উঠাতে পারছে না।’
ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘আমার মনে হয়, স্কুল-কলেজ পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীকে যেভাবে তৈরি করা হচ্ছে, সেটা রাইট ওয়েতে হচ্ছে না। একজন শিক্ষার্থীর দুর্বল ভিত্তির কারণে এ অবস্থা হচ্ছে। আবার ফলাফলের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক একটা প্রতিযোগিতা থাকে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে সেটা নেই। আমরা আসলে মানের জায়গায় অনেক পিছিয়ে আছি। যারা শিখছে, তারা ঠিকভাবে শিখছে না। যাঁরা শেখাচ্ছেন, তাঁরাও ঠিকভাবে শেখাচ্ছেন না। ভর্তি পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ফেলের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটিটাই প্রকাশ পায়।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষার মান তুলে ধরে—এমন তিনটি বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বেশ খারাপ। এর মধ্যে দুটি সূচকে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। ২০২২ সালে ইউএনডিপি এবং মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম নলেজ ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত ২০২১ সালের বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকে ১৫৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২০তম।
ফ্রান্সভিত্তিক বিজনেস স্কুল ইনসিয়েড এবং ওয়াশিংটনভিত্তিক পোর্টুল্যান্স ইনস্টিটিউটের ২০২১ সালের গ্লোবাল ট্যালেন্ট কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্সে ১৩৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৩ নম্বরে। প্রতিভা সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। জাতিসংঘের সংস্থা ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের প্রকাশিত ২০২১ সালের বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে ১৩২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৬ নম্বরে। উদ্ভাবন সূচকেও দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নিচে আছে বাংলাদেশ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের তদারক ও মূল্যায়ন বিভাগের ২০২৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনেও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের দুর্বলতার চিত্র উঠে আসে।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থীর ইংরেজিতে অবস্থা খারাপ। এর মধ্যে ২৯ শতাংশের অবস্থা খুবই খারাপ এবং ৩২ শতাংশের অবস্থা খারাপ বা গড়পড়তা। একই শ্রেণিতে গণিতে ৪৩ শতাংশের অবস্থা খারাপ বা গড়পড়তা। এর মধ্যে ১৩ শতাংশের অবস্থা খুব খারাপ। অষ্টম শ্রেণিতে ইংরেজি বিষয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ব্যান্ড ২ ও ৩ স্তরে আছে। ২৮ শতাংশ মোটামুটি ভালো।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ষষ্ঠ শ্রেণির প্রায় ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে খারাপ অবস্থায় আছে। এর মধ্যে ১৩ শতাংশের অবস্থা খুবই খারাপ। অষ্টম শ্রেণিতে গণিতে ২২ শতাংশ খারাপ অবস্থায় এবং ৩৬ শতাংশ মোটামুটি ভালো অবস্থায় আছে। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা মাতৃভাষা বাংলায়ও পিছিয়ে আছে।
মাউশি অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. আবদুল মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমান পদ্ধতিতে মাধ্যমিক শিক্ষা হচ্ছে রেজাল্ট বেইসড এডুকেশন, এখানে লার্নিং হয় না। এখানে মূলত চেষ্টা করা হয় কত শর্টকাট পদ্ধতিতে ভালো করা যায়। শিক্ষকরা নিজেদের বঞ্চিত মনে করেন, তাঁরা পড়ালেখা নিয়ে, শিক্ষার্থীদের নিয়ে, ক্লাসরুম নিয়ে ভাবেন না। আসলে আমাদের শিক্ষার পদ্ধতিতে গলদ। আমরা এখনো মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারিনি।’
বর্তমানে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক ড. আবদুল মান্নান বলেন, ‘চাকরির পরীক্ষা বা ভর্তি পরীক্ষায় না জানাকে অ্যাসেস করা হয়। কিন্তু একাডেমিক পরীক্ষায় লার্নিংকে অ্যাসেস করা হয়। ফলে যাদের লার্নিংয়ে গ্যাপ থাকে তারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় গিয়ে আটকে যায়।’
সম্পর্কিত খবর

আজ রাজপথে নামছে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ‘অপপ্রচার ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণভাবে আজ থেকে রাজপথে থাকবে বিএনপি। বিএনপি মনে করছে, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজপথ দখল করার চেষ্টা করছে বলে মনে করছে বিএনপি। এ জন্য রাজপথে বিএনপিও শক্তি ও জনসমর্থন দেখাবে।
এখন পর্যন্ত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দিচ্ছে না দলটি।
মাঠে নামছে ছাত্রদল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, গোপন তৎপরতায় দীর্ঘদিন ধরে অভ্যস্ত গুপ্ত সংগঠন কর্তৃক মব সৃষ্টির অপচেষ্টা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আজ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল করবে। গুপ্ত সংগঠন বলতে ইসলামী ছাত্রশিবির ও তাদের সহযোগী সংগঠনকে বোঝানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।
ছাত্রদলের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি সারা দেশের সব জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
কর্মসূচির বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘গুপ্ত সংগঠন হিসেবে সেসব সংগঠনকেই বোঝানো হয়েছে, যারা প্রকাশ্যে নিজেদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার বদলে গোপনে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। গত ৫ আগস্টের পর একটি মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও তাদের এহেন গুপ্ত কার্যক্রম এ দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে অসহনশীল করে তুলছে এবং রাজনৈতিক বিষয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে তুলছে। এ রকম কুচক্রী কার্যক্রমের বিরুদ্ধেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যেন দেশবাসীকে এসব বিভ্রান্তিকর বিষয়ে সচেতন করে তোলা যায়।’
গুপ্ত সংগঠন বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘ছত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যারা ক্যাম্পাসগুলোতে মব সৃষ্টি করে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ নামে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করছে, তারাই গুপ্ত সংগঠন। ছাত্রশিবির এবং গুপ্তভাবে সংগঠন পরিচালনা করতে ছাত্রশিবিরকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে, আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তারা।’

সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির মেয়াদ আরো দুই মাস বাড়ল
বিশেষ প্রতিনিধি

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরো দুই মাস (৬০ দিন) বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ১৩ মে থেকে তাঁদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতার মেয়াদ দুই মাস বাড়ানো হয়েছিল। সেই মেয়াদ গতকাল শেষ হয় ।
মেয়াদ বাড়ানোর আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কমিশন্ড কর্মকর্তাদের (কোস্ট গার্ড ও বিজিবিতে প্রেষণে নিয়োজিত সমপদমর্যাদার কর্মকর্তারাসহ) ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮’-এর ১২(১) ও ১৭ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করা হলো। এর মেয়াদ হবে ১৪ মার্চ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত। সারা দেশে তাঁরা এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ‘ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮’-এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারবেন।
প্রথমে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের (সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তা) এই ক্ষমতা দেওয়া হয়। অর্থাৎ শুধু সেনাবাহিনী নয়, বিমান ও নৌবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদেরও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়। তখন ৬০ দিনের জন্য এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।

শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক পুলিশপ্রধান (আইজিপি) বেনজীর আহমেদসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দিয়েছে বিএনপি।
গতকাল রবিবার দুপুরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে নিয়ে এই অভিযোগ দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য এবং তথ্য সেলের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন খান।
অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গুমের ঘটনায় ১১ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে লিখিত অভিযোগে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এসব ভুক্তভোগীকে অপহরণের পর আয়নাঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। গত বছর ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পলায়নের পর মোহাম্মদ আলীকে হাত ও চোখ বেঁধে পূর্বাচলের শেষ প্রান্তে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফেলে আসা হয়। পাঁচ বছর তিন মাস ১৩ দিন পর তিনি মুক্তি পান।
তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করে আবেদনটি করা হয় বলে জানান সালাহউদ্দিন খান।
সালাহউদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা শেখ হাসিনাসহ ১৬ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৩০ থেকে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে ন্যায়বিচারের আশায় আবেদন করেছেন। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, শুধু বিএনপি করার অপরাধে বিগত সরকারের নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাঁদের।

সোহাগের পরিবারের পাশে তারেক রহমান
বরগুনা প্রতিনিধি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে পুরান ঢাকায় নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মনি। গতকাল রবিবার বিকেলে তিনি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের সোহাগের গ্রামের বাড়িতে যান। তিনি স্থানীয় কাকচিড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তিনি নিহত সোহাগের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।