৫ আগস্টের পর জুলাই বিপ্লবের গায়ে ‘পাকিস্তানি ট্যাগ’ লাগানোর প্রকাশ্য একটি চেষ্টা দৃশ্যমান। বিভিন্ন মহল থেকে বলার চেষ্টা করা হচ্ছে, পাকিস্তানপন্থীরা আবার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে জোর অপপ্রচার চলছে। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে এই আলোচনায় সুধীসমাজ বেশ আগ্রহী।
অভিমত
বিশ্বব্যাপী প্রফেসর ইউনূসের সুপার ডিপ্লোমেসি
- অদিতি করিম

এ রকম পরিস্থিতির মধ্যে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব ঢাকা সফরে এসেছেন গত বুধবার। দীর্ঘ ১৫ বছর বিরতির পর অনুষ্ঠিত হলো দুই দেশের সচিব পর্যায়ে বৈঠক।
গত বছর ৮ আগস্ট রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেওয়ার পর কূটনীতির ক্ষেত্রে ড. ইউনূস প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চমক দেখাচ্ছেন। প্রচলিত কূটনীতির ধারার বাইরে গিয়ে নিজের ব্যক্তিত্ব, আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি কাজে লাগিয়ে তিনি শুধু বাংলাদেশকে একটি সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে যাননি, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় একটি নতুন দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘সুপার ডিপ্লোমেসি’র সুফল পেতে শুরু করেছে। তিনি তাঁর অবস্থান থেকে বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে নিজের পক্ষে নিয়ে আসতে নিরন্তর চেষ্টা করছেন। প্রচলিত ধারার দীর্ঘসূত্রতার কূটনীতির পরিবর্তে তিনি পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্পর্কের আলোকে দেশের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছেন। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের দ্বার উন্মোচনের বিষয়টিই ধরা যাক, পাকিস্তানের কাছে আমরা ৪.৩ বিলিয়ন ডলার পাই। আটকে পড়া পাকিস্তানিরা এ দেশে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছে। তাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে কোনো ধরনের অগ্রগতি নেই। একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী আজ পর্যন্ত ক্ষমা চায়নি। আমরা যদি দুই দেশের মধ্যে কথা বলা বন্ধ রাখি, আমরা যদি তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না রাখি, তাহলে শেষ পর্যন্ত আমাদেরই ক্ষতি। কিন্তু সব কিছুর আগে দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কূটনীতিতে রাগ, মান-অভিমানের স্থান নেই।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানকে পরাজিত করেই আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর আলাদা হয়ে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে সিঙ্গাপুর এখন মালয়েশিয়ার চেয়ে অনেক সমৃদ্ধ একটি দেশ। সিঙ্গাপুরেরও বেদনা আছে। মালয়েশিয়া রীতিমতো তাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিল। কিন্তু সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করেনি; বরং দুই দেশের সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরমাণু বোমা ফেলে জাপানকে বিধ্বস্ত করেছিল আমেরিকা। ওই ক্ষত এখনো বয়ে বেড়ায় জাপান। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন জাপানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বিশ্বে এ রকম উদাহরণ অনেক রয়েছে। ১৯৭১ সালের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত পাকিস্তান ভোগ করছে। এখন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক থাকতেই পারে। আন্তর্জাতিক কূটনীতি হলো একটি বাস্তবতা। কূটনীতির ধরন এমন হওয়া উচিত, যাতে নিজ দেশের স্বার্থ শেষ পর্যন্ত রক্ষিত হয়। ড. ইউনূস সেই ধারার সূচনা করেছেন। গত ১৫ বছর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে, গালাগাল করে আমরা কী পেয়েছি? আমরা কি ৪.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেরত পেয়েছি? আমরা কি আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরত পাঠাতে পেরেছি? আমরা কি পাকিস্তানকে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য রাজি করাতে পেরেছি? বরং ক্ষতি হয়েছে আমাদের। অথচ ড. ইউনূসের ‘সুপার ডিপ্লোমেসি’র কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে এখন আমাদের যেমন সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটছে, তেমনি পাওনা টাকা আদায়ের ব্যাপারে আলোচনার দুয়ার উন্মুক্ত হয়েছে। আমরা জানি, চটজলদি এই টাকা পাওয়া যাবে না। কিন্তু একটা প্রক্রিয়া তো শুরু হলো। বাংলাদেশ যে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের সামনে এই দাবি উত্থাপন করল, এটি একটি বড় কূটনৈতিক বিজয়।
শুধু পাকিস্তানের উদাহরণ দিয়ে ড. ইউনূসের ‘সুপার ডিপ্লোমেসি’র পুরোটা বোঝানো যাবে না। ড. ইউনূস এমন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব, যিনি বিশ্বের যেকোনো সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। বিশ্বজুড়ে তাঁর পরিচিতি ও অবস্থানের কারণে তিনি যেকোনো বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষে দর-কষাকষি করতে পারেন। এই যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল, তখন আমরা ড. ইউনূসের ‘সুপার ডিপ্লোমেসি’ প্রত্যক্ষ করেছি। তিনি দ্রুততম সময়ে অন্য উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে দ্রুত চিঠি দিতে হবে। অন্য কেউ হলে কী করত? আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা কী? এ ধরনের ঘটনার পর আমরা চুপ করে বসে থাকি এবং অপেক্ষা করি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়। আমরা ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাসকে জিজ্ঞেস করতাম কী করা যায়, তারা অপেক্ষা করার পরামর্শ দিত। অতীতে এভাবেই সংকট সমাধানের চেষ্টা হয়েছে।
কিন্তু ড. ইউনূসের ‘সুপার ডিপ্লোমেসি’ তা বলে না। ড. ইউনূসের ‘সুপার ডিপ্লোমেসি’র মূল তত্ত্ব হলো দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের স্বার্থ রক্ষা করা। তিনি তা-ই করেছেন। দ্রুত মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চিঠি পাঠিয়েছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টাও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরকে (ইউএসটিআর) চিঠি পাঠিয়েছেন। দ্রুত এই উদ্যোগের ফল আমরা হাতেনাতে পেয়েছি। আমরা দেখতে পেলাম, বাংলাদেশসহ ৭৫টি দেশের ওপর শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি যে ড. ইউনূসের ‘সুপার ডিপ্লোমেসি’র কারণে হয়েছে তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
অতীতে ভারতের সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক দেখেছি। কিন্তু এই সম্পর্কের নামে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিতেও দেখেছি আমরা। ভারতের সমর্থন ও সহানুভূতি পেতে আমরা নিজেদের আত্মমর্যাদা, আমাদের স্বার্থ—সব কিছু জলাঞ্জলি দিয়েছি। ভারতের অনুগত রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের দেশে-বিদেশে পরিচিত করিয়েছি। কিন্তু ড. ইউনূস সেই পথে হাঁটেননি। তিনি একদিকে যেমন ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা বলছেন, আবার ভারতের ‘চিকেন নেক’ বঙ্গোপসাগর ব্যবহার করে দুই দেশ কিভাবে উপকৃত হতে পারে তা-ও তুলে ধরে বিশ্বকূটনীতিতে একটি নতুন দর্শন সামনে এনেছেন। একইভাবে তিনি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থের বিষয়গুলোও তুলে ধরছেন। এ ধরনের আত্মমর্যাদার কূটনীতি বাংলাদেশ বহুদিন দেখেনি। ভারত আমাদের নিকট প্রতিবেশী। তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রাখতেই হবে। সব কিছু বদলানো গেলেও প্রতিবেশী বদলানো যায় না। কিন্তু এই সম্পর্কের রূপরেখা কেমন হবে, এই সম্পর্ক কিভাবে বিকশিত হবে, আগে সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা ছিল না। ভারত মানেই জুজু, তাদের ভয় পেতে হবে। তারা যেটা বলবে সেটাই করবে। কিন্তু ড. ইউনূস সেই পথে হাঁটেননি। বরং তিনি দুটি রাষ্ট্রের সমান মর্যাদার বিষয়কে সামনে এনেছেন। প্রচলিত কূটনৈতিক চ্যানেলের বাইরে গিয়ে সরাসরি নরেন্দ্র মোদির সামনে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।
বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। কিন্তু ভারত নিজেই দ্রুত বুঝবে, এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতেরই ক্ষতি বেশি হবে। আর এই উপলব্ধির সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও আমরা দেখব যে ড. ইউনূস চীনে গিয়ে বাংলাদেশের জন্য কৌশলগত উন্নয়নের বড় প্রস্তাবগুলো দিয়েছেন। কোন কোন খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ দরকার এবং কোন কোন খাতে বাংলাদেশ চীনের সহায়তা পেতে পারে, হাতে-কলমে তিনি তা দেখিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বার্থ যেখানে ক্ষুণ্ন হচ্ছে সেখানে ড. ইউনূস প্রচলিত ধারার কূটনীতির বাইরে গিয়ে সরাসরি কথা বলছেন।
উদাহরণ হিসেবে এখানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দণ্ডিত বাংলাদেশিদের কথা বলা যায়। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকে সমর্থন করতে গিয়ে তাঁরা ওই দেশে বিক্ষোভ করেছিলেন। দেশটির আইন অনুসারে তাঁদের গ্রেপ্তারের পর দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশি ওই বন্দিদের মুক্তি দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাঁরা দেশে ফিরেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। কোনো বিদেশি দণ্ডিতকে এভাবে মুক্তি দেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। এটি সম্ভব হয়েছে একমাত্র ড. ইউনূসের কারণে।
আবার আমরা লক্ষ করছি, গত আট মাসে অর্থনীতিতে নানা টানাপড়েনের পরও দেশের অর্থনীতি এখন পর্যন্ত সচল রয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো প্রবাসী বাংলাদেশিরা সব কিছু উজাড় করে দিয়ে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। ড. ইউনূসের প্রতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের এটি আস্থা ও কৃতজ্ঞতার প্রমাণ। এটি হলো ড. ইউনূসের ‘সুপার ডিপ্লোমেসি’র একটি বড় উদাহরণ।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতেও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল খুবই অনুল্লেখযোগ্য। আন্তর্জাতিক কোনো ফোরামে বাংলাদেশকে সপ্রতিভ দেখা যায়নি, বরং বাংলাদেশের কূটনীতিকরা আন্তর্জাতিক ফোরামে যোগদান করতে পারলেই নিজেদের ধন্য মনে করতেন। সেই অবস্থান থেকেও সরে এসেছে বাংলাদেশ। এটি সম্ভব হয়েছে ড. ইউনূসের কারণে।
আমরা লক্ষ করছি, বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহায়তা দিচ্ছে। এটি ড. ইউনূসের ‘সুপার ডিপ্লোমেসি’র চমক। ড. ইউনূস শুধু একজন সরকারপ্রধান নন, তিনি একজন বিশ্বনেতাও। এ কারণে টাইম ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় ড. ইউনূসকে নির্বাচিত করেছে। ড. ইউনূস সম্পর্কে টাইম ম্যাগাজিনে লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন। হিলারি শুধু সাবেক ফার্স্ট লেডি কিংবা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নন, বিশ্বের একজন প্রভাবশালী নীতিনির্ধারক তিনি। হিলারি ক্লিনটন লিখেছেন, ‘ড. ইউনূস বাংলাদেশকে নিপীড়নের ছায়া থেকে বের করে আনছেন।’
ড. ইউনূস এখন বিশ্বনেতা। তিনি বিশ্বশান্তির দূত। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রতি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও আস্থা অর্জন সম্ভব হয়েছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বের কারণেই। সব অপপ্রচার, ষড়যন্ত্র তিনি একাই রুখে দিচ্ছেন। আর সে কারণে তাঁর হাত ধরে বাংলাদেশ বিশ্বে নতুন পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করছে। তিনি সব সময় বিশ্বকে বলছেন যে বাংলাদেশের কাছ থেকে বিশ্বের অনেক কিছু নেওয়ার আছে, অনেক কিছু শেখার আছে। বাংলাদেশকে দুর্বল ভাবমূর্তি থেকে সরিয়ে ড. ইউনূস নতুন ব্র্যান্ডিংয়ে উপস্থাপন করছেন। সেই ব্র্যান্ডিং হলো বাংলাদেশের উদ্দীপনা, তারুণ্যের শক্তি ও সম্ভাবনা। ড. ইউনূসের ‘সুপার ডিপ্লোমেসি’তে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
লেখক : নাট্যকার ও কলাম লেখক
ই-মেইল: auditekarim@gmail.com
সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল
সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে
বিশেষ প্রতিনিধি

প্রায় দুই দশক পর জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামীকাল শনিবার ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ হবে। বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত দলটির নেতাকর্মীরা।
সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াত।
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক সংস্কার জরুরি। কোনো ষড়যন্ত্র যেন এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। অংশ নেবেন ইসলামী দলগুলোর নেতারা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে আমাদের দল নানা নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার কিছুটা ফিরে এসেছে।
তিনি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি চান তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। দলটির পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
জুলাই মাসে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি বলেও দাবি করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল।
তিনি জানান, সমাবেশ সফল করতে একটি বাস্তবায়ন কমিটিসহ আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ মাইক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাবেশের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সমাবেশে থাকবে ২০টি পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ঢাকার আশপাশ থেকে আগতদের জন্য ১৫টি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
সমাবেশস্থলের ভেতরে ও বাইরে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ থাকবে, প্রতিটিতে থাকবেন দুজন করে চিকিৎসক, জরুরি ওষুধ এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকবে।
ড্রোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও ধারণ ও সরাসরি সম্প্র্রচারেরও আয়োজন থাকবে—এলইডি স্ক্রিন ছাড়াও ফেসবুক ও ইউটিউবেও সম্প্রচার করা হবে।
সমাবেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান গোলাম পরওয়ার।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি বলেন, ‘সারা দেশ থেকে মানুষ রেল, সড়ক ও নৌপথে সমাবেশে অংশ নিতে আসবে। এতে নগরবাসীর কিছুটা দুর্ভোগ হতে পারে। আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’ তিনি জানান, সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়। তবে সকাল ১০টা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলবে।
এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনারও নিন্দা জানান গোলাম পরওয়ার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতার অভিযোগও করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সাত দফা দাবিও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো—অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ; সব গণহত্যার বিচার; মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার; ‘জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়ন; ‘জুলাই শহীদ’ ও আহতদের পুনর্বাসন; পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন যোগ্য নাগরিকরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক।
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহম্মদ বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৮ বছর হয়, তাঁরা পরবর্তী জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। নির্বাচন কমিশন প্রতিবছরের ২ জানুয়ারি ওই খসড়া ভোটার তালিকা এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়, অর্থাৎ ভোটার হওয়ার জন্য যোগ্য হন, তাঁরা ওই নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ পান না।
ফয়েজ আহম্মদ আরো বলেন, এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁদের ভোটার তালিকায় নিয়ে আসাকে যৌক্তিক মনে করে। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ধরুন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। তার সর্বোচ্চ দুই মাস আগে তফসিল ঘোষিত হয়।
ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ‘আজ যে অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন করা হলো, এর ফলে যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে, তার অন্তত এক মাস আগ পর্যন্ত যেসব ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর হবে, তাঁরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।’
মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ : গতকাল সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অনেকের কিডনি ড্যামেজ হয়, অনেকে চোখে দেখতে পায় না, কর্নিয়া সংযোজন হলে অন্ধত্ব দূর করা যায়, এসব বিষয়ে বাংলাদেশের যে আইন ছিল সেটা অনেক দিন থেকে আপডেট হয়নি।
তিনি বলেন, নতুন এই অধ্যাদেশের ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনটা খুব সহজ হবে। আগে যেমন ছিল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য খুবই কাছের যেমন—ভাই, বোন, মা-বাবা থেকে নিতে পারতেন, এখন এটাকে একটু সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে নতুন করে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আগে যেমন ভাতিজা, ভাগিনা তারা অঙ্গ দান করতে পারত না। এখন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, মানে পরিধি বাড়ানো হয়েছে।
প্রেস সচিব আরো বলেন, ‘এর ফলে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অনেককেই এখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আর বিদেশে যাওয়া লাগবে না। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোও এই সার্ভিস দিতে পারবে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী আইন।’
একই সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না
নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গোপালগঞ্জে গত বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে, সে সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে, ওই তথ্য হয়তো ছিল না।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গতকাল (বুধবার) এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এনসিপি নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত সব অপরাধী ধরা না পড়বে, তত দিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপদেষ্টা এ সময় গোপালগঞ্জের ঘটনা লাইভ করায় সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থা দেখতে যান।

আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিবন্ধিত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সব নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম।
তিনি বলেন, নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে এবং আগের নীতিমালা বাতিল হয়েছে। তাই আগের নীতিমালার অধীন নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে।
২০২৩ সালে দুই দফায় ৯৬ সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ নিবন্ধন দেওয়া হয়। এসব সংস্থার বেশির ভাগই ছিল নতুন। আগে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা ছিল না।
একাধিক সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। সে সময় বেশ কিছু অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন পেতে উৎসাহ বোধ করেনি বা আবেদন করলেও নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা আনতে আগের সব পর্যবেক্ষক সংস্থাকেই বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে নতুন করে নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল সেই নতুন নীতিমালা-২০২৫ জারি ও ২০২৩ সালের নীতিমালা বাতিল করা হয়েছে। ফলে আগের নীতিমালা অনুসারে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে।