সারা বিশ্বে এবার চালের উৎপাদন বাড়তে পারে এক কোটি টনের বেশি। কিন্তু সেই বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের অবদান থাকছে না। কারণ দেশে এবার চালের উৎপাদন কমতে পারে। ধানের আবাদ কমে যাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশে এবার চালের উৎপাদন চার লাখ টন কমতে পারে।
সারা বিশ্বে এবার চালের উৎপাদন বাড়তে পারে এক কোটি টনের বেশি। কিন্তু সেই বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের অবদান থাকছে না। কারণ দেশে এবার চালের উৎপাদন কমতে পারে। ধানের আবাদ কমে যাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশে এবার চালের উৎপাদন চার লাখ টন কমতে পারে।
বাংলাদেশের চাল উৎপাদন পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কার তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)। সংস্থাটির বৈদেশিক কৃষিসেবা বিভাগের (এফএএস) ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাগ্রিকালচারাল প্রডাকশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ পেয়েছে। ওয়ার্ল্ড অ্যাগ্রিকালচারাল আউটলুক বোর্ডের সব ধরনের কাজের সমন্বয় করে সংস্থাটি।
ইউএসডিএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সারা বিশ্বে চালের উৎপাদন ছিল ৫১ কোটি ৬৭ লাখ টন, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উন্নীত হয়েছিল ৫২ কোটি ২৩ লাখ টনে। ফলে গত অর্থবছরে সারা বিশ্বে চালের উৎপাদন ৫৬ লাখ টন বেড়েছিল। অন্যদিকে চলতি বছর সারা বিশ্বে চালের উৎপাদন হতে পারে ৫৩ কোটি ২৭ লাখ টন। চলতি বছরে বিশ্বে প্রায় এক কোটি চার লাখ টন চালের উৎপাদন বাড়তে পারে।
বাংলাদেশে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চালের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৭০ লাখ টন। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেটি কমে তিন কোটি ৬৬ লাখ টনে নেমে আসতে পারে। ফলে চালের উৎপাদন কমতে পারে চার লাখ টন। আবার গত অর্থবছরে দেশে মোট ধানের আবাদ হয়েছিল এক কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি শেষ হওয়া আমন মৌসুমে ভালো ফলন না হওয়ার কারণেও উৎপাদন কমতে পারে। সারা দেশেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও উপকরণ সংকটে আমন উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আগামী বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন পরিকল্পনা অনুসারে করতে না পারলে দেশে চালের বাজারে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হবে। এ পরিস্থিতিতে চালের মজুদ বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির মহাসচিব ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এস এম গোলাম হাফিজ কেনেডি কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়ার কারণে খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমতে পারে। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। এখনই কৃষিজমি অকৃষি খাতে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। তা না হলে খাদ্যশস্য আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব হবে না। আবার উৎপাদন ও চাহিদার তথ্যগুলোও সঠিক হওয়া প্রয়োজন। কৃষিপণ্য উৎপাদনের অতিরঞ্জিত তথ্য প্রদান বন্ধ করতে হবে। তা না হলে সরকারের নীতি সিদ্ধান্ত বাধাগ্রস্ত হবে।
চালের দাম বৃদ্ধি দেশে চালের ঘাটতির ইঙ্গিত দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, চালের সরবরাহ বাড়াতে আগামী বোরো মৌসুমে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। তবে আগামী বোরো মৌসুমের শুরুতে চাল আমদানি করা ঠিক হবে না। বোরো মৌসুমের শুরুতে চাল আমদানি করা হলে কৃষকরা ধানের দাম পাবেন না। কৃষকের ন্যায্যমূল্য দিতে না পারলে আবার উৎপাদন দীর্ঘমেয়াদে বাধাগ্রস্ত হবে।
অবশ্য দেশে চালের উৎপাদনের তথ্য নিয়ে রয়েছে নানান ধরনের অসংগতি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেওয়া চালের উৎপাদনের তথ্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিবিএসের হিসাবে চালের উৎপাদন দেখানো হয়েছিল চার কোটি ছয় লাখ ৯৮ হাজার টন। অন্যদিকে মার্কিন কৃষি বিভাগের হিসাবে বাংলাদেশে চালের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৭০ লাখ টন। ফলে দুটি সংস্থার মধ্যে চালের উৎপাদনের পার্থক্য প্রায় ৩৭ লাখ টন।
এ বিষয়ে কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উৎপাদনের তথ্য বিভ্রাটের বিষয়টি নজরে এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি সব পর্যায়ের তথ্যকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার। এ বিষয়ে আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। তবে দেশে যেন কোনোভাবেই খাদ্যসংকট পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেটা মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি। আগামী বোরো মৌসুমে উৎপাদন বাড়াতে নিরবচ্ছিন্নভাবে উপকরণ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছি। বীজ, সার ও সেচের পানি সরবরাহে মাঠ পর্যায়ে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। সার নিয়ে কোনো ধরনের সংকট নেই। প্রকৃতি সহায়ক হলে আমরা আশা করছি আগামী বোরো মৌসুমে চাল উৎপাদন ভালো হবে।’
সম্পর্কিত খবর
এক বছর পর আগামীকাল আবার ৫ আগস্ট। গণ-অভ্যুত্থান ক্যালেন্ডারে দিনটি পরিচিত ‘৩৬শে জুলাই’ হিসেবে। এই দিন ঘোষিত হতে যাচ্ছে জাতির বহু প্রতীক্ষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। এ ছাড়া দিনভর রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে থাকছে নানা আয়োজন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণের জন্য এই বিশেষ ট্রেন পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীজুড়ে এরই মধ্যে বাড়ানো হয়েছে প্রস্তুতি।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, ট্রেন পরিচালনার জন্য ইঞ্জিন হায়ার চার্জ, যাত্রীভাড়া ও অন্যান্য প্রযোজ্য খরচ মিটিয়ে পুরো ট্রেন দেওয়ার বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হবে। বিভিন্ন রুট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম, জয়দেবপুর-ঢাকা-জয়দেবপুর, নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী-ঢাকা-নরসিংদী, সিলেট-ঢাকা-সিলেট, রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী, রংপুর-ঢাকা-রংপুর ও ভাঙ্গা-ঢাকা-ভাঙ্গা রুটের ট্রেনের আদায়যোগ্য ভাড়া হচ্ছে ৩০ লাখ ৪৫ হাজার ৯৩৯ টাকা।
জানা গেছে, এর আগে জামায়াতে ইসলামীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে চার জোড়া বিশেষ ট্রেন ব্যবহারে প্রায় ৩২ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। একইভাবে গতকাল রবিবার শাহবাগে ছাত্রদলের এক কর্মসূচিতে অংশ নিতে চট্টগ্রাম থেকে ২০ বগির একটি বিশেষ ট্রেন ভাড়া করা হয়েছে, যার ব্যয় প্রায় ১০ লাখ টাকা।
জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ ঘিরে ব্যাপক আয়োজন : গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশজুড়ে রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যায়। ইতিহাসের পৃষ্ঠায় যুক্ত হয় একটি নতুন অধ্যায়, আর ‘৩৬শে জুলাই’ হয়ে ওঠে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন।
মানিক মিয়া এভিনিউতে ‘৩৬শে জুলাই’ উদযাপন ছাড়াও দেশের ৬৪ জেলায় সকাল ৯টায় ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে’ পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। পাশাপাশি দেশের প্রতিটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ‘বিজয় মিছিল’ নিয়ে ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে এসে সম্মিলিত হবে।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মানিক মিয়া এভিনিউতে অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল ১১টায়। অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন দেশবরেণ্য শিল্পী ও শিল্পীগোষ্ঠী সাইমুম ও কলরব শিল্পীগোষ্ঠী, জনপ্রিয় শিল্পী নাহিদ, তাশফিক, সায়ান, ইথুন বাবু ও মৌসুমী। পাশাপাশি থাকবে তরুণদের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘চিটাগং হিপহপ হড’ এবং ক্লাসিক ব্যান্ড ‘সোলস’, ‘ওয়ারফেজ’ ও ‘আর্টসেল’। অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকবে ‘ফ্যাসিস্টের পলায়ন উদযাপন’ এবং ব্যতিক্রমী নাটক ‘ডু ইউ মিস মি’। রাত সাড়ে ৮টায় আর্টসেলের পরিবেশনার মাধ্যমে পর্দা নামবে উত্সবের।
এ বিষয়ে গতকাল রবিবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এক বার্তায় বলা হয়, ৩৬শে জুলাই—গত বছর এই দিনে পৃথিবী দেখেছিল এক অভাবনীয় গণ-অভ্যুত্থান। ফ্যাসিস্ট শাসনের পতন ঘটেছিল এই দিনে। বহু শহীদের রক্ত আর অকুতোভয় যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ এক হয়েছিল। পথে পথে ছিল উল্লাসমুখর জনতার ঢল। সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতায় মুখর ছিল দেশবাসী।
দিনটির তাত্পর্য তুলে ধরে বার্তায় আরো বলা হয়, এই দিনটি আমাদের ইতিহাস, আমাদের গৌরব। ৫ আগস্ট মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অনুষ্ঠেয় এই আয়োজনে অংশ নিতে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে পরিবার-পরিজনসহ উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয় বার্তায়।
একদিকে এইচএসসি ও বিসিএস পরীক্ষা, অন্যদিকে সাপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস, গুরুত্বপূর্ণ এই দিনে রাজনৈতিক তিনটি সমাবেশ আয়োজন করায় ভোগান্তিতে পড়েছে রাজধানীবাসী। গতকাল রবিবার সকাল থেকেই যানজটে পড়তে হয়েছে। দিনের শুরু থেকেই রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে যানজটে যানবাহনগুলো ধীরগতির হয়ে পড়ে। গাদাগাদি করে গণপরিবহনে ওঠা, বাসস্টপে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের দীর্ঘ সারি এবং অতিরিক্ত সময় ধরে গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে নগরবাসীর অসন্তোষ—সব মিলিয়ে রাজধানীজুড়ে তৈরি হয় অস্বস্তিকর পরিবেশ।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হওয়ায় অফিসগামী মানুষের চাপ এমনিতেই বেশি। এর মধ্যে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা ও ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। অন্যদিকে রাজধানীতে দুটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশ এবং একটি সাংস্কৃতিক উত্সবের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কারণে রাজধানীতে যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।
সকাল থেকেই রাজধানীজুড়ে শুরু হয় যানজট।
গতকাল সকাল ১১টার দিকে কাকরাইল মোড়ে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী আহমেদ কিবরিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অফিস পল্টন, মোহাম্মদপুর থেকে বাসে উঠতেই এক ঘণ্টা লেগে গেছে।
আজিমপুর থেকে মিরপুরে যাবেন গৃহকর্মী ইসরাত হোসেন। আজিমপুর থেকে নিউমার্কেট পার হতেই প্রায় ৪০ মিনিট লেগে যায় তাঁর। তিনি বলেন, ‘সায়েন্স ল্যাবের ওই পাশটা থেকে সংসদ ভবনের পাশ পর্যন্ত আসতেই লেগে গেছে দেড় ঘণ্টা।
শুধু যাত্রীরা নন, পরিবহনচালকরাও চরম বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। দেওয়ান বাসের এক চালক বলেন, ‘আমরা আজিমপুর থেকে শাহবাগ হয়ে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত যেতে স্বাভাবিক সময়ে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লাগে। কিন্তু শাহবাগ মোড়ে অনুষ্ঠান থাকায় ভিন্ন রোড দিয়ে কুড়িল আসতে সময় লেগে গেছে প্রায় চার ঘণ্টা। এত সময় এক ট্রিপে গেলে সারা দিন আর কী করা যাবে! ভোগান্তিতে পড়া সাধারণ মানুষের বক্তব্য হচ্ছে, এই পরিস্থিতির অন্যতম কারণ হলো দুপুর থেকে শুরু হওয়া দুটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশ। বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল এবং নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজধানীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বড় সমাবেশের আয়োজন করে। ছাত্রদল শাহবাগে ‘গণ-অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে সমাবেশের ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে এনসিপি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ’ দাবিতে সমাবেশ করে এবং সারা দেশে অনুষ্ঠিত পদযাত্রা শেষে ‘জাতীয় ইশতেহার’ ঘোষণার কর্মসূচি নেয়।
রবিন হাসান নামের এক বিসিএস পরীক্ষার্থী বলেন, ‘এমন অদূরদর্শী পরিকল্পনার দায় কে নেবে? আর এ ধরনের সমাবেশ-পরীক্ষা একসঙ্গে হলে রাজধানী পুরোপুরি অচল হবে না তো কি হবে? সরকার, রাজনৈতিক দল ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যদি সময়মতো সঠিক সমন্বয় করতে না পারে, তাহলে ভোগান্তির চক্র থেকে কখনোই আমরা বের হতে পারব না।’
এই দুটি সমাবেশ ঘিরে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) শনিবার রাতে এক গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায়, শাহবাগ, টিএসসি, পলাশী, সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত ও পল্টন এলাকায় যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে এবং বিকল্প রুট ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে বাস্তবে অনেকেই রুট পরিবর্তনের তথ্য জানতেন না। ফলে ভোগান্তির মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এ দুই রাজনৈতিক সমাবেশ ছাড়াও রাজধানীর মঞ্চ সংস্কৃতি চর্চায় পরিচিত সাইমুম শিল্পগোষ্ঠীর আয়োজন ‘৩৬ জুলাই কালচারাল ফেস্ট : জুলাই জাগরণ’-এর তৃতীয় দিনের কর্মসূচি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলে গতকাল সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। জাতীয় জাদুঘরের আশপাশের এলাকায় এ উপলক্ষে লোকসমাগমের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ। গত ২৭ জুলাই ঢাকার গুলশান থানায় দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলার আসামি তিনি। মামলায় সাত দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল রবিবার আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। জবানবন্দিতে নিজের চাঁদাবাজির ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
এর আগে সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি শাম্মী আক্তারের গুলশানের বাসায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গত ২৬ জুলাই গ্রেপ্তার হন রিয়াদ। পরে তাঁকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
জবানবন্দিতে তিনি আরো বলেন, “জানে আলম অপু ওই বাসা থেকে শাম্মীর এয়ারপড নিয়ে আসেন। পরে তাঁরা দুজন ওই দিন সকাল ১০টায় এয়ারপড ফেরত দিতে ওই বাসায় যান। বাসায় গিয়ে তাঁরা এয়ারপড ফেরত দেন। তখন অপু পানি খাওয়ার কথা বলে ওই বাসায় প্রবেশ করেন। অপু বাসায় থাকা শাম্মীর স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে বলেন, ‘শাম্মী বাসায় আছেন। আমরা তাঁকে পুলিশে দিয়ে দেব।’ তখন আবু জাফর ভয় পেয়ে তাঁদের টাকা অফার করেন। তখন অপু ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু এত টাকা বাসায় নেই বলে জানান তিনি। পরে ১০ লাখ টাকা নিয়ে তাঁরা চলে আসেন। ওই টাকা দুজন সমান ভাগ করে নেন। গত ২৬ জুলাই বিকেলে চাঁদার বাকি ৪০ লাখ টাকা আদায় করতে ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সিয়াম, সাদমানকে ওই বাসায় পাঠান। পুলিশ তাঁকেও ওই বাসায় যেতে বলেন। তখন পুলিশের কথায় ওই বাসায় যান। তখন পুলিশ এসে টাকাসহ হাতেনাতে আমাদের গ্রেপ্তার করে।”
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রিয়াদসহ চার আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় রিয়াদ স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করতে আবেদন করেন। পরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহের আদালত তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া অন্য তিন আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে যাওয়া অন্যরা হলেন মো. ইব্রাহিম হোসেন, সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। তাঁদের সংগঠন থেকে আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে গত ২৭ জুলাই রিয়াদসহ চার আসামির সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। ওই দিন আইনের সংঘাতে জড়িত শিশু মো. আমিনুল ইসলামকে গাজীপুর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এ ছাড়া এ মামলায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু চার দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। গত ২ আগস্ট আদালত তাঁর রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ২৬ জুলাই রাত সাড়ে ১২টায় ভুক্তভোগী সিদ্দিক আবু জাফর বাদী হয়ে গুলশান থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন। এতে তিনি ছয়জনকে আসামি করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন বিদেশি মিশনগুলোতে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমে আউটসোর্সিং কম্পানি নিয়োগের আয়োজন করতে যাচ্ছেন কর্তাব্যক্তিরা। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দরপত্র আহ্বান বা নিয়মনীতি মানছেন না বলে অভিযোগ খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির। তাদের দাবি, এটি করা হলে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় তথ্য তৃতীয় পক্ষের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। কম্পানির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
নাম প্রকাশ না করে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, ফ্যাসিস্ট আমলের আউটসোর্সিং কম্পানিগুলোই আবার ঘুরেফিরে কাজ পাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার) খোদা বখস চৌধুরী ও সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি কেউই কথা বলতে রাজি হননি।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত পাসপোর্ট ও ভিসা উইংয়ের ই-পাসপোর্ট ও ভিসা সেবা কার্যক্রম আউটসোর্সিং কম্পানিকে দিতে নীতিমালা করা হচ্ছে।
ক. ই-পাসপোর্ট সেবা আউটসোর্সিংয়ে দেওয়া হলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গোপনীয় তথ্য থার্ড পার্টির নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। খ. আউটসোর্সিং কম্পানির হাতে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব না থাকায় পাসপোর্টে নাম, বয়স, পিতা-মাতার নাম সংশোধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে তারা আশানুরূপ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে প্রবাসীরা আরো ব্যাপক হয়রানির শিকার হবেন এবং একটি কম্পানির কাছে প্রবাসীরা জিম্মি হতে পারেন। গ. এসব কম্পানিতে আত্মীয়-স্বজনদের নিয়োগ দেওয়া হয়, ফলে দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও জবাবদিহির আওতায় জনবল নিয়োগ করা সম্ভব হবে না। ঘ. অতীতে বিভিন্ন কম্পানিকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পাসপোর্ট সেবার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা বিভিন্ন অনিয়মের চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। এ ক্ষেত্রে সৌদি আরবে আইরিশ কম্পানির বিষয়টি অন্যতম। ঙ. কম্পানিগুলো যথাযথভাবে সরকারি কোষাগারে অর্থ জমা দেয় না ও অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকে। চ. এদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট থাকায় অনেক সময় দূতাবাসও তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে। ছ. সরকারের কোনো অথরাইজড অফিসার না থাকার ফলে পাসপোর্টের মতো স্পর্শকাতর বিষয়, গোপনীয় তথ্য এবং প্রবাসীদের সেবাপ্রাপ্তির বিষয়টি যথাযথভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হয় না। জ. সরকারি অর্থে কেনা কোটি কোটি টাকার মেশিন এবং গুরুত্বপূর্ণ সার্ভার জনগণের সব গোপনীয় তথ্য তাদের অফিসে বা তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। এতে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ বিনষ্ট/চুরির আশঙ্কা থাকে। ঝ. আউটসোর্সিং কম্পানি ইচ্ছামতো যে কাউকে পাসপোর্ট দিতে ডেটা এনরোলমেন্ট করতে পারে। এতে রোহিঙ্গাসহ বাংলাদেশের নাগরিক নন, এমন লোকজনের পাসপোর্টপ্রাপ্তির আশঙ্কা থাকে। ঞ. ই-পাসপোর্ট সেবাটি আউটসোর্সিং কম্পানিকে দেওয়া একটি চুক্তিবদ্ধ প্রক্রিয়া। চুক্তির মেয়াদ শেষে কম্পানি পরিবর্তন কিংবা বিভিন্ন কম্পানির কাজ পাওয়ার প্রতিযোগিতা গড়ে ওঠার ফলে সেবাটি নির্বিঘ্নে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে দেওয়ার ঝুঁকি থাকে। যেমন—মালয়েশিয়ায় নিয়োগকৃত ইএসকেএল কম্পানির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পরও তারা উচ্চ আদালতে মামলা করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য অবমাননাকর ও অনভিপ্রেত।