চলতি বর্ষা মৌসুমে (জুন-সেপ্টেম্বর) দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বাংলাদেশের কিছু এলাকায় বৃষ্টি স্বাভাবিক এবং কিছু এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে কম হতে পারে। এ ছাড়া এবারের বর্ষা মৌসুমে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে সারা দেশেই।
চলতি বছরের ২৮ থেকে ৩০ এপ্রিল ভারতের পুনেতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আবহাওয়াবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ‘সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট আউটলুক ফোরামের’ ৩১তম অধিবেশনে বর্ষা মৌসুমের এই জলবায়ু পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়।
অন্যদিকে গত ২ জুলাই বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের বৈঠকেও বর্ষাকাল সম্পর্কে একই পর্যবেক্ষণ উঠে আসে।
এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট আউটলুক ফোরামে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের আঞ্চলিক আবহাওয়া ও জলবায়ু তথ্যের ভিত্তিতে ঐকমত্য প্রতিবেদন দেওয়া হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে এবার বর্ষায় স্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া আমাদের বিশেষজ্ঞ কমিটিও বলেছে, এবার জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
’
প্রসঙ্গত বাংলা ঋতুচক্র অনুযায়ী, আষাঢ়-শ্রাবণ (মধ্য জুন থেকে মধ্য আগস্ট) এই দুই মাস বর্ষাকাল হলেও আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই চার মাস বর্ষা মৌসুম। সে হিসাবেই আবহাওয়া অধিদপ্তর আবহাওয়া ও জলবায়ুর পূর্বাভাস দিয়ে থাকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে দেশে বছরে গড়ে ২৪২৭.৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এর মধ্যে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষার এই চার মাসেই দেশে গড়ে ১৭২১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
অর্থাৎ মোট বৃষ্টির প্রায় ৭১ শতাংশই হয় বর্ষাকালে। বছরের বাকি আট মাসে হয় ২৯ শতাংশ বৃষ্টি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘এবার সিলেট ও রংপুরে তুলনামূলক কম বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়ার বেশির ভাগ মডেলই উত্তরের সিলেট ও রংপুরে বৃষ্টি অনেকটাই কম দেখায়। এরই মধ্যে আমরা সিলেটে বৃষ্টি অনেকটা কম দেখেছি।
অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি স্বাভাবিক দেখাচ্ছে এবার। এ ছাড়া এবার বর্ষায় সারা দেশেই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে।’
তবে এবার বর্ষার প্রথম মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। এ মাসে তিনটি লঘুচাপ হলেও তা অনেক বেশি বৃষ্টিপাত ঘটায়নি দেশে। চলতি মাসে এখনো বঙ্গোপসাগরে কোনো লঘুচাপ তৈরি হয়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে চার থেকে ছয়টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে এক থেকে তিনটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
এদিকে ৮ ও ৯ জুলাই ব্যাপক বৃষ্টিপাতের পর গত ১০ জুলাই থেকে বৃষ্টি কমতে শুরু করেছে। গতকাল শুক্রবার দেশে বৃষ্টি অনেকাংশেই কমে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এই প্রবণতা থাকতে পারে অন্তত ১৫ জুলাই পর্যন্ত। এ প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বৃষ্টি কমেছে অনেকটাই। আগামী অন্তত ১৫ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টি কম থাকবে। তবে বর্ষাকাল হওয়ায় কোথাও না কোথাও বৃষ্টি থাকবেই। ১৬ জুলাই থেকে আবার বৃষ্টি বাড়তে পারে।’