ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ১১টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে সাতটি কমিশন এরই মধ্যে সুপারিশ জমা দিয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কিন্তু এর সফলতা এখনো স্পষ্ট নয়।
সংস্কারে আশা-নিরাশা
বিশেষ প্রতিনিধি

ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি সুপারিশের ওপর রাজনৈতিক দলের মতামত নিচ্ছে।
নির্বাচনের আগে সংস্কারকাজ কতটা সম্পন্ন করা সম্ভব—এ প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য এবং নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি মনে করি, ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হলেও নির্বাচনকে সহায়তা করবে এমন অনেক সংস্কার প্রস্তাব নির্বাচনের অনেক আগেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। যে প্রস্তাবগুলো সম্পর্কে ভিন্নমত আসছে সেগুলো হয়তো বাস্তবায়ন হবে না। তার পরও আমি মনে করি, ভিন্নমতের বিষয়গুলো নিয়ে আরো চিন্তা-ভাবনা করা দরকার। কারণ, রাষ্ট্র মেরামতের যে সুবর্ণ সুযোগ এসেছে, এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। কিছু সংস্কার নির্বাচনের পরে করতে হবে।
গত ১৭ মার্চ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা এরই মধ্যে সাত মাস পার করে এসেছি। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই কী কী সংস্কার করতে চাই, করে ফেলতে হবে।’ গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে তিনি জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বরে কিংবা আগামী বছরের জুনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে তারা যদি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টার ওই বক্তব্য এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিন্নতা থেকে অনেকেরই ধারণা, অন্তর্বর্তী সরকার ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’-এর দিকেই যাচ্ছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি উন্নয়ন গবেষণা ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা সংস্থা ইনোভিশন কনসালটিং বাংলাদেশ পরিচালিত জরিপে বর্তমানে বিএনপিকেই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে বিএনপি সর্বোচ্চ ৪১.৭ শতাংশ ভোট পাবে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জামায়াতে ইসলামী পাবে ৩১.৬ শতাংশ ভোট। আর ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পাবে ৫.১ শতাংশ ভোট।
জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা বিএনপি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবগুলোর অনেকাংশে ভিন্নমত প্রকাশ করেছে। বিএনপি মনে করে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় কিছু সুপারিশ আগেই বাস্তবায়ন করে বাকি গ্রহণযোগ্য সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা যেতে পারে নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদের মাধ্যমে। একই সঙ্গে দ্রুত নির্বাচনের দাবিও রয়েছে দলটির। সংস্কারপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করাকে সন্দেহের চোখে দেখেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
গত রবিবার বিএনপি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে যে মতামত দিয়েছে, তাতে সংস্কার সম্পর্কে দলটির অবস্থান আরো স্পষ্ট হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে ১৯৭১ ও ২০২৪ সালকে এক কাতারে আনা হয়েছে, যা সমুচিত নয় বলে মনে করে বিএনপি। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তন করার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করে না দলটি। দলের পক্ষ থেকে কমিশনের প্রস্তাবের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিষয়ে দ্বিমত ও লিখিতভাবে বেশ কিছু নতুন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, সংবিধানের প্রস্তাব স্প্রেডশিটে উল্লেখ করা হয়নি। এটি উচিত ছিল। সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো প্রস্তাব। সেটি পুরোপুরি পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। অনেকটা পুনর্লিখনের মতো। সেখানে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানকে এক কাতারে আনা হয়েছে। এটা সমুচিত বলে বিএনপি মনে করে না। এটাকে অন্য জায়গায় রাখা বা সংবিধানের তফসিল অংশে রাখার বিভিন্ন রকম সুযোগ আছে। সেটা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। বিএনপি পঞ্চদশ সংশোধনের আগের অবস্থায় যে প্রস্তাব ছিল সেটির পক্ষে।
সংবিধানে রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিনের প্র্যাকটিসের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নাম মেনে নিয়েছে। এটা নিয়ে কতটুকু অর্জন হবে তা প্রশ্নের দাবি রাখে। এ বিষয়ে বিএনপি একমত নয়। এনআইডি ও সীমানা নির্ধারণের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে রাখতে মতামত দিয়েছে বিএনপি। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একই মত দেওয়া হয়েছিল।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘দুদক নিয়ে ২০টির মতো প্রস্তাব ছিল। এর মধ্যে আমরা ১১টিতে সরাসরি একমত। আর সাত-আটটিতে আমরা মন্তব্যসহ নীতিগতভাবে একমত প্রকাশ করেছি। শুধু একটি প্রস্তাবে আমরা মন্তব্যসহ ভিন্নমত পোষণ করেছি। কারণ, ওখানে একটি আইন সংশোধনের বিষয় রয়েছে।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘প্রশাসন সংস্কারে আমরা যেসব প্রস্তাব পেয়েছি তার প্রায় অর্ধেক প্রস্তাবে একমত। বিদ্যমান এসএসপি ব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে, যার সঙ্গে আমরা একমত নই। তার পরিবর্তে মন্ত্রিপরিষদের একটি কমিটি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে প্রশাসনে রাজনীতিকরণের সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য আমরা ভিন্নমত পোষণ করেছি। আরেকটা বিষয়ে প্রমোশনের ক্ষেত্রে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সেখানে আদালতের একটা রায় আছে। আদালতের রায় বহাল থাকায় ওই বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাইনি।’
বিচার বিভাগ সংস্কার প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে সব প্রস্তাবে আমরা একমত। আমাদের ৩১ দফার মধ্যে বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার কথা বলেছি। বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে চার-পাঁচটি বিষয়ে আমরা মন্তব্যসহ অন্য মতামত দিয়েছি, এটা বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।’
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ২৭টি সুপারিশের মধ্যে বেশির ভাগ প্রস্তাব সংবিধান সংশোধনের সঙ্গে সম্পৃক্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা ঠিক বুঝতে পারিনি। নির্বাচনব্যবস্থাসংক্রান্ত সংস্কারের প্রস্তাবে কিছু সংবিধান সংশ্লিষ্টতা আছে, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাজ নয় সে বিষয়েও সুপারিশ এসেছে। ওই সব বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে আমরা মতামত দিয়েছি। নির্বাচন কমিশনের কিছু ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাবে আমরা মনে করি এটি নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ।’
সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, বিএনপি জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি নির্বাচন কমিশনের কাছেই থাকা দরকার। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণও নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক এখতিয়ার। নির্বাচন কমিশনের সেই আইনে সামান্য একটা প্রিন্টিং মিসটেক ছিল সেটা নিয়ে আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে দিয়েছি, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ করেছি, আইন মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি গেছে; কিন্তু সেটা এখনো সংশোধন হয়নি। আমরা সরকারকে আহ্বান জানাব, অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংশোধনী দিয়ে নির্বাচন কমিশনের হাতে সীমানা নির্ধারণ রাখা হোক। আলাদা কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে রাখার বিষয়টি আমরা নাকচ করছি। নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধতার জন্য সংসদীয় কমিটির কাছে জবাবদিহি করার জন্য একটা সুপারিশ এসেছে। এতে আমাদের মত নেই। সংবিধানে মৌলিক অধিকার বা মূলনীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের সুপারিশ এসেছে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে বিদ্যমান অবস্থা বহাল রাখার জন্য বলেছি। মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা নামক আলাদা চ্যাপ্টার সংযোজন করার সুপারিশ সম্পর্কে আমরা মনে করি, পার্লামেন্টারি অভিজ্ঞতা বা রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে এমন সুপারিশ আসতে পারে। নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে যেসব কমিশন গঠন বা কার্যাবলির প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে জনপ্রতিনিধির কোনো ক্ষমতা থাকে না। রাষ্ট্র নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত হবে। এটা হলো আমাদের চেতনা। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব আমরা আগেই দিয়েছি। আমার মনে হয়, এটার ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হয়েছে।’
জানা যায়, কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, এই সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে একমত নয় বিএনপি। স্প্রেডশিটের মন্তব্য বিভাগে দলটি লিখেছে, এ বিষয়ে তারা একমত নয়। বিষয়টি হওয়া উচিত, কোনো ব্যক্তি টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।
এ ছাড়া একই ব্যক্তি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও রাজনৈতিক দলের প্রধান হতে পারবেন না—এ প্রস্তাবও সমর্থন করেনি বিএনপি। এ বিষয়ে দলটির মন্তব্য—এটি সংশ্লিষ্ট দলের সিদ্ধান্তের বিষয়।
রাজনীতিবিদরা যা বলছেন : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে প্রশাসনিক সংস্কার ও মাঠের সংস্কার করতে হবে। এর পাশাপাশি নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কিছু সংস্কার দরকার। এর বাইরে আপাতত কোনো সংস্কারের প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, ‘সরকার মতামত চেয়েছে। আমরা সেই মতামত দিয়েছি। সরকারের কোনো প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা একমত হয়েছি, কোনোটির সঙ্গে দ্বিমত রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আংশিক ঐকমত্য হয়েছি। সে বিষয়ে মতামত তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি, সংবিধানসংক্রান্ত যেসব সংস্কার তা জাতীয় সংসদ ছাড়া হতে পারে না। সে জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, যাতে সেই সংস্কারগুলো করা যায়।’
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। আমরা বলে আসছি, আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে, তারপর নির্বাচন। আমরা ব্যক্তিগত প্রার্থিতা বাদ দিয়ে আনুপাতিক পদ্ধতির পক্ষে কথা বলেছি। এতে কোনো ব্যক্তির প্রার্থিতা থাকবে না, দলের প্রতীক থাকবে। নির্বাচনে কালো টাকা ছড়ানো হয়। গরিব মানুষ স্বাভাবিকভাবে টাকার দিকে ঝোঁকে। অনেকে লোভ সামলাতে পারেন না। জামায়াতের পক্ষে নির্বাচনে টাকা বিতরণের সামর্থ্য নেই। টাকা দিয়ে ভোট কেনা ঘুষের শামিল। নির্বাচনে কাউকে ভয় দেখানো হয়। ভোট না দিলে জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়। আনুপাতিক পদ্ধতিতে কেউ টাকা ছড়াবে না বা ভয় দেখাবে না।
সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া বলে মনে করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘সংস্কারের কাজগুলো করার উপযুক্ত পদ্ধতি টিক চিহ্ন দেওয়া নয়। এ জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি হচ্ছে আলাপ-আলোচনা করা। এ জন্য আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার অপেক্ষায় আছি। সেখানে সব সুপারিশের বিষয়ে দলের মতামত তুলে ধরা হবে।’ তিনি আরো বলেন, “সংস্কারের যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছে, তার অনেকটার সঙ্গে সিপিবি একমত। অনেক প্রস্তাবের সঙ্গে মৌলিকভাবে দ্বিমত রয়েছে। অনেক প্রস্তাবের বিকল্প প্রস্তাব আছে। অনেক প্রস্তাব একেবারেই নাকচ করে দেওয়ার আছে। তাই অনেক কিছু যদি শুধু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’-এর মধ্যে থাকি, তাহলে পুরো যে সংস্কার প্রস্তাব, সেটা একটা ভুল বোঝাবুঝির জায়গায় যাবে। সংস্কারের মূল দায়িত্ব জনগণের। এটি তাদের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। আর সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে।”
জাতীয় ঐকমত্য না হলে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে মনে করেন বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, কমিশনের দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যথেষ্ট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা ঐকমত্যে পৌঁছানো জরুরি। কোন মাধ্যমে এই প্রস্তাবগুলো কার্যকর হবে সেটাও এই ঐকমত্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। কমিশনের পক্ষ থেকে স্প্রেডশিটে যেভাবে টিক চিহ্নের মাধ্যমে মতামত চাওয়া হয়েছে, সেভাবে মতামত দিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পদ্ধতিটি যথাযথ নয়। বিষয়গুলো জটিল এবং বেশির ভাগ বিষয়ই ব্যাখ্যার দাবি রাখে। খুব অল্প কয়েকটি পয়েন্টে এরূপ এককথায় উত্তর দেওয়া যায়। আমরা কমিশনকে জানিয়েছি, আমাদের বক্তব্যটা আমরা মূলত লিখিত আকারেই রাখব।’
তিনি আরো বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আগেই ১১১টি প্রস্তাব বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বিধির সংস্কার বিষয়ে বেশির ভাগ দলের ঐকমত্য আছে। বাকি প্রস্তাবগুলো নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। কারণ, এখানে কিছু প্রস্তাব রয়েছে, যা জনস্বার্থবিরোধী।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে এখনো লিখিত মতামত জানায়নি বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা আকবর খান বলেন, ‘এরই মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে পার্টির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। দ্রুতই তা চূড়ান্ত করে আগামী বৃহস্পতিবার কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হবে। তবে লিখিত মতামতের থেকে প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার ও নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা দরকার। জনগণও দীর্ঘদিন ভোট দিতে পারেনি, তারাও অপেক্ষা করছে। আবার নির্বাচিত সরকার না থাকায় জনজীবনে সংকট বাড়ছে। সংকট মোকাবেলায় নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর জরুরি।’ সে ক্ষেত্রে নির্বাচনকে গুরুত্ব না দিয়ে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নিলে তা জন-আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
বিএনপি দুটি কমিশনের সুপারিশে বিস্তারিত লিখিত মতামত দিয়েছে। বাকি তিন কমিশনের বিষয়ে পরে জানাবে বলে জানিয়েছে। এনসিপি পাঁচটি কমিশনের সুপারিশেই লিখিত মতামত জানিয়েছে।
নির্বাচনের আগে সংস্কারের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কতটুকু আশাবাদী জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘সংস্কারের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আমরা মনে করি, যেহেতু ওয়েবসাইটে সংস্কার প্রস্তাব ও দলগুলোর মতামত প্রকাশ করা হবে, সে ক্ষেত্রে জনগণের কাছে সবার প্রস্তাবগুলো পরিষ্কার হবে। তখন জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে এবং জনগণের প্রত্যাশার চাপে দলগুলো সংস্কারে সম্মত হতে বাধ্য হবে। তবে সংস্কারের প্রক্রিয় নিয়ে আমাদের কিছু প্রশ্ন রয়েছে। প্রক্রিয়াটি আরো গোছানো হতে পারত। পুলিশ সংস্কার ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সুপারিশ পাঠানো হয়নি। তার পরও যে প্রস্তাবগুলো এসেছে সেগুলো কম্পাইল করে স্প্রেডশিট হয়েছে। স্প্রেডশিট থেকে ছোট করে জুলাই সনদ করা হবে। এর ফলে অনেক সংস্কার প্রস্তাব এমনিতেই বাদ পড়ে যাচ্ছে। তাহলে তিন মাস ধরে একেকটা কমিশন কাজ করল, তারপর শুধু দলগুলো মানতে চাইবে না এর জন্য একেকটা জিনিস বাদ দেবেন তা তো হয় না। সব সংস্কারের প্রস্তাব জুলাই সনদে থাকতে পারত। আমরা একটা মৌলিক পরিবর্তন আনতে চাই। কিন্তু অন্যান্য রাজনৈতিক দল সেটা চায় না। তারা বিদ্যমান ক্ষমতার অবস্থানটা অক্ষুণ্ন রাখতে চায়। অক্ষুণ্ন রেখে তারা কিছু ঘষামাজা করতে চায়।
সম্পর্কিত খবর

গভীর রাতে হাসপাতালে খালেদা জিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক

জরুরি ভিত্তিতে শারীরিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১টা ১৮ মিনিটে তিনি গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়ার শারীরিক কিছু জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাঁকে গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হবে।
২০২১ সালের নভেম্বরে খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বারবার আবেদন জানালেও শেখ হাসিনার সরকার তা আমলে নেয়নি।
রাতে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে রাখা হবে কি না, এমন প্রশ্নে শায়রুল কবির বলেন, ‘আশা করছি, জরুরি পরীক্ষা শেষে তিনি আবার বাসায় ফিরে আসবেন।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা
নারী কর্মীদের ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক, লেগিংস নিষেধ
- পুরুষদের জিন্স বা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করতে হবে
যৌন হয়রানির অভিযোগ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত কমিটির কাছে পাঠাতে হবে
নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কী ধরনের পোশাক পরতে হবে, তা ঠিক করে দিয়েছে। নারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না এবং অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস অর্থাৎ ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক এবং লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনায় ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে।
গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ এ নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনায় পুরুষদের পোশাকের ক্ষেত্রে লম্বা হাতা বা হাফ হাতার ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট ও ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। জিন্স বা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করতে হবে। পরতে হবে ফরমাল জুতা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ব্যাংকে নবীন কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ছে, যাঁদের অনেকে এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের ধারাবাহিকতায় চলাফেরা করছেন। অফিসে এক ধরনের পেশাদার সাম্য ও ঐক্য নিশ্চিত করতেই এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শালীন পোশাক যেকোনো প্রতিষ্ঠানের নারী-পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক।
আরিফ হোসেন খান আরো বলেন, ‘কারো ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়, বরং অফিস-সংস্কৃতিতে শৃঙ্খলা আনতেই এই সিদ্ধান্ত। ব্যক্তিগত পরিসরে কে কী পোশাক পরবেন, সেটা একান্তই তাঁদের বিষয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২-এর (বেনিফিটস অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন উইং) একটি বিভাগীয় মাসিক সভার এজেন্ডা ও কার্যবিবরণীতে নিয়মিত অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেসব সিদ্ধান্তের একটি ছিল পোশাক নিয়ে। গৃহীত সিদ্ধান্তের ১১(ঘ) নম্বরে বলা হয়, বাংলাদেশ সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের (সি ও ডি শ্রেণিভুক্ত কর্মচারীর নির্ধারিত পোশাক ব্যতীত) সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পেশাদার ও মার্জিত পোশাক পরিধান করতে হবে। যেমন—পুরুষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ফরমাল শার্ট লম্বা হাতা বা হাফ হাতা, ফরমাল প্যান্ট (জিন্স বা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করতে হবে) এবং ফরমাল জুতা। মহিলা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না, অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে (শর্ট স্লিভ ও লেন্থের ড্রেস, লেগিংস পরিহার করতে হবে) ও ফরমাল স্যান্ডেল-জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ-হিজাব।
১১ ক্রমিক নম্বরে আরো তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১(ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩-এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ-১-এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১(খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ-২-এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১(গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরির জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত


ফিরে দেখা ২৪ জুলাই ২০২৪
কারফিউ ৭ ঘণ্টা শিথিল, চিরুনি অভিযান গ্রেপ্তার ১৪০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির জেরে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাত ১২টায় সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। দুই দিন পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। এতে করে কারফিউ শিথিলের সময়ও প্রতিদিন একটু একটু করে বাড়ানো হচ্ছিল। ১৯ জুলাই কারফিউ জারির পর ২৪ জুলাই প্রথমবারের মতো টানা সাত ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করা হয়।
দিনের বেশির ভাগ সময় কারফিউ শিথিল থাকায় এবং অফিস খোলায় এদিন নগরবাসীর জীবনে অনেকটা স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও টানা কয়েক ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে। টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর এদিন সচিবালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা ছিল।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যায় এদিন। নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পর আসিফ ও বাকেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয় বলে দুজনই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৬ জুলাই আবু সাঈদসহ ছয়জন নিহতের ঘটনা তদন্তে ২৪ জুলাই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ১৬ জুলাই সংঘর্ষের ঘটনাগুলোর বিষয়ে জানতে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জনগণের কাছে তথ্য চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তদন্ত কমিটি।
রাজধানীসহ সারা দেশের পরিস্থিতি : কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এদিন অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। তবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সড়কের মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশের চেকপোস্ট। বিকেল ৫টার পর আবারও কারফিউ শুরু হলে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ নেয় সড়কের। এদিন দেশে সহিংসতায় নতুন করে কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। টানা পাঁচ দিন পর এদিন চার ঘণ্টার জন্য সচিবালয় খোলা হলেও সচিবালয়ে প্রবেশে ব্যাপক তল্লাশি করা হয়। অন্য সময়ের তুলনায় নিরাপত্তাব্যবস্থাও ছিল জোরদার। সচিবালয়ের সামনে সেনা সদস্যরা মোতায়েন ছিলেন। প্রবেশপথে ছিল বাড়তি পুলিশ।
টানা তিন দিন পর ব্যাংক খোলায় টাকা তোলার চাপ বাড়ে রাজধানীর ব্যাংকগুলোতে। এটিএম বুথে ভিড় ছিল অন্য দিনের তুলনায় বেশি। সকাল ১১টা থেকে লেনদেন শুরু হয়ে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে। এ সময় ব্যাংকগুলোতে সীমিত পরিসরে সেবা দেওয়া হয়। বেশির ভাগ ব্যাংকে অর্থ লেনদেন ছাড়া অন্য কোনো কার্যক্রম তেমন হয়নি।
এদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও নৃশংসতার কথা উল্লেখ করে বলেন, আশঙ্কা ছিল এ ধরনের একটা আঘাত আসবে। সমৃদ্ধির পথে দেশের অগ্রযাত্রা রুখে দিতে বিএনপি-জামায়াত জোট এ ধরনের হামলা করতে পারে।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সরকার যত দিন চাইবে, সেনাবাহিনী তত দিন বেসামরিক প্রশাসনের সহযোগিতায় দায়িত্ব পালন করবে।’
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ প্রসঙ্গে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘একটি অচল অবস্থা তৈরির জন্য স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-বিএনপি শক্তি ও জঙ্গিরা একত্র হয়ে এ ঘটনাগুলো একের পর এক ঘটিয়েছে। আমরা কোনো সময়ই দেখিনি থানা ভবন আক্রমণ করতে, কারাগার আক্রমণ করতে।’
পরদিন থেকে ট্রেন চলাচলের ঘোষণা : পরদিন ২৫ জুলাই থেকে সীমিত পরিসরে ট্রেন চলাচলের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে শুরুতে আন্তনগর ট্রেন চালানো হবে না বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্বল্প দূরত্বের লোকাল-কমিউটার ট্রেন চলবে বলে জানায় রেলওয়ে।