ঈদের আনন্দ উদযাপনে রাজধানীবাসী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রিয়জনের কাছে ছুটে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরে এক কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ রাজধানী ছেড়ে প্রিয়জনের কাছে যেতে পারে। তবে এবারের ঈদ যাত্রায়ও সড়কে ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার একদিকে রয়েছে যানজটের ভোগান্তি, অন্যদিকে নিরাপত্তাঝুঁকি তো আছেই।
ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগের শঙ্কা
জহিরুল ইসলাম

বিশেষ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-সিলেটসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের ১৫৯টি স্পটে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর বাইপাইল ও চন্দ্রা মোড়ে যানবাহনের প্রচণ্ড চাপে রাজধানীর প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে তীব্র যানজটে ঈদ যাত্রার ভোগান্তি আরো বাড়তে পারে।
তবে যানজট নিরসনে জননিরাপত্তা বিভাগ ঈদের আগে ও পরে চিহ্নিত স্পটগুলোয় বিশেষ নজরদারি রাখতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় মহাসড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ করিডরগুলোর সড়ক ঈদের সাত দিন আগেই মেরামত কিংবা সংস্কার করতে বলা হয়েছে।
জননিরাপত্তা বিভাগের তথ্যানুযায়ী, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৩৮ থেকে ৩৯টি সড়কের অবস্থা যথেষ্ট খারাপ, যা দ্রুত মেরামত প্রয়োজন। প্রতিবছর ঈদুল ফিতরে এক কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ রাজধানী ছাড়ে, আর প্রায় ৩০ লাখ মানুষ রাজধানীতে প্রবেশ করে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সূত্র জানায়, যানজটের আশঙ্কা করা চিহ্নিত ১৫৯টি স্পটের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে রয়েছে ৪৯টি স্পট। ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে রয়েছে ৫৪টি স্পট। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে রয়েছে ছয়টি স্পট। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে রয়েছে ৪২টি স্পট এবং ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কে রয়েছে আটটি স্পট।
হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রায় ৭০০ পুলিশ সদস্য কাজ করবে। তবে ৩৮ থেকে ৩৯টি সড়কের অবস্থা বেশ খারাপ। যেগুলো দ্রুত মেরামত করা দরকার।
ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে সম্প্রতি আয়োজিত এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘ঈদে এক কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ রাজধানী ছেড়ে যাবে আর ৩০ লাখের মতো মানুষ রাজধানীতে আসবে। এই দেড় কোটি মানুষের ঈদের আনন্দের যাতায়াত যানজটসহ নানা কারণে নিরানন্দের হয়ে যায়। এসব বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম বলেন, ‘ভাঙ্গা সড়ক আর যানজট আমরা প্রত্যাশা করি না। যানজটে যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি আমাদেরও ক্ষতি হয়। যানজট বেশি হলে ট্রিপ কমে যায়। ফলে শুরু থেকে আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বলে আসছি সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে।’
উত্তরের পথে ১৩ কিলোমিটারের যানজটের আশঙ্কা
উত্তরের পথে ১৩ কিলোমিটারের যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত এবারও যানজট হতে পারে। কারণ, এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত মহাসড়কে উন্নয়নকাজ এখনো শেষ হয়নি। মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ফলে যানজটে ভোগান্তির আশঙ্কা থাকছেই। আবার উত্তরবঙ্গসহ ময়মনসিংহের প্রায় ২৩ জেলার পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করে এই মহাসড়কে। স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন ১৮-২০ হাজার ছোট-বড় যান যমুনা সেতু দিয়ে পারাপার করে। তবে ঈদে যানবাহনের সংখ্যা দুই থেকে তিনগুণ বেড়ে ৫০ হাজার অতিক্রম করে। এতে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, মহাসড়কে যান বিকল এবং দুর্ঘটনার কারণে ভোগান্তি তৈরি হয়।
তবে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ প্রশাসন ঘরমুখো মানুষের ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত টাঙ্গাইল অংশে ৭ শতাধিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
ঢাকা-উত্তরবঙ্গ রুটের যেসব স্থানে যানজটের আশঙ্কা
ঢাকা-উত্তরবঙ্গ রুটের বাইপাইল মোড়, চন্দ্রা মোড়, গোড়াই মিলগেট, যমুনা সেতু পশ্চিম গোলচত্বর, ফেন্সিগেটের আগের অংশ, ফেন্সিগেট সার্ভিস লেন, মুলিবাড়ী আন্ডারপাসের আগে, কড্ডা ফ্লাইওভারের পশ্চিমে, কোনাবাড়ী আন্ডারপাসের আগে, হাটিকুমরুল পাঁচলিয়া বাসস্ট্যান্ড, হাটিকুমরুল ধোপাকান্দি ব্রিজ, হাটিকুমরুল গোলচত্বর, হাটিকুমরুল বাজার, ঘুরকা বেলতলা, ভূঁইয়াগাতী বাসস্ট্যান্ড, হোটেল হাইওয়ে অভি ভিলা, ষোলোমাইল, সিরাজগঞ্জ বাইপাস, জমজম দইঘর, বগুড়া বাজার থেকে সীমাবাড়ী কলেজ, পেন্টাগন হোটেল, ফুড ভিলেজ হোটেল, দাদপুর জামাই রোড, নিউ পাপিয়া হোটেল থেকে চাচা-ভাতিজা হোটেল, জোড়া ব্রিজ, চান্দাইকোনা গরুর হাট পর্যন্ত।
ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের যেসব স্থানে যানজটের আশঙ্কা
ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের কাচিকাটা টোলপ্লাজা, বনপাড়া বাইপাস, বনপাড়া বাজার, রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের বানেশ্বর বাজার, রাজশাহী, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা বটতলা থেকে মোনায়েম কন্সট্রাকশন, ছনকা বাজার, শেরপুর মডেল মসজিদের সামনে, নয়ামাইল বাজার, মাঝিরা বাজার, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বগুড়া জেলার শাজাহানপুর থানার বনানী বাসস্ট্যান্ড, শাকপালা, বগুড়া জেলার সদর থানার জিয়া মেডিক্যাল কলেজ গেটের সামনে, তিন মাথা রেল ক্রসিং, চার মাথা ফ্লাইওভার ব্রিজের নিচে, বারোপুর বাসস্ট্যান্ড, মাটিডালি বিমানবন্দর মোড়, টিএমএসএসের সামনে, শিবগঞ্জ থানার মহাস্থান বাসস্ট্যান্ড ফ্লাইওভারের নিচে, মোকামতলা বাসস্ট্যান্ড ফ্লাইওভারের নিচে, মায়ামনি চৌরাস্তা মোড় থেকে গোবিন্দগঞ্জ ব্র্যাক অফিস, গাইবান্ধা, পলাশবাড়ী উপজেলা পোস্ট অফিস এবং শিল্পী রেস্তোরাঁ থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর পর্যন্ত পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা, পীরগঞ্জ উপজেলা বাস স্টপেজ থেকে সাসেক প্রকল্পের নির্মাণাধীন আন্ডারপাসের উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত, বিশ মাইল, পীরগঞ্জ, রংপুর, বড় দরগাহ্ আন্ডারপাস, পীরগঞ্জ, রংপুর, শঠিবাড়ী আন্ডারপাস, শঠিবাড়ী বাজার এবং বাস স্টপেজ এলাকা, মিঠাপুকুর, রংপুরকে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের যানজটের গুরুত্বপূর্ণ স্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভোগাবে সিঙ্গেল লেন
দেশের অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়ক ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ১৮ কিলোমিটার এলাকা পড়েছে রূপগঞ্জ অংশে। এ ১৮ কিলোমিটার এলাকায় স্বাভাবিক সময়েও দীর্ঘ যানজট থাকে। ঈদ যাত্রা শুরু হলে যানবাহন চলাচল কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় যানজটও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এবারও সড়কের এই অংশের যানজটে ঈদ যাত্রায় চরম ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সিঙ্গেল লেনের রাস্তা। চালকরা নিয়ম না মেনে গাড়ি চালানোয় যানজট লেগে থাকে।’
অন্যদিকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ অংশেও যানজটে ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের গাড়িগুলো টার্মিনালে না রেখে রাস্তার ওপরে রেখে যাত্রী ওঠানামা করানোয় এবং তিন চাকার বাহন মহাসড়কে চলাচল করায় যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যস্ততম এই মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ থেকে দেবিদ্বার অংশে ঈদের সময় যানজট প্রকট আকার ধারণ করে।
ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশেও যানজটে ভুগতে হতে পারে যাত্রীদের। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে কাজ বন্ধ থাকায় ভাঙাচুরা অংশে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্যে যানজট শুরু হয়েছে। তারাবো বিশ্বরোড, পাঁচদোনা, ভেলানগর, ইটাখোলা, ভৈরব চৌরাস্তা, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড, মাধবপুর, ওলিপুর রেলগেট, হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, দেবপাড়া বাজার, আউশকান্দি, শেরপুর ও গোয়ালাবাজার এবং শেরপুর টোলপ্লাজা এলাকায় প্রায় প্রতিদিন যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী অংশে সাধারণত তুলনামূলক কম যানজট হয়। তবে এবার ছয় লেন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় মাধবদী, পাঁচদোনা, ভেলানগর, ইটাখোলা, মরজাল ও বারৈচা—এই সাতটি পয়েন্টে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ অংশের প্রায় ২২ কিলোমিটারজুড়ে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড, তারাবো বিশ্বরোড গোলচত্বর, রূপসী বাসস্ট্যান্ড, বরপা, গার্মেন্টসের মোড় ও গাউছিয়া স্ট্যান্ডে যানজট পরিস্থিতির আরো জটিল হতে পারে।
ঈদ যাত্রায় যানজটের ভোগান্তির বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঈদ যাত্রায় যাতে মানুষের ভোগান্তি কম হয় সে চেষ্টা সব সময় আমাদের থাকে। এবারও আমরা সেই চেষ্টা করছি।’
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রূপগঞ্জ প্রতিনিধি।)
সম্পর্কিত খবর

হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন নাহিদ
- আজ দেশব্যাপী বিক্ষোভ এনসিপির
নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে ‘মুজিববাদীরা’ হত্যার উদ্দেশ্যে জঙ্গি কায়দায় এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট ও মুজিববাদীরা অস্ত্র নিয়ে এই হামলা চালিয়েছে, তারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে তিনি সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার রাতে তিনি খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
অন্যদিকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে গোপালগঞ্জসহ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল রাজধানীর শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত।
খুলনায় সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ বলেন, গোপালগঞ্জের হামলা আওয়ামী ও মুজিববাদীদের পুরনো চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, সারা দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপির এটি ছিল পূর্বঘোষিত কর্মসূচি। সেই লক্ষ্যে প্রশাসনকে জানিয়ে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার কথা জেনেই গোপালগঞ্জ সফরে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলা করেছে ।
সমাবেশের আগে ও পরে দফায় দফায় হামলার কথা তুলে ধরে নাহিদ বলেন, এ হামলা যে পূর্বপরিকল্পিত সেটি প্রমাণিত। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী আরো সতর্ক থাকতে পারত উল্লেখ করে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যেভাবে সহায়তা দিয়েছে সে জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
নাহিদ জানান, আজ বৃহস্পতিবার ফরিদপুরসহ সারা দেশের পূর্বঘোষিত পদযাত্রা অব্যাহত থাকবে। শুধু মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে বুধবারের যে কর্মসূচি ছিল সেটি স্থগিত করা হয়েছে, পরে ওই দুই জেলার কর্মসূচির তারিখ ঘোষণা করা হবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশে হামলার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা খুলনা এসে পৌঁছেন। সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে রশিদুল ইসলাম রিফাত বলেন, ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এবং দিল্লির চক্রান্তে গোপালগঞ্জের ভেতরে একটি প্রক্সি স্টেট তৈরি করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই প্রক্সি স্টেট খেলা আমরা হতে দেব না। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে হটিয়ে দিয়েছে। তাই স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিবাদী ছাত্রলীগ, হামলাকারী ও গণহত্যাকারী কারো অবস্থান এই বাংলাদেশের মাটিতে হবে না।’
এর আগে দুপুরের দিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী নেতাকর্মীদের ন্যক্কারজনক হামলা ও অবরুদ্ধ করার ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রশিদুল ইসলাম রিফাত এই ঘোষণা দেন।
শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নয়, একই সঙ্গে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি।
বাংলা ব্লকেড : রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। গতকাল বিকেলে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের আজমপুর ও হাউস বিল্ডিং মোড় ঘিরে বিক্ষোভে নেমে পড়ে শতাধিক প্রতিবাদকারী। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিকেল ৩টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বরে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মিরপুর জোন।
রাজধানীর শাহবাগে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে জুলাই মঞ্চ। কর্মসূচি চলাকালে মঞ্চের বক্তারা বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত গোপালগঞ্জের ঘটনার সঠিক বিচার না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।’
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলার ঘটনায় পুলিশ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেয় তারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় তারা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় না আনলে লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বিকেলে মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় অবরোধ করেন এনসিপি নেতাকর্মীরা।
তবে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে ব্লকেড কর্মসূচি থেকে সরে আসতে বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বিক্ষোভকারীদের রাস্তার এক পাশে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
এনসিপির মশাল মিছিল : গোপালগঞ্জের ঘটনায় এনসিপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ আয়োজনে গতকাল মশাল মিছিল হয়। রাত ৯টার দিকে বাংলামোটরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কারওয়ান বাজার মোড় পর্যন্ত মিছিল করেন নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে সমাবেশ থেকে আজ রাজধানীর সব থানার সামনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি ও থানায় স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।
গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে দেশের অন্যান্য স্থানেও বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কুমিল্লা, ফরিদপুর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, খুলনা, মাদারীপুর, নোয়াখালী, রাজবাড়ী, ধামরাই (ঢাকা), শেরপুর (বগুড়া) এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।
[তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিরা]

ফিরে দেখা ১৭ জুলাই
শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনের ১৭তম দিন ১৭ জুলাই ছিল পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সরকারি ছুটি। তবে ছুটির দিনও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আন্দোলন ও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এদিন ঢাকাসহ দেশের অন্তত ১০টি জেলায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া অন্তত ১০ স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক এবং দুই স্থানে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।
আগের দিন সংঘর্ষে আবু সাঈদসহ ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কফিল মিছিল ও গায়েবানা জানাজা আদায় করা হয়। এসব কর্মসূচিতে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরদিন (১৮ জুলাই) সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
১৭ জুলাই দিনভর রাজধানীর শনির আখড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসগুলোতে বিক্ষোভ-সংঘর্ষের চিত্র
১৭ জুলাই সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
এদিন আন্দোলনকারীদের ক্যাম্পাস ছাড়া করতে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। দুপুরের পর তাদের টানা দুই ঘণ্টার অভিযানে ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। সেখানেও দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
দুপুর ২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল’ কর্মসূচি থাকলেও পুলিশের বাধায় সেখানে গায়েবানা জানাজা হয়নি। পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কফিন মিছিল শুরু হলে একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর আবার সূর্য সেন হলের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলে ঘণ্টাখানেক। পরে শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিলে পুলিশ আবারও তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। জবাবে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। রাত ১০টার দিকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আরেক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গায়েবানা জানাজা শেষে তাঁরা শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু করলে পুলিশ নির্বিচার হামলা চালায়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হল বন্ধের ঘোষণা ও পুলিশের তৎপরতার মুখে সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারী অনেক শিক্ষার্থী হল ছেড়ে যান। তবে অনেক শিক্ষার্থী হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেও হল ও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা রাতে হলে অবস্থান করছিলেন। হামলাকারীদের বিচার না হলে হল ছেড়ে যাবেন না বলে জানান তাঁরা।
এদিন দুপুর ১টার দিকে শিক্ষকদের একটি দল মৌন মিছিল নিয়ে শাহবাগ থানায় পুলিশের হাতে আটক হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে আনেন। পরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ’ করেন শিক্ষকরা।
এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি
শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হামলা, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে পরদিন ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচি চলাকালে হাসপাতাল, গণমাধ্যমসহ অন্যান্য জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ঢাবি ও চবি
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সব আবাসিক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সমাধানের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হয়। এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ছাত্রীদের এবং রাত ১০টার মধ্যে ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
রংপুরে আবু সাঈদের দাফন
কোটা সংস্কার আন্দোলনে আগের দিন নিহত রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন হয় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের নালিপাড়ায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত জানাজা ও দাফনের তাগিদ দেওয়া হলে উপস্থিত লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুই দফা জানাজা শেষে সকাল সোয়া ১০টার দিকে আবু সাঈদের লাশ দাফন করা হয়।
জাতির উদ্দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী সৃষ্ট সংঘাতময় পরিস্থিতিকে সামনে রেখে এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি আন্দোলনকারীদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ সর্বোচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবে। তাদের হতাশ হতে হবে না।’

বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির ব্লকেড
সাঁড়াশি অভিযানের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে গোপালগঞ্জসহ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বুধবার রাজধানীর শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাঁড়াশি অভিযানে যৌথ বাহিনী ব্যর্থ হলে জুলাইয়ের ছাত্র-জনতা মাঠে নেমে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে। এ সময় ২৪ ঘণ্টার জন্য বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণাও দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রিফাত বলেন, ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এবং দিল্লির চক্রান্তে গোপালগঞ্জের ভেতরে একটি প্রক্সি স্টেট তৈরি করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই প্রক্সি স্টেট খেলা আমরা হতে দেব না। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে হটিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইসি একটি নাটকবাজি করেছে। ইসি বলেছে, নৌকা প্রতীক নাকি এখনো থাকবে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে বলতে চাই, এত বড় একটি গণহত্যার পরেও বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা, তাদের আওয়ামী লীগ এবং তাদের মার্কা থাকতে পারবে না।
রিফাত বলেন, ‘অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। স্বৈরাচারী হাসিনার গোপালি পুলিশ এখনো ছাত্র-জনতার দিকে বন্দুক তাক করে।’
এর আগে দুপুরের দিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীর ওপর আওয়ামী নেতাকর্মীদের ন্যক্কারজনক হামলা ও অবরুদ্ধ করার ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রশিদুল ইসলাম রিফাত এ ঘোষণা করেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘গোপালগঞ্জে জুলাইয়ের নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নয়, একই সঙ্গে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি।
সারা দেশে বাংলা ব্লকেড : রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। গতকাল বিকেলে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের আজমপুর ও হাউস বিল্ডিং মোড় ঘিরে বিক্ষোভে নেমে পড়ে শতাধিক প্রতিবাদকারী। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা বলে, গোপালগঞ্জে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তাদের পদযাত্রা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ঠেকাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পুলিশি সহায়তায় হামলা করেছে। এর প্রতিবাদে উত্তরা অঞ্চলে তারা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছে।
বিকেল ৩টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বরে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মিরপুর জোন।
রাজধানীর শাহবাগে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে জুলাই মঞ্চ। কর্মসূচি চলাকালে মঞ্চের বক্তারা বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত গোপালগঞ্জের ঘটনার সঠিক বিচার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।’
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলার ঘটনায় পুলিশ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেয় তারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় তারা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা।
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় না আনলে লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বিকেলে মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় অবরোধ করেন এনসিপি নেতাকর্মীরা।
এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদুর রহমান তনু জানান, সাইনবোর্ডে ছাত্র-জনতা জড়ো হতে শুরু করেছে। হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।
তবে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে ব্লকেড কর্মসূচি থেকে সরে আসতে বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বিক্ষোভকারীদের রাস্তার এক পাশে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
গণমাধ্যমকর্মীদের দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘সারা দেশে রাজপথের ব্লকেড সরিয়ে নিন। রাস্তার এক পাশে অবস্থান করুন। লড়াই চলবে।’
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রায় আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে দেশের অন্যান্য স্থানেও বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কুমিল্লা, ফরিদপুর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, খুলনা, মাদারীপুর, নোয়াখালী, রাজবাড়ী, ধামরাই (ঢাকা), শেরপুর (বগুড়া), গাজীপুরের টঙ্গীতে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।
[তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিরা]

জামায়াত আমির
সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে
- প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার পৃথক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
ডা. শফিকুর রহমান গতকাল বুধবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রশ্ন তোলেন, ‘গোপালগঞ্জে কী হচ্ছে?’ তিনি লেখেন, ‘গোপালগঞ্জ তো বাংলাদেশেরই অংশ। যত দূর জানতে পেরেছি, এনসিপির নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে পূর্ব আলোচনা করেই শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেছেন, যা তাঁদের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার।
জামায়াতের আমির সরকারের উদ্দেশে লেখেন, সরকারকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় ইতিহাসের দায় তাদের ওপরই বর্তাবে।
ডা. শফিকুর রহমান সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সংঘাত ও উচ্ছৃঙ্খলতা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে লেখেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সব ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই এবং শান্তিপ্রিয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘মহান আল্লাহ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে তাঁর সাহায্য প্রেরণ করুন।
অন্যদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে ‘আওয়ামী শাসনব্যবস্থার সহযোগী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে’ হামলা চালিয়েছে। তাঁর ভাষ্য, কর্মসূচির আগে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কার্যকর উপস্থিতি দেখা যায়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
তিনি বলেন, ‘গোপালগঞ্জ কোনো বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড নয়, এটি বাংলাদেশের অংশ।
পরওয়ার দাবি করেন, ‘৫ আগস্ট ছাত্র ও জনগণের গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটেছে, তবে দেশ এখনো পুরোপুরি ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। ক্ষমতাচ্যুত শাসকগোষ্ঠী দেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।’
সেক্রেটারি জেনারেল জানান, এনসিপির কর্মসূচিতে ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশের গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তিনি তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এদিকে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের হামলা, অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার বলেন, গতকাল বুধবার এনসিপির পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়, এমনকি পুলিশের এসপি অফিসেও হামলা করা হয়। তিনি দাবি করেন, এতে এনসিপির অনেক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনাও ঘটে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরো বলেন, ‘এই হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দেশের সব জেলা ও মহানগরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।’ তিনি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
বিবৃতিতে অধ্যাপক পরওয়ার ফ্যাসিবাদবিরোধী গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সচেতন নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সর্বাত্মকভাবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
গোপালগঞ্জে এই হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে খুলনা নগরীর ডাকবাংলা মোড়ে মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে বিক্ষোভ করা হয়েছে। মিছিলপূর্ব সমাবেশে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।