সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি অনেকটাই দৃশ্যমান। ছিনতাই, ডাকাতি, লুটপাট, হামলা ছাড়াও ঘটছে মব সহিংসতার মতো ঘটনা। এর নেতিবাচক প্রভাব দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর পড়লেও নারীদের নিরাপত্তাহীনতার বহুমাত্রিক চিত্র ফুটে উঠেছে গত কয়েক মাসের নানা ঘটনায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, নারীদের ওপর আক্রমণের বিষয়টি আগেও ছিল।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ
বাড়ছে নারীর নিরাপত্তাহীনতা
খায়রুল কবির চৌধুরী

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই দেশে আজ শনিবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য, ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন/নারী ও কন্যার উন্নয়ন।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় গত বছর ডিসেম্বরে দেশে এক হাজার ২০৫টি মামলা হয়েছে। আর একই কারণে চলতি বছর জানুয়ারিতে মামলা হয়েছে এক হাজার ৪৪০টি। অর্থাত্ এক মাসের ব্যবধানে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা বেড়েছে ১৯.৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে যথাক্রমে ২০৫ ও ১৮৯টি। মহিলা পরিষদের নারী ও কন্যা নির্যাতন বিষয়ক তথ্যে বলা হয়েছে, সদ্য শেষ হওয়া ফেব্রুয়ারিতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৬টি। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১টি। জানুয়ারিতে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২০টি। এ দুই মাসে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন অন্তত তিনজন নারী।
অন্যদিকে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের মানবাধিকার প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত তিন মাসে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ক্রম-ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যানুযায়ী, গত বছর ডিসেম্বরে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ২৪১টি। চলতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এই সংখ্যা যথাক্রমে ২৭১ ও ২৯৫-এ দাঁড়িয়েছে।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, গত দুই মাসে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৯টি। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩২টি। যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৪৫টি।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে চলতি বছর জানুয়ারিতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অন্তত ১১ জন নারী। জানুয়ারিতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৯টি। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণ ১৮টি। ধর্ষণচেষ্টা হয়েছে দুটি। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে তিনজনকে। পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৪০টি। এর মধ্যে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আসকের তথ্যানুযায়ী, গত বছর নভেম্বরে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অন্তত সাতজন নারী। ওই মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১২টি, এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণ দুটি। ধর্ষণচেষ্টা সাতটি। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে তিনজনকে। ডিসেম্বরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৩টি, এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ছয়টি। ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার পর হত্যা করা হয়েছে সাতজনকে।
তবে শুধু এসব তথ্য দিয়ে গত কয়েক মাসে নারীদের হেনস্তা ও আক্রমণ এবং আক্রমণের ধরনের চিত্রটি বোঝা যাবে না। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মব তৈরি করে একাধিক নারীকে হেনস্তা করার ঘটনা ঘটেছে। পথেঘাটে, গণপরিবহনে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বক্ষেত্রে নারীরা বিভিন্নভাবে হয়রানি ও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
গত ৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়টির গ্রন্থাগারের সহকারী বুক বাইন্ডারের বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষার্থী জানান, রাজু ভাস্কর্যের সামনে ওই ব্যক্তি তাঁকে ওড়না ঠিক করাসহ নানা ধরনের কুরুচিপূর্ণ কথা বলেন। পরে ওই কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা হলে সেদিন রাতেই তাঁর মুক্তির দাবিতে ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে একদল লোক শাহবাগ থানায় অবস্থান নেয়। পরদিন বিকেলে জামিনে মুক্তি পেলে তাঁকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন ছাত্রীকে বহিষ্কারের চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অনেকে সমালোচনা করছেন।
রাজধানীর লালমাটিয়ায় ধূমপানকে কেন্দ্র করে মব তৈরি করে দুই নারীর ওপর আক্রমণের ঘটনা ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। নিরাপত্তার খাতিরে দুই নারীকে থানায়ও নিয়ে যাওয়া হয়। পরে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় গত রবিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমি যতটুকু জেনেছি তারা (দুই তরুণী) নাকি সিগারেট খাচ্ছিল, কিছু লোক সেখান দিয়ে নামাজ পড়তে যাচ্ছিল। তারা (লোকেরা) বাধা দেওয়ায় তাদের ওপর চা ছুড়ে মেরেছিল। পাবলিক প্লেসে ধূমপান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য অপরাধ।’
অন্যদিকে এ ঘটনায় আপস হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। গত মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে উভয় পক্ষ পুলিশের সামনে একটি আপসনামায় স্বাক্ষর করেছে। ফলে এটিকে চূড়ান্ত বলে বিবেচনা করতে হচ্ছে। মব জাস্টিস বা মোরাল পুলিশিংয়ের কোনো সুযোগ এ দেশে নেই। সরকার এর বিরুদ্ধে সব সময়ই শক্ত অবস্থানে আছে।’
এর আগে গত আগস্টের পটপরিবর্তনের পর দেশে নারীর ওপর একাধিক আক্রমণ ও হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। যেগুলো দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরই ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে জয়পুরহাট ও দিনাজপুরে মেয়েদের ফুটবল খেলায় বাধা দেওয়া হয়।
বিনোদন জগতের একাধিক তারকাও তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঢাকার কামরাঙ্গীর চর এলাকায় একটি রেস্টুরেন্ট উদ্বোধনের কথা ছিল চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের। অপু বিশ্বাস রেস্টুরেন্ট উদ্বোধন করবেন—এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানকার স্থানীয়রা এর প্রতিবাদ জানান। পরে অপু বিশ্বাসকে দিয়ে উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ। ওই মাসেই একই রকম বাধার মুখে পড়েন নায়িকা পরীমনিও। এর আগে গত বছর নভেম্বরে ‘সর্বস্তরের ব্যবসায়ী ও তাওহীদি জনতার’ ব্যানারে কিছু ব্যক্তির বাধার মুখে চট্টগ্রাম নগরে শেরুম উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেননি অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী।
এদিকে কালের কণ্ঠের কাছে কয়েকজন নারী সামপ্রতিক সময়ে তাঁদের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছেন। নাসরিন সুলতানা (ছদ্মনাম) দেশের একটি বেসরকারি ব্যাংকের কল সেন্টারে কাজ করেন। রাজধানীর মগবাজার থেকে তেজগাঁওয়ে অফিসে যাতায়াত করেন তিনি। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আগস্ট বা সেপ্টেম্বর থেকে আমি লক্ষ্য করলাম, বাসে আগের মতো মেয়েদের জন্য সিট সংরক্ষিত থাকছে না। আগে একটা মহিলা সিটে একজন পুরুষ বসা থাকলেও কোনো মহিলা উঠলে বাসে তিনি আসন ছেড়ে দিতেন। কিংবা চালক বা তার সহকারী ওই ব্যক্তিকে বাধ্য করতেন সিট ছেড়ে দিতে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে এই চিত্র আর দেখছি।’
এদিকে গত বুধবার ঢাকার মতিঝিল থেকে উত্তরাগামী মেট্রো রেলে নারীদের কোচে উঠে পড়া পুরুষ যাত্রীদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশুদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। সেখানে থাকা এক নারী চিকিৎসক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ‘নারীদের জন্য সংরক্ষিত বগিতে ১০-১২ জন পুরুষ ছিল। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে তারা এক শিশুসহ নারীদের শ্লীলতাহানি করে।
এ ছাড়া গত সাত মাসে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে তরুণীদের হেনস্তা, রাজধানীতে ভাসমান যৌনকর্মীদের আক্রমণ ও বেধড়ক পিটুনি, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ষাটোর্ধ্ব এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, মেট্রো রেল ও গণপরিবহনে নারী ও শিশুদের যৌন নিপীড়নের মতো বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলন-পরবর্তী বাংলাদেশে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন, হয়রানি, বিদ্বেষসহ নিপীড়নের ঘটনা বেড়ে চলেছে বলে গত বুধবার বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেটওয়ার্ক। তারা বলছে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নারীবিদ্বেষী কথা বলেছেন এবং সেটির সঙ্গে আইনের ভুলভাল ব্যাখ্যাকে কৌশলে যুক্ত করে দিয়েছেন।...“দেশে ‘মব ইনজাস্টিস’ তৈরি করে বিষোদগারের চর্চা তো বন্ধ হচ্ছেই না, উল্টো তা দিন দিন বাড়ছে এবং এবার এর শিকার বানানো হয়েছে (লালমাটিয়ায়) দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে।”
নারীকে হেনস্তা ও নারীবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড বেড়ে চলছে বলে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ একাধিক রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নারী নির্যাতনের তথ্য দিয়ে সাম্প্রতিক প্রবণতাগুলোকে পুরোপুরি মেলানো যাবে না। আমাদের এখানে মামলার ভিত্তিতে আমরা সামগ্রিক নারী নির্যাতনের তথ্য দিই। এর মধ্যে দেখা যায় পারিবারিক সহিংসতাই বেশি। শুধু নারী নন, সব নাগরিকের নিরাপত্তার জন্য আমরা কাজ করছি। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নারীর ওপর মোরাল পুলিশিং বা নৈতিক অনুশাসন এখন তৌহিদী জনতার হাতে চলে গেছে। এর অনেক কারণের মধ্যে একটি নাজুক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশে মব ভায়োলেন্স অব্যাহত আছে। নারীদের ওপর আক্রমণের বিষয়টি আগেও ছিল; এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুর্বল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। জনগণকে রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। তারা যদি না করে আমাদের জনগণের অসহায় হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
দেশে নারীদের নিরাপত্তাহীনতা ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য জানতে অন্তর্বর্তী সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সম্পর্কিত খবর

এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। দুপুর ২টা থেকে যেকোনো মোবাইলে এসএমএস, শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফল জানতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এই ফল প্রকাশের মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৯ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান হবে।
এ বছর আগের মতো ফলাফল প্রকাশের কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না।
শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার গতকাল বলেছেন, এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তরে আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। দুই মাসের কম সময়ের মধ্যেই সব বোর্ডের ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে। সব বোর্ড নিজেদের মতো করে ফল প্রকাশ করবে।
যেভাবে জানা যাবে ফল : যেকোনো মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানতে মোবাইলের এসএমএস অপশনে গিয়ে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পরীক্ষার বছর লিখে তা ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।
দাখিলের ফল পেতে উধশযরষ লিখে স্পেস দিয়ে গধফ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। কারিগরি বোর্ডের ক্ষেত্রে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ঞবপ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত ওয়েবসাইট http://www.educationboardresults.gov.bd -এর মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল জানা যাবে। আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ইনপুট দিয়ে ও শিক্ষা বোর্ড সিলেক্ট করে ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করে ফল জানা যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন শিক্ষার্থী। দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।
ফল প্রকাশের পর তা পুনর্নিরীক্ষণের সময়ও জানিয়েছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড। ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদন পদ্ধতি শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং টেলিটক বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে আজ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

ভারতীয় জেনারেলের দাবি
চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জোট ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান বলেছেন, চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের প্রতি ঝুঁকছে। এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। গত মঙ্গলবার ভারতের চিন্তক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অনিল চৌহান এ কথাগুলো বলেন।
জেনারেল চৌহান বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট বহিরাগত শক্তিদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে।
জেনারেল চৌহান বলেন, এই প্রবণতা ভারতের জন্য বড় এক সমস্যা। সম্প্রতি চীনের কর্মকর্তারা সে দেশে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন।
চীন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা বহু পুরনো। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তাঁর ভারতে আশ্রয়লাভ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
অনুষ্ঠানে সিডিএস জেনারেল চৌহানকে পাকিস্তান-ভারত সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, ওই সংঘাতে পাকিস্তানকে চীন কতটা ও কিভাবে সমর্থন দিয়েছে, সহায়তা করেছে, তা বলা খুবই কঠিন।
জেনারেল চৌহান বলেন, তবে ঘটনা হলো পাকিস্তান তাদের প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বেশির ভাগটাই চীন থেকে নেয়। সে কারণে পাকিস্তানে চীনের উপস্থিতি থাকার কথা। বিশেষ করে সংঘাত ও সংঘর্ষের সময়। সেটা কতটা ছিল এবং সমর্থন বা সহায়তার চরিত্র কেমন ছিল, তা বলা সহজ নয়।
অপারেশন সিন্দূর নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলার প্রসঙ্গে ভারতের উপসেনাপ্রধান লে. জেনারেল রাহুল আর সিং অবশ্য গত শুক্রবার বলেছিলেন, সংঘাতের সময় পাকিস্তানকে চীন শুধু সাহায্যই করেনি, সংক্ষিপ্ত ওই যুদ্ধকে তারা তাদের অস্ত্রের পরীক্ষাগার করে তুলেছিল।
ওই কর্মকর্তার দাবি, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ওই যুদ্ধে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, সেগুলোর ৮১ শতাংশই চীনের তৈরি। সেসব অস্ত্র প্রকৃত যুদ্ধের সময় কতটা কার্যকর, সে পরীক্ষাও চীন করে ফেলেছে। ওই সংঘাতকে চীন তার অস্ত্রসম্ভারের পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করেছে। সূত্র : ডেকান হেরাল্ড

গণ-অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘন
বিচার আইসিসিতে পাঠানোর অনুরোধ অ্যামনেস্টিরf
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনা আইসিসিতে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এ আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটেনভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠন।
গতকাল বুধবার সংগঠনটির সাউথ এশিয়া বিষয়ক ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসংক্রান্ত একটি পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার বিচার রোম সনদের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
গতকাল বুধবার ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারীদের ওপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি গুলির নির্দেশের একটি ফোনকল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
এর আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের একটি তথ্য-উপাত্তভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ধাতব পেলেটযুক্ত অস্ত্রের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের ব্যবস্থা করা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে একটি ন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব অপরাধীকে জবাবদিহির আওতায় আনা।

সরকারের উদ্যোগেই জুলাই ঘোষণাপত্র, ইতিবাচক বিএনপি
- দায়িত্বে আছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা
দু-এক দিনের মধ্যে মতামত জানাবে বিএনপি
হাসান শিপলু

ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে আবার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রধান কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চাপের মুখে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।
এর আগে কয়েক দফা ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া সম্প্রতি তাদের দলের একজন শীর্ষ নেতার কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত দুই দিন দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হয়।
ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধান উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংশোধন, পুনর্লিখন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করার কথা বলা আছে। এ বিষয়ে বিএনপির আপত্তি রয়েছে। দলটি পরবর্তী সংসদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনের পক্ষে থাকলেও সংবিধান বাতিল করে তা পুনর্লিখনের বিপক্ষে।
সরকারসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার কথা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। খসড়া ঘোষণাপত্র তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এ যৌথ প্রচেষ্টার জন্য আরো মতামত দরকার, যাতে এটি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় এবং জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে।
সরকারের পক্ষ থেকে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘সরকারের খসড়া ঘোষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা মতামত দিয়েছিলাম। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আর যোগাযোগ করা হয়নি। এখন আবার একটি খসড়া দেওয়া হয়েছে। আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাব।’
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হঠাৎ করে এই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আনে। তখন এর প্রভাব কী হতে পারে, তা বুঝতে চাইছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ঘোষণাপত্রের পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্কের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সরকার সর্বদলীয় বৈঠক করে, কিন্তু তাতে ঐকমত্য হয়নি। ওই সময় বিএনপি এত দিন পর ঘোষণাপত্রের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরপর গত ১৬ জানুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে।
সম্প্রতি এনসিপি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আবার সরব হয়ে ওঠে। গত ৪ জুলাই ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ে এক পথসভায় এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই-আগস্টের মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এও বলেন, এই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক ভিত্তি থাকবে। অন্যথায় তাঁদের পক্ষ থেকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ দেওয়া হবে বলে সরকারকে সতর্ক করেন নাহিদ।
সরকারসংশ্লিষ্ট একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেন, ঘোষণাপত্রের মূল অংশীজন হলো বিএনপি ও এনসিপি। তাদের মধ্যে ঐকমত্য হলে দ্রুত ঘোষণাপত্র দেওয়া যাবে।
ঘোষণাপত্রে উল্লেখযোগ্য যা আছে : খসড়া ঘোষণাপত্রে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয় তুলে ধরা হয়। কোন পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়, সে বিষয়টিও উঠে আসে।
এতে ১৯৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের কথাও বলা হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ‘ব্যর্থতা’ এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করার কথাও তুলে ধরা হয়।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে মত প্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করার ফলে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লব সংগঠিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মত প্রকাশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর সিপাহি-জনতার বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আবার ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। মূলত তখন থেকে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদের পথ সুগম হয়। এই বিষয়গুলো যুক্ত করার ফলে ঘোষণাপত্র বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে।
খসড়ায় স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে জনতার অবিরাম সংগ্রাম এবং এর মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান এবং পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সৃষ্টির বিষয়টিও উঠে আসে।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ধারাবাহিক তিনটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
তবে বিএনপি নেতাদের কয়েকজন ২০০৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনকেও এর সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দেন দলীয় ফোরামে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে বলা হয়, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বলে প্রদত্ত সুপ্রিম কোর্টের মতামত অনুসারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা : গত মঙ্গলবার এবং গতকাল বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খসড়া ঘোষণাপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করে কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করে বিএনপি তাদের মতামত দিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিএনপি এ বিষয়ে তাদের মতামত সরকারকে জানাবে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আরো যেসব বিষয়ে আলোচনা : মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপ, নারী আসন, নির্বাচনে পিআর পদ্ধতিসহ সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি। একই সঙ্গে এই শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
জানা গেছে, বৈঠকে সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের প্রতিবেদন তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এরপর সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত দেন বিএনপি নেতারা। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এর মধ্যে সংসদে নারীদের আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে। তবে তাঁরা কিভাবে নির্বাচিত হবেন, সে ব্যাপারে এখনো ঐকমত্য হয়নি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, তাঁরা প্রচলিত পদ্ধতিতে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত করার পক্ষে অবস্থান নেবেন। পাশাপাশি কোনোভাবেই পিআর পদ্ধতি মানবেন না তাঁরা।