ঢাকা, শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ মহররম ১৪৪৭

মূল দায়দায়িত্ব রাজনীতিকদেরই

হাসান শিপলু
হাসান শিপলু
শেয়ার
মূল দায়দায়িত্ব রাজনীতিকদেরই

অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে ঐকমত্যের প্রয়াস শুরু হওয়ার পর এর প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়ন নিয়ে নানা আলোচনা চলমান। ব্যাপকভিত্তিক আলোচনা করেও রাজনৈতিক নানা মতাদর্শের কারণে কতটুকু ঐকমত্যে পৌঁছা সম্ভব, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় দেখা দিয়েছে।

ঐক্যপ্রক্রিয়ার বিষয়টিকে যেমন ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে, আবার নানা প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। কেউ কেউ বিষয়টিকে জটিল ও সময়সাপেক্ষ বলছেন।

অনেকে বলছেন, সুপারিশ বাস্তবায়নে অনেক বিষয়ে সমর্থন দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জও। কারণ কোন দল কী সুপারিশ করল, তা প্রকাশ করা হবে। ফলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে গেলে তাদের সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে। 

এই প্রক্রিয়াকে সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরু বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অন্যদিকে সংস্কার প্রশ্নে সরকারের এই প্রয়াসকে একটি সূচনা পর্ব হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে এটি যে বেশ কয়েক মাসের একটি প্রক্রিয়া, তা অনুধাবন করা যাচ্ছে।

শনিবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে প্রথম বৈঠক করে। এতে বিএনপি, জামায়াতসহ ২৭টি দল ও জোটের প্রায় ১০০ রাজনৈতিক নেতা অংশ নেন।

বৈঠকের বিষয়ে পাঁচটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কালের কণ্ঠের কথা হয়। প্রধান উপদেষ্টাসহ সংস্কার কমিশনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্যে তাঁদের মনে হয়েছে, সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে বৃহৎ পরিসরে আলোচনা করতে চায় সরকার। বিভিন্ন দল ও সামাজিক শক্তির সঙ্গে পৃথকভাবে বসবেন তাঁরা। তবে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব হবে না। সে অবস্থায় সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, শুধু যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হলো, সেগুলোকেই কি বাস্তবায়ন করা হবেএমন নানা প্রশ্ন তাঁদের মনে এসেছে।

অনেকের ধারণা, রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে সরকার বেশ আন্তরিক। সরকার সবার মতামতের ভিত্তিতে সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে চায়। সংস্কারের বিষয়ে জনমত তৈরি করার লক্ষ্যে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার কথা বলা হয়েছে। কারো ওপর চাপিয়ে দিয়ে প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় না সরকার।

সরকারের অবস্থান জানিয়ে ড. ইউনূস বৈঠকে বলেছেন, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব চাপিয়ে দেওয়ার জন্য নয়। আমরা কেবল সুপারিশগুলো নিয়ে এসেছি, আমরা শুধু সাচিবিক কাজ করে দিলাম। এটা আমার কাজ নয়, এটা আপনাদের কাজ, যেহেতু আপনারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন।

প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলছেন, সংস্কার কতটুকু বাস্তবায়ন করা হলো তা নিয়ে সরকার কোনো দায় নিতে চাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর চাহিদা অনুযায়ী সংস্কার বাস্তবায়ন করা হবে। ফলে যেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হবে না, তার দায়ও রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি জোটের একজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ধরা যাক, কোনো ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন নাএই সুপারিশে কোনো দলের দ্বিমত থাকতে পারে। এর বিপক্ষে ওই দলের যাওয়াটাও কঠিন, কারণ ওই মতামত সরকার প্রকাশ করবে। কিছু সুপারিশের বিষয়ে এরই মধ্যে এক ধরনের জনমত তৈরি হয়ে গেছে। ফলে ওই দল কেন ওই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির বিপক্ষে গেল, সেই কৈফিয়ত তাদের দিতে হবে।

অবশ্য রাজনৈতিক দলের কেউ কেউ মনে করেন, কোন দল কী চাইল তা প্রকাশ করা হলে ওই দলের মনোভাবের বিষয়ে জনগণ জানতে পারবে। ভোটাররা কাদের ভোট দেবে সে বিষয়েও তাদের ধারণা তৈরি হবে। এতে স্বচ্ছতা তৈরি হবে।

ঐকমত্যের প্রয়াস নিয়ে নাম প্রকাশ করে কেউ কোনো নেতিবাচক কিছু বলতে চাইছেন না। নাম প্রকাশ না করে শনিবারের বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরে একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ওয়েবসাইটে প্রস্তাবগুলো দেওয়া হবে। রাজনৈতিক দলগুলো সেখানে গিয়ে হ্যাঁ অথবা না চিহ্ন দেবে। কোন কোন দল বেশির ভাগ সুপারিশে হ্যাঁ টিক চিহ্ন দিল, আর কোন দল বেশির ভাগ সুপারিশে না টিক চিহ্ন দিল, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা আলোচনা হবে। কোন দল কোনটা চাইল তা সবাই দেখতে পারবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হবে? যে কয়েকটি বিষয়ে ন্যূনতম ঐকমত্য হলো সেটুকুই বাস্তবায়ন করা হবে? নাকি সরকার তার মতো সিদ্ধান্ত নেবে? বিষয়টি পরিষ্কার নয়।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ঐকমত্য কমিশনের প্রথম সভায় প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনগুলো নিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার কথা বলেছেন। এরপর একটা ঐকমত্যে পৌঁছার চেষ্টা করা হবে। সেটিই বৈঠকের মূল কথা। আমরা আশা করি, খুব দ্রুত সংস্কার বিষয়ে ন্যূনতম যে ঐকমত্য তৈরি হবে এবং সেটির ওপরে ভিত্তি করে অতি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

বৈঠক থেকে বের হয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছি এবং বলেছি, সব ইতিবাচক সিদ্ধান্তে জামায়াতে ইসলামী সমর্থন জানাবে। সরকারের টিমের সঙ্গে আমাদের আলাদা বৈঠক হবে, মতবিনিময় হবে। সেখানেই আমাদের মূল সিদ্ধান্ত জানাব।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে কতটুকু সংস্কার দ্রুত করতে হবে, আর কতটুকু পরে করা যাবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতেই জুলাই সনদ প্রণয়ন করবে সরকার। এই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে সংসদ নির্বাচন হবে। ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ছয় মাস।

অর্থাৎ জুলাই সনদ প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা আসছে না। যদি জাতীয় সনদ তৈরি করতে সময় বেশি লাগে তাহলে ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। তা ছাড়া সরকারকে বিভিন্ন সংকট যেভাবে মোকাবেলা করতে হচ্ছে এবং সামনে যদি আরো সংকট আসে তাহলে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় বেশি লাগাটা স্বাভাবিক।

 

বিভিন্ন দলের নেতারা যা বলেন

সংস্কারের সুপারিশের প্রক্রিয়া ও উদ্যোগের বিষয়ে এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ভালো যেকোনো উদ্যোগের জন্য সময় দিতে হবে। সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে হবে। সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ব্যাপক ভিত্তিক আলোচনার প্রয়োজন আছে। তবে প্রশাসনে আওয়ামী লীগের দোসর এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে রেখে সরকারের সফল উদ্যোগ কতটা সফল করা যাবে তা নিয়ে সংশয় আছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংবিধান কোনো গদ্য কিংবা পদ্য নয়। তাই এ নিয়ে সময় নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক বলেন, উদ্যোগ ভালো। সরকার কিছু চাপিয়ে দেবে না বলেছে, এটাই বাস্তবতা। দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে, এটাও ইতিবাচক। কিন্তু রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে এমসিকিউ পদ্ধতিতে টিক চিহ্ন দেওয়ার বিষয় নয়। এ জন্য যুক্তি, আলোচনা-সমালোচনা ও ঐকমত্য প্রয়োজন।

শনিবারের বৈঠকে সরকারের ঐক্য প্রচেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, আপনাদের কোনো আলোচনায়, ছবিতে কোথাও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো অবদান ঠাঁই পায় না। তাহলে কিভাবে জাতীয় ঐকমত্যের জন্য সব দলের সহযোগিতা চান?

গতকাল কালের কণ্ঠকে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, সব দলের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যেগুলো সবারই প্রস্তাব, সেগুলোর আলাদা তালিকা করলে বোঝা যাবে কোন বিষয়ে সব দল একমত। যেসব বিষয়ে ভিন্নমত আছে শুধু সেগুলো নিয়ে আলোচনা হলে সময় বেশি লাগবে না। জটিলতাও কমবে। সরকার দ্রুত নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে পারবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল

সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে

প্রায় দুই দশক পর জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামীকাল শনিবার ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ হবে। বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত দলটির নেতাকর্মীরা।

সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াত।

এতে দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। এতে দেশে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে, যা জনগণ মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক সংস্কার জরুরি। কোনো ষড়যন্ত্র যেন এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। অংশ নেবেন ইসলামী দলগুলোর নেতারা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা।

গোলাম পরওয়ার বলেন, স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে আমাদের দল নানা নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার কিছুটা ফিরে এসেছে।

তিনি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি চান তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। দলটির পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।

জুলাই মাসে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি বলেও দাবি করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল।

তিনি বলেন, বিষয়টি জাতীয় সমাবেশে জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে।

তিনি জানান, সমাবেশ সফল করতে একটি বাস্তবায়ন কমিটিসহ আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ মাইক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাবেশের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

সমাবেশে থাকবে ২০টি পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ঢাকার আশপাশ থেকে আগতদের জন্য ১৫টি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

সমাবেশস্থলের ভেতরে ও বাইরে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ থাকবে, প্রতিটিতে থাকবেন দুজন করে চিকিৎসক, জরুরি ওষুধ এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকবে।

ড্রোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও ধারণ ও সরাসরি সম্প্র্রচারেরও আয়োজন থাকবেএলইডি স্ক্রিন ছাড়াও ফেসবুক ও ইউটিউবেও সম্প্রচার করা হবে।

সমাবেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান গোলাম পরওয়ার।

সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি বলেন, সারা দেশ থেকে মানুষ রেল, সড়ক ও নৌপথে সমাবেশে অংশ নিতে আসবে। এতে নগরবাসীর কিছুটা দুর্ভোগ হতে পারে। আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। তিনি জানান, সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়। তবে সকাল ১০টা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলবে।

এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনারও নিন্দা জানান গোলাম পরওয়ার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতার অভিযোগও করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সাত দফা দাবিও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলোঅবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ; সব গণহত্যার বিচার; মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার; জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন; জুলাই শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন; পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

মন্তব্য

তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ

ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল  ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন যোগ্য নাগরিকরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক।

পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান প্রধান উপদেষ্টার  প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং সিনিয়র সহকারী  প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।

সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহম্মদ বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৮ বছর হয়, তাঁরা পরবর্তী জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। নির্বাচন কমিশন প্রতিবছরের ২ জানুয়ারি ওই খসড়া ভোটার তালিকা এবং  ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়, অর্থাৎ ভোটার হওয়ার জন্য যোগ্য হন, তাঁরা ওই নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ পান না।

তাঁদের পরবর্তী নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

ফয়েজ আহম্মদ আরো বলেন, এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁদের ভোটার তালিকায় নিয়ে আসাকে যৌক্তিক মনে করে। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ধরুন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। তার সর্বোচ্চ দুই মাস আগে তফসিল ঘোষিত হয়।

তার মানে নভেম্বর পর্যন্ত যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁরা ভোটার হওয়ার সুযোগ পান না। বরং আগের বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁদের বয়স ১৮ বছর হয়েছে, তাঁরাই ভোটাধিকার পান।

ফয়েজ আহম্মদ বলেন, আজ যে অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন করা হলো, এর ফলে যখন নির্বাচনের তফসিল  ঘোষণা হবে, তার অন্তত এক মাস আগ পর্যন্ত যেসব ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর হবে, তাঁরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।

মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ : গতকাল সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম  বলেন, অনেকের কিডনি ড্যামেজ হয়, অনেকে চোখে দেখতে পায় না, কর্নিয়া সংযোজন হলে অন্ধত্ব দূর করা যায়, এসব বিষয়ে বাংলাদেশের যে আইন ছিল সেটা অনেক দিন থেকে আপডেট হয়নি।

 

তিনি বলেন, নতুন এই অধ্যাদেশের ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনটা খুব সহজ হবে। আগে যেমন ছিল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য খুবই কাছের যেমনভাই, বোন, মা-বাবা থেকে নিতে পারতেন, এখন এটাকে একটু সম্প্রসারণ করা হয়েছে। 

অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে নতুন করে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আগে যেমন ভাতিজা, ভাগিনা তারা অঙ্গ দান করতে পারত না। এখন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, মানে পরিধি বাড়ানো হয়েছে।

প্রেস সচিব আরো বলেন, এর ফলে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অনেককেই এখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আর বিদেশে যাওয়া লাগবে না। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোও এই সার্ভিস দিতে পারবে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী আইন। 

একই সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গোপালগঞ্জে গত বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে, সে সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে, ওই তথ্য হয়তো ছিল না।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গতকাল (বুধবার) এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ ঘটনায় আমাদের ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

আহতদের মধ্যে দুজনকে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। আহত আরো তিনজন পুলিশ সদস্যকেও রাজারবাগ হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে।

এ ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এনসিপি নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

যারা অন্যায় করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং হবে। কাউকে কোনো রকম ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত সব অপরাধী ধরা না পড়বে, তত দিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপদেষ্টা এ সময় গোপালগঞ্জের ঘটনা লাইভ করায় সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থা দেখতে যান।

 

মন্তব্য

আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিবন্ধিত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সব নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম।

তিনি বলেন, নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে এবং আগের নীতিমালা  বাতিল হয়েছে। তাই আগের নীতিমালার অধীন নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে।

২০২৩ সালে দুই দফায় ৯৬ সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ নিবন্ধন দেওয়া হয়।  এসব সংস্থার বেশির ভাগই ছিল নতুন। আগে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা ছিল না।

নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম যোগ্যতাগণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার অভিজ্ঞতাও অনেক সংস্থার ছিল না।

একাধিক সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা,  প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল।  সে সময় বেশ কিছু অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন পেতে উৎসাহ বোধ করেনি বা আবেদন করলেও নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।

সে সময় নির্বাচন কমিশন পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা বাড়াতে দ্বিতীয়বার আবেদন আহবান করে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন  নির্বাচন পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা আনতে আগের সব পর্যবেক্ষক সংস্থাকেই বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে নতুন করে নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল  সেই নতুন নীতিমালা-২০২৫ জারি ও  ২০২৩ সালের নীতিমালা বাতিল করা হয়েছে। ফলে আগের নীতিমালা অনুসারে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে।

এসব পর্যবেক্ষক সংস্থার মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। নতুন নীতিমালায়  নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি ও এর সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। ২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক সংস্থার  নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। ওই সময় প্রথমবারের মতো ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ