দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান করে, অর্থনীতির চাকা সচল রেখেও এখন সবচেয়ে অসহায় দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। ধারদেনা করে কিংবা সারা জীবনের সব পুঁজি ব্যবসা বা শিল্পে খাটিয়ে, সেখানকার আয়ের একটি বড় অংশ সরকারকে কর দিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না তাঁদের। নানান ছুতায় সব সরকারের সময়ই ‘শিকার’ বানানো হয় ব্যবসায়ীদের। যে সরকারই ক্ষমতায় আসে, ব্যবসাকে জিম্মি করে নিজেদের স্বার্থে তাঁদের ব্যবহার করে।
বিনিয়োগ করে অসহায় ব্যবসায়ীরা
ফারুক মেহেদী

কিছুদিন ধরে দেশের শীর্ষ কয়েকজন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাতে জানা যায়, জিডিপিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখে কিংবা সরকারের তহবিলে বেশির ভাগ রাজস্ব দিয়েও কখনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, কখনো ভুলনীতি, কখনো স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় তাঁদের শিল্প-ব্যবসা-বিনিয়োগ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া হরতাল-অবরোধ, প্রাকৃতিক কিংবা মানুষের তৈরি দুর্যোগও তাঁদের শিল্প বা উদ্যোগের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তাঁরা জানান, আইন-শৃঙ্খলার অবনতিতে নিরাপত্তাহীনতা, মামলা-হামলা, উচ্চ সুদের হার, ডলারের উচ্চমূল্য, জ্বালানি সংকট, অতিমাত্রায় ইউটিলিটির খরচসহ নানান সংকটে তাঁদের ব্যবসা-শিল্প এখন নাজুক পরিস্থিতি পার করছে।
দেশের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হামীম গ্রুপ। এই গ্রুপের উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ।
সরকার সম্প্রতি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠন ও সহায়তা দিতে এসংক্রান্ত বাছাই কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটির অন্যতম সদস্য ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিল্পপতিদের আস্থায় নিতে হবে। বিশেষ করে তাঁদের কারখানায় কোনো ভাঙচুর, বিশৃঙ্খলার বিপক্ষে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিকে অ্যাক্টিভ করতে হবে। যেকোনো লোক এসে, ছাত্র-ছাত্রীরা এসে মহাখালীতে রাস্তা দখল করে ফেলল, কেউ এসে আমাদের লাইফ লাইন রাস্তা বন্ধ করে দিল—এয়ারপোর্টে কেউ যেতে পারছে না। দিস মাস্ট স্টপ। টেক ইট অর লিভ ইট। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রাইওরিটি দিতে হবে। সত্যিকারের যাঁরা উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী, যাঁরা সমস্যায় পড়ে গেছেন, যাঁদের ব্যাংক ব্যাকআপ করতে রাজি আছে, সব নিয়মনীতি মেনে যদি মনে করা হয়, কিছু টাকা পেলে তাঁরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন, সে ক্ষেত্রে আমরা সবাই ভাবছি তাদের কিভাবে সহায়তা করা যায়। আমি সরকারের তিনটি কমিটিতে কাজ করছি। কিভাবে ৫০ কোটি টাকার ওপরে ঋণগুলোকে রিভিউ করা যায়, এ ব্যাপারে আমরা অলমোস্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় আরো জানা যায়, দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিই বেসরকারি খাত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২-২৩ সালের একটি জরিপের তথ্যে বলা হয়েছে, দেশের জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ২৩.১০ শতাংশ। এর মধ্যে বড় শিল্পের অবদানই ১১.২০ শতাংশ। বড় শিল্পে ভর করে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার আকারও বড় হচ্ছে।
বিবিএসের ২০২২ সালের আরেকটি জরিপের তথ্য বলছে, দেশের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার আকার পাঁচ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ৮৬ লাখ মানুষ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায় জড়িত। ২০২৩ সালে বিবিএসের আরেকটি জরিপ বলছে, দেশের সাত কোটি ১০ লাখ মানুষ কর্মে নিয়োজিত রয়েছে। এর মাত্র ৫ শতাংশেরও কম সরকারি চাকরিতে। ফলে বেশির ভাগই বেসরকারি কিংবা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। সরাসরি ব্যক্তি খাতেই কাজ করছেন ৪৭.৯ শতাংশ মানুষ। সুতরাং তথ্য-উপাত্ত বলছে, অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিই বেসরকারি খাত। যার নেতৃত্ব দেন দেশের শিল্পোেদ্যাক্তারা। অথচ তাঁরাই এখন নানান সংকটের মুখে।
একটা সময় হরতাল-অবরোধে বিপুল ক্ষতি হতো ব্যবসার। ২০১৫ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই জানিয়েছিল, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে শুধু হরতাল অবরোধে তাঁদের ক্ষতি হয়েছিল প্রায় এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী করোনার ধাক্কা বাংলাদেশেও লেগেছিল। ওই সময় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) এক গবেষণায় বলা হয়, করোনাকালে বাংলাদেশের ৮৮ শতাংশ ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।
এ রকম ছোটখাটো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, খরাসহ নানান দুর্বিপাকে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়। কিন্তু এর বাইরে বিভিন্ন সময়ের আন্দোলন, বিক্ষোভ, ধর্মঘট ও শ্রমিক অসন্তোষেরও শিকার হয় ব্যবসা ও শিল্প-কারখানা। ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁরা প্রাকৃতিক কিংবা মানুষের তৈরি সব সংকট কাটিয়েও নিজেদের শিল্পকে চালু রাখতে চান। মানুষ যাতে কর্মহীন না হয়, সরকার ও দেশ যাতে লাভবান হয়—এই প্রচেষ্টা তাঁদের থাকে। তবে কখনো কখনো সরকারের ‘সন্দেহ বাতিক’ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে যখন তাঁরা টার্গেটে পরিণত হন, তখন টিকে থাকাই দায় হয়ে যায়।
২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকার এসেই রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি টার্গেট করে ব্যবসায়ীদের। এ সময় শীর্ষ ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের আগের বিএনপি জোট সরকারের ‘পক্ষভুক্ত’ ও ‘বিশেষ সুবিধাভোগী’ আখ্যা দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করে। মামলা-জেল-জরিমানায় জড়ানো হয়। শুধু তাই নয়, ২০০৭ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বরের মধ্যে ৪০ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অন্যায্যভাবে এক হাজার ২৩২ কোটি টাকা জোরপূর্বক নিয়ে নেওয়া হয়। আর ওই টাকা দুই শটি চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ০৯০০ অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়।
এরপর আওয়ামী লীগ সরকার এসে ওই টাকা নেওয়ার ঘটনাকে অনৈতিক আখ্যা দিলেও তাদের ১৬ বছরের শাসনামলে আদতে তা ফেরতও দেয়নি। এমনকি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তা কানে তোলেনি ওই সরকার। ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকার টাকা তো ফেরত দেয়ইনি বরং বছরের পর বছর ফেরত দেওয়ার ‘মুলা’ ঝুলিয়ে ব্যবসায়ীদের নিজেদের ‘পক্ষভুক্ত’ বানিয়ে ছেড়েছে।
দেশের ৪০ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক নেওয়া বিপুল অঙ্কের ওই টাকা নেওয়ার ফলে তাঁদের অনেকের ব্যবসা-শিল্প রুগ্ণ হয়ে যায়। অনেকে ঋণখেলাপি হয়ে পড়েন। অনেকের প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় তাঁদের শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাঁরা বঞ্চিত হন মুনাফা থেকেও।
ব্যবসায়ীরা জানান, ওয়ান-ইলেভেন সরকার তাঁদের বিএনপি জোট সরকারের ‘পক্ষভুক্ত’ করে যে ক্ষতি করে; আওয়ামী লীগ সরকার এসেও সন্দেহমুক্ত হতে পারেনি। বরং এটাকে অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগিয়ে, তাঁদের শিল্প-ব্যবসাকে জিম্মি করে তাদের পক্ষের তকমা দেওয়ার চেষ্টা করে।
তাঁরা আরো জানান, শিল্প-ব্যবসায় লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, এসব শিল্পে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ, যার একটি বড় অংশ ব্যাংক ঋণ। সরকারের রোষানলে পড়লে তাঁদের শিল্প-ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। মানুষ কাজ হারাবে। ব্যাংক ঋণের কিস্তি পাবে না। এত সব ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে তাঁদের কেউ কেউ শিল্প রক্ষায় সরকারের পক্ষ নিতে বাধ্য হয়েছে। তাঁরা কোনো রাজনীতি করেন না। বরং দুষ্টু রাজনীতির চালের শিকার হয়ে সরকারের বলির পাঁঠা হন তাঁরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর অনেক ব্যবসায়ীকে বিএনপি জোট সরকারের সুবিধাভোগী আখ্যা দিয়ে তাঁদের মামলায় জড়ানো হয়। ওই সময় তাঁদের অনেককে জেলও খাটতে হয়। অনেকে ব্যবসা বাঁচাতে সরকারের পক্ষ নিতে বাধ্য হন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে টানা ১৬ বছরে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সরকারকে সায় দিতে হয়েছে তাঁদের অনেককে।
ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পরও ব্যবসায়ীদের অনেককে ‘পক্ষভুক্ত’ করার অপচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই তাঁদের অনেককে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে শিল্পে-ব্যবসায়। তাঁদের মধ্যে নিরাপত্তা ও আস্থাহীনতা কাজ করছে। ব্যবসায় বাড়তি খরচ ও নানামুখী সংকটের পাশাপাশি তাঁদের ‘পক্ষভুক্ত’ করার কারণে শিল্প ও ব্যবসা রুগ্ণ হয়ে পড়ছে। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখেও ব্যবসায়ীরা নিজেদের এখন সবচেয়ে অসহায় বোধ করছেন।
তাঁরা বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে, লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করে আর সরকারকে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব দিয়েও তাঁরাই আজ নাজুক পরিস্থিতির শিকার। সরকার যেখানে তাঁদের আস্থায় নিয়ে পাশে থাকার কথা, সেখানে তাঁদের দেখা হচ্ছে সন্দেহের চোখে। তাঁরা দাবি করেন, ব্যবসায়ীদের প্রকৃতই কোনো দল নেই। তাঁরা সরাসরি কোনো রাজনীতি করেন না। পরিস্থিতির শিকার হয়ে কোনো কোনো ব্যবসায়ী বিশেষ কারণে আগের সরকারের সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য হলেও প্রকৃতই তাঁরা তাঁদের শিল্প বাঁচাতে চেয়েছেন। এখনো তাঁরা দেশ, অর্থনীতি ও মানুষের স্বার্থে তাঁদের শিল্পকেই অগ্রাধিকার দেবেন। তাঁরা সব সরকারের সঙ্গেই কাজ করতে চান। কিন্তু যে সরকারই আসে, তারা মনে করে ব্যবসায়ীরা আগের সরকারের লোক। বিষয়টিকে একটি ভ্রান্ত ধারণা বলেই অভিহিত করেন ব্যবসায়ীরা।
নিট পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ পরিবেশবান্ধব কারখানা প্লামি ফ্যাশনসের উদ্যোক্তা ফজলুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন ‘সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি এ সরকারের কাছে যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা ছিল, সেটা পায়নি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে একটা ওয়েআউট করার চেষ্টা হতো। ওই জায়গায় একটা বড় ধরনের ঘাটতি আছে। ব্যবসায় যে সংকট তা উত্তোরণের জন্য যে সময় লাগবে মনে হয়েছিল, এখন মনে হচ্ছে এটা আরো দীর্ঘায়িত হবে। কারণ আমরা স্থানীয় ব্যবসায়ীরাই মনে করছি, ব্যবসায় সরকারের যথেষ্ট ফোকাস নেই, বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকটের মধ্যেও ইউটিলিটির পেছনে বাড়তি খরচ, আবারও দাম বাড়ানোর উদ্যোগ; সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে কিংবা যাবে—এটাই স্বাভাবিক। যখন-তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। সাত দিন-১০ দিন সময় নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে না। কোনো একটি সিদ্ধান্তের পর এর প্রভাব কী হতে পারে তা পর্যালোচনা করা দরকার আগে। এটা করলে আর অস্থিরতা তৈরি হতো না। সমাজে সবাই খারাপ ব্যবসায়ী না। সবাই চোর নয়; ভালোও তো আছেন। তাঁদের নিয়ে অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত।’
দেশের অন্যতম শীর্ষ আরেক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান থার্মেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও এমডি আবদুল কাদির মোল্লা ওয়ান-ইলেভেনের সময় হয়রানির শিকার হন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সব সরকারের সময়ই রোষানলে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। কোনো সরকারই ব্যবসায়ীদের আপন করে নিতে পারে না। অথচ মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ করে শিল্প গড়েছি। এর সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে। সরকার রাজস্ব পাচ্ছে। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময়ও হয়রানি থেকে বাঁচতে পারিনি। আমরা চাই ব্যবসায়ীদের আস্থায় নিয়ে এ সরকার কাজ করুক।’
জানা যায়, ব্যবসা-উদ্যোগ এখন ক্রান্তিকাল পার করছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। পতিদিনই বন্ধ হচ্ছে কোনো না কোনো শিল্প-কারখানা। এরই মধ্যে বেক্সিমকোর বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে মাঠে আন্দোলন করছেন শ্রমিকরা। তাঁরা ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করছেন। এতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। দেশের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করছেন না, বিদেশি বিনিয়োগও তলানিতে। সর্বশেষ হিসাব বলছে, বিদেশি বিনিয়োগ ৭১ শতাংশ কমেছে। উচ্চ সুদের হার, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলারের উচ্চ দরও ভোগাচ্ছে মানুষকে। যার ফলে ব্যবসায় মন্দা চলছে। এতে সরকারের আয় কমেছে। যার প্রভাবে রাজস্ব ঘাটতি ৫৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অর্থনীতির এমন অস্থির সময়ে ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের সন্দেহের চোখে না দেখে, তাঁদের আস্থায় নিয়ে, পাশে রেখে কাজ করা। কারো কোনো ফৌজদারি অপরাধ থাকলে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে অগ্রাধিকার দিতে হবে দেশের অর্থনীতি। প্রবৃদ্ধির চাকা যেন সচল থাকে, সেই পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ তাঁদের।
সম্পর্কিত খবর

হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন নাহিদ
- আজ দেশব্যাপী বিক্ষোভ এনসিপির
নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে ‘মুজিববাদীরা’ হত্যার উদ্দেশ্যে জঙ্গি কায়দায় এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট ও মুজিববাদীরা অস্ত্র নিয়ে এই হামলা চালিয়েছে, তারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে তিনি সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার রাতে তিনি খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
অন্যদিকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে গোপালগঞ্জসহ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল রাজধানীর শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত।
খুলনায় সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ বলেন, গোপালগঞ্জের হামলা আওয়ামী ও মুজিববাদীদের পুরনো চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, সারা দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপির এটি ছিল পূর্বঘোষিত কর্মসূচি। সেই লক্ষ্যে প্রশাসনকে জানিয়ে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার কথা জেনেই গোপালগঞ্জ সফরে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলা করেছে ।
সমাবেশের আগে ও পরে দফায় দফায় হামলার কথা তুলে ধরে নাহিদ বলেন, এ হামলা যে পূর্বপরিকল্পিত সেটি প্রমাণিত। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী আরো সতর্ক থাকতে পারত উল্লেখ করে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যেভাবে সহায়তা দিয়েছে সে জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
নাহিদ জানান, আজ বৃহস্পতিবার ফরিদপুরসহ সারা দেশের পূর্বঘোষিত পদযাত্রা অব্যাহত থাকবে। শুধু মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে বুধবারের যে কর্মসূচি ছিল সেটি স্থগিত করা হয়েছে, পরে ওই দুই জেলার কর্মসূচির তারিখ ঘোষণা করা হবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশে হামলার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা খুলনা এসে পৌঁছেন। সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে রশিদুল ইসলাম রিফাত বলেন, ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এবং দিল্লির চক্রান্তে গোপালগঞ্জের ভেতরে একটি প্রক্সি স্টেট তৈরি করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই প্রক্সি স্টেট খেলা আমরা হতে দেব না। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে হটিয়ে দিয়েছে। তাই স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিবাদী ছাত্রলীগ, হামলাকারী ও গণহত্যাকারী কারো অবস্থান এই বাংলাদেশের মাটিতে হবে না।’
এর আগে দুপুরের দিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী নেতাকর্মীদের ন্যক্কারজনক হামলা ও অবরুদ্ধ করার ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রশিদুল ইসলাম রিফাত এই ঘোষণা দেন।
শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নয়, একই সঙ্গে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি।
বাংলা ব্লকেড : রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। গতকাল বিকেলে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের আজমপুর ও হাউস বিল্ডিং মোড় ঘিরে বিক্ষোভে নেমে পড়ে শতাধিক প্রতিবাদকারী। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিকেল ৩টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বরে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মিরপুর জোন।
রাজধানীর শাহবাগে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে জুলাই মঞ্চ। কর্মসূচি চলাকালে মঞ্চের বক্তারা বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত গোপালগঞ্জের ঘটনার সঠিক বিচার না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।’
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলার ঘটনায় পুলিশ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেয় তারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় তারা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় না আনলে লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বিকেলে মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় অবরোধ করেন এনসিপি নেতাকর্মীরা।
তবে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে ব্লকেড কর্মসূচি থেকে সরে আসতে বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বিক্ষোভকারীদের রাস্তার এক পাশে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
এনসিপির মশাল মিছিল : গোপালগঞ্জের ঘটনায় এনসিপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ আয়োজনে গতকাল মশাল মিছিল হয়। রাত ৯টার দিকে বাংলামোটরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কারওয়ান বাজার মোড় পর্যন্ত মিছিল করেন নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে সমাবেশ থেকে আজ রাজধানীর সব থানার সামনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি ও থানায় স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।
গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে দেশের অন্যান্য স্থানেও বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কুমিল্লা, ফরিদপুর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, খুলনা, মাদারীপুর, নোয়াখালী, রাজবাড়ী, ধামরাই (ঢাকা), শেরপুর (বগুড়া) এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।
[তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিরা]

ফিরে দেখা ১৭ জুলাই
শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনের ১৭তম দিন ১৭ জুলাই ছিল পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সরকারি ছুটি। তবে ছুটির দিনও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আন্দোলন ও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এদিন ঢাকাসহ দেশের অন্তত ১০টি জেলায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া অন্তত ১০ স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক এবং দুই স্থানে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।
আগের দিন সংঘর্ষে আবু সাঈদসহ ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কফিল মিছিল ও গায়েবানা জানাজা আদায় করা হয়। এসব কর্মসূচিতে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরদিন (১৮ জুলাই) সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
১৭ জুলাই দিনভর রাজধানীর শনির আখড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসগুলোতে বিক্ষোভ-সংঘর্ষের চিত্র
১৭ জুলাই সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
এদিন আন্দোলনকারীদের ক্যাম্পাস ছাড়া করতে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। দুপুরের পর তাদের টানা দুই ঘণ্টার অভিযানে ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। সেখানেও দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
দুপুর ২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল’ কর্মসূচি থাকলেও পুলিশের বাধায় সেখানে গায়েবানা জানাজা হয়নি। পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কফিন মিছিল শুরু হলে একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর আবার সূর্য সেন হলের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলে ঘণ্টাখানেক। পরে শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিলে পুলিশ আবারও তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। জবাবে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। রাত ১০টার দিকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আরেক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গায়েবানা জানাজা শেষে তাঁরা শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু করলে পুলিশ নির্বিচার হামলা চালায়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হল বন্ধের ঘোষণা ও পুলিশের তৎপরতার মুখে সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারী অনেক শিক্ষার্থী হল ছেড়ে যান। তবে অনেক শিক্ষার্থী হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেও হল ও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা রাতে হলে অবস্থান করছিলেন। হামলাকারীদের বিচার না হলে হল ছেড়ে যাবেন না বলে জানান তাঁরা।
এদিন দুপুর ১টার দিকে শিক্ষকদের একটি দল মৌন মিছিল নিয়ে শাহবাগ থানায় পুলিশের হাতে আটক হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে আনেন। পরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ’ করেন শিক্ষকরা।
এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি
শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হামলা, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে পরদিন ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচি চলাকালে হাসপাতাল, গণমাধ্যমসহ অন্যান্য জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ঢাবি ও চবি
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সব আবাসিক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সমাধানের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হয়। এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ছাত্রীদের এবং রাত ১০টার মধ্যে ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
রংপুরে আবু সাঈদের দাফন
কোটা সংস্কার আন্দোলনে আগের দিন নিহত রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন হয় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের নালিপাড়ায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত জানাজা ও দাফনের তাগিদ দেওয়া হলে উপস্থিত লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুই দফা জানাজা শেষে সকাল সোয়া ১০টার দিকে আবু সাঈদের লাশ দাফন করা হয়।
জাতির উদ্দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী সৃষ্ট সংঘাতময় পরিস্থিতিকে সামনে রেখে এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি আন্দোলনকারীদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ সর্বোচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবে। তাদের হতাশ হতে হবে না।’

বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির ব্লকেড
সাঁড়াশি অভিযানের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে গোপালগঞ্জসহ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বুধবার রাজধানীর শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাঁড়াশি অভিযানে যৌথ বাহিনী ব্যর্থ হলে জুলাইয়ের ছাত্র-জনতা মাঠে নেমে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে। এ সময় ২৪ ঘণ্টার জন্য বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণাও দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রিফাত বলেন, ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এবং দিল্লির চক্রান্তে গোপালগঞ্জের ভেতরে একটি প্রক্সি স্টেট তৈরি করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই প্রক্সি স্টেট খেলা আমরা হতে দেব না। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে হটিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইসি একটি নাটকবাজি করেছে। ইসি বলেছে, নৌকা প্রতীক নাকি এখনো থাকবে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে বলতে চাই, এত বড় একটি গণহত্যার পরেও বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা, তাদের আওয়ামী লীগ এবং তাদের মার্কা থাকতে পারবে না।
রিফাত বলেন, ‘অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। স্বৈরাচারী হাসিনার গোপালি পুলিশ এখনো ছাত্র-জনতার দিকে বন্দুক তাক করে।’
এর আগে দুপুরের দিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীর ওপর আওয়ামী নেতাকর্মীদের ন্যক্কারজনক হামলা ও অবরুদ্ধ করার ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রশিদুল ইসলাম রিফাত এ ঘোষণা করেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘গোপালগঞ্জে জুলাইয়ের নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নয়, একই সঙ্গে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি।
সারা দেশে বাংলা ব্লকেড : রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। গতকাল বিকেলে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের আজমপুর ও হাউস বিল্ডিং মোড় ঘিরে বিক্ষোভে নেমে পড়ে শতাধিক প্রতিবাদকারী। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা বলে, গোপালগঞ্জে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তাদের পদযাত্রা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ঠেকাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পুলিশি সহায়তায় হামলা করেছে। এর প্রতিবাদে উত্তরা অঞ্চলে তারা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছে।
বিকেল ৩টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বরে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মিরপুর জোন।
রাজধানীর শাহবাগে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে জুলাই মঞ্চ। কর্মসূচি চলাকালে মঞ্চের বক্তারা বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত গোপালগঞ্জের ঘটনার সঠিক বিচার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।’
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলার ঘটনায় পুলিশ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেয় তারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় তারা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা।
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় না আনলে লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বিকেলে মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় অবরোধ করেন এনসিপি নেতাকর্মীরা।
এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদুর রহমান তনু জানান, সাইনবোর্ডে ছাত্র-জনতা জড়ো হতে শুরু করেছে। হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।
তবে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে ব্লকেড কর্মসূচি থেকে সরে আসতে বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বিক্ষোভকারীদের রাস্তার এক পাশে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
গণমাধ্যমকর্মীদের দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘সারা দেশে রাজপথের ব্লকেড সরিয়ে নিন। রাস্তার এক পাশে অবস্থান করুন। লড়াই চলবে।’
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রায় আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে দেশের অন্যান্য স্থানেও বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কুমিল্লা, ফরিদপুর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, খুলনা, মাদারীপুর, নোয়াখালী, রাজবাড়ী, ধামরাই (ঢাকা), শেরপুর (বগুড়া), গাজীপুরের টঙ্গীতে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।
[তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিরা]

জামায়াত আমির
সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে
- প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার পৃথক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
ডা. শফিকুর রহমান গতকাল বুধবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রশ্ন তোলেন, ‘গোপালগঞ্জে কী হচ্ছে?’ তিনি লেখেন, ‘গোপালগঞ্জ তো বাংলাদেশেরই অংশ। যত দূর জানতে পেরেছি, এনসিপির নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে পূর্ব আলোচনা করেই শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেছেন, যা তাঁদের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার।
জামায়াতের আমির সরকারের উদ্দেশে লেখেন, সরকারকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় ইতিহাসের দায় তাদের ওপরই বর্তাবে।
ডা. শফিকুর রহমান সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সংঘাত ও উচ্ছৃঙ্খলতা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে লেখেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সব ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই এবং শান্তিপ্রিয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘মহান আল্লাহ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে তাঁর সাহায্য প্রেরণ করুন।
অন্যদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে ‘আওয়ামী শাসনব্যবস্থার সহযোগী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে’ হামলা চালিয়েছে। তাঁর ভাষ্য, কর্মসূচির আগে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কার্যকর উপস্থিতি দেখা যায়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
তিনি বলেন, ‘গোপালগঞ্জ কোনো বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড নয়, এটি বাংলাদেশের অংশ।
পরওয়ার দাবি করেন, ‘৫ আগস্ট ছাত্র ও জনগণের গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটেছে, তবে দেশ এখনো পুরোপুরি ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। ক্ষমতাচ্যুত শাসকগোষ্ঠী দেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।’
সেক্রেটারি জেনারেল জানান, এনসিপির কর্মসূচিতে ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশের গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তিনি তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এদিকে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের হামলা, অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার বলেন, গতকাল বুধবার এনসিপির পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়, এমনকি পুলিশের এসপি অফিসেও হামলা করা হয়। তিনি দাবি করেন, এতে এনসিপির অনেক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনাও ঘটে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরো বলেন, ‘এই হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দেশের সব জেলা ও মহানগরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।’ তিনি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
বিবৃতিতে অধ্যাপক পরওয়ার ফ্যাসিবাদবিরোধী গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সচেতন নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সর্বাত্মকভাবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
গোপালগঞ্জে এই হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে খুলনা নগরীর ডাকবাংলা মোড়ে মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে বিক্ষোভ করা হয়েছে। মিছিলপূর্ব সমাবেশে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।