ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহর জীবনাবসান

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহর জীবনাবসান
কে এম সফিউল্লাহ

দেশের প্রথম সেনাপ্রধান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ (বীর-উত্তম) আর নেই। গতকাল রবিবার সকাল পৌনে ৯টায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর চার মাস।

মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার সফিউল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে ভুগছিলেন।

তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন), স্মৃতিক্ষয় (ডিমেনশিয়া), ফ্যাটি লিভার (যকৃতে চর্বি জমা), থাইরয়েডসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন। গত ২ জানুয়ারি থেকে সিএমএইচে ভর্তি ছিলেন তিনি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিউল্লাহর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। শ্রদ্ধা, গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত স্বজন-পরিবার-সহযোদ্ধাদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)।

শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও সেনাবাহিনীতে সফিউল্লাহর অবদান স্মরণ করে বলেন, দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি তাঁর (কে এম সফিউল্লাহ) অবদান আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ তাঁর বীরগাথা আজীবন চিরকৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশ অ্যাট ওয়ার (১৯৮৯) ও ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যার ঘটনা নিয়ে ফিফটিনথ অগাস্ট এ ন্যাশনাল ট্র্যাজেডি (২০১৪) নামের দুটি গ্রন্থের রচয়িতা কে এম সফিউল্লাহ। তিনি ১৯৩৫ সালে তদানীন্তন ঢাকা জেলার (বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলা) রূপগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৫৩ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন জানিয়ে জেনারেল সফিউল্লাহ ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সেকেন্ড ইন কমান্ড থাকাকালে ওই ব্যাটালিয়ন নিয়ে বিদ্রোহ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে মেজর সফিউল্লাহ তাঁর নামের আদ্যক্ষর দিয়ে এস ফোর্স নামে একটি নিয়মিত ব্রিগেড গঠন করেন এবং সেই ব্রিগেডের কমান্ডার নিযুক্ত হন। একাধিকবার সম্মুখযুদ্ধেও অবতীর্ণ হন তিনি।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণকালে শফিউল্লাহ তাঁর ব্রিগেড নিয়ে ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান ও সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর-উত্তম উপাধিতে ভূষিত করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালের এপ্রিলে প্রথম সেনাপ্রধান হিসেবে সফিউল্লাহকে নিয়োগ দেয়। ১৯৭৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৭৫ সালের পর থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে ১৬ বছর মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইডেন ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন সফিউল্লাহ। ১৯৯২ সালে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন তিনি। ১৯৯৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ১৯৯৬ সালে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সফিউল্লাহ। মুক্তিযুদ্ধে জীবিত সেক্টর কমান্ডারদের নিয়ে ২০০৭ সালে গঠিত সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংগঠনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

সফিউল্লাহ সেনাপ্রধান থাকাকালে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল সেনা সদস্য তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যা করে। সে সময় সেনাপ্রধান হিসেবে তাঁর ভূমিকা নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদের সরকারের প্রতি আনুগত্যও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই সেনাপ্রধানের পদ হারাতে হয় তাঁকে।

বিতর্কের জবাবে পরে একাধিক সাক্ষাৎকারে সফিউল্লাহ বলেছিলেন, পরিস্থিতির শিকার ও বাধ্য হয়েই মোশতাক সরকারের প্রতি সমর্থন দিতে হয়েছিল তাঁকে। ১৫ আগস্টের ঘটনায় একক ব্যক্তি হিসেবে সেনাপ্রধানের খুব বেশি কিছু করার সুযোগও ছিল না বলেও দাবি করেন সফিউল্লাহ।

 

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কে এম সফিউল্লাহর দাফন

এদিকে গতকাল আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, গতকাল বিকেল ৪টায় ঢাকা সেনানিবাসের সেনা কেন্দ্রীয় মসজিদে মরহুম সফিউল্লাহর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। 

জানাজায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, সাবেক সেনাবাহিনী প্রধানরা এবং ঢাকা ও মিরপুর সেনানিবাসের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে মরহুমের মরদেহ বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির মেয়াদ আরো দুই মাস বাড়ল

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির মেয়াদ আরো দুই মাস বাড়ল

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরো দুই মাস (৬০ দিন) বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ১৩ মে থেকে তাঁদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতার মেয়াদ দুই মাস বাড়ানো হয়েছিল। সেই মেয়াদ গতকাল শেষ হয় ।

মেয়াদ বাড়ানোর আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কমিশন্ড কর্মকর্তাদের (কোস্ট গার্ড ও বিজিবিতে প্রেষণে নিয়োজিত সমপদমর্যাদার কর্মকর্তারাসহ) ‌‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮-এর ১২(১) ও ১৭ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করা হলো। এর মেয়াদ হবে ১৪ মার্চ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত। সারা দেশে তাঁরা এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮-এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারবেন।

প্রথমে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের (সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তা) এই ক্ষমতা দেওয়া হয়। অর্থাৎ শুধু সেনাবাহিনী নয়, বিমান ও নৌবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদেরও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়। তখন ৬০ দিনের জন্য এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।

সেই মেয়াদ নভেম্বরের মাঝামাঝি শেষ হয়েছিল। পরে সেই ক্ষমতার মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়।

মন্তব্য

শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ বিএনপির

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক পুলিশপ্রধান (আইজিপি)  বেনজীর আহমেদসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দিয়েছে বিএনপি।

গতকাল রবিবার দুপুরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে নিয়ে এই অভিযোগ দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য এবং তথ্য সেলের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন খান।

অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গুমের ঘটনায় ১১ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে লিখিত অভিযোগে।

তাঁরা হলেনঝালকাঠির নলছিটির মোহাম্মদ আলী খান, সাবেক যুবদল নেতা মো. জিল্লুর রহমান, আকিদুল আলী, খোরশেদ আলম, অ্যাডভোকেট আশরাফ আলী, মো. বাবুল, এনামুল, এরশাদ আলী, মো. গিয়াস উদ্দিন খান, মো. কবির উদ্দিন খান ও নজরুল ইসলাম।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এসব ভুক্তভোগীকে অপহরণের পর আয়নাঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। গত বছর ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পলায়নের পর মোহাম্মদ আলীকে হাত ও চোখ বেঁধে পূর্বাচলের শেষ প্রান্তে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফেলে আসা হয়। পাঁচ বছর তিন মাস ১৩ দিন পর তিনি মুক্তি পান।

এ ঘটনায় মোহাম্মদ আলী খান বিএনপি মহাসচিবের মাধ্যমে ন্যায়বিচার চেয়ে আবেদন করেন।

তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করে আবেদনটি করা হয় বলে জানান সালাহউদ্দিন খান।

সালাহউদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন, ভুক্তভোগীরা শেখ হাসিনাসহ ১৬ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৩০ থেকে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে ন্যায়বিচারের আশায় আবেদন করেছেন। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, শুধু বিএনপি করার অপরাধে বিগত সরকারের নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাঁদের।

মন্তব্য

সোহাগের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

বরগুনা প্রতিনিধি
বরগুনা প্রতিনিধি
শেয়ার
সোহাগের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে পুরান ঢাকায় নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মনি। গতকাল রবিবার বিকেলে তিনি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের সোহাগের গ্রামের বাড়িতে যান। তিনি স্থানীয় কাকচিড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তিনি নিহত সোহাগের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।

সোহাগের পরিবারের যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকারও আশ্বাস দেন। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে বিএনপির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন। স্বামীর হত্যার বিচার চেয়ে তখন সোহাগের স্ত্রী লাকি আক্তার বলেন, আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাই।
সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মনি বলেন, এই এলাকার সন্তান ঢাকার মিটফোর্ডের ব্যবসায়ী সোহাগকে তাঁর ব্যাবসায়িক পার্টনার ও তাদের ভাড়াটেরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। বিএনপি ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দলের পক্ষ থেকে এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে। সম্পৃক্তদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপি কোনো অপকর্মকে প্রশ্রয় দেয় না। পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক চৌধুরী মো. ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ফজলুল হক মাস্টার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম সফিকুজ্জামান মাহফুজ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাবেদুল ইসলাম জুয়েল, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম নাভিল প্রমুখ।

মন্তব্য

ডলারের চাহিদায় ভাটা দর কমল ৩ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ডলারের চাহিদায় ভাটা দর কমল ৩ টাকা

মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান এক সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর ফলে বাজারে ডলারের দাম কমেছে দুই টাকা ৯০ পয়সা। অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, এই পতনের মূল কারণ বাজারে ডলারের চাহিদা কমে আসা এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি।

গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বেশ কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্সের ডলারের জন্য সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত রেট দেয়।

কেউ কেউ ১২০ টাকা ৬০ পয়সায় প্রতি ডলার কিনলেও বেশির ভাগ ব্যাংক দিন শেষে ১২০ টাকার বেশি দিতে রাজি হয়নি। অথচ গত সপ্তাহের শুরুতে রেমিট্যান্সের ডলারের দর ছিল ১২২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১২২ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত। সে হিসাবে এক সপ্তাহে ডলারের দরপতন হয়েছে দুই টাকা ৯০ পয়সা।

ব্যাংকাররা জানান, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর ডলার চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।

অনেক ব্যাংক এখন ডলার ধরে রাখতে না চেয়ে বরং বিক্রি করে দিতে চাইছে। আমদানি এলসি কমে যাওয়া এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে বলেই তাঁরা মনে করছেন।

একসময় বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো থেকে ডলার কেনার জন্য দেশের ব্যাংকগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ত। এখন উল্টো চিত্র।

ডলার সরবরাহ বাড়ায় অনেক ব্যাংকই আগ্রহ হারাচ্ছে বেশি দামে কিনতে। এক বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসের কর্মকর্তা জানান, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ডলারের দর আরো কমতে পারে। গত বছরের ডিসেম্বরে মাত্র দুই কার্যদিবসে ডলারের দাম ১২৮ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়, যা বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে দাম কিছুটা কমে আসে। গভর্নর সে সময় মন্তব্য করেছিলেন, কয়েকটি ব্যাংকের অপরিণত সিদ্ধান্ত ডলার বাজার অস্থিতিশীল করেছে।
তিনি আরো বলেন, কিছু এক্সচেঞ্জ হাউস কৃত্রিমভাবে দর বাড়াচ্ছিল।

 

ডলারের দাম কমার কারণ

বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধির ফলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর ফলে আমদানি খরচ কমবে এবং মুদ্রাস্ফীতি হ্রাসে ভূমিকা রাখবে। একসময় ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে হিমশিম খেত, কিন্তু এখন ডলারের জোগান স্বাভাবিক থাকায় সেই চাপ নেই। এ ছাড়া খোলাবাজার ও ব্যাংকের মধ্যে ডলারের দামে পার্থক্য কমে এসেছে, যা বাজারে স্থিতিশীলতা আনছে।

 

রেকর্ড রেমিট্যান্স প্রবাহ

২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা দেশে রেকর্ড ৩০.৩২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রতি মাসেই দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসছে। এমনকি এক মাসে তিন বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স আসে ২৩.৯১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ওই অর্থবছরের প্রতি মাসে গড়ে দুই বিলিয়ন ডলারের কম রেমিট্যান্স আসে। সে তুলনায় সদ্যোবিদায়ি বছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশ বেড়েছে।

 

বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা

গত মে মাসের মাঝামাঝি বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারভিত্তিক ডলারের বিনিময় হার চালু করে, যা আইএমএফ শর্ত অনুযায়ী গৃহীত। এই নীতির পর থেকেই ডলারের দাম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।

বিগত বছরগুলোতে সরবরাহের তুলনায় ডলারের চাহিদা বেশি ছিল। সরকারি আমদানি বিলের ব্যাকলগ থাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ওপর ডলার ক্রয়ের চাপ ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বর্তমান গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বাজার থেকে ডলার সংগ্রহ করে আমদানি বিল পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ফলে তারা প্রায় সব দায় পরিশোধ করেছে। এখন রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় ভালো থাকায় ডলারের জোগান স্বাভাবিক এবং দরপতনের সম্ভাবনাই বেশি।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বলেন, বর্তমানে দেশে বিনিয়োগ কার্যক্রম প্রায় স্থবির। বিনিয়োগ না থাকলে আমদানিও কমে যায়বিশেষত মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল। এখন যেটুকু আমদানি হচ্ছে, তার বড় অংশই ভোগ্যপণ্য। এসব পণ্যের আমদানি একটি নির্দিষ্ট স্তরে স্থির থাকে। তাই ডলারের চাহিদা হঠাৎ বাড়ার সম্ভাবনা কম। অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ ভালো থাকায় ডলারের সরবরাহ ভালো। ফলে দাম আরো কিছুটা কমতে পারে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনতে শুরু করলে দাম কিছুটা বাড়তে পারে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ