আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর স্থবিরতায় সারা দেশ মাদকে সয়লাব। গত চার বছরে দেশে অন্তত ৪০ লাখ মাদকসেবী বেড়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা এক কোটির বেশি। একটি পক্ষের ধারণা ই-সিগারেটের মাধ্যমেও মাদকসেবী বাড়ছে।
মাদকে সয়লাব দেশ
ওমর ফারুক

হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক : বাংলাদেশে মায়ানমার থেকে ইয়াবা আর ভারত থেকে আসা ফেনসিডিলের বাজার বহু আগে থেকে। এর সঙ্গে নতুন নতুন মাদকও যুক্ত হচ্ছে, যা রোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী থানাগুলো জনতার রোষানলের শিকার হয়। এর পর থেকে বেশ কিছুদিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি মাদক কারবার অনেকটাই নির্বিঘ্ন করে এবং সারা দেশে সহজলভ্য হয় মাদক।
গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর জুরাইনের নতুন রেললাইনের ওপর বসে থাকতে দেখা যায় ২৫-২৬ বছরের এক যুবককে। তাঁর কাছে আসেন আরেক যুবক। আগে থেকে বসে থাকা যুবক জানতে চান, ‘কিরে বাবা আনছস?’ সঙ্গে সঙ্গে ওই যুবক একটি প্যাকেট থেকে তিনটি ইয়াবা তুলে দেন বসে থাকা যুবকের হাতে। বসে থাকা যুবক বলতে থাকেন—‘বুঝলি, এখন আর একটায় হয় না। বেশি বেশি লাগে।’ বলেই মাদক নিয়ে আসা যুবকের দিকে এক হাজার টাকার নোট বাড়িয়ে দেন। বিক্রেতা যুবক ১০০ টাকার একটি নোট ফিরিয়ে দিয়ে বিদায় নেন। এ সময় এই প্রতিবেদক পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও তাঁরা ছিলেন বেপরোয়া। এ সময় রেললাইন দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন অনেকে। কাউকেই পরোয়া করেননি তাঁরা। পরে মাদক গ্রহণকারী যুবক জানান, তিনি বাসের হেলপার। বছর দুয়েক আগে থেকে ইয়াবা খাওয়া শুরু করেছেন। এখন আর একটায় কাজ না হওয়ায় দিনে দুইটা করে খান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইয়াবা এখন ছাত্ররাও বিক্রি করে। যার কাছ থেকে ইয়াবা নিলাম সে কলেজে পড়ে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কয়েক দিন পর দেখবেন দোকানে দোকানে ইয়াবা বিক্রি হইতাছে।’
সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার অন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্রদের প্রতি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্নেহশীল। এই সুযোগে কিছু বখাটে শিক্ষার্থী প্রকাশ্যে রাজধানীর অলিগলিসহ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক সেবন করছে। আর ক্যাম্পাসেই মিলছে স্বল্পমূল্যে মাদক। পড়াশোনার সঙ্গে বিচ্ছেদও ঘটছে তাদের। নতুন নতুন শিক্ষার্থীও মাদকে জড়াচ্ছে। স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরাও কৌশলে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে কোকেন, গাঁজা, মদ, মারিজুয়ানা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, হিরোইন, প্যাথিডিন, সিসা, এলএসডির মতো মাদকের বিস্তার ঘটাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রীদের মাঝেও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে মাদকের বিস্তার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুলিশি নজরদারি না থাকায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ভাইরাসের মতো মাদক ছড়িয়ে পড়ছে বলে কয়েকজন শিক্ষকের অভিযোগ। বড় ক্যাম্পাসগুলোতে বহিরাগতরা সন্ধ্যা হলেই মাদকের আসর বসায়। রাজধানীর একটি কলেজের এক শিক্ষিকা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা আগের মতো সম্মান দেখায় না। আমাদের সামনেই সিগারেট, গাঁজা টানতে শুরু করে দেয়। কিছু বলাও যায় না। কিছু বললে অপমানিত হতে হয়।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারা দেশের শহরগুলোর অলি-গলি, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে নানা ধরনের মাদক। শিক্ষার্থীরা এক সময় রাখঢাক করে খেলেও এখন অনেকটা প্রকাশ্যে। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এ পর্যায়ে নিয়ে গেছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
নিয়ন্ত্রণে সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি : মাদক ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী জানান, দেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ যুবক-যুবতী। যাঁদের বেশির ভাগ মাদকে আসক্ত। এই যুবকদের বাঁচাতে না পারলে দেশ ভয়াবহ এক সংকটের মুখে পড়বে।
তিনি বলেন, ‘দেশে বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। আমি মাদকের মতো ভয়াবহ একটি বিষয়কে দূর করতে মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘দেশে এখন ই-সিগারেট ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এই সিগারেট থেকেও মাদকের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে শিক্ষার্থীসহ যুবসমাজ। আমরা ই-সিগারেট বন্ধের জন্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে গত মাসে প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’
কোটি ছাড়িয়েছে মাদকসেবীর সংখ্যা : দেশে চার-পাঁচ বছর আগেও ৫০ থেকে ৬০ লাখ মাদকসেবী ছিল। কিন্তু কিছুদিন ধরে ব্যাপক হারে বেড়েছে এই সংখ্যা। মানসের গবেষণা অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে এক কোটির বেশি মাদকসেবী। যার বেশির ভাগ তরুণ-তরুণী। গত চার বছরে বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এ জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর শিথিলতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নজর আগের মতো নেই। ফলে মাদকসেবী ও কারবারিরা ভয় পাচ্ছে না। প্রায় প্রকাশ্যে চলছে বেচাকেনা। ডা. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, ২০২০ সালে করোনার সময় থেকে মাদকসেবীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ওই সময় থেকে অনলাইনে এসব বিক্রি বেড়ে যায়, যা দিন দিন প্রসারিত হয়েছে। ফলে এখন বিভিন্ন উৎস থেকে মাদক সংগ্রহ করতে পারছে। ফলে বিষয়টি আতঙ্কের হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যা বলছে : মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, সারা দেশে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর রেললাইনের আশপাশের বস্তি ও অন্যান্য মাদক স্পটে বিশ্বস্ত সোর্স নিয়োগের মাধ্যমে সংবাদ সংগ্রহেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের ছনপাড়া এলাকায় অবৈধ মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে অভিযানের নামে অহেতুক হয়রানি না করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি যৌথ বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান প্রশংসিত হয়েছে।
মাদকের ভয়াবহ চিত্র : মাদকে আসক্ত সন্তানের অত্যাচার সইতে না পেরে ২০২৩ সালের ৬ মে গাজীপুরের জয়দেবপুরে ইয়াবা আসক্ত ছেলে আশরাফুলকে খুন করতে বাধ্য হন তার বাবা উমর ফারুক সবুজ। নেশার টাকার জন্য প্রায়ই বাসায় এসে ভাঙচুর করত আশরাফুল। মারধর করত মা-বাবাকে। ঘুষি মেরে ষাটোর্ধ্ব বাবার দুটি দাঁতও ভেঙে দেয় সে। তার মা ছেলের ভয়ে পালিয়ে থাকতে বাধ্য হতেন। এ অবস্থায় ছেলেকে হত্যা করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন সেই বাবা।
২০২২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মাদকাসক্ত সন্তান শাহ পরানকে (৩৩) পুলিশের হাতে তুলে দেন জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার চর বাঙালিপাড়া এলাকার দুলাল তরফদার। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশি সহায়তায় ছেলে শাহ পরানকে ধরিয়ে দেন তিনি। ২০২১ সালের ৮ আগস্ট সন্তানের মাদক সেবনে অতিষ্ঠ হয়ে গাঁজা, হেরোইনসহ সনেট (২০) নামের এক তরুণকে পুলিশে সোপর্দ করেছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের এক পরিবার। ২০২১ সালে ৯ অক্টোবর ফরিদপুরের ভাঙ্গার পাতরাইল দিঘিরপাড় গ্রামে মাদকাসক্ত ছেলে শফিকুল ইসলাম মৃধাকে (৪১) পুলিশের হাতে তুলে দেন তাঁর মা। ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের মুক্তগাছায় ইব্রাহিম নামের এক যুবককে পুলিশের কাছে তুলে দেন তাঁর মা-বাবা। ২০২৩ সালের ২৯ নভেম্বর কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে মোস্তাফিজার রহমান (২৯) নামের মাদকাসক্ত এক যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেন তাঁর বাবা-মা।
জামালপুরের চিত্র জানতে চাইলে জামালপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জামালপুরে আগে কী ছিল জানি না। বর্তমানে মাদক নিয়ন্ত্রণে আমরা সোচ্চার। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সঙ্গে আমরা কাজ করছি। মাদক নির্মূলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সবাই মিলে দায়িত্ব নিলে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব।’
সম্পর্কিত খবর

মুন্সীগঞ্জে মসজিদ থেকে ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ছুরিতে ব্যবসায়ী খুন
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাহেব আলী (৫৮) নামের এক ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার মোড়াপাড়া মদিনা মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সাহেব আলীর ছেলে সোহাগ বলেন, ‘আমার বাবা রাতে মসজিদে এশার নামাজের পর বাসায় ফিরছিলেন। পথে দুর্বৃত্তরা তাঁকে ছুরিকাঘাত করে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, মরদেহ মর্গে রাখা আছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে গতকাল শুক্রবার রাতে সিরাজদিখান থানার ওসি খন্দকার হাফিজুর রহমান বলেন, ময়নাতদন্তের পর জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

চাঁদপুরে মসজিদের ভেতর ইমামকে কুপিয়ে আহত
চাঁদপুর প্রতিনিধি

চাঁদপুর শহরে মসজিদের ভেতর দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ইমাম আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে শহরের প্রফেসরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানকে (৬৫) চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত বিল্লাল হোসেন নামের একজনকে মুসল্লিরা পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন মুসল্লি জানান, দুপুরে জুমার নামাজের পর মসজিদের ভেতরই মাঝবয়সী এক ব্যক্তি ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। উপস্থিত মুসল্লিরা ওই ব্যক্তিকে আটক করে পিটুনি দিয়ে মসজিদের ভেতর বেঁধে রাখেন। পরে পুলিশ গিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। মুসল্লিরা জানান, হামলাকারী নিজেও মুসল্লিদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি বাহার মিয়া জানান, আটক ব্যক্তির নাম বিল্লাল হোসেন (৫০)। কী কারণে তিনি ইমাম সাহেবের ওপর হামলা চালিয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি। আটক ব্যক্তি একেক সময় একেক কথা বলছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির কাছ থেকে ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সৈয়দ আহমেদ কাজল জানান, ওই ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম রয়েছে। আপাতত তিনি আশঙ্কামুক্ত বলেও জানান তিনি।
মসজিদের ইমামের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব রাত সাড়ে ১১টায় এই প্রতিবেদককে জানান, আহত ইমামকে দেখতে রাত ১১টার দিকে তিনি চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে যান এবং তাঁর সঙ্গে কথাও বলেন।
পুলিশ সুপার জানান, ইমাম সাহেবের মাথার সিটি স্ক্যান করা হবে। আঘাত গুরুতর হলে প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে।

ছাত্রবিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস
নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্মম, নিষ্ঠুর ও নৃশংসভাবে পুরান ঢাকার এক সাধারণ ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীর নাম লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ। গত বুধবার সংঘটিত এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, এনসিপি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও পৃথক পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।
জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে মিটফোর্ড হাসপাতাল চত্বরে পিটিয়ে ও ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল : গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে একটি তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে শুরু হয়ে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।
বিএনপি সূত্র জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘটনাটি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে জড়িত সন্দেহে যাদের নাম এসেছে তাদের দ্রুত বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। এর পরই সংগঠনের পক্ষ থেকে চার নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। তবে ভিডিও ফুটেজে কোনো একজন সোহাগকে পাথর নিক্ষেপ করতে দেখা গেলেও তার বিরুদ্ধে মামলা কিংবা গ্রেপ্তার হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অভিযোগ উঠেছে যে এ ঘটনার পেছনে তৃতীয় কোনো পক্ষও জড়িত থাকতে পারে।
আজীবন বহিষ্কৃত পাঁচ নেতা : এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল পুরান ঢাকার এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজনকে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে। তাঁরা হলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক রজ্জব আলী (পিন্টু) ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সাবাহ করিম (লাকি), চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদস্যসচিব অপু দাস, মাহমুদুল হাসান মহিন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু।
জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো ধরনের অপকর্মের দায়দায়িত্ব সংগঠন নেবে না। যুবদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বহিষ্কৃত নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে কোনোরূপ শৈথিল্য না দেখিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যস্থা নেওয়ার আহবান জানান।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত নেতা অপু দাসের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : সোহাগকে পিটিয়ে ও মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল রাত ৮টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে ভিসি চত্বরে এসে সমাবেশ করে এবং রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শেষ হয়।
বুয়েটে বিক্ষোভ : এদিকে রাত ১১টার দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আসেন। এ সময় তাঁরা লিখিত বক্তব্যে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচ দফা দাবি জানান। তাঁদের দাবিগুলো হলো : সোহাগ হত্যার ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অভিযুক্ত মহিন, রবিনসহ সব খুনিকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সমগ্র বাংলাদেশে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে অপরাধীদের রক্ষা করার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিন্দা, প্রতিবাদ ও শোক বিবৃতি : বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে শোক জ্ঞাপন করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই পৈশাচিক ঘটনা কেবল একটি জীবনহানিই নয়—এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গভীর হতাশার বহিঃপ্রকাশ। আমাদের সংগঠনের নীতি, আদর্শ ও রাজনীতির সঙ্গে সন্ত্রাস ও বর্বরতার কোনো সম্পর্ক নেই। অপরাধী যে-ই হোক, তার স্থান কখনোই আইন ও ন্যায়বিচারের ঊর্ধ্বে হতে পারে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনায় ‘সিরিয়াস’ ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিচ্ছিন্ন ঘটনায় দায় বিএনপির ওপর চাপানো অপরাজনীতি, এটা নোংরা রাজনীতির চর্চা। বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন কোনো অপরাধীকে কখনো প্রশ্রয় দেয় না, কোনো দিন দেবেও না। এ ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’।
জামায়াতের গভীর উদ্বেগ ও শোক : সোহাগ হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও শোক এবং নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রকাশ্য দিবালোকে মাথায় পাথর মেরে শত শত মানুষের সামনে এই হত্যার ঘটনায় মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এভাবে পাশবিক কায়দায় মানুষ হত্যা সভ্য সমাজে বিরল।’
তিনি বলেন, ‘নিহত সোহাগের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। সেই সঙ্গে এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।’
জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি এনসিপির : সোহাগ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি এ দাবি জানায়।
জাতীয় যুবশক্তির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) আসাদুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চকবাজারের (মিটফোর্ডের সামনে) নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমরা স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ এবং গভীরভাবে শোকাহত।’ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে জাতীয় যুবশক্তি।
অন্যদিকে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শুক্রবার রাতে টিএসসি চত্বরে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। দেশব্যাপী ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সহিংসতা এবং সম্প্রতি ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
এদিকে সোহাগ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মাহমুদুল হাসান মহিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই ঘটনায় করা অস্ত্র মামলায় আসামি তারেক রহমান রবিনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালত রিমান্ডের এ আদেশ দেন। গতকাল আদালতের কোতোয়ালি থানার প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক তানভীর মোর্শেদ চৌধুরী এ তথ্য জানান।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, হত্যা মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিনের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক নাসির উদ্দিন। আর অস্ত্র মামলায় তারেক রহমান রবিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন একই থানার উপপরিদর্শক মো. মনির। আসামিদের পক্ষে তাঁদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত তারেক রহমান রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) ও হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে পাকা রাস্তায় একদল লোক ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার বাদী নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম। আর পুলিশ অস্ত্র মামলা করে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনার সব আসামিকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে পুরান ঢাকার কয়েক যুবক সোহাগকে বুধবার দুপুরে ডেকে নেন। সন্ধ্যায় তাঁকে হত্যা করা হয়। সোহাগ পুরনো তামার তার, অ্যালুমিনিয়াম শিটসহ ভাঙ্গারি জিনিসের ব্যবসা করতেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, সোহাগ একসময় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। তাঁর ১৪ বছর বয়সী মেয়ে সোহানা ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ১১ বছর বয়সী ছেলে সোহান চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।
পুলিশ জানিয়েছে, ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে সোহাগকে হত্যা করে তাঁর পূর্বপরিচিতরা। নিহতের স্ত্রী লাকী বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্থানীয় মহিনসহ বেশ কয়েকজন মিলে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আশপাশে অনেক লোক থাকলেও কেউ তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে যায়নি।’
নিহতের ভাগনি সাদিয়া আক্তার মীম জানান, কেরানীগঞ্জের কদমতলী মডেল টাউন এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন সোহাগ। তিনি অনেক বছর ধরে ভাঙ্গারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আগে তিনি পলাশ নামের একজনের অধীনে কাজ করতেন। তিনি ভাঙ্গারি এনে ওই ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতেন। চার-পাঁচ বছর আগে সোহাগ আলাদা ব্যবসা শুরু করেন। সর্বশেষ কিছুদিন ধরে ব্যবসার অর্ধেক ভাগ দাবি করে আসছিলেন স্থানীয় যুবদল নেতা পরিচয় দেওয়া মহিন। সোহাগ তাতে রাজি হননি। এ নিয়ে তাঁকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। হত্যার আগের দিন তাঁর গুদামে গুলি চালানো হয়। বুধবার দুপুরে মীমাংসা করার কথা বলে সোহাগকে ডেকে নেন মহিন। মিটফোর্ড এলাকার রজনী বোস লেনে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম সোহানা মেটাল।
আসামিদের মধ্যে মহিন ও রবিন ছাড়াও রয়েছে সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, মো. নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাজীব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, সিরাজুল ইসলাম, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদার।

খুলনায় যুবদল নেতাকে রগ কেটে হত্যা
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে (৪০) নিজ বাড়ির সামনে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টায় নগরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জে গত বৃহস্পতিবার রাতে ছুরিকাঘাতে এক ব্যবসায়ী খুন হন। গতকাল আরো তিন জেলায় তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
খুলনা অফিস জানায়, খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে (৪০) নিজ বাড়ির সামনে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে নগরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, মাহবুবুর রহমানকে খুব কাছ থেকে প্রথমে গুলি করা হয়। পরে পায়ের রগ কেটে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায় দুর্বৃত্তরা।
খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী বলেন, দুপুরে বাসার সামনে নিজের প্রাইভেট কার পরিষ্কার করছিলেন মাহবুবুর। ওই সময় হেলমেট পরা তিনজন একটি মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পরে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য দুর্বৃত্তরা তাঁর দুই পায়ের রগ কেটে দেয়।
তিনি আরো জানান, মাদক বিক্রি নিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সঙ্গে মাহাবুবুুরের দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জেরে এ ঘটনা ঘটল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ওসি জানান, ঘটনাস্থল থেকে চারটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লেগেছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নিহত মাহবুবুরের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে।
এদিকে মাহবুবুরের হত্যার খবর পেয়ে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনাসহ বিএনপি, যুবদলসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাহেব আলী (৫৮) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হন গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায়। উপজেলার মোড়াপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সাহেব আলীর ছেলে সোহাগ জানান, ‘আমার বাবা রাতে এশার নামাজ পড়ে বাসায় ফিরছিলেন। পথে দুর্বৃত্তরা তাঁকে ছুরিকাঘাত করে। পরে আমরা খবর পেয়ে তাঁকে দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসক বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
এদিকে জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়ায় একটি করে তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জামালপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল শুক্রবার বিকেলে জামালপুর শহরের দাপুনিয়ার ধানক্ষেতে কচুরিপানার ভেতর থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জামালপুর সদর থানার ওসি আবু ফয়সল মো. আতিক বলেন, ‘লাশের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি। কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জে নিখোঁজের পাঁচ দিন পর গতকাল রোজা মনি (৬) নামে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাড়ির পেছনে একটি পাটক্ষেত থেকে শিশুটির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত রোজা মনি সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের চরমারিয়া গ্রামের মোহাম্মদ সুমন মিয়ার মেয়ে। কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কুষ্টিয়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে নিখোঁজ রফিকুল ইসলাম (৪৫) নামের ইজি বাইকচালকের ঝুলন্ত লাশ গতকাল শুক্রবার সকালে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদর উপজেলার মোল্লাতেঘরিয়ার একটি গাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। রফিকুল ইসলাম কুষ্টিয়া পৌরসভার মোল্লাতেঘরিয়ার আদর্শপাড়ার মৃত দবির উদ্দিনের ছেলে।