ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে ১৭ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সড়ক ও সেতু, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতের হাজার হাজার প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাট হয়েছে সীমাহীন। প্রভাবশালীদের ইচ্ছায় অপ্রয়োজনীয়, কমিশননির্ভর এবং অপচয়ের এসব প্রকল্পের একটি বড় অংশই গেছে স্বার্থান্বেষী মহলের পেটে। সড়ক ও সেতু বিভাগের ওপর করা টিআইবির একটি গবেষণার তথ্য ধরলেও গড়ে এই অনিয়ম, লুটপাট ও দুর্নীতির অঙ্ক কমবেশি চার লাখ কোটি থেকে সাত লাখ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
১৭ লাখ কোটি টাকার প্রকল্প
উন্নয়নের সাত লাখ কোটি লুট!
এম আর মাসফি

স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত বছর রাজধানীর মহাখালীর ক্যান্সার হাসপাতালে সেবা নিতে আসেন কুষ্টিয়ার রাজিয়া বেগম। চিকিৎসকরা তাঁকে কেমোথেরাপি ও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন।
নোয়াখালী থেকে ক্যান্সার ‘হাসপাতালে আসা রহিমা বেগম বলেন, হাসপাতালে ভর্তির জন্য তিন দিন ধরে অপেক্ষা করেও সিট পাচ্ছি না। রোগ শনাক্ত হতেই তিন লাখ টাকা শেষ। জমিজমাও সব বিক্রি করে নিঃশেষ।’
বিআইডিএসের গবেষণা মতে, বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন রোগীর চিকিৎসায় গড়ে পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার ৮৪০ টাকা পকেট থেকে খরচ করতে হয়।
জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে চিকিৎসা সক্ষমতা না থাকাই ক্যান্সার রোগীদের এমন দুর্ভোগের মূল কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন বছরে বাস্তবায়নের প্রকল্পটি ১৬ বছরে শেষ হয়েছে। প্রকল্পে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি কেনা হলেও এর বেশির ভাগই নষ্ট পাওয়া যায়। পরিদর্শনে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসার বেহাল চিত্র দেখা যায়। শুধু মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতাল নয়, এ রকম চিত্র প্রায় সব হাসপাতালেই। গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের ৮৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হলেও সেবায় এর প্রতিফলন নেই বললেই চলে। অথচ শুধু হাসপাতাল অবকাঠামো নির্মাণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে।
এ রকম যত্রতত্র বাছবিচারহীন প্রকল্পে নয়ছয় করে লুটে নেওয়া হয়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা। হাসিনা সরকারের ১৫ বছরে উন্নয়ন প্রকল্পে মোট ১৭ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এ খরচের একটি বড় অংশই লোপাট ও অনিয়মে জলে গেছে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে পদধারী অনেকেই ব্যক্তিস্বার্থে প্রকল্পের অর্থ খরচ করার অভিযোগ রয়েছে। দেখা গেছে, উন্নয়নের নাম দিয়ে কোনো এমপি তাঁর বাড়ির পাশের রাস্তা পাকা করেছেন। কোনো মন্ত্রী নিজের কম দামের জমি বেশি দামে প্রকল্পে বিক্রি করেছেন। কোনো সচিব তাঁর বাড়ির পাশে মা-বাবার নামে করে নিয়েছেন হাসপাতাল; যেসব উন্নয়ন বর্তমানে একরকম বোঝায় পরিণত হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতের ৮৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়ম
ফেনীর সোনাগাজী ও সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যে পাঁচ কোটি ৯২ লাখ ৮৮৭ টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালে নির্মাণ করা হয় মঙ্গলকান্দি ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল। কিন্তু এক দশক পার হলেও পুরোপুরি চালু হয়নি হাসপাতালটি। একই অবস্থা যশোরের সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলার ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ হাসপাতালের। ১০ বছর আগে নির্মিত হলেও এখনো চালু হয়নি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। সারা দেশে এমন ২৭টিরও বেশি হাসপাতালের তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে জনবলের অভাবে দেশের ২১টি ট্রমা সেন্টার নিজেই যেন পঙ্গু! এসব হাসপাতাল নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৫৬০ কোটি টাকা। অর্ধশতাধিক হাসপাতালে চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
উপজেলা হাসপাতালগুলো ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও বাড়েনি স্বাস্থ্যসেবা কর্যক্রম। জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেও নেই আধুনিক সেবা। শুধু বরাদ্দের টাকাটা খরচ করে বানানো হয় ভবন। বাড়েনি জনবল, সেবার মান।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যারা এসব হাসপাতাল নির্মাণ করেছেন, তাঁদের আসল উদ্দেশ্যই ছিল ভবন বানানো, যাতে তাঁরা লাভবান হতে পারেন। এখন জরুরি ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ করে হাসপাতালগুলো চালু করা দরকার, যাতে পুরোটাই ক্ষতি না হয়।’
শিক্ষার ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পও প্রশ্নবিদ্ধ
গত ১৫ বছরে দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি খরচ করেও সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র-ছাত্রী ধরে রাখা যাচ্ছে না। সরকারি প্রাথমিক ও ম্যাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে মানসম্মত শিক্ষা নেই বলে দাবি অভিভাবকদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তারা যা শিখছে তার কিছুই কাজে লাগছে না চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা দুই-তৃতীয়াংশ ছাত্র-ছাত্রীই বেকার থাকছে বলে উঠে এসেছে বিআইডিএসের গবেষণায়। দেশে মোট বেকারের ১২ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত বলছে সরকারি সংস্থা বিবিএস। অর্থাৎ এত টাকা খরচ করে যে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তা কোনো কাজেই লাগছে না তরুণদের। ফলে বেকারের হার বাড়ছেই। আর বেকার বাড়ার পেছনে কর্মমুখী শিক্ষা না থাকাকে দাবি করছেন শিক্ষানুরাগীরা।
শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪১টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৪০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ হাজার ৩৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮৮ হাজার ৪৭৫টি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করেছে। ১৩ হাজার ৪২টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মোট দুই হাজার ৭৫৮ কোটি টাকার মেরামত ও সংস্কার করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বর্তমানে ৫৮ হাজার কোটি টাকার ৩৬টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান, যার বেশির ভাগই ভবন নির্মাণকেন্দ্রিক। অর্থাৎ শিক্ষার মান উন্নয়নের চেয়ে ভবন নির্মাণেই জোর দেওয়া হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, অনেক জায়গায় ভবন পড়ে আছে কিন্তু শিক্ষার্থী বা পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। শিক্ষাব্যবস্থা হতে হবে কর্মমুখী। লেখাপড়া হতে হবে জ্ঞানকেন্দ্রিক। শুধু কেতাবি শিক্ষা কাজে লাগছে না।’
এলজিইডির ৩ লাখ কোটির প্রকল্পেও বিপুল অর্থ লোপাট
গত ১৫ বছরে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন হলেও তা ছিল অপরিকল্পিত। যত্রতত্র রাস্তা করে নষ্ট করা হয়েছে ফসলি জমি। অর্ধকিলোমিটার রাস্তাও পিচ ঢালাই করা হয়েছে, যার কারণে অবশেষে পরিকল্পনা কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, দুই কিলোমিটারের বেশি রাস্তা না থাকলে সেটি পাকা করা যাবে না। দেখা গেছে, রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা তেমন প্রয়োজন না থাকলেও বাড়ির পাশে রাস্তা, কালভার্ট, ব্রিজ করে সরকারের অর্থ নষ্ট করেছেন, যার কোনো অর্থনৈতিক আউটপুট নেই।
এলজিইডির ২০১৯ সালের তথ্য মতে, মোট সড়কের ৫৩ শতাংশই নিম্নমানের। সংস্থাটির প্রায় ৬২ হাজার কিলোমিটার সড়ক খারাপ বা বেহাল বলে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ ও অনিয়ম-দুর্নীতিই এলজিইডির বিশাল সড়ক নেটওয়ার্ককে ভঙ্গুর দশায় নিয়ে গেছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, ‘একটি সড়ক নির্মাণের আগে অনেক বিষয় যাচাই করতে হয়। কিন্তু আমাদের এখানে কিছুই মানা হয় না। ঠিকাদারকে একটি রাস্তার কাজ ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে ঠিকাদার নিজের খেয়াল-খুশিমতো সড়ক নির্মাণ করেন। প্রয়োজনীয় তদারকি যেমন হয় না, তেমনি নিম্নমানের কাজের কারণে কাউকে জবাবদিহিও করতে হয় না।’
এক লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকার চার লেন প্রকল্পেও লুটপাট
গত ১৫ বছরে এক লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পেও লুটপাটের মচ্ছব চলেছে। ৩০ কোটির রাস্তায় খরচ করা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পে কিলোমিটারে ২১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। অথচ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণে প্রতিকিলোমিটারে ৩০৬ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করা হচ্ছে। অন্য প্রকল্প নির্মাণেও এ রকম কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার অপচয় হয়েছে।
সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক জরিপে উঠে আসে, আওয়ামী সরকারের ১৪ বছরে সড়ক ও সেতু খাতে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত দুর্নীতি করা হয়েছে। মোট ব্যয়ের ৭২ শতাংশ কাজ পেয়েছেন ১৫টি ঠিকাদার। প্রকল্প নেওয়ার সময় অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় বাড়িয়ে ধরা এক প্রকার রীতিতে পরিণত হয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগে ঘুষ লেনদেনে ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ অর্থ লোপাট হয়। ত্রিপক্ষীয় ‘সিন্ডিকেট’ ভাঙতে না পারলে দুর্নীতিবিরোধী কোনো কার্যক্রম সফল হবে না।
সাধারণত নতুন সড়ক ২০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকবে ধরে নিয়ে বিনিয়োগ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে মেরামতের দরকার পড়ে। এমনকি কিছু সড়ক দ্রুতই বেহাল হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চলমান স্থানীয় সড়ক নষ্ট করে দ্রুতগতির ফোর লেন করছি, এটা ঠিক হচ্ছে না। যেকোনো প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক সমীক্ষা হওয়া জরুরি।’
বিদ্যুতের ২ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পেও অনিয়ম-দুর্নীতি
আওয়ামী সরকারের ১৫ বছরে সবচেয়ে বেশি লুটপাট হয়েছে দুই লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্পে। শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামেই এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়া হয়েছে। অথচ বাড়েনি প্রকৃত সক্ষমতা।
সম্প্রতি সরকারের বড় দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র মাতারবাড়ী ও রামপাল চালু হয়েছে। অথচ কয়লাসংকটের কারণে মাঝেমধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় এর উৎপাদন। একই অবস্থা কয়লাভিত্তিক অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোরও। এদিকে খুলনায় গ্যাসের জোগান নিশ্চিত না করেই তিনটি পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ করে আট হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ গচ্চা দিয়েছে সরকার। কেন্দ্রগুলো থেকে কখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে, তা কেউ বলতে পারছে না। একই অবস্থা সরকারের অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোরও।
এদিকে ক্ষমতার বলয়ে থাকা প্রভাবশালীদের পকেট ভারী করতে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারের জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে স্মার্ট মিটার ভাড়া বাবদ অত্যধিক চার্জ কেটে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া উন্নয়নের নামে রেলপথ মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সেতু বিভাগ, নৌপরিবহন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত ও আইসিটির কয়েক লাখ কোটি টাকার প্রকল্পেও লুটপাটের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
সম্পর্কিত খবর

এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। দুপুর ২টা থেকে যেকোনো মোবাইলে এসএমএস, শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফল জানতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এই ফল প্রকাশের মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৯ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান হবে।
এ বছর আগের মতো ফলাফল প্রকাশের কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না।
শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার গতকাল বলেছেন, এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তরে আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। দুই মাসের কম সময়ের মধ্যেই সব বোর্ডের ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে। সব বোর্ড নিজেদের মতো করে ফল প্রকাশ করবে।
যেভাবে জানা যাবে ফল : যেকোনো মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানতে মোবাইলের এসএমএস অপশনে গিয়ে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পরীক্ষার বছর লিখে তা ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।
দাখিলের ফল পেতে উধশযরষ লিখে স্পেস দিয়ে গধফ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। কারিগরি বোর্ডের ক্ষেত্রে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ঞবপ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত ওয়েবসাইট http://www.educationboardresults.gov.bd -এর মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল জানা যাবে। আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ইনপুট দিয়ে ও শিক্ষা বোর্ড সিলেক্ট করে ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করে ফল জানা যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন শিক্ষার্থী। দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।
ফল প্রকাশের পর তা পুনর্নিরীক্ষণের সময়ও জানিয়েছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড। ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদন পদ্ধতি শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং টেলিটক বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে আজ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

ভারতীয় জেনারেলের দাবি
চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জোট ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান বলেছেন, চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের প্রতি ঝুঁকছে। এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। গত মঙ্গলবার ভারতের চিন্তক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অনিল চৌহান এ কথাগুলো বলেন।
জেনারেল চৌহান বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট বহিরাগত শক্তিদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে।
জেনারেল চৌহান বলেন, এই প্রবণতা ভারতের জন্য বড় এক সমস্যা। সম্প্রতি চীনের কর্মকর্তারা সে দেশে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন।
চীন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা বহু পুরনো। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তাঁর ভারতে আশ্রয়লাভ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
অনুষ্ঠানে সিডিএস জেনারেল চৌহানকে পাকিস্তান-ভারত সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, ওই সংঘাতে পাকিস্তানকে চীন কতটা ও কিভাবে সমর্থন দিয়েছে, সহায়তা করেছে, তা বলা খুবই কঠিন।
জেনারেল চৌহান বলেন, তবে ঘটনা হলো পাকিস্তান তাদের প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বেশির ভাগটাই চীন থেকে নেয়। সে কারণে পাকিস্তানে চীনের উপস্থিতি থাকার কথা। বিশেষ করে সংঘাত ও সংঘর্ষের সময়। সেটা কতটা ছিল এবং সমর্থন বা সহায়তার চরিত্র কেমন ছিল, তা বলা সহজ নয়।
অপারেশন সিন্দূর নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলার প্রসঙ্গে ভারতের উপসেনাপ্রধান লে. জেনারেল রাহুল আর সিং অবশ্য গত শুক্রবার বলেছিলেন, সংঘাতের সময় পাকিস্তানকে চীন শুধু সাহায্যই করেনি, সংক্ষিপ্ত ওই যুদ্ধকে তারা তাদের অস্ত্রের পরীক্ষাগার করে তুলেছিল।
ওই কর্মকর্তার দাবি, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ওই যুদ্ধে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, সেগুলোর ৮১ শতাংশই চীনের তৈরি। সেসব অস্ত্র প্রকৃত যুদ্ধের সময় কতটা কার্যকর, সে পরীক্ষাও চীন করে ফেলেছে। ওই সংঘাতকে চীন তার অস্ত্রসম্ভারের পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করেছে। সূত্র : ডেকান হেরাল্ড

গণ-অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘন
বিচার আইসিসিতে পাঠানোর অনুরোধ অ্যামনেস্টিরf
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনা আইসিসিতে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এ আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটেনভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠন।
গতকাল বুধবার সংগঠনটির সাউথ এশিয়া বিষয়ক ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসংক্রান্ত একটি পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার বিচার রোম সনদের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
গতকাল বুধবার ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারীদের ওপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি গুলির নির্দেশের একটি ফোনকল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
এর আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের একটি তথ্য-উপাত্তভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ধাতব পেলেটযুক্ত অস্ত্রের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের ব্যবস্থা করা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে একটি ন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব অপরাধীকে জবাবদিহির আওতায় আনা।

সরকারের উদ্যোগেই জুলাই ঘোষণাপত্র, ইতিবাচক বিএনপি
- দায়িত্বে আছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা
দু-এক দিনের মধ্যে মতামত জানাবে বিএনপি
হাসান শিপলু

ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে আবার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রধান কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চাপের মুখে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।
এর আগে কয়েক দফা ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া সম্প্রতি তাদের দলের একজন শীর্ষ নেতার কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত দুই দিন দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হয়।
ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধান উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংশোধন, পুনর্লিখন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করার কথা বলা আছে। এ বিষয়ে বিএনপির আপত্তি রয়েছে। দলটি পরবর্তী সংসদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনের পক্ষে থাকলেও সংবিধান বাতিল করে তা পুনর্লিখনের বিপক্ষে।
সরকারসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার কথা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। খসড়া ঘোষণাপত্র তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এ যৌথ প্রচেষ্টার জন্য আরো মতামত দরকার, যাতে এটি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় এবং জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে।
সরকারের পক্ষ থেকে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘সরকারের খসড়া ঘোষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা মতামত দিয়েছিলাম। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আর যোগাযোগ করা হয়নি। এখন আবার একটি খসড়া দেওয়া হয়েছে। আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাব।’
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হঠাৎ করে এই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আনে। তখন এর প্রভাব কী হতে পারে, তা বুঝতে চাইছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ঘোষণাপত্রের পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্কের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সরকার সর্বদলীয় বৈঠক করে, কিন্তু তাতে ঐকমত্য হয়নি। ওই সময় বিএনপি এত দিন পর ঘোষণাপত্রের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরপর গত ১৬ জানুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে।
সম্প্রতি এনসিপি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আবার সরব হয়ে ওঠে। গত ৪ জুলাই ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ে এক পথসভায় এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই-আগস্টের মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এও বলেন, এই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক ভিত্তি থাকবে। অন্যথায় তাঁদের পক্ষ থেকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ দেওয়া হবে বলে সরকারকে সতর্ক করেন নাহিদ।
সরকারসংশ্লিষ্ট একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেন, ঘোষণাপত্রের মূল অংশীজন হলো বিএনপি ও এনসিপি। তাদের মধ্যে ঐকমত্য হলে দ্রুত ঘোষণাপত্র দেওয়া যাবে।
ঘোষণাপত্রে উল্লেখযোগ্য যা আছে : খসড়া ঘোষণাপত্রে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয় তুলে ধরা হয়। কোন পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়, সে বিষয়টিও উঠে আসে।
এতে ১৯৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের কথাও বলা হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ‘ব্যর্থতা’ এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করার কথাও তুলে ধরা হয়।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে মত প্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করার ফলে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লব সংগঠিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মত প্রকাশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর সিপাহি-জনতার বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আবার ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। মূলত তখন থেকে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদের পথ সুগম হয়। এই বিষয়গুলো যুক্ত করার ফলে ঘোষণাপত্র বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে।
খসড়ায় স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে জনতার অবিরাম সংগ্রাম এবং এর মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান এবং পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সৃষ্টির বিষয়টিও উঠে আসে।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ধারাবাহিক তিনটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
তবে বিএনপি নেতাদের কয়েকজন ২০০৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনকেও এর সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দেন দলীয় ফোরামে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে বলা হয়, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বলে প্রদত্ত সুপ্রিম কোর্টের মতামত অনুসারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা : গত মঙ্গলবার এবং গতকাল বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খসড়া ঘোষণাপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করে কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করে বিএনপি তাদের মতামত দিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিএনপি এ বিষয়ে তাদের মতামত সরকারকে জানাবে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আরো যেসব বিষয়ে আলোচনা : মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপ, নারী আসন, নির্বাচনে পিআর পদ্ধতিসহ সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি। একই সঙ্গে এই শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
জানা গেছে, বৈঠকে সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের প্রতিবেদন তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এরপর সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত দেন বিএনপি নেতারা। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এর মধ্যে সংসদে নারীদের আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে। তবে তাঁরা কিভাবে নির্বাচিত হবেন, সে ব্যাপারে এখনো ঐকমত্য হয়নি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, তাঁরা প্রচলিত পদ্ধতিতে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত করার পক্ষে অবস্থান নেবেন। পাশাপাশি কোনোভাবেই পিআর পদ্ধতি মানবেন না তাঁরা।