ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭
চিকিৎসাসেবা

দিনভর ভোগান্তি, শর্তে স্থগিত চিকিৎসকদের ‘শাটডাউন’

  • ► আট ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল ঢাকা মেডিক্যালে
  • ► আগামী সাত দিন সব হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকবে
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
দিনভর ভোগান্তি, শর্তে স্থগিত চিকিৎসকদের ‘শাটডাউন’
চিকিৎসকদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে গতকাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যায় স্বজনরা। ছবি : কালের কণ্ঠ

কর্মস্থলে নিজেদের নিরাপত্তাসহ চার দফা দাবিতে ডাকা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করেছেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আশ্বাস পেয়ে গতকাল রবিবার সন্ধ্যার দিকে তাঁরা কর্মসূচি স্থগিত করেন। এই কর্মসূচি চলাকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রায় আট ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে রোগীদের।

গত শনিবার রাতে এক শিক্ষার্থী ও একজন কিডনি রোগী মৃত্যুর ঘটনায় অবহেলার অভিযোগ এনে স্বজনরা ঢাকা মেডিক্যালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও হাসপাতাল ভাঙচুর করে। একই রাতে হাসপাতালের ওয়ার্ডে অস্ত্র নিয়ে ঢুকে বহিরাগত দুই গ্রুপ মারামারি ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায়। ওই সময় পুলিশ ও সেনা সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সকাল থেকেই বন্ধ রাখা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও ভর্তি রোগীদের সেবা কার্যক্রম।

ফলে নিদারুণ ভোগান্তিতে পড়ে দেশের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।

দুপুর ২টার দিকে হাসপাতালে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনরত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষ  থেকে সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তাঁদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সারা দেশের হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা কর্মবিরতি শুরু করেন। এর মধ্যেই বিকেলে রোগীর মৃত্যুর জেরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম। তাঁর সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকেল ৪টার দিকে শর্তসাপেক্ষে কর্মসূচি স্থগিত করেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা জানান, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী সাত দিন সব হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকবে। বৈঠকে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি, মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, হাসপাতালের পরিচালক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক ও সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আগের রাতে মারধরের শিকার চিকিৎসক ইমতিয়াজকে দেখতে যান।

পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বৈঠকে আলোচনার ভিত্তিতে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি স্থগিত করতে সম্মত হয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তিনটা দাবি তাদেরহামলাকারীদের গ্রেপ্তার, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা দিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মোতায়েন, চিকিৎসা সুরক্ষা আইন করতে হবে। তাঁদের দাবি শুনেছি, কথা বলেছি। আক্রমণকারীদের কালকের (আজ সোমবার) মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে। বাকি দাবিগুলো ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। এরপর তাঁরা আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।

উপদেষ্টার বক্তব্যের পর হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, হাসপাতালের সব সার্ভিস এরপর থেকে চালু করা হবে।

তবে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও পরিচালক বক্তব্য দিয়ে যাওয়ার পরপরই সাংবাদিকদের সামনে আসেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক ডা. মো. আব্দুল আহাদ বলেন, উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দেশের সব হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিরাপত্তা চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তাঁদের জানিয়েছেন, শুধু বিভাগীয় হাসপাতালে নিরাপত্তা দেওয়ার মতো জনবল আছে। এ কারণে তাঁরা কর্মসূচি শর্তসাপেক্ষে স্থগিত করেছেন।

তার মানে হলো একজন চিকিৎসকের নিরাপত্তার জন্য একজন পুলিশ, বিজিবি বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য দিতে হবে। যেসব হাসপাতালে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করবে সেসব হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আমরা চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করব, জরুরি অস্ত্রোপচার হবে। কোনো ধরনের রুটিন সেবা, আউটডোর সেবা চালু থাকবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে না ততক্ষণ ইমার্জেন্সি চালু করা হবে না। তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। যদি ওই সময়ের মধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তার করে জনসমক্ষে না আনা হয় তাহলে আগামীকাল রাত ৮টার পর আবার শাটডাউন চলবে।

তিনি বলেন, কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী সাত দিন সারা দেশের সব হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ থাকবে। এই সাত দিনের মধ্যে আমাদের আরো দুটি দাবি ছিলএগুলো পূরণ করতে হবে। এর একটি হলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতায় স্বাস্থ্য পুলিশ নিয়োগ দিতে হবে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। এর আগে হামলার প্রতিবাদ এবং নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতিতে থাকা চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।

 

সরেজমিন ঢাকা মেডিক্যাল

গতকাল সকাল ১০টায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, টিকিট কাউন্টার বন্ধ রয়েছে। বাইরে অপেক্ষায় আছেন অর্ধশত রোগী ও রোগীর স্বজন। প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে আছেন অন্তত ১০ জন সেনাবাহিনীর সদস্য। জরুরি বিভাগের ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায়, চিকিৎসকের অপেক্ষায় আছেন আরো শতাধিক রোগী। অনেকেই যন্ত্রণায় হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে পড়েছে। কেউ আবার মাদুর পেতে বসে আছে। এদের সবারই জিজ্ঞাসাকখন ডাক্তার রোগী দেখবেন?

ভোগান্তিতে পড়া এক রোগীর স্বজন রিপন মিয়া বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আমার ছেলেটা প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে। দেখেন এখনো রক্ত পড়ছে, কিছুতেই রক্ত পড়া বন্ধ করা যাচ্ছে না। সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালে আসছি, কোনো ডাক্তার নাই। আমার ছেলেটা মারা যাবে, আপনারা আমার ছেলেটাকে বাঁচান।

শিল্পী ও তাসলিমা দুই বোন মাদারীপুর থেকে বাবাকে নিয়ে এসেছেন ভর্তি করাতে। তাঁদের সঙ্গে কথা হয় জরুরি বিভাগের প্রবেশ পথের সামনে। সকাল ৭টায় পিজি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকরা ঢাকা মেডিক্যালে পাঠিয়েছেন বলে জানান শিল্পী। তিনি বলেন, ৮টায় এখানে পৌঁছে দেখি কোনো ডাক্তার নেই। ভোগান্তির কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

শিল্পী বলেন, বাবার শরীর খুবই খারাপ, পিজি হাসপাতালে সিট খালি নেই। তাই ঢাকা মেডিক্যালে রেফার করেন তাঁরা। কিন্তু এখানে এসে দেখি সব বন্ধ। বাবাকে একটু বসতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানালেও কেউ সাড়া দেয়নি।

হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ইনজেকশন, ওষুধ, স্যালাইন, পেসার মাপার যন্ত্রসহ জরুরি যন্ত্রাংশ মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। ১০টি শয্যার সব কটি খালি। দুটিতে গুরুতর দুজন রোগী আছে, তাদের মুখে অক্সিজেন লাগিয়ে রাখা হয়েছে।

এখানে কর্তব্যরত দুই নার্স জানান, গত শনিবার রাতে এক কিডনি রোগী মারা গেলে তার স্বজনরাও ইন্টার্ন চিকিৎকদের মারধর করে। এবং এখানে ভাঙচুর চালায়। এরপর থেকে কর্মবিরতিতে যান চিকিৎসকরা। 

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে রোগী ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,  সকাল থেকে বেশির ভাগ ওয়ার্ডে চিকিৎসকরা আসেননি। নার্সরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে কিছু ওয়ার্ডে চিকিৎসকদের উপস্থিতি দেখা যায়। বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, রোগীরা এসে টিকিট কাউন্টার বন্ধ দেখে ফেরত যাচ্ছেন।

সদ্য বিলুপ্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সহসভাপতি সোহেল রানা রনি জানান, তাঁদের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে শনিবার রাত থেকে। তিনি বলেন, হাসপাতালে যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাদের দাবি, যারা এ ঘটনায় জড়িত, সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

যে ঘটনায় কর্মবিরতিতে যায় চিকিৎসকরা 

ঢাকা মেডিক্যালে শুক্রবার রাতে ভর্তি হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয় শনিবার সকালে। ওই ঘটনায় ওই রোগীর স্বজনরা দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধর করে। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, ওই ছাত্র মারা যাওয়ার পর তার স্বজনরা একজন চিকিৎসককে মারতে মারতে পরিচালকের রুম পর্যন্ত নিয়ে যায়। আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে ইন্টার্ন চিকিৎসকের কর্মবিরতি আমরা সমর্থন করছি, আমরা তাঁদের সঙ্গে আছি।

নিউরো সার্জন ডা. শাহনেওয়াজ বিশ্বাস বলেন, গত শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় ২০১ নম্বর ওয়ার্ডে অপারেশন থিয়েটারে ছিলেন ডা. মাশরাফি। তিনি গুরুতর এক রোগীর অস্ত্রোপচার করছিলেন, এ সময় ছাত্র নামধারী কিছু দুর্বৃত্ত সেখান থেকে ডা. মাশরাফিকে মারতে মারতে ডিরেক্টর স্যারের সামনে নিয়ে আসে। তাঁকে সেইভ করার জন্য ডা. ইমরান ওখানে যান, তখন তাঁর ওপরও অতর্কিতে আক্রমণ করে। শব্দ শুনে তখন আমি ক্যাথল্যাব থেকে বের হয়ে সেখানে যাই, তাঁরা আমাকেও অতর্কিতে আক্রমণ করে।

ডা. সাব্বির হোসেন বলেন, কালকে রাতে আরো দুটি ঘটনা ঘটে, একটা ঘটনা হচ্ছেইমার্জেন্সি রুমে একজন বিষ পান করে আসা কিডনি রোগী মারা যায়। মারা যাওয়ার পরে আমাদের মেডিক্যাল অফিসারের ওপর হামলা চালানো হয়। ইমার্জেন্সি কমপ্লেক্স ওসেক ভাঙচুর করা হয়। তাই আমরা দেখতে পাই, এখানে ডাক্তার ও রোগী কেউই নিরাপদ নয়।

আরেকটি ঘটনা হচ্ছে, গতকাল এক রোগী বিভিন্ন আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। ভর্তির কিছুক্ষণ পর একটি গ্রুপ চাপাতি, রামদা হাতে হাসপাতালে প্রবেশ করে। তারা ওই রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত করে এখান থেকে যায়। তাই আমরা দেখছি, এখানে রোগীও নিরাপদ না। আপনারা কোথায় সেবা নিতে আসবেন। এখানে রোগীও নিরাপদ নয়।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ আজ

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। দুপুর ২টা থেকে যেকোনো মোবাইলে এসএমএস, শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফল জানতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এই ফল প্রকাশের মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৯ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান হবে।

এ বছর আগের মতো ফলাফল প্রকাশের কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না।

তবে আন্ত শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে দুপুর ২টায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের কাছে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার গতকাল বলেছেন, এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তরে আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। দুই মাসের কম সময়ের মধ্যেই সব বোর্ডের ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে। সব বোর্ড নিজেদের মতো করে ফল প্রকাশ করবে।

 

যেভাবে জানা যাবে ফল : যেকোনো মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানতে মোবাইলের এসএমএস অপশনে গিয়ে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পরীক্ষার বছর লিখে তা ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।

দাখিলের ফল পেতে উধশযরষ লিখে স্পেস দিয়ে গধফ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। কারিগরি বোর্ডের ক্ষেত্রে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ঞবপ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত ওয়েবসাইট  http://www.educationboardresults.gov.bd -এর মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল জানা যাবে। আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ইনপুট দিয়ে ও শিক্ষা বোর্ড সিলেক্ট করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে ফল জানা যাবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন শিক্ষার্থী। দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।

ফল প্রকাশের পর তা পুনর্নিরীক্ষণের সময়ও জানিয়েছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড। ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদন পদ্ধতি শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং টেলিটক বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে আজ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

 

মন্তব্য
ভারতীয় জেনারেলের দাবি

চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জোট ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জোট ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে

ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান বলেছেন, চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের প্রতি ঝুঁকছে। এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। গত মঙ্গলবার ভারতের চিন্তক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অনিল চৌহান এ কথাগুলো বলেন।

জেনারেল চৌহান বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট বহিরাগত শক্তিদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে।

ঋণ-কূটনীতির সাহায্যে প্রভাব বিস্তারের মধ্য দিয়ে তারা ভারতের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। পাশাপাশি ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন এবং সেই সঙ্গে তাদের আদর্শচ্যুতি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।

জেনারেল চৌহান বলেন, এই প্রবণতা ভারতের জন্য বড় এক সমস্যা। সম্প্রতি চীনের কর্মকর্তারা সে দেশে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন।

তিনটি দেশই নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের কাছাকাছি আসছে। এই নৈকট্য ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে তাঁর ধারণা।

চীন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা বহু পুরনো। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তাঁর ভারতে আশ্রয়লাভ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এই পরিস্থিতিতে চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের কাছাকাছি আসা জেনারেল চৌহানকে সন্দিহান করে তুলেছে। তিনি মনে করছেন, এই তিন দেশের ঘনিষ্ঠতা ভারতের চিন্তা বাড়াতে পারে। স্থিতিশীলতার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে।

অনুষ্ঠানে সিডিএস জেনারেল চৌহানকে পাকিস্তান-ভারত সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, ওই সংঘাতে পাকিস্তানকে চীন কতটা ও কিভাবে সমর্থন দিয়েছে, সহায়তা করেছে, তা বলা খুবই কঠিন।

ওই সংঘাতের সময় উত্তর সীমান্তে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি।

জেনারেল চৌহান বলেন, তবে ঘটনা হলো পাকিস্তান তাদের প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বেশির ভাগটাই চীন থেকে নেয়। সে কারণে পাকিস্তানে চীনের উপস্থিতি থাকার কথা। বিশেষ করে সংঘাত ও সংঘর্ষের সময়। সেটা কতটা ছিল এবং সমর্থন বা সহায়তার চরিত্র কেমন ছিল, তা বলা সহজ নয়।

অপারেশন সিন্দূর নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলার প্রসঙ্গে ভারতের উপসেনাপ্রধান লে. জেনারেল রাহুল আর সিং অবশ্য গত শুক্রবার বলেছিলেন, সংঘাতের সময় পাকিস্তানকে চীন শুধু সাহায্যই করেনি, সংক্ষিপ্ত ওই যুদ্ধকে তারা তাদের অস্ত্রের পরীক্ষাগার করে তুলেছিল।

ওই কর্মকর্তার দাবি, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ওই যুদ্ধে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, সেগুলোর ৮১ শতাংশই চীনের তৈরি। সেসব অস্ত্র প্রকৃত যুদ্ধের সময় কতটা কার্যকর, সে পরীক্ষাও চীন করে ফেলেছে। ওই সংঘাতকে চীন তার অস্ত্রসম্ভারের পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করেছে। সূত্র : ডেকান হেরাল্ড

 

 

মন্তব্য
গণ-অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘন

বিচার আইসিসিতে পাঠানোর অনুরোধ অ্যামনেস্টিরf

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বিচার আইসিসিতে পাঠানোর অনুরোধ অ্যামনেস্টিরf

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনা আইসিসিতে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এ আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটেনভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠন।

গতকাল বুধবার সংগঠনটির সাউথ এশিয়া বিষয়ক ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসংক্রান্ত একটি পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার বিচার রোম সনদের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

গতকাল বুধবার ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারীদের ওপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি গুলির নির্দেশের একটি ফোনকল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

এর আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের একটি তথ্য-উপাত্তভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ধাতব পেলেটযুক্ত অস্ত্রের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।

এ ছাড়া হাজার হাজার মানুষ গুরুতর ও স্থায়ীভাবে আহত হয়েছেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের ব্যবস্থা করা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে একটি ন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব অপরাধীকে জবাবদিহির আওতায় আনা।

 

 

মন্তব্য

সরকারের উদ্যোগেই জুলাই ঘোষণাপত্র, ইতিবাচক বিএনপি

    দায়িত্বে আছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা দু-এক দিনের মধ্যে মতামত জানাবে বিএনপি
হাসান শিপলু
হাসান শিপলু
শেয়ার
সরকারের উদ্যোগেই জুলাই ঘোষণাপত্র, ইতিবাচক বিএনপি

ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে আবার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রধান কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চাপের মুখে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।

এর আগে কয়েক দফা ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।

তবে এবারের উদ্যোগকে বিএনপি বেশ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও মনে করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত একটি ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া সম্প্রতি তাদের দলের একজন শীর্ষ নেতার কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত দুই দিন দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হয়।

ঘোষণাপত্রটি কার্যকরের সময়কালসহ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপির দ্বিমত আছে।

ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধান উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংশোধন, পুনর্লিখন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করার কথা বলা আছে। এ বিষয়ে বিএনপির আপত্তি রয়েছে। দলটি পরবর্তী সংসদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনের পক্ষে থাকলেও সংবিধান বাতিল করে তা পুনর্লিখনের বিপক্ষে।

সরকারসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার কথা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এ নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। খসড়া ঘোষণাপত্র তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এ যৌথ প্রচেষ্টার জন্য আরো মতামত দরকার, যাতে এটি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় এবং জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে।

সরকারের পক্ষ থেকে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, সরকারের খসড়া ঘোষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা মতামত দিয়েছিলাম। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আর যোগাযোগ করা হয়নি। এখন আবার একটি খসড়া দেওয়া হয়েছে। আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাব।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হঠাৎ করে এই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আনে। তখন এর প্রভাব কী হতে পারে, তা বুঝতে চাইছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ঘোষণাপত্রের পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্কের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সরকার সর্বদলীয় বৈঠক করে, কিন্তু তাতে ঐকমত্য হয়নি। ওই সময় বিএনপি এত দিন পর ঘোষণাপত্রের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরপর গত ১৬ জানুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে।

সম্প্রতি এনসিপি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আবার সরব হয়ে ওঠে। গত ৪ জুলাই দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ে এক পথসভায় এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই-আগস্টের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এও বলেন, এই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক ভিত্তি থাকবে। অন্যথায় তাঁদের পক্ষ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে বলে সরকারকে সতর্ক করেন নাহিদ। 

সরকারসংশ্লিষ্ট একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেন, ঘোষণাপত্রের মূল অংশীজন হলো বিএনপি ও এনসিপি। তাদের মধ্যে ঐকমত্য হলে দ্রুত ঘোষণাপত্র দেওয়া যাবে।

ঘোষণাপত্রে উল্লেখযোগ্য যা আছে : খসড়া ঘোষণাপত্রে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয় তুলে ধরা হয়। কোন পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়, সে বিষয়টিও উঠে আসে। 

এতে ১৯৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের কথাও বলা হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থতা এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করার কথাও তুলে ধরা হয়। 

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে মত প্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করার ফলে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লব সংগঠিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মত প্রকাশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর সিপাহি-জনতার বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আবার ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। মূলত তখন থেকে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদের পথ সুগম হয়। এই বিষয়গুলো যুক্ত করার ফলে ঘোষণাপত্র বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে।

খসড়ায় স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে জনতার অবিরাম সংগ্রাম এবং এর মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান এবং পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সৃষ্টির বিষয়টিও উঠে আসে।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ধারাবাহিক তিনটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।

তবে বিএনপি নেতাদের কয়েকজন ২০০৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনকেও এর সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দেন দলীয় ফোরামে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে বলা হয়, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বলে প্রদত্ত সুপ্রিম কোর্টের মতামত অনুসারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা : গত মঙ্গলবার এবং গতকাল বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খসড়া ঘোষণাপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করে কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করে বিএনপি তাদের মতামত দিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিএনপি এ বিষয়ে তাদের মতামত সরকারকে জানাবে।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

 

আরো যেসব বিষয়ে আলোচনা : মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপ, নারী আসন, নির্বাচনে পিআর পদ্ধতিসহ সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি। একই সঙ্গে এই শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

জানা গেছে, বৈঠকে সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের প্রতিবেদন তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এরপর সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত দেন বিএনপি নেতারা। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এর মধ্যে সংসদে নারীদের আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে। তবে তাঁরা কিভাবে নির্বাচিত হবেন, সে ব্যাপারে এখনো ঐকমত্য হয়নি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, তাঁরা প্রচলিত পদ্ধতিতে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত করার পক্ষে অবস্থান নেবেন। পাশাপাশি কোনোভাবেই পিআর পদ্ধতি মানবেন না তাঁরা।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ