পুলিশ সূত্র জানায়, হামলার সময় থানায় ৩৬ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর গতকাল রাত ৯টার পর কালের কণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এখন পর্যন্ত ১৪ জন পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এনায়েতপুরে ১৩ জন ছাড়াও সংঘর্ষে কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ফাঁস দিয়ে মরদেহ ঝোলানো হয় গাছে
প্রত্যক্ষদর্শীরা স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এনায়েতপুর থানায় ঢুকে হামলা এবং ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। মিছিল নিয়ে থানায় হামলা করা হয়। এক পর্যায়ে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ সদস্যরা থানা থেকে একে একে বের হতে থাকলে তাঁদের পিটিয়ে, মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। তিনজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে রাখা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে, হত্যা করে আট পুলিশ সদস্যের লাশ স্থানীয় একটি মসজিদের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়। তাঁদের কয়েকজনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাঁদের গায়ের পোশাকও খুলে ফেলা হয়।
স্থানীয় সূত্র বলেছে, সকাল ১০টার দিকে এনায়েতপুরের খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। সূত্র জানায়, তাদের সঙ্গে সদ্য নিষিদ্ধ জামায়াত-শিবির এবং সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও ছিলেন। এ ছাড়া সন্দেহজনক কিছু অচেনা লোক ছিল। তাদের কর্মকাণ্ড অনেকটা ছিল জঙ্গিদের মতো।
আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে জবাবে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছোড়ে। এ বিষয়ে পুলিশ সূত্র বলছে, দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনকারীরা এনায়েতপুর থানায় হামলা চালায়। পুলিশ সদস্যরা তাদের প্রতিহতের চেষ্টা করেও পারেননি। এক পর্যায়ে থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা বের হলেই তাঁদের নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মোহাম্মদ হান্নান মিয়া বলেন, ঘটনার শুরুতে হাজারখানেক মানুষ দল বেঁধে থানার দিকে আসে। তারা সেখানে কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়। পরে কয়েক শ মানুষ আবার থানায় এসে হামলা চালায়।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, এ নিয়ে গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে গত ১৬ দিনের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৮ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।
গতকালের সংঘাত-সংঘর্ষে তিন শর বেশি পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র। গত ১৬ দিনের সংঘর্ষে দেড় হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানানো হয়।
পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অপারেশনস অ্যান্ড ক্রাইম) বিজয় বসাক বলেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থল এনায়েতপুরে গেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও তাদের সঙ্গে রয়েছেন।
যেসব থানা আক্রান্ত
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো তথ্য অনুসারে আক্রান্ত থানা ও ফাঁড়িগুলো হলো ডিএমপির যাত্রাবাড়ী ও খিলগাঁও থানা, টাঙ্গাইলের গোড়াই হাইওয়ে থানা, বগুড়ার সদর, দুপচাঁচিয়া ও শেরপুর থানা এবং নারুলী পুলিশ ফাঁড়ি, জয়পুরহাট সদর থানা, কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও আশুগঞ্জ থানা, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর থানা, হবিগঞ্জের মাধবপুর ফাঁড়ি, ময়মনসিংহ রেঞ্জ অফিস, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং দিনাজপুর সদর থানা।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রবিবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের ডাকে অসহযোগ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। তাদের কর্মসূচিতে পেশাজীবী ও নাগরিকদের একাংশসহ আরো কিছু মহল যোগ দিয়েছে। কোটা আন্দোলন থেকে তারা শনিবার সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করে। রাজধানীসহ দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে আন্দোলনকারীরা। পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।
বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ ঘোষণা করে সরকার। এ ছাড়া সোম, মঙ্গল ও বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে কারফিউ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।