বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে কিছুতেই মুক্তি মিলছে না রাজধানীবাসীর। এ থেকে মুক্তি পেতে দায়িত্বশীলরা মহাপরিকল্পনার পর মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করলেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ময়লা ফেলায় নগরবাসীর অসচেতনতার কারণে অল্প সময়ে ভারি বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় নাকাল হচ্ছে রাজধানীবাসী। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে অপ্রত্যাশিত ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে রাজধানীবাসীকে।
বৃষ্টিতে ডুবল ঢাকা, দিনভর ভোগান্তি
জহিরুল ইসলাম

দেখা গেছে, গতকাল সকালে যারা বাসা থেকে বের হয়েছে, বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়েই তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে। অনেকে সঙ্গে ছাতা বহন করলেও প্রবল বর্ষণে তা কাজে লাগেনি। ফলে পথচারীসহ ছিন্নমূল মানুষদের অনেককে আশ্রয় নিতে হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনার নিচে। এ সময় রিকশাসহ গণপরিবহন চলাচলও ছিল কম।
রাজধানীতে গতকাল সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় ঝুমবৃষ্টি। থেমে থেমে এই বৃষ্টি অব্যাহত ছিল বিকেল পর্যন্ত।
বাসাবাড়ির নিচতলায় জমেছে পানি
সবুজবাগ ও খিলগাঁও থানাধীন রাজধানীর পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হওয়ায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এ অঞ্চলের বেশির ভাগ মহল্লার অলিগলি ছিল পানির নিচে। বিকেল ৪টায় সবুজবাগ থানার বাসাবো, নন্দীপাড়া ও গোড়ানের বেশির ভাগ রাস্তায় ছিল হাঁটু সমান পানি।
তিতাস রোডে একটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সাইফ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও আমরা পণ্য ডেলিভারি দিয়ে থাকি। কিন্তু পানি ওঠায় আজ ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হয়নি। পানি অপসারণে কেউ এখন পর্যন্ত কোনো কিছু করেনি।’
বৃষ্টিতে বিপাকে চাকরির পরীক্ষার্থীরা
সাপ্তাহিক ছুটির দিন গতকাল সকালের ঝুমবৃষ্টিতে বিপাকে পড়েন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া চাকরিপ্রার্থীরা। সকাল ৯টা থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে অনেকে বাসা থেকে বের হতে পারেননি। অনেকে বের হলেও সড়কে পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় বিপাকে পড়েন। এই সুযোগে সিএনজি-রিকশাচালকরা ভাড়া দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেন। বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়ায় গন্তব্যে যেতে হয়েছে যাত্রীদের। ঢাকার ধামরাই থেকে মিরপুর বাঙলা কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসেন আল-আমিন। সঙ্গে ছাতা না থাকায় টেকনিক্যাল মোড় থেকে বাঙলা কলেজ গেট পর্যন্ত যেতে রিকশাচালক তাঁর কাছে ৫০ টাকা ভাড়া চেয়েছেন। বাধ্য হয়ে ওই টাকা দিয়েই তিনি কেন্দ্র পর্যন্ত গেছেন বলে জানান।
ভারি বৃষ্টিতে ডুবল ঢাকা মেডিক্যাল
গতকাল সকাল থেকে ভারি বৃষ্টির কারণে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চত্বরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পায়নি হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পও। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে প্রায় হাঁটু সমান পানি জমে যায়। এতে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা লোকজনকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এ ছাড়া জরুরি বিভাগে প্রবেশের সময় ডান দিকে হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে সড়ক থেকে উপচে পড়ে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে। এতে ক্যাম্পের ফ্লোর পুরোটাই তলিয়ে যায়। পুরনো ভবনের নিচতলায় ভ্যাকসিন সেন্টার বেইসমেন্টেও পানি প্রবেশ করে। সেখানে এক পর্যায়ে বালুর বস্তা ফেলে পানি আটকানো হয়েছে।
ঢাবির দুই হলে হাঁটুপানি, শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে গতকাল ভারি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে হলের আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দুই হলের গেট থেকে শুরু করে পেছন পর্যন্ত কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমর সমান পানি জমে আছে। হল দুটিতে ছিল না বিদ্যুৎ, বন্ধ হয়ে যায় ক্যান্টিনসহ অন্যান্য ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন এই দুই হলের নারী শিক্ষার্থীরা।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, শাহনেওয়াজ হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলসহ প্রায় সব হলের একই অবস্থা ছিল।
নিউ মার্কেটে কোমরপানি, বিপাকে ব্যবসায়ীরা
গতকাল সকালের বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকা। কোমর সমান পানি পার হয়ে রাস্তায় চলাচল করতে হয়েছে অনেককে৷ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন ব্যবসায়ীরা। দুপুরে নিউ মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, একেবারেই প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছে না। যারা বের হয়েছে, সামান্য পথ যেতে রিকশা বা ভ্যানে উঠতে হয়েছে তাদের। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা৷ নিচতলায় থাকা বেশির ভাগ দোকানে পানি প্রবেশ করায় মালপত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে অনেককে।
কৃষি মার্কেটে পানি, ডুবেছে চাল-ডাল-চিনি
বৃষ্টিতে মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে পানি উঠেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার জলাবদ্ধতার সঙ্গে এই মার্কেটেও ঢুকেছে পানি। এতে সারি করে রাখা চাল, চিনি আর ডালের বস্তা পানিতে ডুবে যায়। মার্কেটটি রাস্তা থেকে খানিকটা নিচু। ফলে পানি প্রবেশ ঠেকাতে গলির মুখগুলো উঁচু করা হয়েছে। কিন্তু গতকালের টানা বৃষ্টি এসবের কিছুই মানেনি। দুপুরে দেখা যায়, বালতি আর ড্রাম নিয়ে মার্কেটের পানি বের করছেন ব্যবসায়ীরা। পানি আটকাতে গলির মুখে পেপার ও বস্তা দিয়ে আরো উঁচু করে দিয়েছেন। বিক্রি বন্ধ রেখে চাল-ডালের বস্তা বাঁচাতে ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা।
কৃষি মার্কেটের চালের আড়তের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মন্টু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই মার্কেটে পাইকারি পণ্যের দোকান আছে দুই শর মতো। এর মধ্যে শতাধিক দোকানের চাল, ডাল, চিনি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
সড়কে গণপরিবহন সংকট
সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে পুরান ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। সড়কে পানির কারণে হিউম্যান হলারের (লেগুনা) মতো যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মূল সড়কে রিকশা যেতে চায়নি। লালবাগ ও চকবাজারের বাসিন্দাদের গুলিস্তানে যেতে হলে লেগুনার বিকল্প নেই। সরেজমিনে লালবাগের সেকশনে গিয়ে দেখা যায়, ২০ টাকার লেগুনাভাড়া যাত্রীদের কাছে ৫০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। তা-ও গুলিস্তান পর্যন্ত যাওয়া যাবে কি না চালক সেই নিশ্চয়তা দেননি। পানিতে গাড়ি কোথাও বন্ধ হয়ে গেলে যাত্রীদের সেখানে নেমে যেতে হবে, সে কথা আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়।
গুলিস্তান যাওয়ার অপেক্ষায় আজিমপুর স্টেশনে ঘোরাঘুরি করছিলেন নোমান আহাম্মেদ। কথা হলে তিনি বলেন, এখানে হাজারীবাগ, চকবাজার, লালবাগের লেগুনা পাওয়া যায়। কিন্তু ৪০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে একটা লেগুনারও দেখা পেলাম না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কম সময়ে ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টি হওয়ায় পানি সরাতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। আমাদের তিনটি পাম্প চলছে, যেগুলো সেকেন্ডে প্রায় ১০ হাজার লিটার পানি সরাতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, পাম্প টানা চালানো যাচ্ছে না। একটু পর পর ময়লায় পাইপে জ্যাম সৃষ্টি হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পানি সরাতে যে কত প্রতিবন্ধকতা, তা গণমাধ্যমকর্মীরা এসে দেখে যেতে পারেন। পলিথিন বর্জ্য থেকে মানুষের বাড়ির ছোট-বড় এমন কোনো ময়লা-আবর্জনা নেই, যা পানির স্রোতের সঙ্গে এখানে আসছে না। ড্রেনের মুখগুলো সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। খালগুলো দখল করায় সংকুচিত হয়ে এখন ড্রেনের পর্যায়েও নেই। পাম্প টানা চালানো না গেলে কিভাবে পানি দ্রুত সরবে। তবে আর বৃষ্টি না হলে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার (সন্ধ্যা ৭টায় বলেছেন) মধ্যে পানি সরে যাবে।’
ডিএসসিসির প্রকৌশলীরা বলছেন, কাজী আলাউদ্দীন সড়ক, আগা সাদেক সড়কসহ আশপাশের এলাকার সড়কের পানি সরাতে নতুন করে আরেকটি সংযোগ লাইন তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ওই সংযোগ লাইনের কাজ শেষ হলে এসব এলাকার পানি সহজে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পড়বে। এতে পুরান ঢাকার বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্ষা শুরুর আগেই ডিএনসিসির বিভিন্ন ওয়ার্ডে ড্রেন পরিষ্কার করা হয়েছে। এর পরও অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে কিছু এলাকায় পানি জমেছে। তবে ডিএনসিসির পাঁচ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং ১০টি রেসপন্স টিম দ্রুত ওই সব এলাকা থেকে পানি সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছে।’
পানি সরাতে ডিএনসিসির পাঁচ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী
গতকাল ভোর থেকে ভারি বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পাঁচ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এ ছাড়া ১০টি অঞ্চলে কাজ করছে ১০টি কুইক রেসপন্স টিম (ছজঞ)। গতকাল বিকেল পর্যন্ত প্রধান সড়কগুলো থেকে পানি নিষ্কাশন করা হয়।
জলবদ্ধতা নিরসনে মাঠে ছিল ডিএসসিসি
জলাবদ্ধতা নিরসনে গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও প্রকৌশল বিভাগের ১০০টি টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছে।
ছয় ঘণ্টার বৃষ্টিতে ঢাকায় জলাবদ্ধতা
রাজধানীতে গতকাল টানা ছয় ঘণ্টার অতিবর্ষণে বেশির ভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই বৃষ্টিতে অপ্রত্যাশিত ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। সকালে যারা বাসা থেকে বের হয়েছে, বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়েই তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে হয়েছে। কারওয়ান বাজার, শাহজাহানপুর, মালিবাগ রেলগেট, মৌচাক, মগবাজার, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, তেজকুনীপাড়া, ধানমণ্ডি, ভাটারা, বাড্ডা, পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বর্ডারবাজার, দক্ষিণ মণিপুরের মোল্লাপাড়া, পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর অনেক এলাকার রাস্তায় জমে যায় পানি। কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমর সমান পানি জমে পথচারীদের চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করে।
১. ধানমণ্ডিতে প্রায় কোমর সমান পানিতে সাইকেল কাঁধে নিয়ে সড়ক পার হচ্ছেন এক ব্যক্তি।
২. গ্রিন রোডে তলিয়ে যাওয়া সড়কে রিকশায় করে গন্তব্যে ছুটে চলা।
৩. ফকিরাপুলে ভ্যানে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন কয়েকজন।
৪. আরামবাগে কোমর সমান পানিতে আটকে গেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা।
৫. মিরপুরের কালশীতে তলিয়ে যাওয়া সড়কে চলছে যানবাহন।
৬. তলিয়ে গেছে শান্তিনগরের বেশির ভাগ এলাকা।
৭. আরামবাগে ডুবুডুবু রিকশায় করে যাচ্ছেন কয়েকজন।
ছবি : শেখ হাসান ও মঞ্জুরুল করিম
সম্পর্কিত খবর

এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। দুপুর ২টা থেকে যেকোনো মোবাইলে এসএমএস, শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফল জানতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এই ফল প্রকাশের মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৯ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান হবে।
এ বছর আগের মতো ফলাফল প্রকাশের কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না।
শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার গতকাল বলেছেন, এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তরে আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। দুই মাসের কম সময়ের মধ্যেই সব বোর্ডের ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে। সব বোর্ড নিজেদের মতো করে ফল প্রকাশ করবে।
যেভাবে জানা যাবে ফল : যেকোনো মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানতে মোবাইলের এসএমএস অপশনে গিয়ে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পরীক্ষার বছর লিখে তা ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।
দাখিলের ফল পেতে উধশযরষ লিখে স্পেস দিয়ে গধফ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। কারিগরি বোর্ডের ক্ষেত্রে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ঞবপ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত ওয়েবসাইট http://www.educationboardresults.gov.bd -এর মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল জানা যাবে। আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ইনপুট দিয়ে ও শিক্ষা বোর্ড সিলেক্ট করে ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করে ফল জানা যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন শিক্ষার্থী। দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।
ফল প্রকাশের পর তা পুনর্নিরীক্ষণের সময়ও জানিয়েছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড। ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদন পদ্ধতি শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং টেলিটক বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে আজ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

ভারতীয় জেনারেলের দাবি
চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জোট ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান বলেছেন, চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের প্রতি ঝুঁকছে। এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। গত মঙ্গলবার ভারতের চিন্তক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অনিল চৌহান এ কথাগুলো বলেন।
জেনারেল চৌহান বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট বহিরাগত শক্তিদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে।
জেনারেল চৌহান বলেন, এই প্রবণতা ভারতের জন্য বড় এক সমস্যা। সম্প্রতি চীনের কর্মকর্তারা সে দেশে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন।
চীন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা বহু পুরনো। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তাঁর ভারতে আশ্রয়লাভ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
অনুষ্ঠানে সিডিএস জেনারেল চৌহানকে পাকিস্তান-ভারত সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, ওই সংঘাতে পাকিস্তানকে চীন কতটা ও কিভাবে সমর্থন দিয়েছে, সহায়তা করেছে, তা বলা খুবই কঠিন।
জেনারেল চৌহান বলেন, তবে ঘটনা হলো পাকিস্তান তাদের প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বেশির ভাগটাই চীন থেকে নেয়। সে কারণে পাকিস্তানে চীনের উপস্থিতি থাকার কথা। বিশেষ করে সংঘাত ও সংঘর্ষের সময়। সেটা কতটা ছিল এবং সমর্থন বা সহায়তার চরিত্র কেমন ছিল, তা বলা সহজ নয়।
অপারেশন সিন্দূর নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলার প্রসঙ্গে ভারতের উপসেনাপ্রধান লে. জেনারেল রাহুল আর সিং অবশ্য গত শুক্রবার বলেছিলেন, সংঘাতের সময় পাকিস্তানকে চীন শুধু সাহায্যই করেনি, সংক্ষিপ্ত ওই যুদ্ধকে তারা তাদের অস্ত্রের পরীক্ষাগার করে তুলেছিল।
ওই কর্মকর্তার দাবি, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ওই যুদ্ধে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, সেগুলোর ৮১ শতাংশই চীনের তৈরি। সেসব অস্ত্র প্রকৃত যুদ্ধের সময় কতটা কার্যকর, সে পরীক্ষাও চীন করে ফেলেছে। ওই সংঘাতকে চীন তার অস্ত্রসম্ভারের পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করেছে। সূত্র : ডেকান হেরাল্ড

গণ-অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘন
বিচার আইসিসিতে পাঠানোর অনুরোধ অ্যামনেস্টিরf
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনা আইসিসিতে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এ আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটেনভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠন।
গতকাল বুধবার সংগঠনটির সাউথ এশিয়া বিষয়ক ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসংক্রান্ত একটি পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার বিচার রোম সনদের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
গতকাল বুধবার ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারীদের ওপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি গুলির নির্দেশের একটি ফোনকল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
এর আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের একটি তথ্য-উপাত্তভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ধাতব পেলেটযুক্ত অস্ত্রের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের ব্যবস্থা করা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে একটি ন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব অপরাধীকে জবাবদিহির আওতায় আনা।

সরকারের উদ্যোগেই জুলাই ঘোষণাপত্র, ইতিবাচক বিএনপি
- দায়িত্বে আছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা
দু-এক দিনের মধ্যে মতামত জানাবে বিএনপি
হাসান শিপলু

ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে আবার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রধান কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চাপের মুখে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।
এর আগে কয়েক দফা ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া সম্প্রতি তাদের দলের একজন শীর্ষ নেতার কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত দুই দিন দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হয়।
ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধান উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংশোধন, পুনর্লিখন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করার কথা বলা আছে। এ বিষয়ে বিএনপির আপত্তি রয়েছে। দলটি পরবর্তী সংসদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনের পক্ষে থাকলেও সংবিধান বাতিল করে তা পুনর্লিখনের বিপক্ষে।
সরকারসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার কথা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। খসড়া ঘোষণাপত্র তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এ যৌথ প্রচেষ্টার জন্য আরো মতামত দরকার, যাতে এটি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় এবং জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে।
সরকারের পক্ষ থেকে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘সরকারের খসড়া ঘোষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা মতামত দিয়েছিলাম। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আর যোগাযোগ করা হয়নি। এখন আবার একটি খসড়া দেওয়া হয়েছে। আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাব।’
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হঠাৎ করে এই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আনে। তখন এর প্রভাব কী হতে পারে, তা বুঝতে চাইছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ঘোষণাপত্রের পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্কের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সরকার সর্বদলীয় বৈঠক করে, কিন্তু তাতে ঐকমত্য হয়নি। ওই সময় বিএনপি এত দিন পর ঘোষণাপত্রের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরপর গত ১৬ জানুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে।
সম্প্রতি এনসিপি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আবার সরব হয়ে ওঠে। গত ৪ জুলাই ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ে এক পথসভায় এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই-আগস্টের মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এও বলেন, এই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক ভিত্তি থাকবে। অন্যথায় তাঁদের পক্ষ থেকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ দেওয়া হবে বলে সরকারকে সতর্ক করেন নাহিদ।
সরকারসংশ্লিষ্ট একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেন, ঘোষণাপত্রের মূল অংশীজন হলো বিএনপি ও এনসিপি। তাদের মধ্যে ঐকমত্য হলে দ্রুত ঘোষণাপত্র দেওয়া যাবে।
ঘোষণাপত্রে উল্লেখযোগ্য যা আছে : খসড়া ঘোষণাপত্রে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয় তুলে ধরা হয়। কোন পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়, সে বিষয়টিও উঠে আসে।
এতে ১৯৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের কথাও বলা হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ‘ব্যর্থতা’ এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করার কথাও তুলে ধরা হয়।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে মত প্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করার ফলে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লব সংগঠিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মত প্রকাশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর সিপাহি-জনতার বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আবার ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। মূলত তখন থেকে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদের পথ সুগম হয়। এই বিষয়গুলো যুক্ত করার ফলে ঘোষণাপত্র বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে।
খসড়ায় স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে জনতার অবিরাম সংগ্রাম এবং এর মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান এবং পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সৃষ্টির বিষয়টিও উঠে আসে।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ধারাবাহিক তিনটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
তবে বিএনপি নেতাদের কয়েকজন ২০০৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনকেও এর সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দেন দলীয় ফোরামে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে বলা হয়, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বলে প্রদত্ত সুপ্রিম কোর্টের মতামত অনুসারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা : গত মঙ্গলবার এবং গতকাল বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খসড়া ঘোষণাপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করে কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করে বিএনপি তাদের মতামত দিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিএনপি এ বিষয়ে তাদের মতামত সরকারকে জানাবে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আরো যেসব বিষয়ে আলোচনা : মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপ, নারী আসন, নির্বাচনে পিআর পদ্ধতিসহ সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি। একই সঙ্গে এই শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
জানা গেছে, বৈঠকে সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের প্রতিবেদন তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এরপর সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত দেন বিএনপি নেতারা। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এর মধ্যে সংসদে নারীদের আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে। তবে তাঁরা কিভাবে নির্বাচিত হবেন, সে ব্যাপারে এখনো ঐকমত্য হয়নি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, তাঁরা প্রচলিত পদ্ধতিতে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত করার পক্ষে অবস্থান নেবেন। পাশাপাশি কোনোভাবেই পিআর পদ্ধতি মানবেন না তাঁরা।