ওই কমিটির সঙ্গে গত ৫ মার্চ বেথেলপাড়ায় দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয়। চলমান শান্তি আলোচনার মধ্যে গত ২ এপ্রিল বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে এবং পরদিন ৩ এপ্রিল থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ঝটিকা হামলা চালিয়ে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা, দুটি লাইট মেশিনগানসহ (এলএমজি) ১৪টি অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায় কেএনএফ সদস্যরা। সোনালী ব্যাংক রুমা শাখার ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা। পর পর দুই উপজেলায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পর এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এ ঘটনায় সেখানকার জনমনে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সমন্বিত অভিযান শুরু
কেএনএর সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান বিশেষ অভিযানে গতকাল থেকে যুক্ত হয়েছে সেনাবাহিনী। তাদের নেতৃত্বে বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় সমন্বিত অভিযান চলছে।
গতকাল দুপুরে বান্দরবান সেনানিবাসে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সন্ত্রাসী ঘটনার পর র্যাব, পুলিশ, বিজিবি এবং অন্যান্য বাহিনী অভিযান শুরু করেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও তাদের কাজ করে যাচ্ছে। আজ (রবিবার) থেকে সেনাবাহিনী এই অভিযানে নেতৃত্ব নিয়েছে।
জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, শান্তির সময় সেনাবাহিনী তো মাঠে নামতে পারে না। এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে সন্ত্রাস দমনে সরকারের নির্দেশে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামতে হয়েছে।
এর আগে সেনাপ্রধান গতকাল সকালে বান্দরবান রিজিয়ন সদর দপ্তরে সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে নীতিনির্ধারণী বৈঠক এবং সাধারণ সৈনিকদের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের শান্তির জন্য, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যা যা করণীয়—বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তা করে যাবে এবং ইনশাআল্লাহ আমরা এ অভিযানে সফল হব।’
সাংবাদিকদের জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এর মধ্যে বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলছে। এর কিছুটা দৃশ্যমান, কিছুটা চলছে কৌশলগতভাবে। বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই অভিযানে কাজ করছে। আজ (গতকাল) থেকে সেনাবাহিনীও অভিযানে যুক্ত হয়েছে এবং সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে এই অভিযান চলবে।
তিনি বলেন, ‘জনমনে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করার জন্যই তো আমরা সশরীরে এখানে এসেছি। আ্প্পনারা এরই মধ্যে জেনেছেন, গত রাতে (শনিবার) কিছু সন্ত্রাসীকে ধরতে সক্ষম হয়েছে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এই অভিযানে কিছু অস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আমরা শুরুতে তাদের বিশ্বাস করেছিলাম—শান্তি আলোচনা হচ্ছে, শান্তিপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু শান্তি আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় অশান্তির পথে নেমেছে তারা। এর বিরুদ্ধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। ইনশাআল্লাহ খুব শিগগির জনমনে শান্তি ফিরে আসবে। সেনাপ্রধান হিসেবে আমি বলতে পারি, এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণভাবে সক্ষমতা রয়েছে।’
সর্বাত্মক অভিযান হচ্ছে না কেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা তো কারো বিরুদ্ধে গিয়ে যুদ্ধে নামিনি। আমরা তো কোনো পাড়ার ভেতর গিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্ত্র চালাতে পারব না। সন্ত্রাসীদের অবস্থান সম্পর্কে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে—কোথায় কে লুকিয়ে আছে। এর ভিত্তিতে ধীরে ধীরে অপারেশন প্ল্যান করতে হবে।’
প্রেস ব্রিফিংকালে সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা, সেনা সদরের কর্মকর্তা, চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার ও জিওসি, বান্দরবানের রিজিয়ন কমান্ডারসহ বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
যা বলছেন আইজিপি
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, কুকি-চিন নিয়ে এখন আতঙ্কিত হওয়ার মতো অবস্থা নেই। থানচি ও রুমায় ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনার পর পাহাড়ি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী কেএনএফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।
বিকেলে রাজধানীর সায়েদাবাদ জনপথ মোড়ে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
উদ্ধার হয়নি লুটের টাকা, পুলিশের অস্ত্র
ব্যাংক ডাকাতির সময় লুট হওয়া সাড়ে ১৭ লাখ টাকা এবং নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ও আনসার সদস্যের লুট হওয়া অস্ত্রের বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য দিতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
গতকালও থানচিতে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করেছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল এবং ওষুধ আর জরুরি পণ্যের দোকান ছাড়া বেশির ভাগ দোকান ছিল বন্ধ।
কুকি-চিন নিয়ে ইস্যু খুঁজছে বিএনপি : কাদের
বিএনপি নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য ইস্যু খোঁজে। মিয়ানমার ইস্যুতে তারা ব্যর্থ, এখন কুকি-চিন নিয়ে তারা ইস্যু খুঁজছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমণ্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, কুকি-চিন পুরো পাহাড়ে অশান্তি তৈরি করতে পারবে না। সরকার শক্ত অবস্থান নিয়েছে। এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সার্বিকভাবে পাহাড়ে শান্তি বিঘ্নিত হবে না।

কেএনএফের সংগঠক চেওসাং বমকে বান্দরবান থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র্যাব। ছবি : কালের কণ্ঠ