ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ মহররম ১৪৪৭
সমন্বিত অভিযানের নেতৃত্বে সেনা

কেএনএফের শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও বান্দরবান
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও বান্দরবান
শেয়ার
কেএনএফের শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার
বান্দরবান সেনানিবাসে গতকাল দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। ছবি : কালের কণ্ঠ

বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে সমন্বিত অভিযান চলছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সামরিক শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান বিশেষ অভিযানে গতকাল রবিবার থেকে যুক্ত হয়েছে সেনাবাহিনী।

কেএনএফের শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তারগতকাল দুপুরে বান্দরবান সেনানিবাসে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। সেনাপ্রধান বলেন, কোনো সন্ত্রাসীকে ছাড় দেওয়া হবে না।

চলমান যৌথ অভিযানের মধ্যে গতকাল বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের শ্যারনপাড়ায় একটি বাড়ি থেকে কেএনএফের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ সময় কেএনএফের অন্য এক সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।

গ্রেপ্তার করা একজনের নাম চেওসাং বম (৫৫)। তিনি কেএনএফের আদি সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (কেএনডিও) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং কেএনএফ প্রধান নাথান বমের ঘনিষ্ঠজন বলে দাবি করেছে র‌্যাব।

আটক অন্যজনের নাম বোয়াল লিন বম (৫১)। সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে গতকাল ভোররাতে তাঁদের গ্রেপ্তার হয় বলে জানান র‌্যাব-১৫-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।

গতকাল বিকেলে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে সাংবাদিকদের এসব তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত চেওসাংয়ের বাড়ি থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

লে. কর্নেল সাজ্জাদ বলেন, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে রুমাসহ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি অভিযান চলছে।

যেকোনো সময় আরো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হব।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালের শেষে ও ২০২২ সালের প্রথম দিকে চেওসাং বমের বাড়িতে কেএনএফ প্রধান নাথান বমের সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠী জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার প্রধান সমন্বয়কারী শামীম মাহফুজের বৈঠক হয়েছিল। কেউ কেউ বলছেন, তাঁর বাড়িতেই কেএনএফের সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠী শারক্বিয়ার চুক্তি হয়েছিল। এরপর মাসিক তিন লাখ টাকার চুক্তিতে জঙ্গিদের কেএনএফ সদস্যরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল।

গত বছরের মে মাসে কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়।

ওই কমিটির সঙ্গে গত ৫ মার্চ বেথেলপাড়ায় দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয়। চলমান শান্তি আলোচনার মধ্যে গত ২ এপ্রিল বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে এবং পরদিন ৩ এপ্রিল থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ঝটিকা হামলা চালিয়ে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা, দুটি লাইট মেশিনগানসহ (এলএমজি) ১৪টি অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায় কেএনএফ সদস্যরা। সোনালী ব্যাংক রুমা শাখার ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা। পর পর দুই উপজেলায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পর এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এ ঘটনায় সেখানকার জনমনে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে।

 

সমন্বিত অভিযান শুরু

কেএনএর সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান বিশেষ অভিযানে গতকাল থেকে যুক্ত হয়েছে সেনাবাহিনী। তাদের নেতৃত্বে বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় সমন্বিত অভিযান চলছে।

গতকাল দুপুরে বান্দরবান সেনানিবাসে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সন্ত্রাসী ঘটনার পর র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি এবং অন্যান্য বাহিনী অভিযান শুরু করেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও তাদের কাজ করে যাচ্ছে। আজ (রবিবার) থেকে সেনাবাহিনী এই অভিযানে নেতৃত্ব নিয়েছে।

জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, শান্তির সময় সেনাবাহিনী তো মাঠে নামতে পারে না। এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে সন্ত্রাস দমনে সরকারের নির্দেশে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামতে হয়েছে।

এর আগে সেনাপ্রধান গতকাল সকালে বান্দরবান রিজিয়ন সদর দপ্তরে সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে নীতিনির্ধারণী বৈঠক এবং সাধারণ সৈনিকদের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।

সেনাপ্রধান বলেন, আমাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের শান্তির জন্য, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যা যা করণীয়বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তা করে যাবে এবং ইনশাআল্লাহ আমরা এ অভিযানে সফল হব।

সাংবাদিকদের জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এর মধ্যে বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলছে। এর কিছুটা দৃশ্যমান, কিছুটা চলছে কৌশলগতভাবে। বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই অভিযানে কাজ করছে। আজ (গতকাল) থেকে সেনাবাহিনীও অভিযানে যুক্ত হয়েছে এবং সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে এই অভিযান চলবে।

তিনি বলেন, জনমনে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করার জন্যই তো আমরা সশরীরে এখানে এসেছি। আ্প্পনারা এরই মধ্যে জেনেছেন, গত রাতে (শনিবার) কিছু সন্ত্রাসীকে ধরতে সক্ষম হয়েছে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এই অভিযানে কিছু অস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আমরা শুরুতে তাদের বিশ্বাস করেছিলামশান্তি আলোচনা হচ্ছে, শান্তিপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু শান্তি আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় অশান্তির পথে নেমেছে তারা। এর বিরুদ্ধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। ইনশাআল্লাহ খুব শিগগির জনমনে শান্তি ফিরে আসবে। সেনাপ্রধান হিসেবে আমি বলতে পারি, এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণভাবে সক্ষমতা রয়েছে।

সর্বাত্মক অভিযান হচ্ছে না কেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, আমরা তো কারো বিরুদ্ধে গিয়ে যুদ্ধে নামিনি। আমরা তো কোনো পাড়ার ভেতর গিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্ত্র চালাতে পারব না। সন্ত্রাসীদের অবস্থান সম্পর্কে আমাদের নিশ্চিত হতে হবেকোথায় কে লুকিয়ে আছে। এর ভিত্তিতে ধীরে ধীরে অপারেশন প্ল্যান করতে হবে।

প্রেস ব্রিফিংকালে সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা, সেনা সদরের কর্মকর্তা, চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার ও জিওসি, বান্দরবানের রিজিয়ন কমান্ডারসহ বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

যা বলছেন আইজিপি

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, কুকি-চিন নিয়ে এখন আতঙ্কিত হওয়ার মতো অবস্থা নেই। থানচি ও রুমায় ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনার পর পাহাড়ি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী কেএনএফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।

বিকেলে রাজধানীর সায়েদাবাদ জনপথ মোড়ে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

 

উদ্ধার হয়নি লুটের টাকা, পুলিশের অস্ত্র

ব্যাংক ডাকাতির সময় লুট হওয়া সাড়ে ১৭ লাখ টাকা এবং নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ও আনসার সদস্যের লুট হওয়া অস্ত্রের বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য দিতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।

গতকালও থানচিতে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করেছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল এবং ওষুধ আর জরুরি পণ্যের দোকান ছাড়া বেশির ভাগ দোকান ছিল বন্ধ।

 

কুকি-চিন নিয়ে ইস্যু খুঁজছে বিএনপি : কাদের

বিএনপি নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য ইস্যু খোঁজে। মিয়ানমার ইস্যুতে তারা ব্যর্থ, এখন কুকি-চিন নিয়ে তারা ইস্যু খুঁজছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমণ্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, কুকি-চিন পুরো পাহাড়ে অশান্তি তৈরি করতে পারবে না। সরকার শক্ত অবস্থান নিয়েছে। এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সার্বিকভাবে পাহাড়ে শান্তি বিঘ্নিত হবে না।

কেএনএফের শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার

কেএনএফের সংগঠক চেওসাং বমকে           বান্দরবান থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র‌্যাব।    ছবি : কালের কণ্ঠ

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

স্থায়ীভাবে বহিষ্কারে কারণ দর্শানোর নোটিশ

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতার দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
শেয়ার
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতার দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি

চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম নগর শাখার সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিনের পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। স্থায়ীভাবে কেন বহিষ্কার করা হবে না, ব্যাখ্যা চেয়ে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে নিজাম উদ্দিনকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রামে চাঁদা না পেয়ে মব তৈরি করে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কর্মচারী ও জামায়াত নেতা নওশেদ জামালকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন নিজাম উদ্দিন।

গতকাল শনিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মঈনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক শোকজ নোটিশে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রশিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনামের নির্দেশনায় ওই শোকজ নোটিশ দেওয়া হলো।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগসংগঠনের নীতিমালা ও শৃঙ্খলা-পরিপন্থী কিছু কার্যকলাপে জড়িত হয়েছেন। একজন দায়িত্বশীল পদধারী সদস্যসচিব হিসেবে এ ধরনের কর্মকাণ্ড সংগঠনের ভাবমূর্তি ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এই প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিজাম উদ্দিনের সংগঠনের সদস্যসচিব পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করার কথা উল্লেখ করা হয়।

নোটিশে একই সঙ্গে নিজাম উদ্দিনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে কেন বহিষ্কার করা হবে নাসে বিষয়ে একটি লিখিত ব্যাখ্যা আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলে সংগঠন নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে নিজামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম পুলিশের কাছে আবেদন করেন এক নারী।

আবেদনে ওই নারী উল্লেখ করেন, দুই কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে তাঁর স্বামীকে মিথ্যা মামলায় পুলিশে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম নগরের সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন।

গতকাল সকালে ওই আবেদন করেন রিয়াজুল জান্নাত নামের ওই নারী। তিনি নগরীর বাগমনিরাম দক্ষিণ এলাকার বাসিন্দা নওশেদ জামালের স্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার নওশেদ জামালকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানার পুলিশ।

আবেদনে রিয়াজুল জান্নাত উল্লেখ করেনকিছুদিন ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে নিজাম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি তাঁর স্বামীর কাছে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন।

চাঁদা না পেয়ে তাঁর স্বামীকে ফাঁসানো হয়।

আবেদনের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী এই নেতাকে নিয়ে জনমনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

এদিকে সংগঠনের কারণ দর্শানোর নোটিশটি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বৈষম্যবিরোধী নেতা নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, যথাসময়ে আমার জবাব কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেব।

মন্তব্য
দেশে ফেরত তিনজন কারাগারে

জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহায়তা করবে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহায়তা করবে বাংলাদেশ

উগ্র জঙ্গি আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে চলমান আইনি প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। গতকাল শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উগ্র জঙ্গি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি ৩৬ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি জানার পর কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পরিচয় ও তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কিত তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে।

এতে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে মালয়েশিয়ার আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

অন্যদের তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চলমান আইনি প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রবাসী বাংলাদেশিদের যেখানে প্রয়োজন, সেখানে প্রয়োজনীয় সমর্থন দেবে।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ, সহিংস উগ্রবাদ এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান পুনরাবৃত্তি করছে এবং এ বিষয়ে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।

মালয়েশিয়ায় জঙ্গিসংশ্লিষ্টতায় গ্রেপ্তার তিনজন কারাগারে : মালয়েশিয়ায় জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক হওয়ার পর দেশে ফেরা তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গত শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম মিজবাহ উর রহমানের আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গতকাল শনিবার ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের (নন জিআর) উপপরিদর্শক মোস্তফা হোসেন কালের কণ্ঠকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

আসামিরা হলেন জাহিদ, নজরুল ও রেদোয়ান।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৫৪ ধারায় তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর বিমানবন্দর থানা পুলিশ তাঁদের কারাগারে আটক আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এর আগে শুক্রবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জানান, জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩৬ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মালয়েশিয়ায় জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার বাংলাদেশিদের মধ্যে তিনজনকে দেশে পাঠানো হয়। তাঁরা সিরিয়া ও বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেটস বা আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোকে অর্থ পাঠাতেন।

আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে এবং বাকি ১৬ জন এখনো পুলিশি হেফাজতে বলেও জানান দেশটির আইজিপি। তাঁর সন্দেহ, পুরো নেটওয়ার্কে ১০০ থেকে ১৫০ জনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

দেশটির আইজিপি বলেন, ‌‌‘তাঁরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে জঙ্গি মতবাদও প্রচার করতেন এবং আরো বাংলাদেশি শ্রমিকদের এই চক্রে যুক্ত করার চেষ্টা করতেন।

মালয়েশিয়া পুলিশের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, আটক বাংলাদেশিরা আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস ও ই-ওয়ালেটে ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতেন। এই নেটওয়ার্কটি সিরিয়া ও বাংলাদেশে আইএসের সেলগুলোকে নিয়মিতভাবে সহায়তা করত।

এর আগে ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে আইএস সংশ্লিষ্ট এক বিস্ফোরণের পর দেশটির সরকার জঙ্গি তৎপরতা দমনে কঠোর অবস্থান নেয়। এর পর থেকে শত শত সন্দেহভাজনকে আটক করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।

মন্তব্য

ছুটির ঘোষণা

শেয়ার
ছুটির ঘোষণা

আজ ৬ জুলাই রবিবার পবিত্র আশুরা উপলক্ষে কালের কণ্ঠের সব বিভাগ বন্ধ থাকবে। তাই আগামীকাল সোমবার পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে কালের কণ্ঠ অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া চালু থাকবে। সম্পাদক

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
এআইটি প্রত্যাহার দাবি বিটিএমএর

নীলনকশায় ধ্বংস করা হচ্ছে দেশের বস্ত্রশিল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
নীলনকশায়  ধ্বংস করা হচ্ছে দেশের বস্ত্রশিল্প

প্রতিবেশী দেশের শিল্প ও কর্মসংস্থান শক্তিশালী করতে দেশের শিল্পকে রুগ্ণ করা হচ্ছে। এমন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্র খাতের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। সরকার সম্প্রতি তুলা আমদানিতে নতুন ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করার প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।

এ সময় বক্তারা এটা ভারতের নীলনকশাএমন অভিযোগ তুলে বলেন, আগাম কর বাস্তবায়ন করা হলে দেশের সুতা ও বস্ত্রকল সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস হবে।

দেউলিয়া হবে দেশের বস্ত্র খাত। আর এটা হবে ভারতের খোলাবাজার। এই নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে ভারত ও বিগত সরকারের দোসররা বসে আছে। বক্তারা জানান, এই খাতের বিনিয়োগের ২২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৮ বিলিয়নই ব্যাংকঋণ।

গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে এই বিশেষ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিটিএমএর পরিচালক মো. খোরশেদ আলম, রাজিব হায়দার, শহীদ আলম, আবুদুল্লাহ আল মামুন, মো. সালেহউজ্জামান, বাদশা গ্রুপের বাদশা মিয়া, বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএ) উপদেষ্টা আইয়ুব ভূইয়া, বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হোসেন মেহমুদ, নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অমল পোদ্দার।

বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ২ শতাংশ কর নির্ধারণ প্রকৃতপক্ষে বছর শেষে ৫০ শতাংশ কর দিতে হয়। একদিকে ১৮ শতাংশ ব্যাংকঋণের সুদ, আবার অন্যদিকে ইনকাম ট্যাক্সের নামে ব্যবসার পুঁজি থেকে ৫০ শতাংশ কেটে নিলে কিভাবে বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তা কারখানা চালু রাখবে।

এতে দেশের সুতাকলগুলো তার প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাচ্ছে। এতে সরকারের কি লাভ?

তিনি বলেন, এত দিন শুনেছি সরকার বড় বড় প্রকল্পে হাত দেবে না; এখন শুনছি ভোলায় ব্রিজসহ বিভিন্ন খাতে বড় বড় প্রকল্প হাতে নেবে। সার্বিকভাবে ভালো নেই দেশের বস্ত্র খাত। এ সময় একতরফা সিদ্ধান্ত না নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের আশা করেন তিনি। বলেন, আমাদের বিশ্বাস সরকার বিষয়টা আমলে নেবে এবং এই আগাম কর প্রত্যাহার করবে।

রাজিব হায়দার বলেন, ২ শতাংশ আগাম কর আরোপ করে সরকার বস্ত্রশিল্পকে ধ্বংসের জন্য কফিনের শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। এর ফলে দেশীয় গণমাধ্যমের চেয়ে প্রতিবেশী দেশের মিডিয়াগুলোতে ব্যাপক প্রচার হচ্ছে। তারা বেশ খুশি। কারণ তারা জানে, এর বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।

মো. সালেহউজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের সুতাকলগুলো বন্ধের পাঁয়তারা ছলছে। প্রতিবেশী দেশ এই খাতে ৪০ শতাংশ প্রণোদনা দিলেও বাংলাদেশ ২৫ শতাংশ থেকে ১.২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। তিনি বলেন, এই সংকট থেকে বের হওয়া না গেলে সংকটে পড়বে দেশের অর্থনীতি।

বিটিএমএর আরেক পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, দেশের বস্ত্রকল ধ্বংসের পরিকল্পনা নতুন নয়। এটি শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগেই। এ ধরনের নানা ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানান তিনি।

বিটিএমএ পরিচালক হোসেন মেহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের কারণে ব্যবসায়ীরা দেশটি থেকে তুলা আমদানি বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হলো। ফলে ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি বাড়ানোর পথে যেতে পারবেন না।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ