ক্যান্সার আক্রান্ত স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে ২২ শতক জমি ও গরু বিক্রি করেন মিনতি রানী। চিকিৎসার প্রথম স্তর পার হওয়ার আগে আবার অর্থসংকট দেখা দেয়। অবশেষে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয় তাঁর স্বামী গোবিন্দ চন্দ্রের। এখন মিনতি রানী নিজেও ক্যান্সারের রোগী।
কুড়িগ্রামে দুই ইউনিয়নে সমীক্ষা
চিকিৎসা সংকটে অর্থ, জীবন দুই-ই যাচ্ছে
আব্দুল খালেক ফারুক, কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা মিনতি রানী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আল্লাহ হায়াত না দিলে কিছু করার নাই। স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে তো সব বেচে দিয়েছি। এখন ভিটেটুকু ছাড়া কিছুই নাই।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ও হলোখানা—এই দুটি ইউনিয়নে জীবিত ৫১ এবং মৃত ১০৫ জন ক্যান্সার রোগীর ওপর একটি ছোট সমীক্ষা পরিচালনা করেছে কালের কণ্ঠ। সমীক্ষায় মৃতদের চিকিৎসার কাগজপত্র পর্যালোচনা করা হয় এবং স্বজনদের সঙ্গে কথা বলা হয়।
সমীক্ষায় দেখা যায়, এই দুই ইউনিয়নের জীবিত ও মৃত রোগীদের সর্বোচ্চ প্রায় ২৭ শতাংশ হেডনেক বা মুখগহ্বর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। ১৭.২ শতাংশ ব্লাড ক্যান্সার, ১৪.১০ শতাংশ পাকস্থলীর ক্যান্সার, ৮.৩৩ শতাংশ জরায়ু ক্যান্সার, ৫.১২ শতাংশ স্তন ক্যান্সার এবং ৫.৬ শতাংশ খাদ্যনালির ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে।
দুই ইউনিয়নের ১৫৬ রোগীর মধ্যে ১২০ জন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তাদের কেউ গড়ে দুইবারের বেশি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যায়নি। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ১১৯ জন। এই রোগীদের মাত্র ৪৫ জন দ্বিতীয়বার চিকিৎসার জন্য গেছে। দেশের বাইরে চিকিৎসা নেওয়া আটজন রোগীর মধ্যে চারজন দ্বিতীয়বার ভারতে চিকিৎসার জন্য যায়।
চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ওপর নির্ভর করেছে প্রায় সবাই। ব্যাংক ও এনজিওর ঋণ, জমি বিক্রি বা বন্ধক, গবাদি পশু বিক্রিসহ নানাভাবে অর্থ জোগাড় করে চিকিৎসার খরচ মিটিয়েছে অনেক রোগী। সমীক্ষার তথ্য মতে, শতকরা ৪৪.৮৭ ভাগ রোগী ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে, ৩০.৭৭ ভাগ জমি বিক্রি করেছে, ২১.৭৯ ভাগ জমি বন্ধক এবং ৩৭.১৭ ভাগ গবাদি পশু বিক্রি করেছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে সহায়তা পেয়েছে ১২ জন, যা মোট রোগীর ৭ শতাংশ।
চলতি বছরের ১ আগস্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সমীক্ষা কার্যক্রম চলে। সমীক্ষায় ১৭ হাজার ৩৯০টি পরিবারের মধ্যে মোট ১৫৬ জন ক্যান্সার রোগীর বিষয়ে ১৭টি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—রোগীর বয়স, ক্যান্সারের ধরন, চিকিৎসা গ্রহণের সময়কাল, আর্থিক অবস্থা, হাসপাতালের নাম ইত্যাদি।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-ই মুর্শেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা নিয়ে কোনো পরিসংখ্যান সংরক্ষণ করা না হলেও সার্বিকভাবে প্রতীয়মান হয়, জেলায় ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জেলায় ক্যান্সারের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মেডিক্যাল অফিসার ও কনসালট্যান্টরা সন্দেহভাজন রোগীদের রংপুরের চিকিৎসকদের কাছে রেফার করেন।
রংপুর বিভাগে ক্যান্সার হাসপাতাল নেই
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার কেন্দ্র বা হাসপাতাল থাকা প্রয়োজন, যেখানে ক্যান্সার শনাক্তসহ ক্যান্সার চিকিৎসার তিন ধরনের চিকিৎসা (কেমোথেরাপি, সার্জারি ও বিকিরণ চিকিৎসা) থাকতে হবে। উত্তরের বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষের বসবাস হলেও এই অঞ্চলে কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল নেই।
এখন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গাইনি, মেডিসিন, নাক-কান-গলাসহ বিভিন্ন বিভাগে ক্যান্সার রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও ঢাকার ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটে। এতে যাতায়াত, ওষুধ ও চিকিৎসা খরচ মিলিয়ে রোগীর খরচ আরো বেড়ে যায়। খরচ বহন করতে না পেরে অনেকে নিজেকে মৃত্যুর হাতে সঁপে দেয়।
গত ১১ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ক্যান্সার রোগ নির্ণয়ের বায়োপসি পরীক্ষাও এই হাসপাতালে হয় না। চিকিৎসকরা ঢাকায় এই পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠান। রেডিওথেরাপি দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের যেতে হচ্ছে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগে গিয়ে কথা হয় নীলফামারী জেলার দুহুলি শান্তিনগর গ্রাম থেকে আসা রোগী মোমেনুল হকের সঙ্গে। তিসি পেশায় রিকশাচালক। তাঁর গলায় ক্যান্সার ধরা পড়েছে। অপারেশনের পর চারটি কেমোথরাপি প্রদানের পরামর্শ দেওয়া হলেও টাকার অভাবে একটিও দিতে পারেননি।
পাশের গাইনি বিভাগে ভর্তি রংপুরের মমিনপুর গ্রামের গৃহবধূ আনোয়ারা বেগম। তাঁর জরায়ুর ক্যান্সার। এ পর্যন্ত তিনি আটটি কেমোথেরাপি নিয়েছেন। চিকিৎসায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন আর ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই। হাসপাতাল থেকেও বলা হয়েছে, ওষুধের সরবরাহ নেই।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুছ আলী বলেন, হাসপাতালে রেডিওথেরাপির মেশিনটি (কোবাল্ট ৬০ আইসোটোপ) ২০১৪ সাল থেকে নষ্ট। এটি মেরামতযোগ্যও নয়। নতুন করে মেশিন সরবরাহ পাওয়া যায়নি, আর মেশিন স্থাপনের জন্য উপযুক্ত ঘরও নেই। তিনি জানান, বর্তমানে ৪৬০ শয্যাবিশিষ্ট ক্যান্সার, কিডনি ও কার্ডিয়াক বিশেষায়িত হাসপাতালের নির্মাণকাজ চলছে। কাজ শেষ হলে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় অনেক অগ্রগতি হবে। ব্যয় ও দুর্ভোগ কমবে রোগীদের।
কেন বাড়ছে ক্যান্সার
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. স্বপন কুমার নাথ কালের কণ্ঠকে বলেন, নারীদের ক্ষেত্রে জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার আর পুরুষদের ক্ষেত্রে পাকস্থলী, ফুসফুস ও হেডনেক ক্যান্সারের রোগী বেশি পাওয়া যায়। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোগী রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে।
স্বপন কুমার নাথ বলেন, রংপুর অঞ্চলে অ্যালকোহলজনিত ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী কম। তবে গুল, জর্দা বা তামাকজাতীয় পণ্য গ্রহণের প্রবণতা এই অঞ্চলে বেশি হওয়ায় ফুসফুসে ও মুখগহ্বর ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এ ছাড়া ভেজাল খাদ্যগ্রহণের কারণে অনেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি জানান, অনকোলজি সার্জনের অভাবে ঠিকমতো সার্জারি না হওয়া, রোগ লুকানো এবং সহজে মেনে নিতে না পারায় রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয়। এসব কারণে ক্যান্সারের চিকিৎসায় সফলতার হার কম।
দুই-তৃতীয়াংশ রোগী বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করে
দর্জির কাজ করে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া দুই মেয়ের খরচ ও সংসারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন সুরাইয়া বেগম। তাঁর বাড়ি সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের খালিসাকালোয়া গ্রামে। তাঁর স্বামী শহিদুল ইসলাম চাকরি করতেন আনসার ও ভিডিপিতে। ২০১৬ সালে বগলে টিউমার অপারেশন করাতে গিয়ে শনাক্ত হয় ক্যান্সার। চারটি কেমোথেরাপি দেওয়ার পরামর্শ দিলেও তখন ভয় আর অবহেলায় নেননি। ২০২০ সালে করোনাকালীন লকডাউনের সময় রোগীর অবস্থার অবনতি হলে রংপুরে নিয়ে গিয়ে ১২টি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। তবে তাঁকে বাঁচানো যায়নি। চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে জমি বিক্রি ও বন্ধক রাখেন এবং এনজিও থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নেন। এখনো টানছেন সেই ঋণের ঘানি।
সেন্টার ফর ক্যান্সার এপিডেমিওলজি, প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় দেশের দুই-তৃতীয়াংশ রোগী চিকিৎসার বাইরে থাকে। তারা বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। যারা শনাক্ত হয় তাদেরও চিকিৎসা দেওয়ার মতো লোকবল ও চিকিৎসার যন্ত্রপাতি আমাদের নেই।’
ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে দ্য গ্লোবাল ক্যান্সার অবজারভেটরি ২০২০ সালের তথ্য মতে, দেশে প্রতিবছর এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আর ক্যান্সারে প্রতিবছর মারা যায় এত লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলা হয়, প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ১০০ জনের বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে।
১৩-১৪ শতাংশ পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে
ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে গবেষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট। ২০১৬ সালে পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, চিকিৎসকের ফি, পরীক্ষা, অপারেশন, থেরাপি, রোগী ও রোগীর স্বজনদের যাতায়াত, থাকা-খাওয়ার খরচসহ রোগীপ্রতি চিকিৎসা ব্যয় হয় ছয় লাখ ৩৯ হাজার ৮৩৫ টাকা। বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী তা প্রায় ১০ লাখে গিয়ে ঠেকেছে। এই বিপুল অর্থ ব্যয় করতে গিয়ে অনেক পরিবারই অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। তাই ক্যান্সারের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রোগীদের আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কুড়িগ্রামের হলোখানা ইউনিয়নের দুর্গম চর খামার হলোখানা গ্রামের বাসিন্দা আকলিমা খাতুনের স্বামী হাছেন আলী ঢাকায় রিকশা চালাতেন। দুই বছর আগে তাঁর ফুসফুসে ক্যান্সার শনাক্ত হয়। ৭০ হাজার টাকায় ১২ শতক জমি বন্ধক রাখা ছাড়াও এনজিও আশা থেকে ৮০ হাজার টাকা এবং গরু বিক্রির ৩৭ হাজার টাকাসহ এক লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ করেও বাঁচাতে পারেননি স্বামীকে। শুধু তাই নয়, মাদরাসাপড়ুয়া ছেলে আব্দুল আলিম উচ্চতর শ্রেণিতে ভর্তির টাকা জোগাতে ঢাকায় নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যান। ৯ তলা বিল্ডিংয়ে কাজ করার সময় পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাওয়া দুই লাখ টাকাও চলে যায় স্বামীর চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে। এখন পাঁচ বছরের প্রতিবন্ধী মেয়েসহ দুটি ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে ভাঙা চালাঘরে থাকেন। দুই বেলা খাবার জোটানোই কঠিন হয়ে গেছে নিঃস্ব হওয়া এই পরিবারের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিকস বিভাগের শিক্ষক ও ইউনিভার্সেল রিসার্চ কেয়ার লিমিটেডের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর আব্দুল হামিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ পরিবার ক্যান্সারের কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায়। তাই ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসায় একটি সরকারি তহবিল গঠন করা যেতে পারে। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে মাত্র ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হলেও ক্যান্সারের মতো রোগের ব্যয়বহুল চিকিৎসায় তা খুব কাজে আসে না। তাই এই টাকার পরিমাণ বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য রোগীর যে বিপুল ব্যয় হয়, তার কিছুটা সরকার বহন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ওপর লেভি আদায় করে ফান্ড গঠন করা যায়। এ ছাড়া ব্যয় কমাতে ছয় মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে মতামত দেন তিনি।
সম্পর্কিত খবর

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদ
সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকর্মী
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’র ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীদের অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার দুপুরে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিল শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে শেষ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর ১টার দিকে ধানমণ্ডির আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবে উপস্থিত হয়ে ১০ মিনিট অবস্থান করেন। এরপর তাঁরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে যান।
এ সময় হাসপাতাল ও আশপাশে থাকা বিএনপির ব্যানার ছিঁড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানার পদদলিত করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পর অনেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বিএনপির প্ল্যাটফর্মে ঢুকে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে।
রাজনৈতিক পরিচয় : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভের বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া ‘আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থী’ ইয়ামিনকে তাঁর সহপাঠীরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। আগেও তাঁকে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে।
নেপথ্যে রাজনৈতিক হিসাব : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক দলগুলোর ভিত নষ্ট করার একটি অপচেষ্টা। এর ফলে আবারও ১/১১-এর মতো সংকট সৃষ্টি হতে পারে। রাজনৈতিক দলে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। সোহাগ, যিনি আগে হাজি সেলিমের সঙ্গে ছিলেন, এখন বিএনপির কর্মী। বিএনপি যদি নিজেকে রক্ষা করতে চায়, তাহলে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদারের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে ডিএমপি উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওই মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের উপস্থিতির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে নিষিদ্ধ যেকোনো দলের কার্যক্রম রুখে দিতে পুলিশ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। এর আগেও রাজধানীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে যারা ঝটিকা মিছিল করেছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এই বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখব।’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলীল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যারা গুপ্ত রাজনীতি করে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চায় তারা জল ঘোলা করতে এমন কর্মকাণ্ড করছে। তারা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তিমূলক ভিডিও করেছে। তাদের ব্যানার পদদলিত করে আগুন জ্বালিয়েছে। যারা স্বৈরাচারের আমলে তাদের লুঙ্গির নিচে ছিল, তারাই এখন ঘোলা জলে মাছ শিকার করা চেষ্টা করছে। জনগণের কাছে তাদের অবস্থান না থাকার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পেছনে থেকে গুপ্ত হামলা করার চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, “পুলিশের তদন্তে এসেছে ‘ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব’ থেকে সোহাগ হত্যাকাণ্ড। এর পরও আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছি, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। একই সঙ্গে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জোর দাবিও জানিয়েছি।”

বড় ধরনের সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি : প্রেস উইং
১০ মাসে ৩৫৫৪ খুন, ৪১০৫ ধর্ষণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত ১০ মাসে (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত) দেশে তিন হাজার ৫৫৪ জন খুনের ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে ডাকাতি হয়েছে ৬১০টি, দস্যুতা এক হাজার ৫২৬টি, দাঙ্গা ৯৭টি, ধর্ষণ চার হাজার ১০৫টি, এসিড নিক্ষেপ পাঁচটি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১২ হাজার ৭২৬টি, অপহরণ ৮১৯টি, সিঁধেল চুরি দুই হাজার ৩০৪টি, চুরি সাত হাজার ৩১০টি এবং এই সময়ে রুজুকৃত মামলার সংখ্যা এক লাখ ৪৪ হাজার ৯৫৫টি।
গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ১০ মাসের অপরাধ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এসব পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।
অপরাধ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৩৬৭টি, খুন হয়েছে এক হাজার ৯৩৩টি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৭৪৪টি। এ সময় নারী নির্যাতন ছয় হাজার ১৪৪টি এবং শিশু নির্যাতনের দুই হাজার ১৫৯টি ঘটনা ঘটেছে।
এর আগের বছর ২০২৪ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৪৯০টি, খুন চার হাজার ১১৪টি, ধর্ষণ চার হাজার ৩৯৪টি, নারী নির্যাতন ১০ হাজার ১৯৮টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৯৬৪টি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি বছর দেশে অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরে জনমনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সরকারি অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছর বড় ধরনের অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে—এমন দাবি সঠিক নয়। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে বড় ধরনের অপরাধের প্রবণতা স্থিতিশীল রয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পরিসংখ্যানে বড় ধরনের অপরাধের দ্রুত বাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। বাস্তবে বেশির ভাগ গুরুতর অপরাধের হার কমছে বা একই পর্যায়ে রয়েছে।
প্রেস উইং নাগরিকদের প্রতি সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে হবে। কারণ অপরাধের হার মোটামুটি স্থিতিশীল, যাতে বোঝা যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

মা-সন্তানসহ ৫ জেলায় সাতজনকে হত্যা
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই সন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে শিশুকে হত্যা করে ঘরে লুকিয়ে রেখেছে সত্মা। এ নিয়ে দেশের পাঁচ জেলায় সাতজনকে খুন করা হয়েছে। আর তিন জেলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চারজনের লাশ।
ভালুকা (ময়মনসিংহ) : পৌর এলাকার পনাশাইল রোডে এক ভাড়া বাসায় মা ও দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলো নেত্রকোনার কেন্দুয়ার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ময়না বেগম (২৫), মেয়ে রাইসা (৭) ও ছেলে নীরব (২)।
স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম এখানে ভাড়া থেকে ভালুকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। রবিবার রাত ৮টার সময় তিনি কর্মস্থলে যান এবং গতকাল সকালে ফিরে বাসার বারান্দার দরজা তালাবদ্ধ দেখেন।
রফিকুলের ভাই নজরুল ইসলাম একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে থাকেন। নিজ এলাকার একটি হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামি নজরুল ভালুকায় অটো চালাতেন। ঘটনার পর থেকে তিনি নিরুদ্দেশ, তাঁর মোবাইল ফোনটিও বন্ধ।
সিরাজগঞ্জ : কামারখন্দ উপজেলায় সাত বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে ঘরে লুকিয়ে রেখে এক সত্মা পালিয়ে যান। রবিবার রাত ১০টার দিকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ওই রাতেই সত্মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত শিশু হাজেরা খাতুন উপজেলার কুটিরচর এলাকার হারুনার রশিদের মেয়ে। শিশুটির দাদি মনোয়ারা খাতুন জানান, রবিবার দুপুরে শিশু হাজেরা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
এদিকে সিরাজগঞ্জ সদর ও তাড়াশ উপজেলা থেকে গতকাল সকালে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদরে উদ্ধার হওয়া আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সদর থানার এসআই শফিউল আলম জানান, তাঁর মাথা ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে।
অন্যদিকে তাড়াশে নিহত সেলুনকর্মী শান্ত (২০) ঈশ্বরপুর গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে। তাড়াশ থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, সকালে নিজ ঘর থেকে শান্তর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বারহাট্টা থানার ওসি কামরুল হাসান জানান, আহাদুলের সঙ্গে প্রতিবেশী মনহর আলী ও তাঁর চার ছেলে আলমগীর, অনিক, নির্ঝর ও বাবুর জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল। তার জেরেই ওরা ঢাকা থেকে এসে হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
চট্টগ্রাম : পতেঙ্গা থানার কাটগড় এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে ছুরিকাঘাতে ফেরদৌসী আক্তার নামের এক নারী খুন হয়েছেন। রবিবার রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ফেরদৌসী এলাকার লোকমান হোসেনের স্ত্রী। নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে ফেরদৌসীর দেবর তাঁর ঘাড়, পিঠ ও পেটে ছুরিকাঘাত করে।
নিহতের ভাই মামুন খান বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে আমার বোনকে তাঁর স্বামী, শাশুড়ি পরিবারের লোকেরা নির্যাতন করে আসছিল। আমরা একটি সিসিটিভির ফুটেজে দেখেছি, লোকমানের বড় ভাই সোলেমান ও ছোট ভাই রনির হাতে ছুরি। আমরা খুনিদের বিচার চাই।’
ঘটনার পর ফেরদৌসীর স্বামী লোকমানকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। শ্বশুরবাড়ির বাকি লোকজন পলাতক।
বারহাট্টা (নেত্রকোনা) : জমিসংক্রান্ত বিরোধে আহাদুল মিয়া (২৬) নামের এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল দুপুরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে রবিবার রাতে উপজেলার বাউশী ইউনিয়নের শাসনউড়া গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। আহাদুল মিয়া ওই গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার ছেলে।
নরসিংদী : এক মাদক কারবারির বাড়ি থেকে সাজিদ হোসেন (২২) নামে এক তরুণের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের বাগহাটা টেকপাড়া গ্রামে দুলালের বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ বলছে, নিহত যুবকের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। আবার যার বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে তারাও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তবে নিহতর পরিবারের অভিযোগ, মাদক ব্যবসায়ী দুলালের বাড়িতে নির্যাতন করে সাজিদকে হত্যা করা হয়েছে।
পাবনা : পুকুরে ভাসমান অবস্থায় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে শহরের লাইব্রেরি বাজার এলাকার কলাবাগান কলোনির মিঠুর পুকুর থেকে এ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে আনুমানিক বয়স হবে ৪০ বছর।
গাজীপুর : নিখোঁজের ছয় দিন পর এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নাবিলা কানিজ সাবা ধীরাশ্রমের দাখিনখান এলাকার নাসির মিয়ার মেয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার শিশুটি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পেয়ে রাতে শিশুটির মা খাদিজা বেগম সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গতকাল বাড়ির পাশে ঝোপের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে স্থানীয়রা বস্তাটির সন্ধান পায়। বস্তা খুলে সাবার গলিত লাশ পাওয়া যায়।

ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক আয়কর গোয়েন্দা
হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ১৮৩ ভিআইপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

যাত্রা শুরুর মাত্র সাত মাসের মধ্যেই কর ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক হয়ে উঠেছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। এ সময় ১৮৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি উদঘাটন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বাকি টাকা আদায়ের প্রচেষ্টাও চলছে বলে জানা গেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, এক হাজার ৭৮৮টি বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও অর্থপাচার মামলা তদন্ত করছে আয়কর গোয়েন্দা। এঁদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিক্ষক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব পর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি রয়েছেন। এনবিআরের অধীন ৪১টি কর অঞ্চল ও দেশের ৬৪ জেলার করদাতারাও এ কার্যক্রমের আওতায় রয়েছেন।
এয়ার টিকিট সিন্ডিকেট, পরিবহন ব্যবসায়ী, শেয়ারবাজার, আমদানি ও মজুদকারী, চালান জালিয়াতকারী, জুয়াড়ি, ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি কমেছে জনদুর্ভোগ।
আয়কর গোয়েন্দার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি। তবে কর্মচারী নিয়োগ ও ভাড়া অফিসে স্থানান্তরের পর মূল কার্যক্রম চালু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর।
কর প্রশাসনে দক্ষ গোয়েন্দা গঠন, কর ফাঁকি, অর্থপাচার, বিভিন্ন আর্থিক অপরাধ শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, রাজস্ব পুনরুদ্ধার করা, স্বচ্ছতা-জবাবদিহি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, কর ফাঁকির তদন্তে অর্থের উৎস যাচাই করা ও দায়িত্বশীল অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে এই বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
জানা গেছে, বিশেষায়িত এই গোয়েন্দা ইউনিট অল্প সময়ের ব্যবধানে সফলতা দেখালেও তার নেই প্রয়োজনীয় জনবল ও স্থায়ী অফিস ভবন। শুরুতে এনবিআর ভবনে অস্থায়ী কার্যালয় থাকলেও পরে ভাড়া করা অফিসে যাবতীয় কাজ করছে রাজস্ব ফাঁকি ঠেকিয়ে দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি।
জানতে চাইলে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মো. আবদুর রকিব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আয়কর গোয়েন্দা অল্প সময় ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই ইউনিটের সদস্যসংখ্যা কম হলেও তাঁরা মেধাবী ও পরিশ্রমী। তাঁদের কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকায় আমরা সামগ্রিকভাবে ভালো করতে পারছি। তবে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট পেলে এই ইউনিট দেশের জন্য আরো অনেক কিছু করতে পারবে। আমরা চাই দেশে একটি নতুন কর সংস্কৃতি। যেখানে কেউ কর ফাঁকি দিতে পারবেন না।’
জানা গেছে, ভবিষ্যতে এই ইউনিটের জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে। কর ফাঁকি-অর্থপাচার রোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক, প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া কর ফাঁকিবাজদের ডেটাবেইস তৈরি, নিয়মিত তল্লাশি-জব্দকরণ অভিযান পরিচালনা, কর নেটের বাইরে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও করবে এই ইউনিট।