বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আরো বাড়াতে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আরো বেশি পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ যাতে বাংলাদেশে আসতে পারে, সে জন্য আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
গতকাল রবিবার রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু হোটেলে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই-ফিকি) ৬০ বছর পূর্তি উদযাপন ও ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো-২০২৩-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন প্রায় ১৭ কোটি মানুষের একটি বড় অভ্যন্তরীণ বাজার।
এটি ২০৩০ সালের মধ্যে নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তখন যুক্তরাজ্য ও জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলোকে এবং বর্তমান উচ্চ প্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডকে আমাদের দেশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত ও ধনিক শ্রেণির সংখ্যা হবে তিন কোটি ৪০ লাখ। ২০৪০ সালের মধ্যে আনুমানিক মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে পাঁচ হাজার ৮৮০ মার্কিন ডলার।
কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩০০ কোটি মানুষের আঞ্চলিক বাজারের কেন্দ্রস্থল হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২-এ সরবরাহ খাত, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সংশ্লিষ্ট খাত এবং পর্যটন খাতকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর একটিতে পরিণত করেছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।
শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয়সমূহ ও বাণিজ্য সংহতকরণের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.২৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় মাত্র এক দশকে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৯৩ মার্কিন ডলারে। জিডিপির আকার ২০০৬ সালের চার লাখ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০.৩১ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দারিদ্র্যের হার প্রায় তিন গুণ কমে ১৮.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর সরকারের ‘বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং বাণিজ্য সংহতকরণের’ ওপর ভিত্তি করে বর্তমানের এই টেকসই অর্থনীতি ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
বাংলাদেশ যে ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে, সে কথাও শেখ হাসিনা বলেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ২০৩৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২০তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ৩৯টি হাই-টেক পার্ক বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। কর মওকুফ, রেমিট্যান্স রয়ালটি, প্রস্থান নীতি, লভ্যাংশ এবং মূলধন সম্পূর্ণ প্রত্যাবর্তন, আইন দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষাসহ বিনিয়োগ নীতিকে আরো সহজ করার জন্য সরকার অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচি, বিনিয়োগবান্ধব নীতি, বৃহৎ অভ্যন্তরীণ বাজার অনেক দেশের কাছে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং রপ্তানির জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
সরকারের টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ তালিকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নদীর তলদেশে টানেল, গভীর সমুদ্রবন্দর এবং গণপরিবহন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, পদ্মা বহুমুখী সেতু, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ, মেট্রো রেল এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষপণের কথা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
২০২৫ সালের মধ্যে কেবল লজিস্টিকস খাতই ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পরিণত হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন জ্বালানি, পানি, লজিস্টিকস এবং পরিবহন খাতে ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবকাঠামো গড়ার সুযোগ রয়েছে।
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-ফিকির যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। এই বছর সংগঠনটি ৬০ বছর পূর্ণ করল। শীর্ষস্থানীয় একটি চেম্বার হিসেবে ‘ফিকি’ বাংলাদেশের ২১টির বেশি খাতে বিশ্বের ৩৫টি দেশের বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিত্ব করছে। ছয় দশকের এ যাত্রায় চেম্বারের ২০০টির বেশি সদস্য-প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ রাজস্ব অর্জনে অবদান রেখেছে।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া, ফিকির সভাপতি নাসের ইজাজ বিজয় ও সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি দীপল আবেবিক্রমা বক্তব্য দেন।