আবার রক্তাক্ত যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাঙ্গন। ঝরে গেল আরো ১৯টি শিশুসহ ২১ প্রাণ। আর হত্যাকারী নিজেও সদ্য শৈশবের গণ্ডি পেরোনো তরুণ। প্রায় নিত্যদিনই গুলির ঘটনা দেখে অভ্যস্ত মার্কিন সমাজ আর রাষ্ট্রকেও বেদনার্ত, স্তম্ভিত করেছে টেক্সাসের প্রাইমারি স্কুলে মঙ্গলবারের গুলিবর্ষণের ঘটনা।
বিজ্ঞাপন
আরো একবার দাবি উঠেছে, আগ্নেয়াস্ত্রের রাশ টেনে ধরার। ‘আর কত প্রাণ গেলে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কিছু করা হবে’—সেই প্রশ্ন উঠেছে খোদ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মুখে। ‘পৃথিবীর আর কোথাও এমন ঘটে না’—এ আক্ষেপ ঝরেছে জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকের কণ্ঠে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক পরিবারের মতোই সালভাদর রামোসের ১৮তম জন্মদিনে তাঁকে বন্দুক কিনে দিয়েছিলেন মা-বাবা। বয়স আঠারো না পেরোতেই সেই আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে রামোস মারলেন একে একে ১৯ শিশু আর দুই শিক্ষককে। শুরু করেছিলেন নিজের দাদিকে দিয়ে।
টেক্সাসের এ গণগুলির ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিককালের বন্দুক হামলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস ও রক্তক্ষয়ী।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, টেক্সাসের ইউভালডে শহরের রব এলিমেন্টারি স্কুলে হামলা চালান বন্দুকধারী রামোস। স্কুলটিতে সাত থেকে ১০ বছর বয়সীরা পড়াশোনা করে।
মেক্সিকো সীমান্ত থেকে ঘণ্টাখানেক দূরত্বের একটি ছোট্ট জনপদ ইউভালডে। গোলাগুলির সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গুলিতে হামলাকারী রামোসও নিহত হন।
টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট জানান, হামলাকারী সালভাদর রামোস ইউভালডের স্থানীয়। ইউভালডে হাই স্কুলে পড়তেন। তিনি বলেন, ‘তিনি ভয়ংকরভাবে এবং অবিবেচকের মতো গুলি করে খুন করেছেন। ’
খবরে বলা হয়, ঘটনায় জড়িত সালভাদর রামোস ওয়েনডিস ফাস্টফুড চেইন নামে এক খাদ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মী। তাঁর শাখার সন্ধ্যাকালীন ব্যবস্থাপক আদ্রিয়ান মেনদেজ বলেন, দিনের ভাগে কাজ করতেন রামোস।
টেক্সাসের জননিরাপত্তা বিভাগ (ডিপিএস) জানায়, হামলাকারী তরুণ প্রথমে তাঁর দাদিকে গুলি করে রব এলিমেন্টারি স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করেন। তাঁর পরনে ছিল শক্তিশালী সুরক্ষা বর্ম। হ্যান্ডগান (পিস্তল/রিভলভার) ও বেশি গুলির ম্যাগাজিনসহ শক্তিশালী রাইফেল নিয়ে স্কুলে প্রবেশ করেন তিনি।
খবরে আরো বলা হয়, ওই স্কুলের মোট শিক্ষার্থী পাঁচ শর মতো। তাদের বেশির ভাগ হিস্পানিক (স্প্যানিশভাষী) জনগোষ্ঠীর। কর্মকর্তারা রামোসের এমন নৃশংস ঘটনা ঘটানোর কোনো কারণ উদঘাটন করতে পারেননি।
স্কুলে গোলাগুলি শুরুর পর বর্ডার প্যাট্রলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। এরপর তাঁদের ছোড়া গুলিতে হামলাকারী নিহত হন। হামলাকারীর সঙ্গে গুলি বিনিময়ে এই বাহিনীর দুই সদস্য আহত হন।
মঙ্গলবারের এই ঘটনার ঠিক দিন দশেক আগে নিউ ইয়র্কের বাফেলোতে একটি সুপারশপে বন্দুকধারীর হামলা হয়। এ ঘটনায় মারা যায় ১০ জন। এ ক্ষেত্রেও হামলাকারীর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। হামলাকারী ওই তরুণও শরীরে বর্ম পরে হামলা করেছিলেন।
২০১২ সালে কানেটিকাট অঙ্গরাজ্যের স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে এ রকম একটি বন্দুক হামলায় ২০ শিশু ও আরো ছয়জন নিহত হয়। ওই ঘটনার পর মঙ্গলবার টেক্সাসের এ ঘটনাই শিক্ষাঙ্গনে বন্দুক হামলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে মর্মান্তিক।
শিক্ষা বাণিজ্য বিষয়ক প্রকাশনা এডইউকে বলছে, গত বছর এমন ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে ২৬ বার ঘটেছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে স্কুলে বন্দুক হামলা থেকে বাঁচতে পাঠ্যতালিকায় প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল প্রিভেনশন (সিডিসি) গত মাসের একটি প্রতিবেদনে জানায়, ২০২০ সালে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে বন্দুকসংশ্লিষ্ট হামলা সড়ক দুর্ঘটনাকে ছাপিয়ে সবার ওপরে উঠেছে। সূত্র : বিবিসি ও এএফপি