ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

রাজবাড়ীতে জিল্লুল-ইরাদতই রাজা!

হায়দার আলী ও জয়নাল আবেদীন
হায়দার আলী ও জয়নাল আবেদীন
শেয়ার
রাজবাড়ীতে জিল্লুল-ইরাদতই রাজা!

রাজবাড়ীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা ঘুরেফিরে নিজ দলের প্রভাবশালী নেতাদের বিরোধিতার মুখে পড়ছেন। এতে কেউ কেউ নির্বাচনে পরাজিতও হচ্ছেন। যাঁরা জিতে আসতে পারছেন তাঁদের দলীয় প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা এমন অবস্থার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলীকে দায়ী করেছেন।

কারণ তাঁরা গত কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জিল্লুল-ইরাদত জোটবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে দাঁড় করান নিজেদের পছন্দের প্রার্থী। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দেওয়া অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিতিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। দলীয় মনোনয়ন পেয়েও স্বস্তিতে ভোট করা যায় না—বিগত কয়েকটি নির্বাচনের এই পরিস্থিতি মনে করে অস্বস্তিতে ভুগছেন আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

সদর, পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলায় এই দুই নেতার অনুসারীদের হাতে দলের অনেকে নির্যাতিত হয়েছেন। নির্যাতনের শিকার অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছে কালের কণ্ঠ। তাঁরা অভিযোগ করেন, দলে এককভাবে প্রভাব বিস্তার করতে বেছে বেছে ত্যাগী নেতাদের সরিয়ে দেন জিল্লুল-ইরাদত।

নৌকা প্রতীক পেয়েও দলীয় নেতাদের বিরোধিতায় পরাজয়ের শিকার প্রার্থীরা বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় কমিটিকে অবহিত করেছেন।

দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর চিঠি লিখেছেন কেউ কেউ। এ ছাড়া নির্যাতনের শিকার ও বিনা কারণে পদ থেকে বিতাড়িত নেতারাও কষ্টের কথা কেন্দ্রকে লিখে জানিয়েছেন। তবে কেউই প্রতিকার পাননি বলে জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, নৌকার বিরোধিতা করলে আগামী নির্বাচনে কাউকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে না। স্থানীয় সরকারসহ সব নির্বাচনে যাঁরাই নৌকার বিরোধিতা করছেন, তাঁরা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন না।

বাহাউদ্দিন দাবি করেছেন, যাঁরাই এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রাজবাড়ীতেও কোনো সংসদ সদস্য যদি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী নিজের ভাই কাজী ইরাদত আলীকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ লিখে দেওয়ার ঘটনাটি জানানো হলে বাহাউদ্দিন বলেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেউ কাউকে এভাবে পদ লিখে দিতে পারে না। দিলেও তা গ্রহণযোগ্য হয় না।

নৌকার প্রার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান : নির্যাতিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কালুখালী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী সাইফুল ইসলাম। কিন্তু তাঁকে সমর্থন না করে জিল্লুল-ইরাদত বিরোধিতা করেন। ভোটে দাঁড় করান আলীউজ্জামান চৌধুরী ওরফে টিটুকে। শৃঙ্খলাবিরোধী এই কাজের জন্য ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর দল থেকে বহিষ্কৃত ছিলেন আলীউজ্জামান। স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, তাঁর বাবা নাজির হোসেন চৌধুরী ওরফে নিলু চৌধুরী এলাকায় রাজাকার হিসেবে পরিচিত।

তখন দলীয় সভানেত্রীকে তাত্ক্ষণিকভাবে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবগত করেন দলীয় প্রার্থী সাইফুল। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁকে ডেকে নিয়ে মামলা দেওয়া এবং এলাকাছাড়া করার হুমকিও দেন এমপি জিল্লুল হাকিম। এমপির ছেলে মিতুল হাকিমের অনুসারীরা আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয় এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকেও বাদ দেয় বলেও অভিযোগ করেন সাইফুল।

রাজবাড়ী সদর পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী চৌধুরীকে। জিল্লুল হাকিম ২০১৯ সালে তাঁকে সমর্থন না দিয়ে আলমগীর শেখ তিতুকে জিতিয়ে আনেন। মোহাম্মদ আলী বিষয়টি লিখিতভাবে কেন্দ্রে জানিয়েছেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, এমপি জিল্লুল হাকিম তাঁকে পরাজিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালান। আলমগীর শেখ হলেন ইরাদত আলীর মদদপুষ্ট। জেলা আওয়ামী লীগের সভায় আলমগীর প্রকাশ্যে দলীয় মনোনয়নের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেন।

মোহাম্মদ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার যা বলার, নেত্রীর কাছে বলেছি। আমি তো হেরেই গেছি। কী কারণে, কেন হেরেছি সবই নেত্রীকে জানিয়েছি। ভবিষ্যতেও রাজনীতি চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। তাই এখন আর বেশি কিছু বলতে চাই না।’

আবার বালিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন এমপি জিল্লুলের আপন চাচাতো ভাই এহসানুল হাকিম সাধনকে। কিন্তু সাধন নির্বাচনে হেরে যান। সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি পাংশা পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন জিল্লুল হাকিম। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ফজলুল হক ফরহাদকে। তবে দল মনোনীত প্রার্থী ওয়াজেদ আলী মাস্টারকে পরাজিত করতে পারেননি তাঁরা।

ওয়াজেদ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও তাঁরা (জিল্লুল সিন্ডিকেট) আমার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। ফজলুল হক কখনো যুবলীগের রাজনীতি করেছেন বলে জানি না। পকেট কমিটির মাধ্যমে তাঁকে নেতৃত্বে আনা হয়। তাঁকে আমার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড় করিয়ে নেতাকর্মীদের মোবাইলে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন এমপি জিল্লুল। কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনাকেও তিনি উপেক্ষা করেছেন।’ তবে জনপ্রিয়তার কারণে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বলে জানান ওয়াজেদ।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও একই পথ বেছে নেন এমপি জিল্লুল ও ইরাদত আলী। পাংশা উপজেলার কশবামাজাইল, শরিষা ও যশাই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সরাসরি বিরোধিতা করেন তাঁরা। একই উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আল মামুনের পক্ষে অবস্থান নেয় জিল্লুলের পরিবার।

মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়ার অভিযোগ : দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হোসেন অদুদের কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকা নিয়েছিলেন এমপি জিল্লুল হাকিম। তবে অদুদকে দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দিতে ব্যর্থ হন তিনি।

অদুদ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে জিতে যান। অদুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এমপি জিল্লুল হাকিম আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে আমি ঠিকই নির্বাচনে জিতেছি।’ টাকা দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সত্যতা আছে বলেই তো এমন কথা শুনেছেন। সামনে যে ইউপি নির্বাচন আসছে, এই নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঝেও এ ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।’

ত্যাগী নেতাদের বিতাড়ন ও নির্যাতন : জিল্লুল-ইরাদতের বিরুদ্ধে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে অনেক নেতাকর্মীকে বিনা কারণে পদ থেকে অব্যাহতি দেন তাঁরা। রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খান মো. আব্দুল হাই, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিক হক, পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চিত্তরঞ্জন কুণ্ডু, আহমেদ হোসেন, অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদ হাসান অদুদ, জীবন কুণ্ডু, নজরুল খান ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আতাউল্লাহ মাস্টারকে বিভিন্ন সময় কমিটি থেকে সরিয়ে দেয় জিল্লল-ইরাদত চক্র।

কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. সামছুল আলম ও ধর্মীয় সম্পাদক গোলাম সরওয়ার ঠাণ্ডুকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। একই আক্রোশের শিকার বালিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ মানিক, সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক ও মো. খলিলুর রহমান খান। এ ছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অন্তত ১৫ জন নেতাকে বিভিন্ন সময় বিনা কারণে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন তাঁরা।

জিল্লুল-ইরাদত জোটের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন রাজবাড়ীর আরেক এমপি কাজী কেরামত আলীও। গত ২৩ অক্টোবর জেলার একটি রেস্তোরাঁয় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর ভাই কাজী ইরাদত আলী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটি লিখে নেওয়ার পর থেকে জেলায় দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। এমপি জিল্লুল হাকিমের দিকনির্দেশনায় যাকে-তাকে দলের পদ ও মনোনয়ন দেওয়া, বিরোধিতাকারীদের শারীরিক নির্যাতন এবং দল থেকে বহিষ্কার করে তাঁরা একক অবস্থান সৃষ্টি করেছেন।

ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানান, দলের সাধারণ সম্পাদকের পদটি বাগিয়ে নেওয়ার পর সভাপতি জিল্লুল হাকিমের সঙ্গে জোটবদ্ধ হন ইরাদত আলী। এরপর দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের বিতাড়িত করতে থাকেন। জেলা আওয়ামী লীগের বিগত কমিটি গঠনের পর জেলার সর্বস্তরে ‘পকেট কমিটি’ করেছেন তাঁরা। দলীয় গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপ বৃদ্ধির বিপরীতে দাঁড়াতেই পারেননি আওয়ামী লীগের অন্তপ্রাণ নেতাকর্মীরা। গত ২১ সেপ্টেম্বর বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির চারজন শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে সংক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

অভিযোগ অস্বীকার : জিল্লুল হাকিমের কাছে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। পরে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলেও তিনি কোনো বক্তব্য দেননি। তাঁর স্ত্রী সাঈদা হাকিমের কাছে স্বামীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি স্বামীর কোনো বিষয়ে বক্তব্য দিতে পারব না।’

রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলীর সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলতে ফোন করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলেও সাড়া মেলেনি।

তাঁর ছোট ভাই কাজী টিটু এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা। আমার ভাইসহ সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য পৌর নির্বাচনে কাজ করেছি। কিন্তু প্রার্থীর জনপ্রিয়তা না থাকায় ভোটে হেরে গেছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারীদের দলে ঠাঁই না দিয়ে আমার ভাই সব সময় ত্যাগী নেতাদের পাশে আছেন।’

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন নাহিদ

    আজ দেশব্যাপী বিক্ষোভ এনসিপির
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন নাহিদ
খুলনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি : কালের কণ্ঠ

গোপালগঞ্জে মুজিববাদীরা হত্যার উদ্দেশ্যে জঙ্গি কায়দায় এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট ও মুজিববাদীরা অস্ত্র নিয়ে এই হামলা চালিয়েছে, তারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে তিনি সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন। 

গতকাল বুধবার রাতে তিনি খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

তিনি দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তিনি।

অন্যদিকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে গোপালগঞ্জসহ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল রাজধানীর শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত।

খুলনায় সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ বলেন, গোপালগঞ্জের হামলা আওয়ামী ও মুজিববাদীদের পুরনো চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, সারা দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপির এটি ছিল পূর্বঘোষিত কর্মসূচি। সেই লক্ষ্যে প্রশাসনকে জানিয়ে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার কথা জেনেই গোপালগঞ্জ সফরে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলা করেছে ।

এর পরও গোপালগঞ্জে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে আওয়ামী লীগের বাইরেও যে অন্য কোনো দল কর্মসূচি করতে পারে সেটি এনসিপি প্রমাণ করে দিয়েছে।

সমাবেশের আগে ও পরে দফায় দফায় হামলার কথা তুলে ধরে নাহিদ বলেন, এ হামলা যে পূর্বপরিকল্পিত সেটি প্রমাণিত। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী আরো সতর্ক থাকতে পারত উল্লেখ করে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যেভাবে সহায়তা দিয়েছে সে জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

নাহিদ জানান, আজ বৃহস্পতিবার ফরিদপুরসহ সারা দেশের পূর্বঘোষিত পদযাত্রা অব্যাহত থাকবে। শুধু মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে বুধবারের যে কর্মসূচি ছিল সেটি স্থগিত করা হয়েছে, পরে ওই দুই জেলার কর্মসূচির তারিখ ঘোষণা করা হবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশে হামলার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা খুলনা এসে পৌঁছেন। সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে রশিদুল ইসলাম রিফাত বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এবং দিল্লির চক্রান্তে গোপালগঞ্জের ভেতরে একটি প্রক্সি স্টেট তৈরি করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই প্রক্সি স্টেট খেলা আমরা হতে দেব না। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে হটিয়ে দিয়েছে। তাই স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিবাদী ছাত্রলীগ, হামলাকারী ও গণহত্যাকারী কারো অবস্থান এই বাংলাদেশের মাটিতে হবে না।

এর আগে দুপুরের দিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী নেতাকর্মীদের ন্যক্কারজনক হামলা ও অবরুদ্ধ করার ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রশিদুল ইসলাম রিফাত এই ঘোষণা দেন।

শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নয়, একই সঙ্গে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি।

বাংলা ব্লকেড : রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। গতকাল বিকেলে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের আজমপুর ও হাউস বিল্ডিং মোড় ঘিরে বিক্ষোভে নেমে পড়ে শতাধিক প্রতিবাদকারী। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিকেল ৩টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বরে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মিরপুর জোন।

রাজধানীর শাহবাগে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে জুলাই মঞ্চ। কর্মসূচি চলাকালে মঞ্চের বক্তারা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত গোপালগঞ্জের ঘটনার সঠিক বিচার না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলার ঘটনায় পুলিশ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেয় তারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় তারা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় না আনলে লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বিকেলে মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় অবরোধ করেন এনসিপি নেতাকর্মীরা।

তবে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে ব্লকেড কর্মসূচি থেকে সরে আসতে বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বিক্ষোভকারীদের রাস্তার এক পাশে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।

এনসিপির মশাল মিছিল : গোপালগঞ্জের ঘটনায় এনসিপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ আয়োজনে গতকাল মশাল মিছিল হয়। রাত ৯টার দিকে বাংলামোটরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কারওয়ান বাজার মোড় পর্যন্ত মিছিল করেন নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে সমাবেশ থেকে আজ রাজধানীর সব থানার সামনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি ও থানায় স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।

গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে দেশের অন্যান্য স্থানেও বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কুমিল্লা, ফরিদপুর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, খুলনা, মাদারীপুর, নোয়াখালী, রাজবাড়ী, ধামরাই (ঢাকা), শেরপুর (বগুড়া) এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।

[তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিরা]

 

মন্তব্য
ফিরে দেখা ১৭ জুলাই

শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি

গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনের ১৭তম দিন ১৭ জুলাই ছিল পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সরকারি ছুটি। তবে ছুটির দিনও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আন্দোলন ও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এদিন ঢাকাসহ দেশের অন্তত ১০টি জেলায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া অন্তত ১০ স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক এবং দুই স্থানে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।

আগের দিন সংঘর্ষে আবু সাঈদসহ ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কফিল মিছিল ও গায়েবানা জানাজা আদায় করা হয়। এসব কর্মসূচিতে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরদিন (১৮ জুলাই) সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

১৭ জুলাই দিনভর রাজধানীর শনির আখড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।

পরে সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। রাতে হানিফ ফ্লাইওভারের (বর্তমানে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার) টোল প্লাজায় আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। সংঘর্ষের সময় পুলিশের শটগানের গুলিতে আহত দুই বছরের শিশুসহ ছয়জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

 

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসগুলোতে বিক্ষোভ-সংঘর্ষের চিত্র

১৭ জুলাই সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।

শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত কফিন মিছিল শুরু করলে বাধা দেয় তারা। এ সময় আহত হন নারীসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী ও ১০ জন সাংবাদিক।

এদিন আন্দোলনকারীদের ক্যাম্পাস ছাড়া করতে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। দুপুরের পর তাদের টানা দুই ঘণ্টার অভিযানে ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। সেখানেও দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

দুপুর ২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল কর্মসূচি থাকলেও পুলিশের বাধায় সেখানে গায়েবানা জানাজা হয়নি। পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কফিন মিছিল শুরু হলে একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর আবার সূর্য সেন হলের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলে ঘণ্টাখানেক। পরে শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিলে পুলিশ আবারও তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। জবাবে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। রাত ১০টার দিকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আরেক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গায়েবানা জানাজা শেষে তাঁরা শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু করলে পুলিশ নির্বিচার হামলা চালায়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হল বন্ধের ঘোষণা ও পুলিশের তৎপরতার মুখে সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারী অনেক শিক্ষার্থী হল ছেড়ে যান। তবে অনেক শিক্ষার্থী হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেও হল ও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা রাতে হলে অবস্থান করছিলেন। হামলাকারীদের বিচার না হলে হল ছেড়ে যাবেন না বলে জানান তাঁরা।

এদিন দুপুর ১টার দিকে শিক্ষকদের একটি দল মৌন মিছিল নিয়ে শাহবাগ থানায় পুলিশের হাতে আটক হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে আনেন। পরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ করেন শিক্ষকরা।

এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

 

কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি

শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হামলা, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে পরদিন ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচি চলাকালে হাসপাতাল, গণমাধ্যমসহ অন্যান্য জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়।

 

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ঢাবি ও চবি

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সব আবাসিক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সমাধানের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হয়। এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ছাত্রীদের এবং রাত ১০টার মধ্যে ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।

 

রংপুরে আবু সাঈদের দাফন

কোটা সংস্কার আন্দোলনে আগের দিন নিহত রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন হয় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের নালিপাড়ায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত জানাজা ও দাফনের তাগিদ দেওয়া হলে উপস্থিত লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুই দফা জানাজা শেষে সকাল সোয়া ১০টার দিকে আবু সাঈদের লাশ দাফন করা হয়।

 

জাতির উদ্দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী সৃষ্ট সংঘাতময় পরিস্থিতিকে সামনে রেখে এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি আন্দোলনকারীদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ সর্বোচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবে। তাদের হতাশ হতে হবে না।

 

মন্তব্য
বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির ব্লকেড

সাঁড়াশি অভিযানের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সাঁড়াশি অভিযানের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে গোপালগঞ্জসহ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বুধবার রাজধানীর শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাঁড়াশি অভিযানে যৌথ বাহিনী ব্যর্থ হলে জুলাইয়ের ছাত্র-জনতা মাঠে নেমে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে। এ সময় ২৪ ঘণ্টার জন্য বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণাও দেওয়া হয়।

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রিফাত বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এবং দিল্লির চক্রান্তে গোপালগঞ্জের ভেতরে একটি প্রক্সি স্টেট তৈরি করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই প্রক্সি স্টেট খেলা আমরা হতে দেব না। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে হটিয়ে দিয়েছে।

তাই স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিবাদী ছাত্রলীগ, হামলাকারী ও গণহত্যাকারী কারো অবস্থান এই বাংলাদেশের মাটিতে হবে না।

তিনি বলেন, ইসি একটি নাটকবাজি করেছে। ইসি বলেছে, নৌকা প্রতীক নাকি এখনো থাকবে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে বলতে চাই, এত বড় একটি গণহত্যার পরেও বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা, তাদের আওয়ামী লীগ এবং তাদের মার্কা থাকতে পারবে না।

রিফাত বলেন, অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। স্বৈরাচারী হাসিনার গোপালি পুলিশ এখনো ছাত্র-জনতার দিকে বন্দুক তাক করে।

এর আগে দুপুরের দিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীর ওপর আওয়ামী নেতাকর্মীদের ন্যক্কারজনক হামলা ও অবরুদ্ধ করার ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রশিদুল ইসলাম রিফাত এ ঘোষণা করেন।

এ সময় তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে জুলাইয়ের নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সারা দেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব ইউনিটকে স্থানীয় ছাত্রসংগঠন, রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে ব্লকেড কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো যাচ্ছে।

শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নয়, একই সঙ্গে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি।

 

সারা দেশে বাংলা ব্লকেড : রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। গতকাল বিকেলে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের আজমপুর ও হাউস বিল্ডিং মোড় ঘিরে বিক্ষোভে নেমে পড়ে শতাধিক প্রতিবাদকারী। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিক্ষোভকারীরা বলে, গোপালগঞ্জে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তাদের পদযাত্রা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ঠেকাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পুলিশি সহায়তায় হামলা করেছে। এর প্রতিবাদে উত্তরা অঞ্চলে তারা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছে।

বিকেল ৩টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বরে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মিরপুর জোন।

রাজধানীর শাহবাগে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে জুলাই মঞ্চ। কর্মসূচি চলাকালে মঞ্চের বক্তারা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত গোপালগঞ্জের ঘটনার সঠিক বিচার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলার ঘটনায় পুলিশ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেয় তারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় তারা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা।

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় না আনলে লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বিকেলে মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় অবরোধ করেন এনসিপি নেতাকর্মীরা।

এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদুর রহমান তনু জানান, সাইনবোর্ডে ছাত্র-জনতা জড়ো হতে শুরু করেছে। হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।

তবে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে ব্লকেড কর্মসূচি থেকে সরে আসতে বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বিক্ষোভকারীদের রাস্তার এক পাশে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। 

গণমাধ্যমকর্মীদের দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, সারা দেশে রাজপথের ব্লকেড সরিয়ে নিন। রাস্তার এক পাশে অবস্থান করুন। লড়াই চলবে।

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রায় আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে দেশের অন্যান্য স্থানেও বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কুমিল্লা, ফরিদপুর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, খুলনা, মাদারীপুর, নোয়াখালী, রাজবাড়ী, ধামরাই (ঢাকা), শেরপুর (বগুড়া), গাজীপুরের টঙ্গীতে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।

[তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিরা]

 

 

মন্তব্য
জামায়াত আমির

সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে

    প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বঘোষিত মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার পৃথক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।

ডা. শফিকুর রহমান গতকাল বুধবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রশ্ন তোলেন, গোপালগঞ্জে কী হচ্ছে? তিনি লেখেন, গোপালগঞ্জ তো বাংলাদেশেরই অংশ। যত দূর জানতে পেরেছি, এনসিপির নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে পূর্ব আলোচনা করেই শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেছেন, যা তাঁদের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার।

কিন্তু মাঠে কার্যকর কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।

জামায়াতের আমির সরকারের উদ্দেশে লেখেন, সরকারকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় ইতিহাসের দায় তাদের ওপরই বর্তাবে।

ডা. শফিকুর রহমান সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সংঘাত ও উচ্ছৃঙ্খলতা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে লেখেন, আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সব ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই এবং শান্তিপ্রিয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, মহান আল্লাহ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে তাঁর সাহায্য প্রেরণ করুন।

আমিন।

অন্যদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী শাসনব্যবস্থার সহযোগী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। তাঁর ভাষ্য, কর্মসূচির আগে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কার্যকর উপস্থিতি দেখা যায়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

তিনি বলেন, গোপালগঞ্জ কোনো বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড নয়, এটি বাংলাদেশের অংশ।

সেখানে সংবিধানসম্মত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নভাবে চলার নিশ্চয়তা দিতে সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব অপরিহার্য।

পরওয়ার দাবি করেন, ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনগণের গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটেছে, তবে দেশ এখনো পুরোপুরি ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। ক্ষমতাচ্যুত শাসকগোষ্ঠী দেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।

সেক্রেটারি জেনারেল জানান, এনসিপির কর্মসূচিতে ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশের গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তিনি তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

এদিকে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের হামলা, অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার বলেন, গতকাল বুধবার এনসিপির পূর্বঘোষিত মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচিতে সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়, এমনকি পুলিশের এসপি অফিসেও হামলা করা হয়। তিনি দাবি করেন, এতে এনসিপির অনেক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনাও ঘটে।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরো বলেন, এই হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দেশের সব জেলা ও মহানগরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। তিনি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

বিবৃতিতে অধ্যাপক পরওয়ার ফ্যাসিবাদবিরোধী গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সচেতন নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সর্বাত্মকভাবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।

গোপালগঞ্জে এই হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে খুলনা নগরীর ডাকবাংলা মোড়ে মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে বিক্ষোভ করা হয়েছে। মিছিলপূর্ব সমাবেশে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ